লিজা ফোনটা হাতে নিয়ে সুয়ে আছে,, ঘুম, ঘুম ভাব। হঠাৎ
দেখে বিছানার কাছে ফুল হাতে আরিফ দারিয়ে। কি
দেখল..খেয়াল হল না!! চোখ ডোলে ভাল করে
তাকিয়ে দেখে কেউ নাই,,দরজাটাও বন্ধ।
নাহ… কিছুদিন সব জায়গাতে আরিফই চোখে ভাসে।
ভাবছে আবার ফোন দেবে কি না আরিফকে।। আজীবন
দেখে আসছি ছেলেরা,,মেয়েদের পিছে পরে
থাকে!!! আর আমি মেয়ে হয়ে ১টা ছেলের ভালবাসা
পাওয়ার জন্য আর কত যে অপমান হব,, আল্লাহ্ই জানে??
ক্লাসমেট,,বড়ভাইরা কয়েকজন প্রোপজ করছে..!!! শুভ
তো প্রায় ১বছর ধরে পিছে পরে আছে। আমার মনে
যে আছে একজনই..! জিবনের ১ম ভালবাসা ভুলে যাওয়া
সম্ভব ? দেখি না যদি গাধারামটার মনের বাগানে একটু ভালবাসা
ফোটে!!
হা.. হা..হা..
[ফোন দেয় আরিফকে]
আরিফ:- হমম… হ্যালো??
লিজা:- কেমন আছ?
আরিফ:- আপাতত busy আছি।
লিজা:- ওহ….সপ্তাহে বেশি হলে ২-১ বার আমিই ফোন
দেই..!! তোমার কথা তো বাদই দিয়াম.. তাই বলে একটু কথাও
বলবা না?
আরিফ:- free হয়ে আমিই ফোন করছি।
( Call ended )
লিজা মন খারাপ করে সুয়ে আছে নিজের ঘরে… মনের
মানুষটা থাকে সেই ঢাকায়। আমার থেকে সুন্দর কাওকে
পাইছে মনে হয়.. তাই আমাকে অবহেলা করে..!!
[হঠাৎ ক্রিংক্রিং.. ফোন বেজে উঠে..!! আরিফের ফোন
দেওয়ার কথা। খুশিতে লাফ দিয়ে তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নেয়
লিজা!!!!!
স্কিনে লিখা 4000 Calling !!!!
মেজাজ-মন ২টাই খারাপ হয়ে গেল!! ধুররর বলেই ফোনটা
আছার দেয়..মোবাইলটা কয়েকটুকরো হয়ে যায়। দুপুরে
ঘুমানোর চেষ্টায় আছে…শুধু মনে পরে যাচ্ছে
ছোটবেলার সৃতিগুলো!!
একদিন খালাতো বোন রিমির সাথে বিকালে হাটছি.. একটা
ছেলে ছোট বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলছে!! ইচ্ছা
করেই নিজেই আউট হয়ে গেল,,, আর বাচ্চাদের খুশি
দেখে কে!! হা.হা.
বোন বলল,, ওহ ওর cousin আরিফ। ঢাকায় থাকে, বেড়াতে
আসছে। মিথ্যা বলল না, তাকিয়েই ছিলাম ওর দিকে।
সরাসরি কথা বলার সাহস নেই, কিছুক্ষণ পর বাসায় এসে রিমিকে
দিয়ে ওর ভাইয়ের মোবাইল থেকে আরিফের নম্বরটা
নিয়ে পরদিন ফোন দিলাম।
– হ্যালো??
* ভাল আছ?
– আপনি কে?
* নাম বললে চিনবা না।
– তাহলে ফোন দিছেন কেন?
* আমার ফোন যাকে ইচ্ছা ফোন দিব,,তোমার কি?? হা….
-অচেনা হলে আর ফোন দিবেন না।
না হলে কিন্তু আম্মুকে বলে দেব।
* হা..হা.. বল একটা মেয়ে ফোন দিয়ে প্রেম
করতে চায়..তোমার আম্মু তোমাকে দৌড়ানি দিবে।
– তাহলে আম্মুকে কি বলল?? ;-(
-হা..হা..হা (হাসতে হাসতে পরে গেলাম)
তুমি কিছু বলবা না..তাহলেই কিছু বলবে না।
* তাহলে আর ফোন দিবেন না!(কেটে দিল)
পরদিন বিকালে আবার গেলাম মাঠে..ওহ খেলতেছে।
অন্য নম্বর থেকে কল দেই,, ধরতে গেলেই কেটে
দেই,,, কল ব্যাক করলেও কেটে দেই। হা,হা,,কয়দিন খুবই
জ্বালাইছি ওকে।
[ ২দিন পর রাতে,,ফোনে কল দিয়ে ]
* তুমি যে প্রেম কর.. আমি তোমার আম্মুরে বলে দিব।
হা..হা..হা..
– ;-( দেখেন..আমি কোন মেয়েকে চিনিই না,প্রেম
করব কিভাবে??
*আমি তোমার নাম থেকে শুরু করে সব জানি,,প্রতিদিন
তোমাকে দেখি,,তোমার আম্মুকেউ চিনি।
– আম্মু আসছে..প্লিজ এখন call দিয়েন না। (কেটে দিল)
[আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি ওহ ওর আম্মুর সামনে,,
ফোন দিলাম। বেচারার মুখ শুকিয়ে কাঠ!!! হা..হা..হা..
তারপরদিন ওর আম্মুর সাথেও কথা বললাম..ওকে hi
বলাতেই..বাসা থেকে পালিয়েছে!! সারাদিন বাসায়ই আসে
নাই!! হাহাহাহাহা…
তারপর ওই..ফোন দিত,মেসেজ দিত আর বলত
যে..”আম্মুকে কিছু বলেন না..প্লিজ” ;-(
আমি একটু পর পর ওর আম্মুর পাশে যেতাম..আর ওর অবস্থা
দেইখা খুব হাঁসতাম। শেষ মেস ওকে blackmail করে..ওর
সাথে কথা বলতাম।
বোকাটা কথাই বলতে পারে না,,শুধু মানে.. মানে করে!!
এই বোকা বোকা টাইপের চেহারারই প্রেমে পরে
গিয়েছিলাম। ]
“সেদিন আইস্ক্রিমওয়ালা আসলে আমি আইস্ক্রিম কিনে
ওকে দিলাম। একবার আমার দিকে তাকায়..একবার ওর আম্মুর
দিকে!! হা..হা..হা..
*আন্টি..আপনি না বললে ওহ নেবে না।
আন্টি- নাও,, নাও
আরিফ মাথা নিচু করে নিল।
(আমার ওর সবকিছুতেই হাসি পায়,,তাই আমি যেখানে থাকি,, ওহ
চলে যেত সেখান থেকে। আমিও কম পাজি ছিলাম না,, ওর
আম্মুর কাছে যাওয়ার ভাব ধরতাম,,, বেচারা এমন চেহারা
করে..থাকত যেন এখনি কেঁদে দেবে। হা.হা.হা)
{একবার সমবয়সীরা মিলে ঘরে খেলছি,,সবাইকে এক-এক
করে বাইরে পাঠিয়ে ঘরের দরজা আটকিয়ে দিলাম}
* এখন?
– এখন কি? দরজা আটকালা কেন? (কেঁদে দেবে এমন
চেহারা)
* এখন আমি চেঁচাই? বলি তুমি আমাকে দরজা দিয়ে এই ঘরে
আটকে রাখছ? হা.হা
– আমি তো কিছুই করি নাই.. (কান্না করেই দিবে)
* চুপ!!!!! আমি কি তোমাকে মারছি? কাঁদছ কেন? তাহলে I
Love U বল!!! হা..হা
– হ্যা..? এইটা তো খারাপ কথা। আমি পারব না।
* আচ্ছা..ঠিক আছে!! আন্টিইইইইইইইইই!!
– আচ্ছা.. আচ্ছা I Lo..lo..lo
*(ধমক দিয়ে) ওই… ভাল করে বল..না হলে আন্টিরে
ডাকলাম!!
– I Lob u ( কেঁদেই দিছে আরিফ) হা..হা..হা
দরজা খুলেই দৌড়!! অট্টোহাঁসিতে গড়াগড়ি খায় লিজা!!! এখনও
মুচকি হাঁসছে সেই কথা মনে করে। তারপর ৪-৫ মাস পর পর
আসত ওরা ঢাকা থেকে। এখনও মন চায় সেই ছোট বেলায়
যেতে।
হঠাৎ দরজায় টোকা পরে..
আসছি.. বলে দরজা খুলতে গিয়ে হা..হয়ে থাকে। আরে
আরিফ..এইটা বলার আগেই.আরিফ লিজার মুখে হাত রেখে
মুখ বন্ধ করে ভিতরে নিয়ে যায়।
– তোমার ফোন কৈ..হা? কতবার ফোন দিলাম.. তোমার
কোন খবরই নাই। আমি যে এইখানে আসছি..তোমাকে
জানাবটা কিভাবে?
*উমউম(মুখ বন্ধ,, হাত সরাল আরিফ) তুমি আসছ কেন? কয়দিন
পর আমার বিয়ে,, একবারে বিয়ে খেতেই আসতা।?
– হুম.. আচ্ছা!!!? আগে আমাকে দিয়ে blackmail করে I
Love u বলিয়াছিলা না? এখন তুমি বল.. I Love U.. না হলে
সবাইকে ডাকব!! হা..হা..হা..
* ডাকো!!! আমার কি?
– আআআঙ্কেল!!!!!!!!??
* চুপ.. *চুপ.. আচ্ছা কান কাছে আনো বলি.. I LoVe
————————————-
ওই নবাবজাদী উঠ!!!! রাত লেগে গেল…ঘুম পেড়ে
তো চোখ,মুখ ফুলায়া ফেলছিস!!
“লিজা চোখ ডোলতে-ডোলতে উঠে দেখে…ওর
আম্মু বকছে!! মনে মনে বলে যাহ.. স্বপ্নেও এখন
আরিফ আশা শুরু করছে? ধুর..আর কত কষ্ট দেবে ওহ?”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা