ভালোবাসাময় অনুভূতি

ভালোবাসাময় অনুভূতি

‘জানেন আমি না শাড়ী পরতে পারিনা, আমাকে শাড়ী পরা শিখাবেন?’ কথাটা বলেই মেয়েটি মুখ টিপে হাসলো। আমি তখনো চুপচাপ। কারণ মেয়েটিকে আমি রাগাতে চাই। সবসময় দেখছি মেয়েটি হাসে তাই রাগলে কেমন দেখায় সেটাই দেখার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। মেয়েটি আবারো বলল….

–কি হলো আমাকে শাড়ি পরা শেখাবেন না?

আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। একটু তাকিয়েই কিছু না জানার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে এমনি টিপাটিপিতে মনোযোগ দিলাম। মেয়েটি এবার ভ্রু-কুঁচকে তাকালো। চোখের সামনে থাকা এলোমেলো চুলগুলো ডান হাতে সরিয়ে দিয়ে বলল….

–ঐ বলেননা আমায় শাড়ি পরা শেখাবেন কিনা?

আমি তখনো নিজের কাজে ব্যস্ত। চুপচাপ মোবাইল টিপছি। বিষয়টা এমন যে আশেপাশে মারামারি লাগলেও আমার কোন পরিবর্তন নেই। আমি এসব সম্পর্কে কিছুই জানিনা। এবার মেয়েটি চুপসে গেলো। মনে হলো আইডিয়া কাজে লেগেছে। কিন্তু না! মেয়েটি আস্তে করে বলল….

–আমায় শাড়ী পরা শেখাবেননা তাইনা? আচ্ছা ঠিকাছে, আমি একাই শিখে নিব।

এইরে সেরেছে! দেখতে চাইলাম রাগ এখন দেখছি অভিমানের বৃষ্টি ঝড়েছে। আমি মোবাইলটা পকেটে রাখলাম। মেয়েটির দিকে তাকালাম, সে অন্য দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। হাসির আড়ালে অভিমানগুলো যে এতটা মিষ্টি সেটা এই মেয়েকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। কি বলব বুঝতে পারছিনা, গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললাম…..

–শোনোনা?
-(নীরব)
–এই শুনোনা একটু।
-হু বলুন শুনছি।
–রাগ করেছো?
-উহু একদমি না, আমি রাগ করতে পারিনা।
–আমার কাজটা তাহলে বিফলে গেলো।
-কিসের কাজ?
–ভাবছিলাম চুপচাপ থাকব কথা বলব না।
-কেনো?

–তোমার রাগি মুখটা দেখতে চেয়েছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম একটা মানুষকে রাগলে কতটা মায়াবী লাগে, কিন্তু দেখতে হলো অভিমান করলে মানুষটাকে চরম সুন্দরী লাগে। গাল গুলো ফুলিয়ে রাখে, মন খারাপ করে। সেই মুহূর্তে মানুষটাকে এতটা ভালো লাগে জানতাম না।

-কিইইইইই তারমানে আপনি আমাকে রাগানোর জন্য চুপচাপ ছিলেন?
–হা হা হা…
-ঐ বিলাই বলেন? আমাকে রাগানোর জন্য কথা বলেননি?
–বললামইতো….

মেয়েটি আমার কথা শুনে সোজা দাঁড়িয়ে গেলো। নাক ছিটকিয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো। আমার হাসি পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে জানিনা। তবে এই হাসি শব্দ করে প্রকাশ করলে খাঁমচি খাব নিশ্চিত। মেয়েটি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল…..

-আবার বলুনতো কেন কথা বলেননি?
–সেটাতো দেখতেই পাচ্ছি।
-কি দেখলেন হু বলুন নইলে খামচি দিব।

–এইযে মানুষটা রাগলে মনে হয় ঝড় শুরু হবে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় এই ঝড়টা আমার ভয় করেনা। বরং ঝড়টা বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হলে ছুতে ইচ্ছে করে। তার প্রতিটি ফোটায় ভিজতে ইচ্ছে করে। তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে করে। আমার কথা বলা শেষ হতেই মেয়েটির রাগান্বিত মুখ চুপসে গিয়ে লজ্জায় পরিনিত হলো। গাল দুটো লাল বর্ণ ধারণ করলো। আমি বললাম..

-রাগ করবে কি সেই ইচ্ছে গুলো বাস্তবায়ন করলে?
–(মেয়েটি মাথা ঝাঁকালো।)
-তারমানে রাগ করবে?
–উহু জানিনা আমি।
-হুম বুঝছি তুমি রাগবে….
–এই আমি জানিনা সত্যি।
-তাহলে বলো?
–আমি মানুষটাকে কাছে পেয়ে কি করব নিজেও জানিনা, হয়তো নিজের সত্তাকে হারিয়ে ফেলব। বিলীন হয়ে যাব কল্পনার জগতে, মিশে যাব তার পশমযুক্ত বুকের সাথে আমি জানিনা আর, সত্যি জানিনা।

মেয়েটা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। এই সময়গুলো সবচেয়ে মধুর হয়। চাওয়া পাওয়ার হিসেব গুলো খুব সহজেই মিলিয়ে নেওয়া যায়। অদম্য, অপরিকল্পিত, অবিশ্বাস্য ইচ্ছে গুলো নিমিষেই পূরণ করা যায়। হিসেব চুকে নেওয়া যায় নিজের কিছু অশ্লীল চিন্তাভাবনার। এই মুহূর্তে মেয়েটির হাত ধরতে বড্ড ইচ্ছে করছে। মেয়েটি আমার পাশেই বসে আছে। আমি চাচ্ছি মেয়েটা আমার দিকে তাকাক। কিন্তু আমি শিউর সে তাকাবেনা। আমি আলতো করে মেয়েটির হাত ধরলাম। সে কেঁপে উঠলো, বাঘের থাবা খেয়ে এক পর্যায়ে নিজের সর্বশক্তি হারিয়ে হরিণ যেভাবে তাকায় মেয়েটি ঠিক সেভাবে তাকালো।

কিন্তু এই মেয়েটি আমাকে সরাতে চাইছেনা, ঠিক যেমন বাঘের থাবা থেকে হরিণ সরতে চায়। অবাক করে দিয়ে মেয়েটি আমার হাত আরো শক্ত করে চেঁপে ধরেলো। সম্পর্ক সৃষ্টির লগ্নে হুট করে সেদিন প্রথম খুব কাছাকাছি হয়েছিলাম। দুজনের নিঃশ্বাস যেন আঁটকে এসেছিলো। এসেছিলাম একদম কাছাকাছি। যতটা কাছাকাছি থাকে আমাদের দুই ঠোঁটের দূরত্ব। অদম্য সব ইচ্ছে গুলো পূরণ করেছিলাম কপালে আলতো পরশের মাধ্যমে। দৌঁড়ে চলে যায় মেয়েটি। লজ্জায় ফোন, ফেসবুকে আসা বাদ দেয় সে। দুইদিন পর নিজেই ফোন দেয়। অভিমানের সুরে বললাম…..

–কাকে চান? মেয়েটি আমার কথা অগ্রাহ্য করলো। হাসতে হাসতে বলল….
-এত বার আয়নার সামনে গেছি হিহি সত্যিই প্রায় হাজারবার হবে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম….
–কেন?
-প্রথম পরশের অনুভূতির এতটা জালা তাই।
–বুঝলাম না।
-কচি খোকা আপনি তাই। অ্যাঁ কিচ্ছু বোঝেনা।

খুব হেসেছিলাম মেয়েটির পাগলামি মার্কা কথাবার্তা শুনে। মেয়েটি ভেংচি কেঁটেছিলো বারবার। একদিন বিকেলে বেলা হুট করে একটা গাঢ় কলাপাতা রঙের শাড়ী নিয়ে আমন্ত্রন করি তাকে। আমাকে উত্তেজিত দেখে সে বলল….

–কি হয়েছে আপনার?
-কিছুনা, ভাবছি তুমি রাগটাগ করবে কিনা।
–এমা কখনো রেগেছি আপনার উপর?
-উহু যদি….
–রাগ করবনা।

কোন প্রশ্ন করিনি আর। শাড়িটা হাতে নিয়ে তার চোখের দিকে তাকালাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে, বুঝতে চেষ্টা করছে কি হতে যাচ্ছে। সাহস সঞ্চয় করে বললাম….

–আচ্ছা এই কলাপাতা রঙ্গা শাড়ী যদি নিজ হাতে পরিয়ে দিই, রাগ করবে?

ফ্রিতে যদি ঐ মায়াভরা চোখে কাজল দিয়ে দেই অভিমান করবে? ঠিক যত্ন করে যদি কানের দুল পরিয়ে দেই ফিরিয়ে দিবে কি আমায়? শেষ নিঃশ্বাসের সময় হাতটা পাশে নিয়ে যদি বলি আর কিছুই বলতে পারিনি। হুহু করে কেঁদে দিয়ে জড়িয়ে ধরে আমাকে। নিজের ধারালো নখের প্রত্যেকটি আছর বসিয়ে দেয় আমার পিঠে। চোখের জলে বুকটা ভিজিয়ে দেয় আমার। গাল দুটো দু’হাতে চেপে ধরতেই ঠোঁটে ঠোঁটে আলিঙ্গন হয় আমাদের। চোখের জল হাজার চেষ্টা করেও আঁটকাতে পারেনি। নিজেও কেঁদেছিলাম সেদিন। জীবনের সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে নিজের দেওয়া শাড়ী পরিয়ে সেদিন-ই বিয়ে করি জান্নাতকে। হ্যাঁ মেয়েটির নাম জান্নাত। এতবড় সিদ্ধান্তে বাধা দেয়নি জান্নাত, আমার চোখে চোখ রেখে বলেছিল প্রতিটা সেকেন্ড হোক আমাদের। প্রতিটা বর্ষা, প্রতিটি ঋতু হোক আমাদের।

উহু এই পাগলটা হলেই চলবে আমার। হি হ তারপর হাসতে হাসতে চলে গেলো দুজনের একসাথে পথ চলার ৫ টা বসন্ত। আমি বসে আছি পার্কেরর বেঞ্চে। আমার কাধে মাথা রেখে বসে আছে জান্নাত। আর আমাদের সামনে পরীর মতন একটা মেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। মোবাইল নিয়ে সেলফি উঠছে। একটুপরপর পরীটা বলছে ‘আম্মু আতো তেলফি উতবো।’

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত