আজ প্রায় ৫ বছর হলো আমাদের বিয়ের। আমাদের সাথে প্রায় ৩ বছর ৫ মাস, আমাদের পরিবার কোনো যোগাযোগ রাখে নাই। যোগাযোগ না থাকার কারণ আমরাই ! কারণ আমরা পরিবারের মতের বাহিরে বিয়ে করি। তাই আমাদের সাথে উনারা যোগাযোগ করে না।
ঘটনা টা ঘটে আজ থেকে ৫ বছর আগে। আমি তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আর রাত্রি অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে। রাত্রি হলো আমার বউয়ের নাম, আর আমার নাম এডি। আমাদের রিলেশন ছিলো ৩ বছরের। আমাদের রিলেশন খুব সুন্দর ভাবেই চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় রাত্রি আমায় ফোন দেই। রাত্রি কান্না করছিলো, আর বলছিলো আমি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি তো জানি তুমি আমায় অনেক ভালোবাস। আর আমি কি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো পাগলী। আচ্ছা এখন বলো তো কি হইছে। হঠাৎ এই সব কথা কেনো বলছো। আব্বু আমার জন্য ছেলে দেখছে, ছেলে খুব ভালো জব করে! কালকে আমায় দেখতে আসবে। ধুর পাগলী দেখতে আসবে, আর দেখতে আসলে বিয়ে হয়ে যাবে না। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে খুব। ধুর এই সব চিন্তা বাদ দেও। যাও ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যার নাস্তা করো। আচ্ছা বাই। হুম বাই।
ঠিক পরের দিন ছেলে দেখতে আসে। আর ছেলে পক্ষের মানুষ রাত্রি কে পছন্দ করে। আর আজকেই এনগেজমেন্ট করিয়ে নিতে চাই। রাত্রির পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি ছিলো না। তাই কথা মত, এনগেজমেন্ট হয়। এই সব কিছু শেষ করার পর রাত্রি আমায় ফোন দেই। তখন ঠিক ৮ টা ৪৭ বাজে। রাত্রির প্রথম প্রশ্ন ছিলো এইটা, এডি আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না। আরে বাবা বলবা তো কিছু হইছে। আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে, পরের মাসের ১০ তারিখ বিয়ে। কি বললো এই সব, তুমি মাত্র অনার্সে পড়! আর এখনি বিয়ে আজব তো। হুম আজব কিন্তু আমাদের বিয়ে করতে হবে এবং ১০ তারিখের আগে। আরে বাবা তুমি ঠান্ডা করো, আমি দেখছি কি করা যায়। দেখছি না, করতেই হবে। আচ্ছা আমি বাসায় কথা বলি, পরে তোমায় ফোন দিচ্ছি। আচ্ছা তাহলে এখনি কথা বলে আমায় জানাবে। আচ্ছা বাই। হুম।
আমি আব্বু, আম্মু, বড় ভাইয়া, বড় আপুকে ডাকি। যে তোমাদের সাথে আমার একটা জরুরি কথা আছে। সবাই আসলে, আব্বু আমি একটা মেয়ে ভালোবাসি। এইটা কি তোমার জরুরি কথা। হ্যাঁ আব্বু, মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি এই মেয়েটা ছাড়া থাকতে পারবো না। তো আমাদের কি করতে হবে। তুমি একটু মেয়ের আব্বুর সাথে কথা বলতে যদি। অসম্ভব এডি, তুমি কেমনে বললে, এতো বড় কথা বলার সাহস হয় কেমনে। নেক্সট টাইম যদি শুনি তাহলে তোমার আর এই বাসায় জায়গা নাই। আমি আব্বু, আম্মু, ভাইয়া, আপুকে রিকুয়েষ্ট করি। কিন্তু আমি ব্যর্থ ছিলাম। পরে সবাই উঠে চলে যায়, আমি একা একা বসে কান্না করতে থাকি। এর মাঝে আবার রাত্রি ফোন দিতে থাকে, পরে আমি ফোন ধরি কথা বলি।
এডি আব্বু আম্মু কি বলছে। রাত্রি আব্বু আম্মু কেউ রাজি না। কি বললো এই সব, তাহলে এখন কি করবা। তুমি টেনশন কইরো না, আমায় একটু সময় দেও। আমি সব ঠিক করে নিবো। কেমনে কি করবা বলো আমায়, তোমার তো জব নাই, যে আব্বু আম্মুর বিপরীতে গিয়ে কিছু একটা করবা। আচ্ছা তোমার কি আমার উপর বিশ্বাস নাই। এইটা কেমন কথা বললে, অবশ্যই আছে! আর আছে বলেই তো একসাথে থাকতে চাচ্ছি। তাহলে প্লিজ একটু সময় দেও। আচ্ছা, আর যা কিছু করো খুব সাবধানে। হুম তুমি তো আছো , তাহলে সব ঠিক। ইনশাল্লাহ সারাজীবন থাকবো এই ভাবে। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ টু।
আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পাগলের মত হয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মাথায় আসলো, আমাদের তো দুইজনের বয়স ১৮ প্লাস। তাহলে পালিয়ে বিয়ে করলে কোনো ঝামেলা নাই। আমি রাত্রিকে সাথে ফোন দিলাম, বললাম তুমি কি পালিয়ে বিয়ে করতে রাজি। রাজি আছি কিন্তু তার আগে আমি বাসায় জানাতে চাই আমাদের সম্পর্কের কথা। আচ্ছা তাহলে তুমি বাসায় জানাও পরে দেখ কি বলে। রাত্রি বাসায় জানানোর পর, মুখের উপর না করে দেই। আর রাত্রির কাজ থেকে ফোন নিয়ে নেই। আবার আমি কোনো আপডেট জানতে পারছি না। খুব টেনশনে পরে যায়, আবার এই দিক দিয়ে সময় ছিলো ১৫ দিন। আমি পাগলের মত হয়ে গেছিলাম। সত্যি বলতে এই মূহুর্তের কথা কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে।
যার সাথে হয় একমাত্র সে বুঝে। এই ভাবে আরও ৩ দিন যায়। ৪ দিনের দিন ফোন দেই, অর এক কাজিনের ফোন দিয়ে, তারপর পর এই সব আমায় বলে। পরে আমায় বলে আমরা ৫ তারিখ বিয়ে করবো। তুমি সব ব্যবস্থা করে রাখবে। আমি তোমায় ৫ তারিখ ফোন দিবো, এর মাঝে আমাদের আর কথা হবে না। বলে রাত্রি ফোন রেখে দেই। এখন আমি আরও বেশি চিন্তায় পরে যায়। টাকা কেমনে ব্যবস্থা করবো, সব মিলিয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। পরে মনে হলো আমার জমানো কিছু টাকা আছে, আর আমার লেপটপ বিক্রি কিরে, আর আমার ফোনটা বিক্রি করে দেই। যে কথা সেই কাজ, সব কিছু বিক্রি করে ৯৮ হাজার ৯০০ টাকা হয়। তখন নিজেকে অনেক হ্যাপি লাগছিলো। আমি ১৭৫০ টাকা দিয়ে একটা ফোন কিনি। আবার রাত্রি ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আসে। তারপর আমরা বিয়ে করি, পরে বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই। সবাই অনেক কষ্ট পাই, কিন্তু আমাদের এইটা ছড়া কিছু করার ছিলো।
পরে আমরা দুইজন মিলে স্টুডেন্ট পড়িয়ে আমাদের সংসার চালাই। আর হ্যাঁ আমাদের মাঝে ঝগড়া, রাগারাগি সব হইছে। কিন্তু আবার আমরা সব ঠিক করে নিছি। আমাদের অনেক কষ্ট হইছে, কিন্তু আমরা এমন ভাবে থাকতাম। একজন আরেক জনকে বুঝতে দেই নাই। পড়াশোনা শেষ করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব পাই। আলহামদুলিল্লাহ ৩৫ হাজার টাকা সেলারি। এখন আমাদের আল্লাহর রহমতে আর কোনো কষ্ট নাই। ও একটা কথাতো বলা হয় নাই, ৭/৮ মাস হলো আমাদের পরিবার! আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। তার কারণটা হলো আমাদের মেয়ে। আমাদের মেয়ে হলো ৩ মাস হইছে। রাত্রির যখন ৭ মাস হয় তখন আমরা দুইজন আমাদের পরিবারকে জানায়। যে আমাদের পরিবারে একজন নতুন অতিথি আগমন হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ এখন সব কিছু ঠিক আছে।
অবশেষে একটা কথা বলবো, যারা পরিবারের দোহাই বা অন্যকোনো কিছুর দোহাই সম্পর্ক শেষ করে দেই। আর যায় কিছু হোক কোনো ভালোবাসা ছিলো না। সত্যিকারের ভালোবাসলে একজন আরেক জনকে ছাড়া কখনো থাকতে পারবে না। হয়তো এখন আপনার অবস্থা খারাপ, কিন্তু একদিন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেদিন হয়তো আর প্রিয় মানুষকে পাবেন না। তাই যত কিছু হোকনা কেনো, দুজন দুজনকে কখনো ছাড়বেন না। যে হাতটা ধরছেন, শক্ত করে ধরে রাখেন সকল পরিস্থিতিতে। তাহলে দেখবেন সকল বাধা অতিক্রম করে দুজন একসাথে থাকতে পারবেন। পূর্ণতা পাক সবার ভালোবাসা। বেঁচে থাকুক সকল ভালোবাসা।