শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি। কাজের বেটি জরি এসে আমার পায়ে সালাম করা শুরু করলো।সে আমাদের দূর সম্পর্কে আত্মীয়। আমি বললাম, ব্যাপার কি জরি?সালাম করে করে পায়ের চামড়া খুলে ফেলছো কেন? জরি বললো, শুভ সংবাদ, ভাইজান, আম্মা রাজি হইছে। আমি বললাম, কিসে রাজি হইছে? জরি শরম পাওয়ার অভিনয় করে বললো, আম্মারে বলছি, আপনে আমারে পছন্দ করেন! আমি একলাফে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লাম। রিয়ার সাথে আমার প্রেম । সে আমার খালাতো বোন।মা কিছুতেই রিয়াকে মেনে নেবে না। গতকাল রাতে মা আমাকে ডেকে পাঠালেন। গিয়ে দেখি মা জরির সাথে গল্প করছে। বললেন, হয় রিয়া না হয় আমি, একজনকে বেছে নিবি। কাকে চাস তুই? রাস্তার একটা ফকিন্নি বিয়ে করে আন,মেনে নেব।তবু রিয়া নয়।রিয়ার সাথে তোর সম্পর্ক হলে আমি গলায় দড়ি দেবো।
সাথে সাথে রিয়াকে ফোন দিয়ে বললাম, জামাই চাও না খালা চাও? রিয়া অবাক হয়ে বললো, মানে কি? মা বলছে তোমার সাথে বিয়ে হলে গলায় দড়ি দেবে! রিয়া বললো, মা চাও না প্রেমিকা চাও? আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে কি? তোমার সাথে বিয়ে না হলে আমি গলায় দড়ি দেবো!মাইনক্যা চিপার উপর আরও যদি কোন চিপা থাকে, আমি সেখানে পড়ে গেলাম । কারে ছেড়ে কারে ধরি! সারারাত চিন্তা করতে লাগলাম, মা বড় না প্রেমিকা বড়? সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রিয়াকে ফোন করে বললাম, কখন গলায় দড়ি দিবা? রিয়া বললো, মানে কি?
শত হলেও তো তুমি আমার খালাতো বোন, তোমার প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে না? তুমি মারা গেলে খালাতো ভাই হিসেবে আমারই তো সবার আগে থাকতে হবে। লাশ মাটি দেওয়া যে কি হ্যাপা তা তুমি বুঝবা না। সকাল সকাল কাজটা সেরে ফেল,তাহলে আর রাতের বেলা ঝামেলা পোহাতে হবে না! আমি আবার অন্ধকার ভয় পাই। তুমি কি ব্রেকআপ করতে চাইছো? আমি চাইছি না, মা চাইছে। থাক তোর মাকে নিয়ে। তোর মতো হারামজাদা আমি জীবনে দেখি নাই। তোর মায়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে থাক!শালা, মায়ের কথায় প্রেম করতে এসেছে! ফ্রটিকা খেয়ে মরে যা হারামি! তুই তোকারি করছো ভালো কথা,মরার টাইমটা বল,মাকে নিয়ে এক্ষুনি রওনা দেব তোমার জানাজার জন্য? তুই মর শালা! বলেই রিয়া ফোন রেখে দিল।
ব্রেকআপের কথা মাকে জানাতে রান্নাঘরে ঢুকলাম, পিছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ঘষতে শুরু করলাম, মাকে পটানোর জন্য যেটা আমি প্রায়ই করি। যেভাবেই হোক রিয়ার জন্য মাকে ম্যানেজ করতে হবে। আমি মুখ ঘষছি, এমন সময় জরির কন্ঠ শুনলাম, মজা পাইছি, ভাইজান! এক লাফে সরে গিয়ে দেখি জরি দাড়িয়ে আছে, আঁচল দিয়ে মুখ ডেকে শরম পাওয়ার অভিনয় করছে! জরি মায়ের পুরনো একটা কাপড় পরাতে এই ভুল করে ফেলেছি! জরি বললো, আপনে যে আমাকে পছন্দ করবেন, এইটা আমি ভাবি নাই ভাইজান! আলহামদুলিল্লাহ! রিয়া ম্যাডামের চেয়ে আমি কম কিসে? আমি এক দৌড়ে রুমে পালিয়ে এলাম। এর পর থেকে জরি আমার অতি যত্ন করছে। ঘন ঘন আমার ঘরে আসছে। আমাকে দেখলেই হাসছে। মা মুখ কালো করে বসে আছে। আমি ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য কাউকে কিছু না বলে কক্সবাজার চলে গেলাম। মা মনে করলো আমি রিয়ার দুঃখে দেশান্তরি হয়েছি!
কক্সবাজার এসে আরামে খাওয়া আর ঘুম দিচ্ছি। তিনদিন পর মা ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,আমি না হয় রাগ করে রাস্তার ফকিন্নি বিয়ে করতে বলছি, তাই বলে তুই জরিকে বিয়ে করবি? আমি বললাম, হ্যা মা,আমার কপালে লেখা আছে জরি, আমি কি করবো, বল? মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তুই বাসায় ফিরে আয়, বাবা! আসবো মা, আগে জরির সাথে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক কর,তারপরে আসবো,,,, ওরে, তুই রিয়াকে বিয়ে কর,তবু জরিকে বিয়ে করিস না,,, না মা, তুমি রিয়াকে পছন্দ কর না,আমি জরিকেই বিয়ে করবো! বলেই ফোন কেটে দিলাম।
দুই ঘন্টা পর রিয়ার ফোন, এই গাধা, তোমার না আমার জানাজায় আসার কথা? আমি বললাম, তুমি কখন মরলা? আশ্চর্য! আমাকে জানিয়ে মরবা না! এখনো মরি নাই ,খালা আমাদের বাসায় এসেছে, আমাদের দুইজনকে এক সাথে মারার জন্য। তুমি কি আমার সাথে মরতে চাও?আমি ফোন কেটে দিলাম, তারপর দ্রুত ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম।