অনেকদিন পরে আজ আবার সিগারেটের সাথে সখ্যতা গড়ে তুললাম। হয়তো আজকের পর থেকে আবার এই সিগারেটই হবে আমার প্রিয় সঙ্গী।
কষ্টটা শেয়ার করার জন্যও তো কাউকে প্রয়োজন। আর আমি যেহেতু কোন মানুষের সাথে নিজের কষ্টটা শেয়ার করতে পারিনা সেহেতু এই সিগারেটের
সাথেই সখ্যতা গড়ে তোলা। মানুষের সাথে শেয়ার না করতে পারার কারণ হলো মানুষগুলো অদ্ভুত টাইপের বিশ্বাসঘাতক হয়। আজ কিছু শেয়ার করলাম
দুদিন পর সে সেটা নিয়ে আমাকে উপহাসের পাত্র বানাবে, নয়তো আমার দুর্বলতার সুযোগ নিবে। কিন্তু সিগারেট কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবেনা। আমি
তাকে না ছাড়লে সেও আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা।
হুম!!!
একটা সময় কারো একজনের জন্য ছেড়ে দিছিলাম সিগারেট কে। কারণ সে বলেছিল ভাল হতে হবে আমাকে। আমি যদি ভাল হতে পারি তবেই তাকে পাবো।
কিন্তু সৌভাগ্য আমার আমি তাকে পেলাম না। আজ সে আমার না অন্য কারো। ভাগ্য বরাবরই আমাকে নিয়ে করুণ এক খেলায় মত্ত হয়। এবারও সে
তাই করেছে খেলে দিয়েছে আমাকে দিয়ে। এতদিনের সম্পর্ক,এত স্বপ্ন সব শেষ হয়ে গেল নিমিষেই।
.
যার জন্য নিজেকে পুরোপুরিই বদলে ফেলেছিলাম সে আজ অন্য কারো। নিজের চোখেই দেখে আসলাম তাকে অন্য কারো হয়ে যেতে। বউয়ের সাজে
অনেক সুন্দর লাগছিল তাকে দেখতে। বলেছিলাম তাকে তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগতেছে রে। জবাবে সে শুধু ছলছল চোখে একবার তাকিয়ে ছিল
আমার দিকে। তার এই চাহনীর মানে টা আমি বুঝি সে বলতে চাচ্ছে অনেক কিছু। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে উঠতে পারছে না সে। অনেক মজা করেছি,
হাসি ঠাট্টা,আড্ডাবাজি,খানা পিনা সবই অনেক আনন্দের সাথে করেছি। তাকে বুঝতেই দেইনি যে আমার মন খারাপ। আমার ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার
হয়ে যাচ্ছে। নাহ্ কিছুই বুঝতে দেইনি তাকে কিন্তু আমি জানি সে ঠিকই বুঝেছে সবকিছু। শুরু থেকে শেষ অবধি সামনাসামনিই ছিলাম তার। একটু সময়ের
জন্যও চোখের আড়াল হইনি। যতবার চোখাচোখি হয়েছে ততোবারই তার চাহনিতে
একটা প্রশ্নই ফুটে উঠেছে।
সে জানতে চাচ্ছে কিভাবে আমি করছি এসব???
আসলে আমার পক্ষে সবই সম্ভব কারণ আমি যে গিরগিটি। সময়ের প্রয়োজনে নিমিষেই নিজের রং পাল্টাই আমি।
.
ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছিলাম তখনি তিরার ডাক পড়লো। ও হ্যা আপনাদের তো বলতে ভুলেই গেছি ওর নাম তিরা। এক পিচ্চিকে দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে।
মনে মনে চিন্তা করতেছি কি আর এমন বলবে…
হয়তো বলবে ভাল থাকিস,নিজের যত্ন নিবি,বেখেয়ালিভাবে চলবি না,উল্টাপাল্টা কিছু খাবি না এইসবই তো।
এছাড়া আর কি এমন বলতে পারে কিছুই তো বলার নেই। ভাবতে ভাবতেই ওর সামনে চলে এলাম…
.
—কি রে হঠাৎ ডাকলি যে???
—এমনি
—হুম
—শুন
—হুম জানি কি বলবি
—কি???
—ভাল থাকবি,নিজের খেয়াল রাখবি,উল্টাপাল্টা কিছু
খাবি না ইত্যাদি ইত্যাদি…
আর হ্যাঁ বড় জোর আমাকে একটু জ্ঞান দিবি এই বলে যে দেখ জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা। তুই আমার থেকে ভাল কাউকে পাবি।
এইতো এইসবই তো বলবি তাই না???
—হুম
—শুন না
—বল
—আজ আমার একটা ইচ্ছে পূরণ হইছে রে।
—কি ইচ্ছে???
—মনে আছে তুই একদিন আমাকে প্রশ্ন করছিলি হুট করে যদি তোর কোনদিন বিয়ে হয়ে যায় তখন কি করবো???
বলছিলাম না তোর বিয়েতে বসে মুরগির রান চিবাবো। সেই ইচ্ছে টা আজ পূরণ হইছে রে।
কিন্তু তুই বলছিলি তুই আমাকে গরুর রান খাওয়াবি।
——তুই কি কখনোই সিরিয়াস হবি না???
—তুই তো জানিস সিরিয়াস হওয়াটা আমার পক্ষে হয় না। আর এই যে আমি যদি এখন সিরিয়াস হইতাম তাহলে কি তোর বিয়েতে মজা করতে পারতাম???
পারতাম না তো হয়তো দেবদাস সেজে বসে থাকতাম কোথাও।
—হুম
—আচ্ছা শুন এখন…
আমাকে নিয়ে অনেক ভাবছিস আর ভাবতে হবে না। আমি ভাল থাকবো বিশ্বাস কর অনেক ভাল থাকবো।
পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে দেখবি আমিও বিয়ের পিড়িতে বসে গেছি হুট করে।
তার আগে অবশ্য চুটিয়ে প্রেম করবো কয়েকটা। তুই ভাল থাকিস আর অনেক অনেক শুভকামনা রইলো…
.
কথাগুলো শেষ করতে পারিনি,মুখের হাসিটাও ধরে রাখতে পারিনি। গলাটা ধরে আসছিল আর চোখগুলো কেমন জানি ঝাপসা
হয়ে যাচ্ছিল। তাই সরে আসলাম তিরার কাছ থেকে তারপর ওর সামনে আর যাইনি দূর থেকেই দেখছি শুধু।
সামনে গিয়ে মায়াটা আর বাড়াতে চাইনি আমি।
.
তিন বছর আগে ওর সাথে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল আমার। তখন আমি ২য় বর্ষে আর এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ার।
রিলেশনের শুরুতেই সে বলেছিল বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে সে কিছু করতে পারবেনা।
সেই সুবাদেই আজ সে অন্য কারো হয়ে গেল। আর যেহেতু আমি এখনো একজন ছাত্র সেহেতু আমারও
করার কিছুই ছিল না। তাই অসহায় ভাবে আবারও ভাগ্যের কাছে পরাজিত আমি।
অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম পাগলিটাকে নিয়ে। কত ভালবাসা,কেয়ারিং,শাসন,মান-অভিমান সব হারিয়ে গেল আজ।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য অনেক। বাস্তবতা অনেক কঠিন কিন্তু সবসময় এটাকে মেনে
নিতে হয়। আমিও মেনে নিয়েছি খুব ভাল ভাবেই। গত এক সপ্তাহে নিজেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে নিয়েছি
ওর কাছ থাকে। আজকের পর তো পুরোপুরিই নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে।
ভুলে যেতে হবে জীবনে তিরা নামের কারো অস্তিত্ব ছিল।
.
আপনাদের গল্প শোনাতে শোনাতে আমার সিগারেট টাই শেষ হয়ে গেল। নতুন আরেকটা ধরিয়ে রাস্তায় হাঁটা শুরু করলাম।
রাত অনেক হয়ে গেছে এভাবে রাস্তায় বসে থাকা ঠিক হবে না। রাতের রাস্তাটা অনেক ফাঁকা আর নিশ্চুপ অথচ দিনের
রাস্তাটা কত ব্যস্ততম। আমার জীবনটাও কয়েকদিন আগে দিনের রাস্তার মতো ছিল,
কিন্তু আজকের পর সেটা রাতের রাস্তার মতো। এই তো সিগারেট খাওয়া নিয়ে মিথ্যে বলেছিলাম পাগলিটাকে।
তারপর একদিন যখন তাকে সত্যি টা বললাম তখন তার কি রাগ। আর আমার কত চেষ্টা তার রাগ ভাঙানোর।
অবশেষে আমি যখন ব্যর্থ তখন সাহায্য নিলাম আপুর। তারপর গিয়ে তার রাগ কমেছিল কিন্তু আমার সাথে
ঠিকমতো কথা বলেনি দুদিন। কিন্তু আজ রাগ দেখানোর জন্য সে নেই। হঠাৎ গাড়ির হর্ণের আওয়াজে হুশ হলো আমার।
রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি আর একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে আমার দিকে তারপর একটা ধাক্কা।
এরপর আর কিছু মনে নেই আমার।
.
তারপর যখন হুশ হলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলামমেসের রুমে নিজের বিছানায়। মোবাইলে ভোঁ ভোঁ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল তাহলে।
আসলে ফোনটা সবসময় ভাইব্রেট মোডে থাকে তো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি তিরা কল দিয়েছে। মানে আপনারাও বুঝতে পারতেছেন উপরের অংশটা
আমার দুঃস্বপ্ন।
আপনাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে কলটা কেটে গেল। দ্বিতীয়বার কল আসতেই বকা শুনার পুরো প্রস্তুতি
নিয়েই রিসিভ করলাম। কারণ এখন সময় দুপুর ২ টা বেজে ০৩ মিনিট। আর আমি জনাব এখনো ঘুমাচ্ছিলাম।
বুঝতেই পারতিছেন বকা কেন খাবো এখন..।।
.
—হ্যালো
—স্যার আপনি কি অনেক ব্যস্ত???
—নাহ্ তো
—তাহলে সকাল থেকে তোর কোন খোঁজ খবর নাই
কেন???
কি করতেছিলি এতক্ষণ??? (ধমকের সুরে)
—স্বপ্ন দেখতেছিলাম।
—কিসের স্বপ্ন???
—তোর বিয়ের।
—বাহ্ ভাল তো।
তা জনাব খাওয়া করছেন কি আপনি???
—নাহ্
—কেন জানতে পারি???
—ঘুম থেকে উঠলাম মাত্র তা….
—কি বললি তুই???
এই তুই ফোন রাখ আমার সাথে কথা বলবি না আর।
আমাকে কল,ম্যাসেজ কিচ্ছু দিবি না তুই।
—ভালবাসি তো
—তোর ভালবাসা তোর কাছেই রাখ।
আর তুই ঘুম নিয়েই থাক।
বলেই ফোনটা কাটে দিল…
.
কপাল আমার…
আপনাদের তো অনেক গল্প শুনাইলাম যাই এবার। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া করে পাগলিটার রাগ ভাঙাতে হবে তো।
নাহলে তো উনি আবার খাওয়া দাওয়ার উপর ধর্মঘট ডাকবে। আমি বুঝিনা উনি কিভাবে পারেন না খেয়ে থাকতে।
আমি আবার একটুও না খেয়ে থাকতে পারিনা। একদিন অবশ্য রাগ করে না খেয়ে ছিলাম কিন্তু রাতে
গিয়ে আর পারিনি। তখন সারাদিন যা খাই তার দ্বিগুণ খেয়েছিলাম।
.
…………………………সমাপ্ত…………………………..