-এই যে আপু, আপনার কলমটা
— এটা আমার কলম আপনাকে কে বলেছে? যত্তসব!
— প্লীজ একটু শুনুন….
– জ্বী বলুন…
— মানে ইয়ে মানে…
– কি হলো বলুন!
– না মানে…
– তাহলে আপনি চুপ করুন, আমি বলছি মন দিয়ে শুনুন..
– জ্বী মা নে
….
–গত দুই মাস যাবত আপনি এখানে বসে থাকেন, পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব কি? ফাষ্ট সেমিষ্টারে প্রথম হয়েছিলেন , সেকেন্ড সেমিষ্টারে দুই সাবজেক্টে ফেল, আযানের সময়ও মসজিদে না গিয়ে এখানে বসে থাকার মানে কি? শুনুন ভাল ছেলেরা এরকম করে না, তারা ভাল করে পড়াশুনা করে, রাস্তায় বসে অযথা সময় নষ্ট করে না, ঠিক মতো খায়, ঘুমায়, নামায পড়ে…. জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং বিয়ে করে বৌয়ের সাথে প্রেম করে। আমি ভাল ছেলেদের পছন্দ করি। কি বলতে চাই আশা করি বুঝতে পেরেছেন?
বলেই হনহন করে চলে গেল মোনা। .
.
পরেরদিন মোনা বেশ অবাকই হলো। সামান্য এ ধরনের কথা সাধারনত ছেলেরা গায়ে মাখে না। অথচ ছেলেটার গায়ে লেগেছে তার মানে ছেলেটার পার্সোনালিটি আছে।কিন্তু পর পর বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো ছেলেটা লাপাত্তা। কিছু আবার হলো না তো? নিজের প্রতিক্রিয়ায় নিজেই অবাক হয়ে গেলো মোনা। তার মানে ছেলেটার প্রতি একধরনের টান অনুভব করছে সে।
.
পরদিন সকালে নতুন একটা জিনিস আবিষ্কার করলো সে। জানালার পাশে এক তোড়া ফুল! নাহ্ ফুল পাঠাবার মতো কেউ তো নেই! ফুলগুলো এনে টেবিলে রাখতেই ফোনটা বেজে উঠলো।
— আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। ফুলগুলো নেবার জন্য ধন্যবাদ। শুভ জন্মদিন মোনা।
— কিন্তু কে আপনি,, হ্যালো…..
লাইনটা কেটে গেলো
.
টেবিলের উপর থেকে ফুলের তোড়াটা হাতে নিতে দেখতে পেলো একটা কলম! ওহ্ তাহলে এটা সেই ছেলের কান্ড! কিন্তু বাড়িও চেনে, ফোন নাম্বারও জানে, আজকে জন্মদিন এটা তো জানার কথা নয়!
মোনা ভাবলো এই ছেলে নিশ্চই ফোন করে তাকে দিনের পর দিন জ্বালাবে।
.
একটি ফোনের জন্য অপেক্ষা করে মোনা কিন্তু সে ফোন আর আসে না। মাঝে মাঝে ছেলেটাকে দেখে তবে এক পলকের জন্য। মাঝে মাঝে জানালার ওপাশে একটা ফুলের তোড়া আর একটা কলম থাকে। বান্ধবি ইরার সাহায্যে আলভির সব খবর পেয়ে যায মোনা। একটি ফোন কল অথবা এক পলক দেখার জন্য অস্থির হয়ে থাকে মোনা। কিন্তু পরের দুই সেমিষ্টারে ছেলেটা কলেজের মধ্যে ফাষ্ট হলো। মোনা খুব খুশি হলো । যাক ছেলেটা তাহলে আজে বাজে ছেলে নয়। মোনা জানে আলভি তাকে নিয়মিত ফলো করে , সব খবর রাখে। তার মেজাজ খারাপ লাগে একদিন সামনাসামনি আসলে কি হয়!
এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে মোনা খুব টেনশনে আছে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। আলভি!
— আসসালামু আলাইকুম।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। কনগ্রাচুলেশন মোনা। আপনি গোল্ডেন পেয়েছেন। রাখি….
— আলভি প্লীজ শুনুন….
— জ্বী বলুন
— আপনি আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন কেন?
— কষ্ট দিচ্ছি কোথায় ? ভালো ছেলে হবার চেষ্টা করছি।ভাল থেকো…..
লাইনটা কেটে গেলো। মোনা কিছুক্ষনের জন্য ভুলেই গেলো সে যে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তার ইচ্ছে করছে এই ছেলেটার সাথে আজকের দিনটা কোথাও ঘুরে আসে
.
দেখতে দেখতে দিন কেটে যায়। আলভি ছেলেটা ইন্জিনিয়ার হয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছে , মোনাও এইচ এস সি পাশ করে ডাক্তারিতে চান্স পেয়েছে। ওদের মধ্যে কথা হয় খুব কম। মাসে একবার অথবা কোন বিশেষ দিনে। আলভি বলেছে —- ” বিয়ের পরে প্রেম করবো” কারন আমি ভাল ছেলে হতে চাই…. হা হা হা …
নিজের কথার জালে নিজেই আটকা পড়ে গেলে মোনা। তাই সেও সে প্রতিক্ষাতে আছে। পরিবার থেকে বিয়ের চাপ আসছে। দু তিনটা নাকোচ করে দিয়েছে মোনা কিন্তু এবার তার বাবা নাছোরবান্দা। এতো ভালো ছেলে হাতছাড়া করা যাবে না।
— আলভি একটা কিছু করো। বাবা এবার বুঝি বিয়েটা দিয়েই দিবে।
— বেশ হবে অনেকদিন পর একটা দাওয়াত খেতে পাবো।
— ওহ্ হেয়ালি নয়, তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না আমি।
— তোমার বাবার কথাই মেনে নাও। ভাল ছেলে তো সহজে পাওয়া যায় না।
—- কি??? তু তু তুমি এটা বলতে পারলে? ঠিকাছে। বুঝতে পেরেছি
— তুমি বুঝেছ কচু…. টুট টুট
.
একটু পর ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে মন খারাপ করে বসে আছে মোনা। তার মা এসে অনেক বুঝিয়ে কাপড় পাল্টিয়ে দিলো। মোনা ঠিক বুঝতে পারছে না আলভি এমন করলো কেনো!
.
ছেলেপক্ষের সামনে বসে আছে মোনা। মাথা নিচু করে ,নাহ্ কিছুতেই ছেলের দিকে তাকাবে না।
ছেলের মায়ের কথা শুনে মন জুড়িয়ে গেলো। এই মহিলাটা তো বেশ! মনে মনে ভাবছে মোনা। এরপর তাদেরকে আলাদা একরুমে দেয়া হলো।
— এটা বুঝি আপনার রুম?
টেবিলের উপর এত বাসি শুকিয়ে যাওয়া ফুলের তোড়া রেখেছেন কেন? তোড়াটা বুঝি বিশেষ কারো দেয়া?
মোনার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো ।এ কি শুনছি আমি? স্বপ্ন না কি সত্যি?
— দেখি হাত পাতুন….. এটা স্পেশাল কলম, সেই কলমের ঘটনাটা মনে আছে তো!
হঠাৎ এমন বিপরীতমুখী ঘটনায় মোনা খুশিতে কেঁদেই দিলো
— উহু নো কান্নাকাটি। আমি আজীবন তোমার। হাসি মুখটাই দেখতে চাই।
এবার বলোতো আমি ছেলেটা কি ভাল হতে পেরেছি?
— ভাল না কচু! আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে…..
—
প্রেম করবা??
— হুম তবে….
— বিয়ের পরে…
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা