জান্নাত

জান্নাত

-ওই প্রেম করবা?
-দূরে গিয়ে মরো।
-অলরেডি তোমার ওপরে মরে গেছি।
-ফালতু কথা।
-হাহ্,রোমান্টিক কথা।
-এখন যাওতো।
-তুমি কি ভাবছো তোমাকে পটানো একদম কঠিন!
-অসম্ভব।
-দুই দিনে পটিয়ে দেখাবো।
-দুইশ বছরেও পারবানা।
-তাহলে আর ট্রাই করবোনা,ওই তোমার ছোটো বোন কি সিংগেল না!
-ক্যানো?
-একটু লাইন-ঘাট ক্লিয়ার করে দিলে মন্দ হয়না।
-ফাজিল,আমার সাথে লাইন মেরে কি মন ভরেনা!
-যেই লাইনের কোনো ফিউচার নেই,সেই লাইনের পেছনে সময় নষ্ট করবোনা।
-কে বলছে ফিউচার নেই!
-দীর্ঘ তিন বছর ঘুরে যখন কিছু হয়নি,মনেহয়না ফিউচারে কিছু হবে।
-আর কটাদিন ঘুরে দেখো কাজ হলেও হতে পারে।
-নাহ্,তোমার থেকে পোস্টিং নিয়ে তোমার বোনের কাছে যাবো।
-কেটে কুচি কুচি করে ফেলবো[রাগ দেখিয়ে]
-বললেই হলো!এটা স্বাধীন রাষ্ট্র,এখানে লাইন মারার অধিকার সবার আছে।
-না,তুই শুধু আমায় লাইন মারবি[কান্নার সুরে]
-বাঁচবোই আর ৫০-৬০ বছর।২০০বছর বাঁচলে ভেবে দেখতাম।
-আই লাভ্ ইউ[কান্না করে জড়িয়ে ধরে]
*
তিন বছরের রিলেশনে ঝগড়া ছাড়া কিছুই ভাগ্যে জুটেনি। আজ এক আন্টির বাসায় গিয়েছিলাম টিভির কালার ঠিক করে দিতে।
তাহা বালিকা কি করে যেনো দেখে ফেলেছে। gf-bf বাড়ি পাশাপাশি হলে যা হয় আরকি।
যাইহোক,তালকে তিল বানিয়ে শুরু করে দিলো বিশাল ঝগড়া। সাথে ব্রেকআপ ফ্রি।
বালিকার বাণিটি ছিলো “আমি নাকি আন্টির মেয়ের সাথে লাইন মারতে গেছি”।
যেখানে আন্টির মেয়ের মুখ খানাও দর্শনের সৌভাগ্য হয়নি।
.
ভাঙা প্রেম আবারো একবার বাঁচাতে বালিকাকে রাগিয়ে,হাসিয়ে শেষে ভালবাসা দিয়ে ঠিক করলাম।
অবশ্য ইহা প্রথম বার নয়।
রিলেশনের সেই প্রথম থেকেই এটা ঘটে আসছে,so ভাঙা প্রেম জোড়ালাগানোর প্রতি এক অন্যরকম experience চলে এসেছে।
*
*
রান্দায়ের কোপে যখন হাত কেটে রক্তাক্ত,তখন এক মেয়ে দৌড়ে এসে তার হোস্টেলের রুমে নিয়ে গেলো।
মেডিকেল স্টুডেন্ট হওয়াই ট্রিটমেন্ট করতে তাঁর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলোনা।
খুব যত্নসহকারে হাতটা ব্যান্ডেজে মুড়িয়ে দিলো।
-পানি হবে এক গ্লাস!
-হুম,ওয়েট নিয়ে আসছি।
(কিছুক্ষণ বাদে পানি এনে নিজের হাতে পান করিয়ে দিলো। ততোক্ষণে রুমের সামনে মানুষের ভিড় পরে গেলো।
হয়ত মূল কারণ মেডিকেল হোস্টেলে বাহিরের ছেলের প্রবেশে। আমায় দেখে কেউ কিছু বলার সাহস পেলোনা।
মেয়েটা আমায় রেস্ট নিতে বললো।
.
আমি শুয়ে রেস্ট নিচ্ছি আর মেয়েটা সবাইকে পুরোটা বোঝানোর চেষ্টা করছে।
যখন দেখলাম মেয়েটা ব্যর্থ তখন নিজেই এগিয়ে গিয়ে পুরো ব্যপারটা বললাম।
তারপর হোস্টেল থেকে বেড়িয়ে পরলাম।
.
নিজের কোনো পরিচয় নেই।
কেউ বখাটে বলে কেউবা পাগল।
জন্মের পর বাবার চেহারা দেখিনি,বাবার মৃত্যুর কিছুদিন বাদে মা অন্যের ঘরে পাড়ি জমায়।
দ্বিতীয় বাবা আর মা_র মাঝে যখন আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়ালাম তখন এক এতিমখানায় জায়গা হয়।
দুইমাস পরে এতিমখানায় হুজুরের মাডার হয়।
সাজানো সেই নাটকে আমায় দোষি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলে।
দীর্ঘ ১০বছর জেল খেটে ছাড়া পেয়ে পেটের জালায় গুন্ডামি করি।
আমি দেখেছি আমি বুঝেছি আমি শিখেছি কি করে নিজেরটা আদায় করে নিতে হয়।
স্বার্থপর এই দুনিয়ায় সবাই যখন দূরে সরিয়ে দেয় তখন রক্তাক্ত শরীরে আমায় দেখে মেয়েটা সমাজের সব

নিয়মকে ত্যর্য করে কিছু সময়ের জন্য আমায় আশ্রয় দেয়।
.
মেয়েটাকে কমপক্ষে একটা ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন ভেবে দ্বিতীয়দিন হোস্টেলের সামনে ঘন্টারপর ঘন্টা অপেক্ষা করি।
পোড়া এই কপালে সেদিন মেয়েটার দেখা মিললোনা।
তবে এত সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র হলে হয়তো আজ আর দুনিয়ার আলো দেখার সৌভাগ্য হতোনা।
পরেরদিন আবার এসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ঘন্টা খানিক বাদে সাদা হিজাবে মোড়ানো ফাইল হাতে মেয়েটা হেঁটে যেতে লাগলো।
মুখটা ভুলার মতন নয়।
তাই সাত-পাঁচ না ভেবে ডাক দিলাম।
-এইযে আপু শুনুন!
-(…….)
-এইযে…
-আপনি কালকের সেই ছেলেটা না!
-হুম,কালকের জন্য ধন্যবাদ…
-ইটস ওকে,এখন হাত ঠিক আছেতো?
-অল্প অল্প।
-কাল তো না বলেই চলে গেলেন।এখন কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি,খেয়ে নিবেন।
*
সেখান থেকেই অল্প অল্প কথা বলা।
আস্তে আস্তে কথা বলার মাত্রা বেড়ে গেলো।
দুজন দুজনের কেয়ারিং-শেয়ারিং থেকে কখন সেটা ভালবাসায় পরিণত হলো কেউই জানেনা।
হ্যা,মেয়েটা জান্নাত…
আমার জিবনের ঘটনা জান্নাতকে জানানোর প্রয়োজন ভেবে সবটা খুলে বললাম।
শুনে প্রথমে কিছুটা মন খারাপ করলেও পরে মানিয়ে নেয়।
.
তারপর আমায় একটা বিজনেস করতে বলে।
স্বল্প টাকা ইনভেস্টে ছোট বিজনেস শুরু করি।
খারাপ পথে টাকা ব্যয় না করে সেটাকে আরো ভালো কাজে ইনভেস্ট করি।
আস্তে আস্তে সফলাতাও পাই।
জান্নাত জিবনে আসার পর থেকে সব কিছু বদলে যেতে লাগে।
একটা সময় পুরো আমিটাই বদলে যাই।
খুব বড় মাপের বিজনেসম্যান হতে না পারলেও খুব একটা খারাপ পজিশনেও নেই।
বালিকাও মেডিকেল কম্পিলিট করে স্বপ্ন পূরণের পথে পা রাখে।
তারপর আমায় বলে ওর সাথে ওদের ওখানে নিয়ে যায়।
না করার ক্ষমতা আমার মাঝে হয়নি।
*
*
রাতে জান্নাতকে ফোন দিলাম…
-হ্যালো।
-হুম বলো।
-রাগ করে আছো।
-নাহ্।
-তবে মুড অফ!
-জানিনা।
-ক্যানো!
-বিয়ে করবা আমায়….
-তুমি বললে এখনি।
-এখন তো কাজি অফিস বন্ধ।
-সকাল দশটায় তবে।
-তোমার বাবা-মা কে জানাবা না।
-এসে দেখো।
.
অতঃপর সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে সাউদিয়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে হাজির হলাম।
অনেক অনেক ভিড়ের মাঝে জান্নাত এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো।
সব শেষে তার বাবা-মা_র সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
যদিও তিনি চেনা তবুও অন্যভাবে ভালোলাগা কাজ করলো
দেখার মতন মুখটা ছিলো শুধু জান্নাতের ছোটো বোনের।
.
সব কিছুই আজ পূর্ণতা পেলো-
যা হারিয়েছি তা মিলে গেলো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত