রিকশাওয়ালার এক মেয়েকে ভালবেসেছিলাম খুব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বন্ধুরা কয়েকজন মিলে চট্টগ্রামের ট্রেনে উঠেছি রাত সাড়ে আটটায়।মনটা খুব ফ্রেশ।সেমিস্টার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো আর এখন ঈদের ছুটি।পরিবারের সব সদস্যদের মিলনে এবারের ঈদটা ভালোই কাটবে আমার।
গল্প,আড্ডা,গান,কবিতা দিয়ে ট্রেনের কমপার্টমেন্টকে মাতিয়ে রেখেছি সবাই মিলে।সাথে সঙ্গ দিচ্ছে ঝালমুড়ি আর বাদামও।আমার প্রাণের বন্ধু ঈষাণ,গান গাইতে পারে খুব।গিটারের সুরে আর হাতহালির ছন্দে আমরা কেউকেউ গান উপভোগ করছি,কেউকেউ জুকারবার্গের আয়ের ব্যবস্থা করছি আর কেউকেউ প্রেমিকার সাথে গভীর কল্পনায় ডুবে আছি মোবাইলের কল্যাণে।আমাদের অবসর,আমাদের মন প্রফুল্ল,আমরা তাই আমাদের আনন্দকে বাঁচিয়ে রাখতেই সদা আড্ডা গানে মাতোয়ারা।বাকিদের খবর আমাদের জানবার কী দরকার,বাকিদের নিয়ে ভাবাটাও নিষ্প্রয়োজন।
রাত দেড়টায় হঠাৎ মেয়েটি আমাদের রাজ্যে এসে থমকে দাঁড়ালো।বৃহৎ এক যুবদলে কোন এক যুবতীর আচমকা প্রবেশে যুবাদের বিস্ময় ঘটবে,এটাই স্বাভাবিক।মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে গেল গিটারের সুর,কোলাহল পরিণত হলো নিস্তব্ধতায়।সকলে একযোগে তাকালাম মেয়েটির দিকে, “ভাইয়া,আমার বাবা খুব অসুস্থ,কিছু না মনে করলে গান কি একটু আস্তে গাওয়া যাবে?”
মেয়েটার কথা তখনো আমার কানে প্রবেশ করেনি,আমি তখনো পলকহীনভাবে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে।মুহূর্তেই যখন বোধ হল,বলে উঠলাম,”হ্যা হ্যা! যাবেনা কেন?অবশ্যই,আমরা আর গান গাইব না।” “ধন্যবাদ,ভাইয়া।” মেয়েটার বিদায়ের পর আমার ভাবনার দুয়ার খুলল,মেয়েটা তো বেশ সুন্দর করে কথা বলে!বাহ্!চেহারা অতটা ফর্সা নয়,উজ্জ্বল শ্যামলা।ফেস কাটিংটা মনের মধ্যে বাঁধিয়ে রাখার মতো। বন্ধু সাজিদকে ডেকে বললাম,”চল তো একটু হেঁটে আসি সামনের কমপার্টমেন্ট থেকে।” জবাবে ঈষাণ লাফিয়ে উঠল গিটার ফেলে,”চল তো!দেখে আসি মেয়েটাকে।”
কমপার্টমেন্টের শেষপ্রান্তে দরজার পাশে ময়লা,ছেঁড়া কাঁথা পেঁচিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁপছে এক বৃদ্ধ।পাশে তার বসে আছে প্রৌঢ়া।পাশে তাকিয়ে দেখি,দারজা ধরে বাইরে তাকিয়ে উদাস মনে পৃথিবীর মধ্যরাতের নিরবতা উপভোগ করছে মেয়েটি।আমাদের দেখেই মাথায় ঘোমটা টেনে এগিয়ে আসল,”আমার বাবা রিকশা চালায়,ভাই এবার ঢাকা ভার্সিটিতে ইংরেজিতে চান্স পেয়েছে।অর্থের অভাবে আমি শেষ করতে পারিনি বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা,আমার বাবার স্বপ্ন আমার ভাইকে মানুষ করবে।”
বিনা প্রশ্নে এতগুলো উত্তর পেয়ে বুঝলাম,তাদের স্বপ্ন আছে,সামর্থ্য নেই।যেন ঘৃণা না করতে পারি,তাই বলে গেল একের পর এক,লুকোয়নি বাবার অসহায়ত্বের কথা,বাদ দেয়নি ভাইয়ের সাফল্যের কথাও।ঈষাণ লাফ দিয়ে উঠল,”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে??তাই নাকি!আমরাও তো ওখানেই পড়ি,কী নাম আপনার ভাইয়ের?” “সেলিম রহমান।” সেই মুহূর্তে আমার মুখ দিয়ে আর একটা কথাও বেরোয়নি।কোন এক অজানা বেদনায় অচেনা এই মেয়েটির একের পর বলে যাওয়া আমাকে নিয়ে গেছে গভীর শোকের রাজ্যে।আমার মুখ তখন স্তব্ধ পাথর খণ্ডে পরিণত হয়েছিল।নিস্তেজভাবে ঈষাণকে সমর্থন করে বললাম,”হ্যা আমরাও ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি,ম্যাথ ডিপার্টমেন্ট,ফোর্থ ইয়ার।”
সেবারের ঈদটা আমার ভালো কাটেনি।বাড়িতে গিয়ে সার্বক্ষণিক ভেবেছি মেয়েটার কথা।কেন বা কীভাবে সে আমার মনের মধ্যে একটু একটু করে জেঁকে বসছিল,তা আমার নিজেরও অজানা।হয়ত মেয়েটার অসহায়ত্ব মুহূর্তেই আমার চঞ্চলতা দূর করেছিল নয়তো মেয়েটার সুন্দর মায়াবি চেহারা আমার অজান্তেই আমার মনে তার জন্য সৃষ্টি করেছিল গভীর এক অদৃশ্য মায়া।
আমি মনের যন্ত্রণা চেপে রাখতে পারিনা কখনো।হাসান,ঈষাণ,সাজিদসহ সবাইকেই বলে ফেললাম বিষয়টা।বন্ধু মানে কী?কোন এক সিরিয়াস ম্যাটার নিয়ে কথা বললেও পাত্তা দেয় না,এমনটাই ঘটেছে।সকলের অট্টহাসিতে পেয়েছি উপহাস আর নিজেকে পরিণত করেছি তাদের বিনোদনের উৎসে।সে যাই হোক,ঈদ শেষে যখন ঢাকায় ফিরে আসি,তখন আমার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে মেয়েটার ভাইয়ের খোঁজ নেওয়ার জন্য। ঈষাণ আমার পরম বন্ধু,আমার জীবনে তার অবদান অনেক।তারই সহযোগিতায় ভার্সিটির প্রথম বর্ষের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে ঐ নাম ধরে খোঁজাখুঁজির পর অনেক কষ্টে পেয়েছি মেয়েটার ভাইয়ের সন্ধান।
সময়ের আবর্তনে ধীরেধীরে সেলিমের সাথে পাতালাম গভীর মিতালি।ভার্সিটিতে সে নবীন,আমি প্রায় জেষ্ঠ।তবুও আদর সোহাগ সহযোগিতা দিয়ে তাকে বানিয়ে ফেললাম বন্ধুসুলভ ছোটভাইয়ের মতো।সেও আস্তে আস্তে করে আমার সাথে মিশে গেছে খোলাখুলিই।সেলিমের কাছ থেকে জানলাম তাদের পরিবারের অনেক অতীতগল্প।
সেলিমের বাবা রিকশাচালক,মা ঘরে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করে।চট্টগ্রাম শহরের এককোণে খড়ের পাতা ঘরে তাদের রাত্রিযাপন।তার বাবার স্বপ্ন ছেলে মেয়েকে একদিন অনেক বড় করবে।তার একমাত্র বড় বোন সানজু।বছর দুয়েক আগে অর্থের অভাবে সানজুর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় ভার্সিটি ২য় বর্ষের শুরুর দিকেই।তার বাবা সর্বস্ব দিয়েও যোগান দিতে পারেনি অর্থের।
বর্তমানে সেলিমের এই অবস্থায় তার পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তার বাবা খুবই চিন্তিত।রিক্সা বিক্রি করে দিয়েছেন সেলিমের ভর্তির প্রাথমিক খরচাদির যোগান দিতে গিয়ে।পরিবারের টানাপোড়নের চোখের সামনে শুধু অন্ধকার ছায়া।অতিরিক্ত মানসিক টেনসনে তার বাবা এখন অসুখে কাতরাচ্ছেন।সেলিমের কাছ থেকে আরো জানতে পারি,অনেক কষ্টে খোঁজাখুজির পর পাওয়া ক্লাস টেন আর ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের দুটো ছেলেকে টিউশনি করিয়েই সেলিমের দিন চলে।এখান থেকে কিছু টাকা নিজের জন্য রেখে দিয়ে বাকিটা পাঠাতে হয় বাড়িতে। সেলিমকে আমি বলেছি আমার ভালোবাসার কথা।সে রাগ করেনি,অবাক হয়েছিল।বলেছিল আমায়,তাদের লেভেলের সাথে আমার লেভেল কখনোই মেলে না।হোক,তবুও বললাম আমি ভালোবেসে ফেলেছি সানজুকে।
সেলিমের মাধ্যমে সানজুর সাথে ধীরেধীরে পরিচিত হয়েছিলাম।নিতে চাইতো না,তবুও মাঝেমাঝে দু’চার হাজার টাকা জোর করে করে দিয়েছি সেলিমকে।গোপণে বারোশ টাকা দিয়ে একটা মোবাইল কিনে সেলিমের মাধ্যমে সানজুর কাছে একটা মোবাইল কিনে পাঠিয়েছিলাম।সেলিমের মাধ্যমে তাদের বাড়ির জন্য মাঝেমাঝে সামান্য ফলমূলের পাঠানোর উছিলায় সানজুর জন্য দু’একবার পাঠিয়েছি চকলেট,চুড়ি।
সানজু কখনোই বলেনি সে আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু যতবারই আমি কথা বলতাম তার সাথে,ততবারই আমি হারিয়ে যেতাম গভীর কল্পনার সমুদ্রে।যেমন তার মায়াভর্তি চেহারা,তেমনি তার কণ্ঠ।আমি শুধু যেন তার স্বরই শুনে যেতাম।দরিদ্রতা মানুষের মনকে খুব ভেঙে দেয়,তা আমি বুঝেছি সানজুর কথায়।সে কখনোই চায়নি আমি তাকে ভালোবাসি,কারণ সে অতিদরিদ্র।ফোনে বাড়তি একটা কথাও বলত না সে।যা যা জিজ্ঞেস করতাম,শুধু তারই হ্যাঁ/হু উত্তর দিত।যতবারই তাকে বলেছি আমি তাকে ভালোবাসি ততবারই সে বলেছে আপনি নিজের ক্ষতি করছেন।
যতবারই তাকে জিজ্ঞেস করেছি সে আমাকে ভালোবাসে কিনা ততবারই চাপাকণ্ঠে উত্তর দিয়েছে,”জানিনা।” এই জানিনার অর্থ আমি জানি,বুঝি।দারিদ্রের কারণে চাপা পড়ে আছে তার মনের কথাটা,ইচ্ছে সত্ত্বেও বলতে পারছে না।আমি সব বলেছি আমার বন্ধুদের।সাজিদ বরাবরের মতই আমাকে গালাগাল করেছে পাগল বলে,ছাগল বলে।আবিরের একটাই কথা,”তোর পরিবার কখনোই এটা মানবেনা।শুধুশুধু কারো মনে আঘাত দিতে যাসনে।” প্রাণের বন্ধু ঈষাণও আমার পক্ষ নেয়নি বিন্দুমাত্রও,সেও বলেছে,”তার সমাজ আর তোর সমাজ আলাদা,ম্যাচ করতে পারবিনা,বলা যায়না,মেয়েটা ভালো নাও তো হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এভাবেই সময় যায়,দিন যায়।একটা সময়ে এসে আমার ফাইনাল পরীক্ষার পর হঠাৎই সানজুর সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।হঠাৎ করেই সেলিম হয়ে যায় নিখোঁজ।ফোনের পর ফোন করেও কোন খবর পাইনি সানজুর।ভার্সিটিতে সেলিমের কোন খোঁজ পাইনি রাতদিন কুকুরের মতো দৌড়িয়েও।বহুদিন আগে সেলিমের দেওয়া এক ঠিকানার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের পথে পথে খুঁজেও আমি কারোর খবরই পাইনি।অসহায় হয়ে পড়ি আমি।
দিন আরো যায়।দেওয়ালে দেওয়ালে পুরাতন ক্যালেন্ডার বদলে গিয়ে হয়ে যায় নতুনরূপী।বন্ধুরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে আপন জগৎ নিয়ে।আপন যন্ত্রণা নিয়ে আমিও বন্ধুমহল থেকে সরে এসেছি অনেকদূরে।জীবনের প্রতি যেন হারিয়ে ফেলেছি আমার সমস্ত আগ্রহ।সেদিন আবিরের মুখে শুনেছিলাম সাজিদ আর ঈষাণের বিয়েও হয়ে গেছে।আবিরেরও বিয়ের কথা চলছে।আর আমি?আমি তখনো অপেক্ষায় ঐ রমনীর,যে আমার মনপ্রাণ কেড়ে নিয়েছিল আপন মহিমায়।ঈষানণের সাথে আমার এখন যোগাযোগ তেমন একটা নেই।সাজিদের সাথে একবার কথা হয়েছিল কিছুদিন আগে।জানতে পেরেছি সে বিবাহিত,ঈষাণও বিয়ে করে সুখে ঘর করছে।সাজিদের কাছে আমি পাগলই কেবল।তার অদ্বিতীয় কথা,”ফালতু চিন্তাধারা ঝেড়ে ফেলে বিয়ে করে ফেল,বোকার মতো কার আশায় বসে আছিস নিজেও জানিসনা।”
কারো কথায় কান দিই নি।বাড়িতেও কিছু বলিনি এব্যাপারে।কদিন আগে স্থানীয় এক কলেজে চাকরি হয়েছে আমার।এখন আমার বিয়ের আলাপ আলোচনা চলছে।আমার কোন চঞ্চলতা নেই,নেই কোন আগ্রহ।এমতাবস্থায় হঠাৎ একদিন ফোন আসল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নামে একটা চিঠি এসেছে।সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলাম ঢাকায়।ভার্সিটির হলে গিয়ে চিঠির পুরোনো খামটা সংগ্রহ করলাম ব্যস্ত হয়ে।টান দিয়ে খাম ছিড়ে চিঠিটা বের করে পড়তে শুরু করলাম— “শ্রদ্ধেয় আরফান ভাইয়া, সালাম নেবেন।জানিনা চিঠিটা আপনার হাতে পৌঁছবে কিনা।তবুও লিখতে হচ্ছে আজ।
ভাইয়া,আপু খুব ভালোবাসত আপনাকে।আর আপনি?কোন দামই দিলেন না?কেন ভাইয়া?আপনার চিঠি পেয়েই খুব কেঁদেছিল আপু।তবুও আপনার কথামতো বন্ধ করে দিয়েছিল আপনার সাথে সমস্ত যোগাযোগ।আমিও মেডিক্যাল লিভ নিয়ে ইয়ার লস করে আপুর কথামতো ফিরে এসেছিলাম আপনাকে কিছু না বলেই।কারণ– আপু চেয়েছিল আপনি ভালো থাকেন।আশাকরি এখন ভালোই আছেন,ভালোই থাকার কথা।তবুও আজ বলি–আপনি কীভাবে চাইলেন ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দিতে।আপু আজো বিশ্বাস করতে পারেনি আপনার চিঠির করুণ কথাগুলো।তাকে দেখি,অবেলায় আজো সকলের অজান্তে সেই চিঠিখানার ভাঁজ খুলে নিরবে বুক ভাসায়।জানালার ফাঁক দিয়ে অন্তহীন আকাশের দিকে চেয়ে সে আজো মেঘের মধ্যে খুঁজে বেড়ায় আপনার ছবি।আজ আপুর অজান্তেই আপুকে লিখা আপনার সেই নিষ্ঠুর চিঠিখানা আপনার ঠিকানাতেই ফিরিয়ে দিলাম,জানিনা আপুর নিরব কান্না তবুও বন্ধ হবে কিনা থমকে গেলাম!সঙ্গে থাকা আরেকটা পুরনো কাগজের ভাঁজ খুলে উত্তাল হৃদকম্পন নিয়ে পড়তে শুরু করলাম,
“প্রিয় সানজু,
আজই আমাদের শেষ কথা।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আমার দুর্ভাগ্য,আমি তোমার মত একজনকে হারালাম।কী করব বল,পরিবার আর বাবার সিদ্ধান্তের দাম দিতেই এই বিয়ে আমাকে করতেই হবে।আর কখনোই কথা হবেনা আমাদের।যদি পারো,আমার শেষ ইচ্ছেটা রেখো।চিঠিটা সেলিমকে যার হাতে দিয়েছিলাম সে আমার বন্ধু,খুব ভালো ছেলে।তুমি তাকে বিয়ে করে নিও।যদি আল্লাহর ইচ্ছে থাকে,তাহলে হয়ত বন্ধুত্বের সুবাদে আবার কোন একদিন আমাদের দেখা হলেও হতে পারে।আমার বন্ধু খুব সুখে রাখবে তোমাকে।তুমি চিরসুখী হবে।—-বিদায়।
ইতি,
তোমারই আরফান।” আমি আবারো থমকে গেলাম।আমি দিয়েছি এই চিঠি????বিস্ফোরিত চোখে আবার পড়তে লাগলাম সেলিমের চিঠিটা,
“আরফান ভাইয়া,আপু কখনোই অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়নি।শুধু আপনার ইচ্ছে রাখতে গিয়েই বিয়েটা করেছে সে।আমরা এখন ভালোই আছি,আমি আবারো অ্যাডমিশন নিচ্ছি এবছর।বাবাকে এখন আর দুশ্চিন্তা করতে হয়না,কোন অভাব নেই আমাদের।নেই অর্থের টানাপোড়ন। আমরা সবাই একসাথে এখন আপুর বাড়িতে থাকি।জানেন ভাইয়া,কেন এতদিন পর আপনাকে চিঠিটা লিখেছি?কারণ আজ আপুর কোল আলোকিত করে জন্ম হয়েছে ফুটফুটে ছোট্ট একটা মেয়ে সন্তানের।কিন্তু জানেন তবুও আপুর মুখে হাসি নেই।আপু তো আপনাকে ভালোবাসত,ঈষাণ ভাইয়াকে নয়।তাই আজ আজ ঈষাণ ভাইয়ার নয়,বাবা হবার কথা ছিল আপনার।ভালো থাকবেন।আর হ্যা,ঈষাণ ভাইয়ার উছিলায় আল্লাহও আমাদেরকে ভালো রেখেছেন।বিদায়।
ইতি,
সেলিম।”