নীলিমার বিয়ের খবর শুনে রাহিনের মুখে এক বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠেছিল। তবুও হাসিটাকে আড়াল করে সুস্মিতার সামনে মন খারাপের ভঙ্গি করে জিজ্ঞেস করলো
-কি বলছো সুস্মিতা!! এ হতে পারে না। আমাদের এতদিনের সম্পর্ক সে এক নিমিষে সে ভুলে গেল!
-তুমি নীলিমাকে ভুল বুঝো না রাহিন। ওর বাবা ওর অমতে গিয়ে ওকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
-ভুল?? আমি এতদিনে তাকে ঠিক বুঝলাম। ও আমার চাইতে ধনী ছেলে দেখেই বিয়েতে রাজি হয়েছে। এই যুগে কোনো মেয়ের অমতে তার বাবা মা বিয়ে দিতে পারে না।
-কিন্তু ওর বাবাকে তুমি চেনোনা। উনি যে কতটা রাগী সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ওর বাবার কথার বিরুদ্ধে গেলে ওকে ওর বাবা খুন করতে দুইবার ভাববে না। রাহিন রাগত স্বরেই বলল
-তোমার ওর কথা বলা হয়ে থাকলে এখন তুমি যেতে পারো।
সুস্মিতা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেল। সুস্মিতা ভাবছে না জানি কত কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা। ওর নীলিমার উপরেই রাগ হতে শুরু হলো। নীলিমা যদি আরেকটু চেষ্টা করতো তাহলে হয়ত বিয়েটা আটকাতে পারতো। সুস্মিতার চলে যাওয়ার পরই বিজয় আর রাহিন উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো। এতক্ষণ ধরে বিজয়ের হাসি আটকে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। হাসতে হাসতেই বিজয় বলল
-ভালোই হলো রাহিন। তোর আর কষ্ট করে নীলিমার সাথে ব্রেকাপের নাটক করতে হলো না। পথের কাঁটা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে।
-ঠিক বলেছিস। এক্স এর সংখ্যা আরেকটা বাড়লো আমার। চল এই খুশিতে আজকে পার্টি হবে।
-তাতো হবেই। এরপর কি প্লান তোর?
-সুস্মিতা মেয়েটাও খারাপ না, কি বলিস?
-হ্যা। এই মেয়েটাকেও ট্রাই করা যেতে পারে। নীলিমার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে তুই যে কতটা কষ্ট পেয়েছিস সেটা ওকে বুঝাতে হবে। এরপর তোর প্রতি সমবেদনা থেকে এমনিতেই প্রেমে পড়ে যাবে।
-হ্যা এখন চল। ফোন টা লাউড স্পিকারে রেখে নীলিমাকে কল দিলো রাহিন।
-হ্যালো নীলিমা..
-রাহিন, তুমি! কেমন আছো তুমি?
-আমার ভালো থাকার দায়িত্ব টা তো তোমাকে দিয়েছিলাম নীলিমা। তুমি এখন অন্য কারোর ঘর সাজাবে। আমার কেমন থাকার কথা তুমি ই ভালো জানো।
-আমাকে ক্ষমা করে দাও রাহিন। আমি এই বিয়ে নিজের ইচ্ছায় করছি না বিশ্বাস করো আমাকে।
-এরপর থেকে আমি হয়ত কোনো মেয়েকেই বিশ্বাস করতে পারবো না। যাকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবেসেছিলাম সেই আমার ভালোবাসা টা দুমড়ে মুচড়ে চলে গেল।
-রাহিন…
-আমি আর কিছু শুনতে চাই না।
তুমি তোমার বড়লোক স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকো। এই রাহিন কোনদিনও তোমার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না। তোমাকে শুভকামনা জানানোর জন্যই ফোন দিয়েছি। এই বলে ফোন টা কেটে দিল রাহিন। এতক্ষণ ফোনে যা কথা হলো সব বিজয় শুনছিল। রাহিন কিছুটা রেগেই বলল
-আরেকটু হলে ধরা খেয়ে যাচ্ছিলাম। তুই হাসিটাকে একটু দমিয়ে রাখতে পারিস না হারামি।
-আচ্ছা বাবা স্যরি।
নীলিমার অপরাধবোধ টা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। বারবার রাহিনের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো তার চোখের সামনে ভেসে আসছিলো। ছেলেটার সাথে ও নিশ্চয়ই খুব অন্যায় করেছে। সুস্মিতাও বলছিল যে রাহিন নাকি তার বিয়ের কথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলো। পাওয়ারই তো কথা। এতদিনের ভালোবাসার মানুষ যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলে তাহলে তো খারাপ লাগবেই। রাহিনের হাতে কিছু ড্রিংক্স দেখতে পেয়ে বিজয় জিজ্ঞেস করলো
-কিরে এগুলি কি ব্রেকাপের ট্রিট নাকি?
