ফিরে পাওয়া

ফিরে পাওয়া

আজ আমার দ্বিতীয় বিয়ে। আমি এখন সেই বাসর ঘরেই বসে আছি। যদিও এই ব্যাপারটা প্রতিটি নারীর জীবনেই খুব কষ্টের আর দুর্ভাগ্যের।কিন্তু বাস্তবতার কাছে খুবই সামান্য। আমি এখন আমার দ্বিতীয় স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছি, আর আমার জীবনের প্রথম মানুষটার কথা ভাবছি!! পারিবারিক ভাবেই তার সাথে বিয়েটা হয়েছিল আমার।তবুও খুব সুখেই ছিলাম আমরা।বিয়ের দেড় বছরের মাথায় আমার কোল আলো করে আসে, আমার প্রথম সন্তান!!

আমার মেয়ে দিশা ওর তিন বছরের মাথায় আমার আগের স্বামি হটাত কেমন জানি বদলাতে শুরু করে। প্রথমে বুঝিনি পরে বুঝতে পারি!! দেরি করে বাসায় আসা, আমাকে বা মেয়েকে সময় না দেওয়া, কথায় কথায় রেগে যাওয়া, এমনকি গায়ে হাত তোলাও পরে জানতে পারি অফিসের এক মেয়ে কলিগের সাথে তার নাকি পরকীয়া চলছে!! একটা সময় ডিভোর্স হয়ে যায় আমাদের। জীবনের শ্রেষ্ঠ চেষ্টা করেছিলাম, মেয়েটাকে নিজের কাছে রাখার কিন্তু সমাজের নিয়মের কাছে পারি নি, হেরে গেছি।

এমন বহুদিন গেছে যে শুধু মেয়েটাকে একটা নজর দেখার জন্য ওদের বাড়ির সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি, দেখা করতে দেয়নি। শেষে বাধ্য হয়ে বাবার মায়ের জন্য বিয়েতে রাজি হয়েছি।তবে আমার দ্বিতীয় স্বামীর আগের ঘরে দুজন সন্তান আছে, মেয়েটা বড় ৮ বছর আর ছেলেটা ছোট ৬বছর বয়েস।গত বছর হঠাত করেই মারা যান তার স্ত্রী। এসব ভাবছিলাম, তারপরেই দরজা খোলার আওয়াজে বুজলাম আমার বর্তমান স্বামী ঘরে এসেছে। তাকে সালাম করতে উঠতেই সে বলল

_দেখুন আমি শুধু আমার সন্তানদের জন্য এই বিয়েটা করেছি, এছাড়া কিছু না। ওদের দেখে রাখবেন আর আমার পরিবারের খেয়াল রাখবেন।

এই বলে আমার উত্তরের আশা না করেই বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।আর কোনো কথা হয়নি। সকালে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলাম, দেখলাম শাশুড়ি মা রান্না করছে আর ননদ সাহায্য করছে। আমিও ওদের সাথে কাজে সাহায্য করলাম। কয়েকদিনের মধ্যে শশুর শাশুড়ি ননদ সবার সাথে বেশ ফ্রি হয়ে গেলাম।সাথে বাচ্চা দুটোর ও ওরা আমায় মা বলেই ডাকে!! ওদের সব দায়িত্ব ই এখন আমার কিন্তু তবুও আমার মেয়েটার কথা মনে পড়লেই আমার কলিজা পুড়ে যেত,কাউকে বলতাম না, নীরবে কাঁদতাম।

খুব প্রয়োজন ছাড়া আমার এই স্বামী খুব একটা কথা বলত না, এছাড়া বাড়ির সবাই তাকে খুব ভয় পেত,আর মান্য করে চলত!! একদিন মেয়ের কথা মনে পড়ায় বেলকনিতে গিয়ে কাঁদছিলাম,আমার স্বামী কখন এসে পাশে দারিয়েছে বুঝতে পারিনি,সেইদিনই সে প্রথমবার আমার কাঁধে হাত রাখে। চোখের পানি লুকাতে কোনোরকম আমি চলে আসি।এভাবে প্রায় ৩ মাস চলে যায়।

একদিন ঘুম থেকে উঠতেই দেখি উনি পাশে নেই। কিন্তু সেতো এত সকালে ওঠে না। পরে ভাবলাম হয়ত কোনো কাজ আছে। রান্না শেষে ব্রেকফাস্ট টেবিলেও তাকে দেখলাম না। শাশুড়ি মা ননদ কেউ ই কিছু জানে না। সারাদিনেও একটা খোঁজ নেই। সন্ধ্যায় ননদিনী বলল, সে এসেছে আমি যেতেই দেখলাম ড্রয়িংরুমে সবাই আছে।আমার স্বামী এগিয়ে এসে আমার হাতে কিছু কাঠগোলাপ দিয়ে বলল “শুভ জন্মদিন”

আমি অবাক কারন এইদিনটির কথা আমার নিজের ই মনে নেই। তখনি ননদ এসে আমার চোখ বন্ধ করে ধরল, বলল ভাবি সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য। তার কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দিতেই আমি যেন একটা বড় রকমের ধাক্কা খেলাম, কারন আমার সামনে আমার মেয়ে দিশা দাঁড়িয়ে, আমার চোখ খুলে দিতেই দৌঁড়ে আমার বুকে যাপিয়ে পড়ল। মা মেয়ে দুইজনেই কেঁদে কেটে অস্থির।

তখনি আমার স্বামী বলল, সেদিন তোমার কান্না দেখেই ভেবেছি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসব, মা বাবাও রাজি হল। আর দিশার বাবা নতুন বিয়ে করায় দিশাকে নিয়েও তার সতমা খুব বিরক্ত ছিল। তাই ওর বাবাকে বলায় আর আপত্তি করেনি। তাই তোমার জন্মদিনেই নিয়ে এলাম, তাই সারাদিন বাড়ি ছিলাম না। তখন আমার শাশুড়ি মা এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, আজ থেকে না হয় আমার আরেকজন নাতনী আমার কাছে রইল।

তখনি আমার স্বামী তার দুই ছেলে মেয়েকে ডেকে বলল এই যে তোমাদের আরেক টা বোন, যাও তাকে বাড়ি টা ঘুরে দেখাও। অন্যদিকে আমার মনে হল এত ভালোও কোনো পরিবার হয়।সবার চোখে আনন্দঅশ্রু। আর আমার মধ্যে প্রকৃত একজন মানুষ জীবনে পাওয়ার আনন্দ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত