জটিলতা

জটিলতা

আব্বু আম্মু আর আমার বড়ো বোনের সাথে বসে আছি বসার ঘরে .কল বেল বাজলো .আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম .আমার আব্বুর চাচাতো ভাই দুলাল বেড়াতে এসেছেন .

আব্বু :কি রে দুলাল ,কি খবর তোর ?

দুলাল :কোনো রকম যায় ভাই .

আম্মু :কোনোরকম গেলে হবে !!বিয়ে টা করে ফেল .বয়স তো তোর কম হলো না .

দুলাল :আমি বিয়ে টা করবো কিনা জানি না .কেমন জানি ঝামেলা লাগে !!

আম্মু :সে কি কথা !!এমন কথা তাও আবার তোমার মতো যোগ্য ছেলের মুখে !!

দুলাল :আমার কথা বাদ দেন ভাবি .আপনি আপনার সোহানের বিয়ে দেন .

আব্বু:এই দুধের বাচ্চা কে বিয়ে দিয়ে বলদ সাজবো সমাজে !!

দুলাল :বলদ হবেন কেন ?আপনার একটা ঝামেলা কমবে .আপনার ছেলে বৌয়ের সাথে পুতুল

পুতুল খেলবে .

আমি :আমার বৌয়ের নাম কি পুতুল হবে .

বড়ো আপু :হো পুতুল হবে তোর বৌয়ের নাম .পাগল ছাগল কোথাকার .

আম্মু :যে ছেলের সব কাজ আমাদের করে দিতে হয় .এখনো নাক টিপলে দুধ পরে সে করবে বিয়ে .

বড়ো আপু :একদম ঠিক বলেছো মা .

আব্বু :এইসব কথা এখন বাদ দাও .দুলালের জন্য ভালো মন্দ রাঁধো,ও যা পেটুক !!

দুলাল :এইটা মন্দ বোলো নি ভাই !!

2.

চায়ের দোকানে বন্ধুদের আড্ডায় আমি .সেই জমে উঠেছে যেমন রোজ জমে .

আমি :আমার পিনিক মাথায় উঠে গেছে দোস্তেরদল.

রাতুল :তা তো উঠবেই .তুমি কত কিছু বোঝো অথচ একটা মেয়েও জোটাতে পারো না .

আমি :পাকনা বন্ধুরা থাকতে আমাকে শ্রম দিতে হবে ,এইটা কোনো কথা .

জাহিদ :তুমি তো কচি শিশু .

আমি :ভাই এত কিছু বুঝি না .আমার একটা ব্যাবস্থা করে দে .

জাহিদ :প্রেম করে কি করবি .একবারে তোর বিয়া দিয়ে দেই.

রাতুল :একটু ভালো করে শোন ও কেমন খেলোয়াড় .

জাহিদ :আমরা অশ্লীল কথা না বলি .আমার হাতে একটা সুন্দরী কিন্তু বলদ মার্কা মেয়ে আছে .ওরে একটু পটাক আমাদের সোহান .তার পর বিয়া দিয়া দেব কাজী দিয়া .

রাতুল :তুমি কি সোহানার কথা বলছো .

জাহিদ :হরে মামা !!তুই দেখি সব দিকে খবর রাখিস .

আমি :(চায়ের দোকানদারকে )মামা ,পিনিক মাথায় উঠে গেছে ,বিড়ি দাও তাড়াতাড়ি .

জাহিদ :খাঁ বিড়ি খাঁ .কয়দিন পর সোহানার আদর খাবি .

3.

আমি আর সোহানা বসে আছি আমাদের প্রিয় পার্ক এ

আমি :তোমাকে এত তাড়াতাড়ি পটিয়ে ফেলবো নিজেও কি ভেবেছি !!

সোহানা :এত তাড়াতাড়ি কোথায় !গুনে গুনে ছয় মাস.

আমি :ওরে বাবা এত কিছু মনে রেখেছো .তা চলো আমরা বিয়ে তা করেই নেই .

সোহানা :না বাবা .এত তাড়াতাড়ি না ,আমার ভয় লাগে .

আমি :আরে ভয় পেলে আজীবনের সম্পদ গড়বো কি করে ?আর আমাদের মাঝে সব যখন হয়েই গেছে এইটা বাকি রেখে লাভ কি .আচ্ছা একটা কথা -তুমি আমায় ছাড়া অন্য কাউকে আবার ভালোটাল বাস নাকি !!

সোহানা :এই কথা উঠলো কেন ?তুমি আজ আমায় বিশ্বাস টাই করো না !!

আমি :না উঠিয়ে পারলাম না .আজকালকার মেয়েদের কি বিশ্বাস !!

(সোহানার বেস্ট ফ্রেন্ড অনামিকার আগমন )

অনামিকা :থাক বাবা ,তোমাদের আর এত ঝগড়া করতে হবে না .সোহানা তোকে একা একা শুধু আমার বাসায় আসতে পারিস ,ওতে তোর  মায়ের কোনো অপ্পত্তি নেই ,এই সুজুক টা কাজে লাগিয়ে যদি এত কিছু করতে পারিস আর বিয়েটা সেটা তো হালাল ,এইটা করতে পারবি না !!

সোহানা :কিন্তু দোস্ত !!

অনামিকা :কোনো কিন্তু নেই .আমি তোদের বিয়ের সেরা সাক্ষী টা দেব .

আমি :আল্লাহ বাঁচালো .অনামিকা তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব .

অনামিকা :ধন্যবাদের ভাষা না খুঁজে একটা চাকরি খুঁজো ,ওতেই বেশি ভালো হবে .

4.

(সেই চায়ের দোকানে আমি আর আমার বন্ধুরা )

আমি :অবশেষে ক্লাস টেন এর মেয়েটাকে পোটালাম .

জাহিদ :খুব ভালো হলো দোস্ত .

রাতুল:কি আর ভালো হবে .শালার তো আগেই মজা নেয়া শেষ .বল যে মেয়েটার একটা গতি হলো

আমি :তোরা এসব কথা বাদ দে .কাল বিয়ের কি করা যায় সেটার দিকে নজর দে .

রাতুল :চিন্তা করো না বন্ধু .জাস্ট চিল.সব ব্যাবস্তা পাক্কা .

আমি :পাক্কা হলেই ভালো .

  1. (কাজী অফিসে আমি ,সোহানা আর আমার বন্ধুরা সাথে অনামিকা

আমি :দোস্ত সব তো পাক্কা ,কাজী তো মানে না .

অনামিকা :বেটারে ঘুষ দিতে হবে .

জাহিদ :অনামিকা ,ঠিক বলেছো .

অনামিকা :আমি সব সময় ঠিকই বলি .

রাতুল :টাকা আছে তোর কাছে .

আমি :আমার কাছে আর ফুটো পয়সাও নেই .

অনামিকা :সোহানা ,তোর কাছে নেই ?

সোহানা :তুমি তো জানো অনামিকা আব্বা ,আম্মা আমাকে একটা টাকাও দেয় না .আমি পাবো কোই?

অনামিকা :তাহলে তোর কিডনি বিক্রি কর .

আমি :না থাক .কিডনি কিডনির জায়গায় থাক .আমার ল্যাপটপ টা আমার ব্যাগে আছে ,ঐটা বিক্রি করে ঘুষের টাকা দেয়াও হবে সাথে পাৰ্টি ও করা যাবে .

জাহিদ :ভালো বুদ্ধি .

অনামিকা :করো তাহলে তাই.টাকা তো চাই .

রাতুল :দুনিয়া টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না .

6.

(সোহানা তার মায়ের সাথে রিকশায় করে স্কুল যাচ্ছে )

সোহানা :মা ,আমি বাড়ি ফিরবো ঠিক সময়ে তবে একটু লেট হবে .

মা :এটা আবার কেমন কথা !!ঠিক সময়ে ফিরবো আবার একটু লেট হবে ,আজব !

সোহানা :না মানে অনামিকা র বাসায় একটু কাজ আছে .

মা :তুই যে বাবা কি করছিস না করছিস বুঝি না .কেমন জানি হয়ে যসচিস!!

সোহানা :ওটা তোমার মনের ভুল .তোমাকে ভুতে পেয়েছে .

মা :আমাকে ভুতে না তোকে বাঁদরামীতে পেয়েছে !!

(সোহানা অনামিকা স্কুল এ )

সোহানা :দোস্ত ,মা যেভাবে ধরে ,কোনদিন না ফাঁস হয়ে যায় সব .

অনামিকা :একদিন তো সব ফাঁস হবেই .

সোহানা :এমন করে বলিস না .আমার ভয় লাগে .

অনামিকা :ভয় বাদ দে .আমার বাসায় চল তারা তারই সন্ধ্যায় তো আবার বাবা মা অফিস থেকে ফিরবে .আমার বাসা ছাড়া তো তোর আর সোহানের মধুচন্দ্রিমা হবে না .

  1. (সোহানা আর সোহানের ফোনে কথা হচ্ছে )

সোহানা :’সর্বনাশ হয়ে গেছে।’

সোহান :কি হইছে?

সোহানা :কি হইছে বুঝতেছ না তুমি? আমার পিরিয়ড মিস হইছে।

সোহান :এই ব্যাপার? এক পিরিয়ড মিস হলে কি হয়? নেক্সট পিরিয়ডে চলে যাও। এ আর এমন কি। খুব ইম্পর্টেন্ট ক্লাস ছিলো?’

সোহানা :আরে গাধা পিরিয়ড মানে মিন্স। – মিন্স মানে? – মাসিক।

সোহান :ও আচ্ছাহ।

সোহানা :মাসিক পিরিয়ড? প্রতি মাসে একটাই ক্লাস হয়? তাহলে তো অবশ্যই ইম্পর্টেন্ট কিছু। আচ্ছা ব্যাপার না অন্য কারো থেকে নোট নিয়ে নিও। আর সামনের মাসে ফোনে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখবা যেন মিস না হয়। এতে এতো টেনশনের তো কিছু নাই। তুমি এমনভাবে সর্বনাশ হয়ে গেছ বলতেছ যেন তুমি প্রেগন্যান্ট।

সোহানা :তোর মত বাচ্চা ছেলেরে বিয়ে করাই আমার ভুল হইছে।’

8.

(আমি আর আমার মায়ের মধ্যে কথা হচ্ছে )

আমি :মা আমার ফোন হারায় ফেলছি .

মা :এইটা কোনো কথা বললি.কয়দিন আগে ল্যাপটপ হারাইছোস ,আজকে আবার মোবাইল !!বিক্রি করে কিসু খাস টাশ নাকি !!

আমি :(রেগে )যা বলার বোলো .আমার জানানোর দরকার ছিল ,জানাই দিলাম .

মা :তুই যে আস্তে আস্তে অনেক খারাপ হয়ে জাসছিস ঠিকই বুঝছি .

আমি :যা বোঝার বোঝো .ভাল লাগে না বাবা !!

9.

 

(আমি আর সোহানা এক ক্লিনিকে )

আমি :আমরা এবোরশন করবো .

গাইনি :এবোরশন করবে মানে .

আমি :আপনি ডাক্তার হয়ে এটা বুঝেন না .বলছি আমার বৌ এর পেটে যে বাচ্চা টা আছে সেটা এখন চাই না ,এবোরশন করবো .

গাইনি :এবোরশন করলে বুঝি যায় বাচ্চা পরে আবার পাওয়া যাবে ?

আমি :সেটা আপনি জানেন .আমি তো আর ডাক্তার না .আমি শুধু জানি এবোরশন করতে হবে .

গাইনি :তোমাদের বাবা মায়ের নাম্বর দাও .বাবা মা ব্যাতিত যায় কাজ করানো যাবে না .

আমি :আমার বাবা মা ওর বাবা মা অনেক ব্যাকডেটেড ,তারা ফোন ব্যবহার করে না .

গাইনি :তাহলে তো আমিও কাজ টা করতে পারবো না .

আমি :(রেগে )নিকুচি করি আপনার ডাক্তারির .করবো না আপনার কাছে .

(হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আমি আর সোহানা )

আমি :এখন যে কি করি ?

সোহানা :তোমার মা না গাইনি ডক্তর .কোনো একটা জিনিস বানিয়ে ওনার কাছেই নিয়ে যাও.

আমি :তোমার কি জ্ঞান লোপ পেয়েছে .আমার মা জানলে আমাকে কেটে ফেলবে .

সোহানা :সব দোষ তোমার .

আমি :হা এখন তো সব দোষ আমারই হবে ,তুমি ধোয়া তুলসী পাতা.

10.

(আমি আর জাহিদ)

জাহিদ :কি রে সোহানার বাবা নাকি ওর জন্য ট্রেড মিল কিনে এনেছে

আমি :হো রে দোস্ত .বেটা মনে করছে তার মেয়ের ওয়েট বাড়ছে .হালায় তো আর আসল কাহানি জানে না .সালা আমার বাচ্চাটাকে মারার প্ল্যান করছে .

জাহিদ :ওরে দরদ রে .

(রাতুল এর আগমন হটাৎ করে )

রাতুল :(আমাকে )হাল তুই এখানে বসে ,কাহানি শুনে এলাম অনামিকার কাছ থেকে যা শুনলে তোর মাথার তার তুর ছিঁড়ে যাবে .

আমি :তা ফরমাও তোমার কাহানি .

রাতুল :তোর মা আর সোহানার মা ছোটবেলাকার বান্ধবী .তও আবার বাংলা সিনেমার মতো সেই লেভেলর .

জাহিদ :কোশ কি মামা !!এইজন্য নাম মিল .

আমি :জীবনটা এত জটিল কেন রে ভাই !!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত