সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দুইটা মেসেজ এসেছে ফোনে। একটায় লিখা আছে “ক্যাশ ইন ১০ হাজার টাকা”। আরেকটা নতুন প্রেমিকার। ওটায় লিখা ” টাকা পেয়েছ জান?”। তাড়াতাড়ি উঠে চোখে পানি দিয়ে আবার চেক করলাম। না ঠিক ই আছে। বিকাশে আমার একাউন্টে ১০ হাজার টাকা। আর টাকাটা যে প্রেমিকা দিয়েছে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। চুপচাপ থাকলাম রুমমেট বলদগুলোকে এই কথা বলা যাবে না। শালারা কথায় কথায় ট্রীট চায়। এই কথা শুনলে নির্ঘাত ২ হাজার টাকা চলে যাবে ওদের খাওয়াতে। মনের মধ্যে যদিও পিটবুলের গান চলছিল। কিন্তু বাইরে অপরাধী গানের মতো মুখ করে ছিলাম। প্রেমিকার মেসেজের রিপ্লাই দিলাম। হ্যাঁ জান টাকা পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ এতো টাকা কেন?
ওপাশ থেকেঃ তোমার রুমমেটদের এই টাকা দিয়ে দিও। ওরা কিছু কিনে নিবে।আর দুপুরে তোমাকে নিয়ে বের হবো শপিং করার জন্য।তোমার জন্য যা যা লাগে আমি কিনে দিবো।
আমিঃ ওদের দশ হাজার টাকা দিয়ে দিবো? মানে বুঝলাম না।
ওপাশ থেকেঃ হ্যাঁ, ওদের দেখিয়ে দেও তোমার প্রেমিকার মন কেমন।
আমিঃ ঠিক আছে দিয়ে দিলাম।( যদিও দেইনাই। দিমুও না)
ওপাশ থেকেঃ ঠিক দুপুরে রেডি থাকবা কিন্তু।
আমিঃ ঠিক আছে।
আমার এই প্রেমের বয়স মাত্র ২৬ দিন। কিছুদিন আগেই নাদিয়া নামের এই মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয় টিএসসিতে। একা বসে আছি দেখি একটা প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ফুল বিক্রি করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসে বললো ” ভাইয়া এখান থেকে আপনাকে একটা ফুল কিনতে হবে”। আমি অবাক হয়ে বললাম “কেন?”। নাদিয়া উত্তর দিলো ” আসলে ফুল গুলো ওর না, একটা পিচ্চি মেয়ের। মেয়েটার খুব অসুস্থ ছিল সেদিন। তাই ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নাদিয়াই ওর ফুল বিক্রি করছে। এসব শুনে ওর সবগুলো ফুল কিনে নিয়েছিলাম ( টিউশনির টাকা পাওয়াতে পকেট গরম ছিল)। তারপর সেখান থেকেই নাদিয়ার সাথে আমার পরিচয়।
নাদিয়া আর আমি মার্কেটে ঘুরছি আর শপিং করছি। ও আমাকে ৫ টা প্যান্ট, ২ টা শার্ট ২ পাঞ্জাবি আর ৫ টা টিশার্ট কিনে দিয়েছে। আমি ওকে একটা জামা কিনে দিতে গিয়েছিলাম।ও একদম রাজি হয়নি। বলেছে আমি চাকরি পেলে তখন আমার কাছে থেকে ইচ্ছেমতো মার্কেট করে নিবে।মনে মনে ভাবছি আল্লাহ আমার কপালে কি প্রেমিকা দিয়েছে এটা। এতো ভালো কপাল কোনো ছেলের হয়!
নাদিয়াই বললো, চলো আজ দুজন একসাথে ইফতার করি? মেসের পঁচা ইফতার খাইতে খাইতে পেটের খারাপ অবস্থা। তার উপর প্রেমিকার এই চমৎকার অফার শুনে মনটা একদম আনন্দে নেচে উঠলো। পুরান ঢাকা এসেছি নাদিয়ার সাথে ইফতার করতে। কাবাব, কাচ্চি, বিরিয়ানি কি ছিল না সেই ইফতারে। ইফতার করে নাদিয়া বললো ” চলো তোমাকে মেসে পৌঁছে দেই”। সিএনজি তে উঠে নাদিয়ার কাঁধে মাথা দিয়ে গল্প করছি। কখন যে ঘুম এসেছে মনে নেই।
ঘুম ভেঙ্গে দেখি হাসপাতালে শুয়ে আছি। সামনে একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে। উনি আমার চোখ খুলতে দেখে বললেন ” খুব বেঁচে গিয়েছেন এবার। একটা কিডনি নিয়েছে খালি”। অপেক্ষা করুন এক্ষুনি পুলিশ আসবে। ডাক্তারের কথা শুনে বা পাশের কোমরে হাত দিয়ে দেখি পিছন দিকে ব্যান্ডেজ করা। বাংলা ছবির মতো মনে হলো স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি ডাক্তার কি বলে এসব!
একটুপর পুলিশ এগিয়ে এসে বললো “আপনি রুদ্র আহমেদ?” মাথা উপর-নিচে করে “হ্যাঁ” জানলাম। উনি বললেন আপনার সাথে কি ঘটেছিল সব বিস্তারিত ভাবে বলুন তো শুনি। পুলিশ কে সব ঘটনা খুলে বললাম। উনি শুনার পর বললেন ” হায়রে বলদা বেডা আজকালকার দিনে ২৬ দিন প্রেম করে এতো টাকা কোনো মেয়ে খরচ করে বলদ কোথাকার! ঢাকা শহরে ইদানীং একটা চক্র নেমেছে। এদের কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্যবান মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা তারপর সুযোগ বুঝে কিডনি চুরি করা। গত তিন মাসে এমন ৮ টা কেস ঘটেছে। আপনি নয় নাম্বার। সবার একটা করে কিডনি নিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। আপনাকে রাতে রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকে টহলদার পুলিশ তুলে এনে এখানে ভর্তি করে। ডাক্তার কে ডাক দিয়ে বললাম ” ডাক্তার আমার আরেকটা কিডনি বের করে নেন। এই জীবন রাখমু না”।