-ধুর তুই আছিস ট্রিট নিয়ে। কিছুদিনের জন্য দেবদাসের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। বিজয় অবাক হয়ে বলল
-কি বলিস! তুই মুভিতে চান্স পেয়েছিস আগে বলিস নি তো! অবশ্য তোর যেই চেহারা মুভিতে চান্স পাওয়া ব্যাপার না।
-আরে না। নীলিমার বিয়েতে সুস্মিতা নিশ্চয়ই আসবে।
-হ্যা আসবে।
-ওকে দেখিয়েই নীলিমার বাড়ির আশে পাশে বসে ড্রিংক্স করবো।
-হু বুঝে গেছি। আর বলতে হবে না।
প্লান মত সব কিছুই করা হলো। রাহিনের হাতে ড্রিংক্স দেখতে পেয়ে সুস্মিতা ওর দিকে এগিয়ে গেল।
-এসব কি হচ্ছে রাহিন? তুমি ড্রিংক্স করছো??
-হ্যা। এখন ড্রিংক্স। একটু পর হয়ত গলায় বিষ ঢেলে দিব।
-নিজেকে সামলাও রাহিন।
-আমি পারবো না নীলিমাকে ছাড়া থাকতে। আমার ভালো থাকার দায়িত্ব টাতো ওকেই দিয়েছিলাম। সুস্মিতা সমবেদনার স্বরেই বলল
-হয়ত তোমার লাইফে আবার কেউ আসবে যে তোমাকে ভালো রাখবে। নীলিমার চাইতেও বেশি ভালোবাসবে তোমাকে।
-সেই মানুষটা কি তুমি হবে? আমার ভালো থাকার দায়িত্বটা তুমি নিবে? সুস্মিতা চুপ হয়ে গেল। রাহিন আবার বলতে লাগলো
-দেখলে তো তুমিও পারবে না। আমি জানি। আমি খুব অভাগা। কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আমি হয়ত কারোর ভালোবাসা পাবার যোগ্যই না। তুমি এখানে কি করছো? যাও বান্ধবীর বিয়ে এনজয় করো। আমাকে আমার মত থাকতে দাও। রাহিনের মোবাইলে সুস্মিতার কল পেয়ে খুশি ই হয় রাহিন। বিজয় বলল
-কিরে ছিপে বোধহয় মাছ উঠে গেছে।
-আরে চুপ থাক। কল টা ধরতে দে।
-হ্যা সুস্মিতা বলো।
-তুমি এখনো ড্রিংক্স করছো?
-সেসব জেনে তোমার কি লাভ?
-তুমি দেখা করো।
-কোথায়? ফোন টা রেখে হেসে রাহিন বলল
-আসলেই মেয়েরা মায়ার জাত রে। এত মায়া নিয়ে যে কীভাবে ঘুরে কে জানে!
-এখন রেডি হয়ে বের হ।
-হুম। যাচ্ছি।
অন্ধকারে চেহারা টা ঠিক মত বুঝতে পারছে না রাহিন। লোডশেডিং হয়েছে। তবে সে জানে এটা সুস্মিতা।
সুস্মিতা ভেবেই রাহিন বলতে লাগলো
-সুস্মিতা, তুমি কি আমার জীবনে আসবে? আমি নীলিমাকে ভুলে যেতে চাই। ওর মত বেঈমানের কথা ভেবে আমি
আমার জীবন টা নষ্ট করতে চাই না। আমার এই অগোছালো জীবন টা তুমি গুছিয়ে দাও। কথা গুলি শেষ করার পরই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল রাহিন। এই কান্নার আওয়াজ রাহিনের চেনা। এটা তো নীলিমার কান্না। একটু পরেই চারদিকে আলো ঝলমল করে উঠলো। রাহিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীলিমা। পড়নে বিয়ের শাড়ি, গা ভর্তি গয়না। আর চোখে পানি। পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো সুস্মিতা।
-রাহিন, তোমার জন্যই বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে নীলিমা। আমার ফোন থেকে কল দিয়ে দেখা করতে বলেছিলো তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। এরপর নীলিমা বলল
-হ্যা। কিন্তু আমার চাইতেও বড় সারপ্রাইজ রাহিন আমাকে দিলো।
রাহিনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সে চুপচাপ নীলিমার চলে যাওয়া দেখছে। সুস্মিতার চোখে রাহিনের প্রতি তীব্র ঘৃণা। এখন হয়ত নীলিমাকে সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়ে আটকে রাখা যেত। তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বলা যেত ‘তুমি যেও না।’ কিন্তু রাহিনের তো কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসার ক্ষমতাই নেই।