ইতিকথা

ইতিকথা

– কই তুমি?
– ট্রেনে আছি
– সিট পেয়েছ?
– হুম
– পাশে কে?
– একটা ছেলে।
– কি বল! আমি তো দেখলাম একটা আপু বসে আছে। তুমি ছ বগির ২৫ নাম্বার সিটে মিষ্টি কালারেরসেলোয়ার-কামিজ পরনে।

– ইতি তাড়াতাড়ি করে আশেপাশে তাকাল, জানালারবাইরে তাকিয়ে দেখল ট্রেনটা স্টেশন ক্রস করেছে।
– তুমি ট্রেনে আছ?
– না
– মিথ্যে বলবা না, আমি জানি তুমি ট্রেনেই আছো।
– আরে আমি ট্রেনে নাই, মনের চোখ দিয়ে দেখে বললাম।
– তুমি দেখা করবা নাকি আমি ট্রেন থেকে লাফ দিব?
– আচ্ছা আচ্ছা একটা শর্তে দেখা করতে পারি।
– কি?
– আই ওয়ান্ট টু কিস ইউর কপাল।
– মাইর খাবা? এত্ত মানুষের সামনে কিস করার সাহস আসে কোথা থেকে? লোকে কি বলবে!
– আমি আমার বউকে কিস করব, তাতে লোকের এত সমস্যা হবে কেন?
– ঢং করবা না একদম।
– হুহ…আমি আসছি।
– ইতি তাড়াহুড়ো করে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিল,তারপর চুলগুলো ঠিক করে নিল।
– অপু এর মধ্যে চলে এলো, পাশের আপুকে করুণ স্বরে বলল,

অনেক কষ্টে টিকিট ম্যানেজ করছি শুধু ওর সাথে একটু জায়গা যাব বলে। আমার সিটটা পাশের বগিতেইআমি পরের স্টেশনেই নেমে যাব। দয়া করে আপু কিছুক্ষণ আমার সিটটায় গিয়ে বসবেন? নিরু একবার ইতির দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, টিকিটটা দিবেন না?

– অপু তাড়াহুড়ো করে টিকিটটা হাতে দিয়ে বলল, ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না দিদি।
– মেয়েটি যেতেই অপু বসে পরল। বসেই ইতির গালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে দিল ।
– ইতি লজ্জায় লাল হয়ে অপুর পেটে বড় একটা চিমটি দিয়ে বলল, তুমি না বললা কপালে চুমু খাবা? মানুষ কি বলবে।

– তুমি তো ওদিকে তাকিয়ে আছ তাই ভাবলাম গালেই চুমু দেই। আচ্ছা এই কপাল ইংরেজি কি?
– তোমার মাথা।
– আহা রাগ করছ কেনো?
– রাগ করব না? তোমার তো আমার সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজনই নাই। তোমার না সময় হয় না দেখা করার। কত করে বললাম বাড়িতে যাচ্ছি বিয়ে আছে, কবে আসব ঠিক নাই, একবার দেখা করে নেই প্লিজ। তা না মহারাজের আর সময় হয় না, কত্ত বিজি।

– সরি গো, হঠাৎ করে এত কাজের এত চাপ দিয়েছে যে উঠতেই পারিনি।
– তুমি তো আর আমাকে ভালবাসো না কাজকেই ভালবাসো কাজকে নিয়েই থাকতা৷
– আরে আমি তোমাকেই ভালবাসি, না হলে দেখো এখন এই ট্রেনে দেখা করতাম?
– হয়েছে হয়েছে বুঝি আমি, দেখলাম তো কোন ভালবাসা উতলায় পরেছে ট্রেনে।
– সো সরি সোনা
– তোমার সরি তোমার কাছেই রাখো।
– আহা এদিকে তাকাও না। শুনো তো টিকিটটা নিয়ে সহজেই সিট খুঁজে পেয়েছে নিরু।

ছেলেটাকে ওই সিটটা দিতে পেরে বেশ ভালোই লাগছে তার৷ নিরু সবসময় চায় প্রেমিক প্রেমিকার বন্ধন যেন আজীবন বেঁচে থাকে। জানালার সিটটায় বসে পুরনো স্মৃতিগুল বেশ নাড়া দিল। তারও এক প্রেমিক ছিল। বসন্তের এক অশুভ লগ্নে তাদেরও প্রেম হয়েছিল। বুকের ভিতর মাথা রেখে কতই না আনাগোনা হয়েছে। একে অপরের সাথে কাটিয়েছে কয়েকটি বছর তারপর যেন কোন এক বৈশাখের ঝড় এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল তাকে। আর দেখা হলো না, কথা হল না।চলে গেল নতুনত্বের আশায়। নিরু প্রতিরাতেই একবার করে বলে সব পুরুষ শরীরভোজী। ওরা মন দেখে না শরীরকে দেখে। যখনই প্রেমিক-প্রেমিকা দেখে ভীষণ ভয় পায় নিরু। পুরুষের প্রতি এত ঘৃণা তার তারপরও জীবন ধারায় ভাসতে গিয়ে পুরুষের সাথেই চলতে হয়। এর মধ্যে অপু চলে এলো, দু’টো চকলেট নিরুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, স্টেশন এসে গেছে আপু। আপনি আপনার সিটে চলে যান।

– নিরু চকলেটের দিকে তাকিয়ে বলল, ঘুস দিচ্ছেন?
– আমি না ও দিয়েছে বলল, আমার হাতে দিলে নাকি আপনি খুশি হবেন! তাছাড়া আপুকে কি ঘুষ দেওয়া যায়?
– হাহাহাহা আচ্ছা তাহলে ভাই হিসাবে একটা কথা রাখবেন।
– হুম হুম অবশ্যই, বলুন আপনি
– ট্রেনে উঠেছি থেকে দেখলাম মেয়েটা মনমরা হয়ে একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে ছিল। আপনি আসছেন জেনে ততক্ষণাত খুশিতে আত্মহারা। আমার একটাই রিকুয়েষ্ট ওকে ধোঁকা দিয়েন না প্লিজ।

– অপু মুচকি হেসে, মাথা নাড়ল। ট্রেন থেকে নামতে যাবে হঠাৎ মনে পরল ইতির জন্য গিফটটা তো দেয়াই হয় নি, এদিকে ট্রেন স্টেশন ছাড়ছে। অপু তাড়াতাড়ি ব্যগটা নিয় নেমে পরল। দৌড়ে ইতির জানালার সামনে গিয়ে হাতে দিয়ে বলল,

– এতে তোমার জন্য একটা শাড়ি ছিল।
– ইতি অবাক হয়ে বলল, হঠাৎ শাড়ি কেন?
– বিয়েতে যাবা আর তুমি শাড়ি পরবা না?
– আমার তো শাড়ি আছেই, টাকা নষ্ট করার যায়গা পাও না?
– এতো কথা বল না তো। সাবধানে যেও আর তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।

ট্রেন চলা শুরু করেছে, অপু ট্রেনের জানালা দিয়ে ইতিকে দেখতে লাগল। অপুর ভীষণ ইচ্ছা ছিল ইতির সাথে আরও কিছুক্ষণ থাকার৷ কিন্তুু কাজের ব্যস্ততা আর এগুতে দিল না। কিছু ব্যস্ততা জীবনের আনন্দময় মুহুর্তগুলোকে নষ্ট। করে দেয়। তারপরও ভালবাসাগুলো বেচে থাকে ব্যস্ততাকে উড়িয়ে দিয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত