:- এই মেঘ কি করছো?(এশা)
 :– ভাবছি…তোমার কথা। (মেঘ)
 :- আমার কথা কেনো ভাবছো?
 :– তোমার মাঝে ভাবনায় হারিয়ে থাকতে ভাললাগে…!
 :- উফফ…তুমি এমন সব কথা বলো না…!
 :– সব সত্যি বিশ্বাস করো কিছুই মিথ্যা না।
 :- হুমম…আমি জানি। আচ্ছা জানো কাল কি স্বপ্ন দেখেছি?
 :– স্বপ্ন? কি দেখেছো?
 :- তোমার সাথে দেখা হয়েছে। তুমি আমাকে নিয়ে পাশাপাশি গৌধুলি বিকেলে হাটছো…সামনা সামনি
 নৌকায় বসে চোখে চোখ রেখে নিস্তব্দ সব কথা বলছো…আকাশের সূর্যোদয় আমারা একসাথে দেখলাম।
 রাত নামলো…আর তুমি কোথায় যেনো হারিয়ে গেলে।
 :– এই সব দেখেছো?
 :- হুমম…যদি স্বপ্নগুলি সব সত্যি হত। জানি কোন দিনো
 সত্যি হবে না তবুও….।
 :– সত্যি হবে না?
 :- তুমি তো অনেক দূরে। কিভাবে সত্যি হবে বলো…!
 এর পরে আর কোন রিপ্লে পায় নি এশা। মেঘের হঠাৎ করেই এভাবে অনলাইন থেকে চলে যাওয়া যেনো এশাকে
 ভাবিয়ে তুলছে। একরাশ ভাবনা এসে গ্রাস করছে তাকে।
 কি হলো মেঘের…যে এভাবে কোন রিপ্লে না দিয়ে চলে গেলো। মেঘতো কখনো এমন করে না। যতই কাজ
 থাকুক…এশার পারমিশন নিয়ে তবেই অনলাইন থেকে যেতো। কিন্তু আজ মেঘে এমন কেনো করলো
 সেটা যেনো এশা বুঝতেই পারছিলো না। পরেই মনে করে হয়তো কোন কাজে বিজি হয়ে গেছে তাই আর রিপ্লে দিতে পারে নি।
 .
 সকাল গড়িয়ে দুপুর…তবুও যেনো মেঘের আর একটাও মেসেজ নেই। যে ছেলে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় কথা না
 বললে থাকতেই পারতো না সে আজ এই পর্যন্ত একবারো খোজ পর্যন্ত নিলো না! এশার খুব খারাপ লাগছে। মেঘের
 ফোন নম্বারটা আগেই নিয়েছিলো এশা। ফোনটা হাতে নিয়ে মেঘকে ফোন দেয়…কিন্তু “আনএবল টু কন্টেক”
 দেখাচ্ছে বার বার। এশার অজান্তেই যেনো চোখে দুফোটা পানি চলে আসে। বার বার ফেবুতে লগইন করতে
 থাকে মেঘের একটি মেসেজের আশায়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল। এশার ফোন বেজে ওঠে…মেঘের
 ফোন দেখতেই তাড়াতাড়ি করে ধরে…
 :- সারা দিন কোথায় ছিলে? একবারো খোজ নাও নি…!  (এশা)
:– তুমি না বলতে তোমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা বটতলী। (মেঘ)
 :- হুমম….কেনো?
 :– একটু আসো…খুব তাড়াতাড়ি।
 :- কিন্তু কেনো?
 :– আসলেই বুঝতে পারবে। আর শোন শাড়ি পরে এসো…।
 এশাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মেঘ ফোন কেটে দেয়। এশা শাড়ি পরে তাড়াতাড়ি সেই
 বটেতলীতে যায়। এমন এক সারপ্রাইজ যে এশার জন্য অপেক্ষা করছে যেটা
 হয়তো এশা কল্পনাতেও ভাবে নি। কারন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ।
 :- মেঘ তুমি…..এভাবে… এখানে… কিভাবে কি? আমি কি স্বপ্ন দেখছি?(এশা)
 :– (…চুপ…)
 :- এই মেঘ কথা বলছো না কেনো?
 :– উফফফ….চুপ করো…চোখ ভরে দেখে নেই আমার সামনে থাকা পরীটাকে। এমন মায়াবী চোখ…ইচ্ছে
 করছে যেনো হারিয়ে যাই, এমন ঢেউ খেলা চুল… ইচ্ছে করছে যেনো ভেসে যাই…! এশা একটু লজ্জা পায় মেঘের কথা শুনে।
 :- এভাবে বলো না। আচ্ছা তুমি এখানে? সেই এত্তদূর থেকে এখানে কিভাবে আসলে?
 :– তোমার জন্য সাত সাগর পাড়ি দিতে পারবো না জানি। কিন্তু এই তোমার আর আমার মাঝের দূরত্বটুকু ঠিকই পার করতে পারবো।
 :- মনে হচ্ছে যেনো সব স্বপ্ন দেখছি!
 :– একটা স্বপ্ন যা তুমি দেখেছিলে…পূরন করতে এসেছি। ধরবে তো আমার সেই হাত? এশা নিশ্চুপ। মাঝে মাঝে নিরবতা যেনো কথা
 বলে। মেঘ বুঝতে পারে সেই নিরবতার কথা।
 .
 এশা আর মেঘ পাশাপাশি হাটছে। ছায়াপথের পিচ ঢালা রাস্তা যেনো এশা আর মেঘের না বলা ভালবাসার
 স্পর্শে যেনো জীবন ফিরে পাচ্ছে। এশার নিচু করে থাকা লজ্জা মাখা মুখটি যেনো মেঘ একদৃষ্টিতে চেয়ে
 আছে। মাঝে মাঝে এশার এলোমেলো চুলগুলি মেঘের মুখে এক নতুন অস্তিত্ব খুজে পেতে চাচ্ছে।
:- মেঘ…আমার সব কিছুই সেই স্বপ্নের মতই লাগছে।(এশা)
 :– হুমম…কিন্তু এটা বাস্তব।
 :- বাস্তবের এই সময় গুলি যদি জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে থাকতো।
 :– যত দিন পাশে থাকবো তত দিন তোমার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকেই এই স্বপ্নের মত করে সাজাবো।
 মেঘ আর এশা হাটতে হাটতে নদীর পাশে এসে দাঁড়ায়। একটা নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যেনো এশার সেই
 স্বপ্নের মত। মেঘ এশার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দেয়…
 :– স্বপ্ন তোমার অপেক্ষায়। সেই স্বপ্ন পূরনে যাবে আমার সাথে?
 এশা মাথা নেড়ে নিরবে সম্মতি জানায়। মেঘ এশাকে নিয়ে নৌকায় ওঠে। অসীম নদীর বুকে ভেসে
 চলেছে মেঘ আর এশা। সামনা সামনি দুজন….চোখে চোখ রেখে যেনো হাজারো না বলা কথা বলে যাচ্ছে তারা।
 :– তুমি সাতার পারো?(মেঘ)
 :- না..(এশা)
 :– তবে এভাবে আমার সাথে নৌকায় এলে যে?
 :- আমি জানি…আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি ঠিক আমাকে বাচিয়ে নিবে।
 :– যদি না বাচাই?
 :- ভাববো তুমি বাচাতে চেষ্টা করেছো কিন্তু তার আগেই আমি….
 :– এমন কথা বলো না এশা….! সময় গুলি যেনো খুব দ্রুতই কেটে যায় তাদের।
 .
 প্রায় সন্ধ্যা। সূর্য ডুবে যাবে এখনি। মেঘ গিয়ে এশারপাশে বসে
 :– আকাশ এখন কত একা হয়ে যাবে তাই না?(মেঘ)
 :- কই না তো। আকাশের সেই একাকিত্ত্ব দূর করতে চাঁদ ঠিক আসবে তার সব আলোটুকু নিয়ে।
 :– তুমিও আসবে আমার আকাশে সেই চাঁদ এর মত সব আলো নিয়ে?
 কথাটা শুনেই এশা মাথা নিচু করে থাকে। মেঘ আর কিছু বলে না। নৌকাতে দুজন পাশা পাশি সেই সূর্যস্ত দেখে।
 .
 আধারের মাঝে চাঁদ এর আলো আলোকিত করে রেখেছে চারিদিক। নৌকা থেকে নামতেই মেঘ এশার দুচোখ
 হাতদিয়ে চেপে ধরে…
 :– এশা আমাকে বিশ্বাস করো?(মেঘ)
 :- বিশ্বাস করি বলেই তো আজ তোমার সাথে।
 (এশা)
 এশার কথা শুনেই মেঘ এশাকে নিয়ে নদীর পাশের ঝর্ণার
 কাছে নিয়ে যায়। ঝর্ণার কলাতন যেনো তাদের ভালবাসার কথা বলছে। মেঘ এশার চোখ ছেড়ে দেয়… আর
 এশাকে চোখ খুলতে বলে। এশা চোখ খুলেই দেখে মেঘ তার সামনে হাটু গেড়ে একটা আংটি নিয়ে বসে আছে…
 :– আজ এই রাত্রে,
 সাক্ষি রাখতে চাই এই চাঁদকে… সাক্ষি রাখতে চাই এই ঝর্ণার কলাতনকে…
 সাক্ষি রাখতে চাই এই ঝর্ণার প্রতিটি স্রোতধারাকে। সেই একটি কথাটির সাক্ষি…”সারাটি জীবন কি এভাবে
 পাশে থাকবে আমার? পাশা পাশি হাটবে কি আমার সাথে…? এই চাঁদ এর মত আলো দিয়ে কি রাঙ্গাবে আমার
 জীবনকে..?”
 কথা গুলি বলতেই মেঘ দেখে এশা যেনো কোথায় হারিয়ে
 যাচ্ছে…! মিলিয়ে যাচ্ছে ওই আকাশের বুকে। মেঘ এশাকে ধরতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না… মেঘ চিৎকার
 করে ডাকতে থাকে এশাকে কিন্তু এশা হারিয়ে যাচ্ছে…মেঘকে ছেড়ে কোন এক অজানায়…!
 .
 মেঘ ঘুম থেকে জেগে ওঠে। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলো মেঘ। এশা
 হারিয়ে যাচ্ছে… মেঘ ভাবতেই বুক ধুক ধুক করছে। তাড়াতাড়ি করে
 ফেবুতে লগ ইন করে মেসেজ অপশনে গিয়ে এশার আইডি ওপেন করে। সেখানে খুব ছোট্ট করে লাল
 কালিতে লেখা “You can’t reply in this convention”। শেষ একবছর থেকে এই লাল কালির লেখা লিখা আছে এশার
 আইডিতে। মেঘ প্রায় প্রায়ই এমন স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে ওঠে আর এশার আইডিতে গিয়ে এমন লেখা
 দেখতে পায়। কারন এই সব স্বপ্নই একদিন মেঘকে দেখিয়েছিলো এশা। যে স্বপ্ন গুলি আজ মেঘ দেখে
 দেখে ঘুম থেকে জেগে ওঠে কারন মেঘ যে সত্যিই এশাকে ভালবাসতো। আর এখনো ভালবাসে। কিন্তু এশা
 কেনো মেঘকে এভাবে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে চলে গেলো…সেটা আজো মেঘের অগোচরে। মেঘের অনেক
 কিছুই নিয়ে গেছে মেয়েটা শুধু বিনিময়ে দিয়ে গেছে একবুক কষ্ট যা আজ মেঘকে নিরবে কাদিয়ে যায়।
 তবুও মেঘ সেই লাল কালির লেখা গুলি দেখেই কাটিয়ে দেয় তার নির্ঘুম প্রতিটি রাত…।
  










