টাকার চিন্তাটা বার বার শুধু মাথায় এসে ভিড়ে বসছে।কাল চলে গেলে পরশু আরশির বার্থডে।পকেটে যে একশ টাকার নোটটা ছিল ওটা ছাড়া আর একটা দুইটাকার নোটও এখন আমার কাছে নাই।দুপুরে হৃদয়ের কাছে টাকা ধার চাইলাম ও বলল ওর কাছে নাকি এখন টাকা নাই।টিউশানিতে আন্টিকে বলেছিলাম উত্তরে আন্টি সাফ্ জানিয়ে দিল যে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমাকে টাকা দিতে পারবেনা।এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখি আরশির কল এসে হাজির।
:- হ্যালো কি করো বাবু? (আরশি)
:-এইতো ভাত খাইতে যাবো। (আমি)
:-ও আচ্ছা যাও।
:- তুমি খেয়েছ?
:- হুম।আমি জানি বাবু তুমি টাকার জন্য পাগলামি করতেছ।কেন আমাকে দামি গিফট কিনে দিতে হচ্ছে বাবু? বলো
:- আমি নিশ্চুপ রইলাম।
:-বাবু বিশ্বাস করো তোমার কাছ থেকে দামি গিফট নেওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।শুধু ওইদিন সারা সকালটা তোমার হাত ধরে আমাকে হাটতে দিও।সেটাই হবে তোমার দেয়া আমাকে সবচেয়ে সেরা গিফট।এইটুকু পারবেনা বাবু?
:- হুম পারব।
:- গুড।শুনো এখন ভাত খেয়ে সোজা ঘুমিয়ে পড়বা।মেসেন্জারে যেন এক্টিভ না দেখি।ঠিক আছে?
:- আচ্ছা
টুট….টুট….টুট
আমি সেতুজিৎ।বর্তমানে একটা নামকরা সরকারি কলেজে ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ছি।আর এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিলাম সে আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড।ইন্টার ১ম বর্ষ।অামাদের সম্পর্কটা ৭ মাসের।সময়টা দৈর্ঘ্যের দিক থেকে দীর্ঘ না হলেও ভালোবাসার দিক থেকে অনেকটা ব্যাপক।আমাদের সম্পর্কের পর থেকে এইটাই আরশির প্রথম বার্থডে।তাই সম্পর্কের প্রথম জন্মদিনে ভালো কিছু একটা দিতে চাইছি।মেয়েটা কখনোই মুখ ফুটে আমার কাছ থেকে কিছু চাইবেনা।সবসময় আমাকে দিয়েই গেছে বিনিময়ে শুধু আমার পাশে থাকার বাহানা খুঁজেছে।কয়জন মেয়েই বা এমনটা করতে পারে।
এখন যদি একশ টাকা নিয়ে গিফট কিনতে যাই তাহলে দোকানদারও লজ্জা দিবে।কি করব বুঝতে পারছিনা।পরে ঠিক করলাম যে- আমাকেই কিছু একটা করে টাকা যোগাড় করতে হবে।পরদিন সকালে রফিক আংকেলের বাসায় চলে গেলাম।রফিক আংকেল রাজমিস্ত্রির বড় কনট্রাকটর।রফিক আংকেলকে যখন কাজের কথা বললাম তিনি কোনো ভাবেই রাজি হচ্ছেননা।পরে অনেক বুঝিয়ে রাজি করাতে পারছি।ওনার সহায়তায় সাইডের একটা বিল্ডিংয়ে জোয়ালার কাজে লেগে গেলাম।কাজে আসার সময় মোবাইলটা বন্ধ করে রেখে আসছি।যাতে আরশির সাথে কথা বলতে না পারি।দুপুরে সবাই ভাত খেতে চলে গেল কিন্তু আমি যায়নি, বাসায় সন্দেহ করবে তাই।সময়মত আবার কাজে লেগে পড়লাম।খালি পেটে ইট টানতে গিয়ে হঠাৎ একটা ইট হাত থেকে ছুটে আমার পায়ের উপর পড়ল।বৃদ্ধাঙ্গুল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।আমি একহাতে আঙ্গুলটা জোরে চেপে ধরলাম।পানি পান করলাম।কিছুসময় পর রক্তক্ষরণ বন্ধ হলো।অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো কাজ করতে গেলে বেগ তো পোহাতেই হবে।সময়মত কাজ শেষ হল।অত:পর ভালো করে সাবান দিয়ে গোসল করে নিলাম।তারপর মিস্ত্রির দেয়া তিনশ টাকা নিয়ে খুশিমনে সোজা বাসায় চলে আসলাম।ক্লান্ত লাগছে খুব।মোবাইলটা অন করতেই দেখি১০৩টা কল এবং ৩০টা মেসেজ এসে হাজির।আমি একটা একটা করে পড়তে শুরু করলাম।সবকটি মেসেজে ঠিক এইরকম লেখা যে- কি করছো বাবু,মোবাইল বন্ধ কেন,প্লিজ মোবাইলটা অন করো,মিস করছি তো বাবু।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে আরশিকে কল দিলাম।একবার রিং হতেই রিসিভ হল।
:-কোথায় ছিলে এতসময়, মোবাইল বন্ধ ছিলো কেন, তুমি ঠিক আছো তো, আমাকে ভুলে গেছ তাই না? (আরশি ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে একটানা প্রশ্নগুলা আমাকে করল)
:-একটা একটা করে উত্তর দিই? ( আমি)
:- হু দাও।( কান্না সুরে)
:- আগে কান্না বন্ধ করো।কান্না না থামালে আমি কোনো উত্তর দিব না।
:- হু এইবার বলো।
:- আসলে ব্যাটারিতে চার্জ ছিলোনা তাই মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছিলো।
:- সত্যি বলছ তো??
:- বিশ্বাস করোনা আমাকে?
:-হু করি তো।
:- তাহলে…..
:- আচ্ছা বাদ দাও ওইসব কথা। শুনো কাল সকাল ১০টাই সিআর পার্কে চলে আসবে।ঠিক আছে?
:- হুম
:- ১০টা থেকে যেন ১মিনিটও দেরি না হয় মত।
:- হুম
:-আর একটা কথা কাল আমি নীল ল্যাগিন্স পড়ব।সো তুমিও নীল শার্ট পড়বা পূজোয় যেটা কিনে দিছিলাম সেটা।মনে থাকবে?
:-হুম
:- অনেকক্ষন থেকে খেয়াল করছি তুমি খালি হুম হুম করে যাচ্ছ।কথা বলতে পারোনা তুমি?
:- বলতে পারি। কিন্তু…
:- কিন্তু কি বলো।
:- আজ সব কথা বলে ফেললে কাল কি বলব।তাই কালকে আমার পাগলিটাকে বলব বলে কিছু কথা জমিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।
:- ও ভালো।যে কথাগুলো বলছি সেগুলো মাথায় রাখবা।
:- আচ্ছা।
:- লাভ হউ
:- টু……
:- ওই ঠিক করে বলো ( আরশি)
:- ভালোবাসি তোমাই ( আমি)
:-খাঁটি বাঙ্গালী। ( আরশি)
টুট….টুট…..টুট।।।।
চারশত টাকা নিয়ে মার্কেটে আসলাম।অনেক ঘুরাঘুরি করলাম কিন্তু বাজেটের মধ্যে তেমন ভালো কিছুই পাচ্ছিনা।পরে ৩৫০ টাকা দামের একজোড়া নুপুর কিনে বাসায় চলে এলাম।
পরদিন সময়মত পার্কে গিয়ে উপস্থিত হলাম।আসার সময় ফুলবিক্রেতার কাছ থেকে একটা ২০টাকা দামের গোলাপ নিয়েছি।হাত ঘড়িতে ১০টা বেজে ৩মিনিট এখনো আরশি আসছেনা।সামনে তাকাতেই দেখলাম আরশি দাড়িয়ে আছে।নীল ল্যাগিন্সে আরশিকে একদম নীল পরীর মত দেখাচ্ছে।ঘন কালো চুলগুলো একপাশ করে ছেড়ে দেয়া।মাঝে মাঝে হালকা বাতাস অবাধ্য চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে।আমি অপলক চেয়ে রইলাম।
” দয়া করে এইবার হা টা বন্ধ করেন মশা -মাছি ঢুকে যাবে”।(আরশি কথাটা বলতে বলতেই আমার পাশে এসে বসল।) আমি পাশ থেকে লালচে গোলাপটা আরশির হাতে দিলাম।আরশি গোলাপটা নাকের কাছে নিয়ে শুধু ঘ্রাণ নিচ্ছে।আমি আস্তে করে আরশির পায়ের পাশে গিয়ে বসে পড়লাম।
“এই এই নিচে বসলে কেন?( আরশি)
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে আরশির ডান পা টা আমার হাটুর উপর রেখে নুপুর পড়িয়ে দিলাম।এইভাবে অন্য নুপুরটা পড়িয়ে আরশির দিকে তাকাতেই দেখি ও মুখ টিপে হাসছে। তার খুশি যেন আজ বাঁধ ভেঙ্গেছে।আমি মুগ্ধ নয়নে ঘোর অবচেতনে চেয়ে রইলাম তার দিকে।পায়ের ব্যাথাটা উপশম হয়ে গেছে।আমি আবার তার পাশে গিয়ে বসলাম।কিছুক্ষণ পর আরশির মাথাটা আমার কাঁধে রাখল।আর আমি বিশুদ্ধ চোরের মত শুধু তার চুলের ঘ্রান নিচ্ছি।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা