নিজেকে গুছিয়ে যখন প্যান্টের ভিতর শার্ট ইন করব তখনি শার্টের পকেটে একটা কাগজ চোখে পড়ল। কাগজ টা নিয়েই খুলতে যাবো দেখি কাগজের উপরে লিখা “প্লিজ এভাবে তাড়াহুড়ো করে নয়, একটু বসে ধীরে সুস্থে পড়ো।” বুঝলাম না কিছু, যাই হোক সোফায় বসেই খুলতে শুরু করলাম। পুরো উভয়পাশে এক পৃষ্ঠা লেখা, পড়তে শুরু করলাম।
” প্রিয় স্বামী,
জানিনা কিভাবে শুরু করবো, আমাদের যখন বিয়ে হচ্ছিল তখনো তোমার বিষয়ে অতটা জানতাম না। ঠিক বিয়ের দিনই আমাকে গাড়ি করে আনার সময় শশুর আম্মা আমাকে কানে কানে বলেছিল, তুমি নাকি প্রচুর রাগী টাইপের একটা ছেলে। হালকা পাতলা কথাতেও রেগে যাও, ঠিকমতো রেসপন্স করো না কোনো কথার, কাজের। শুধু নাকি রাগ দেখাও। একটু ভিন্ন হলেই জিনিস ছুড়াছুঁড়ি করো, ভেঙে ফেলো। সবচেয়ে বড় কথা হলো তুমি নাকি একদম ভিন্ন টাইপের। আর দশটা ছেলের মতো তোমার কাজ, চাহিদা, আকাংখা মিলে না। শুনে খুব অবাক লাগছিলো। শশুরআম্মা যখন এসব বলছিলো তখন আমি কাঁদছিলাম, বাট তোমার কথা শুনে শশুরআম্মার দিকে তাকালাম অবাক চাহনিতে, আরো অনেক কিছু বলছিলো।
চোখের কান্না নিমিষেই চলে গেল। তখনি ভাবতে শুরু করলাম তোমাকে আমি সামলাবো কিভাবে? বাড়িতে থাকতে নিজেকে নিজেই সামলাতে পারতাম না এখন তুমি, খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম কি আর হলো কি? অনেক ভয় শুরু করে দিয়েছিল কিভাবে তোমার সাথে লাইফ শুরু করবো। অথচ বধুসাজে একটু বসার পর তুমি এসেই আমাকে একটা নীল শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিলে পরার জন্য। শুরুতেই আমি ভীষণ খুশি হয়ে গিয়েছিলাম শাড়িটা দেখে, শুরুতেই পছন্দের জিনিস পেলাম। কত সুন্দর করেই না বলেছিলে শাড়িটা পড়ার জন্য। পরক্ষণে গিয়ে নিজ হাতে কফি বানিয়ে এনে আমাকে দিলে নিজেও সাথে করে খেলে। দেখলাম তুমি কত্ত সুন্দর করে নামাজ পড়ো, আমি তাকিয়ে থাকতাম।
একদিন ও তুমি আমাকে একটু রুঢ়ভাবে ডাকোনি ঘুম থেকে। প্রতিদিনই শুনতাম খুব সুন্দর করে কানের কাছে ডাক দিতে “এই যে তানিসা উঠে পড়”। চোখ খুললেই দেখতাম তুমি অন্য রুমের দিকে যাচ্ছ। আমার পাশে কাগজে করে লিখে রাখছিলে ” অনেকক্ষন তাকালাম তোমার সেই ঘুমন্ত চেহারার দিকে, আসলে হয়েছে কি মন ভরছে না তাছাড়া একদিনে অত বেশি দেখলে আর বাকিদিন কি হবে তাও মাথায় রাখলাম। তাই ডাক দিয়ে তুলে ফেললাম রাগ করো না কেমন।” উফ কি লজ্জায় না লাগত প্রতি সকালে এরকম একটা একটা লেখা পড়ে। একদিকে নিজেকে বিশাল ভাগ্যবান ভাবতাম। এভাবেও যে কেউ ঘুম ভাঙায় কিংবা ভাঙায়ছে শুনিনি।
সপ্তাহে একদিন করে কত সুন্দর করে সাজিয়ে গিফট নিয়ে আসো সবই আমার পছন্দের, দেখলেই মন ভরে যেত আর সপ্তাহে ছুটির দিন টা ঘুরাঘুরি উফ খুবই অবাক করা বিষয়। তোমার সাথে আজ দুই মাস বিয়ে হেয়েছে এখনো খোলামেলা আলাপ করতে পারিনি লজ্জায়, তোমার দিকে পুরো ভালোভাবে তাকাতে পারিনি। অথচ কিছু বলা নাই সব আশা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। শশুরআম্মা যা যা বলছিলো তার একটাও তোমার মধ্য দেখলাম না। বুঝলাম না শশুর আম্মা কি মিথ্যা বলছিলো নাকি তুমি চেঞ্জ জানিনা। পছন্দের প্রতিটা খাবার ঠিক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নিয়ে আসো সারপ্রাইজ করে দাও, অবাক হয়ে যেতাম। আমার জন্য তোমার প্রতিটা কথা, কাজ, সবকিছুতে শুধু ভালোবাসা খুঁজে পেতাম। বুঝিনা একটা পুরুষ মানুষ একটা মেয়ের এত কিছু বুঝে কিভাবে? যে বুঝে সে তো অবশ্যই রিয়েল হিরোই।
জানিনা তোমার মতো এমন স্বামী কেউ পেয়েছে কিনা? এমন কয়জনে পাবেও কিনা জানিনা। এই বাধন যেন চিরদিন থাকে কখনো হারিয়ে না যায় এটাই চায়। মাঝে মাঝে কান্না চলে আসতো খুশিতে। আমি মুখফুটে কিছু বলতে পারিনি তাই উপায় না পেয়ে চিঠিটা লিখলাম, বাবার বাড়ি আসার আগে চিঠিটা তোমার অফিসের শার্টের পকেটে রেখে দিয়েছি, আমি জানি তুমি পড়বে।। কই দেখলাম তোমার রাগ, কই ভিন্নতা, কই তুমি অন্যরকম। তোমার মতো বর বোধহয় অন্য মেয়ে পেলে ছাড়বেই না। এত কেমনে বুঝো তুমি মেয়েদের, তোমার ভালোবাসার ফিলিংসটাই ভিন্ন। যাই হোক, অন্য কারো নজর যেন না লাগে সাবধান থেকো, আমি তিনদিন পরই চলে আসছি। আশা করি লাগবেও না। অনেক বলছি এবার চিঠি টা শেষ করি। আই লাভ ইউ আমার প্রিয় বর।
ইতি
তোমারই তানিসা”
চিঠিটা এক নাগাড়ে পড়েই গেলাম। নিজেকে জানলাম অন্যর মাধ্যমে। আমি এত কিছুই করতাম জানতাম না। ও ভুলেই গেছি অফিসের কথা, আমি যে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছি। হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম ১০:৩০ বেজে গেছে। তারমানে অফিস এক ঘন্টা লেট হয়ে যাবে। ১১টা বাজবে পৌঁছাতে। বসের বকাঝকা শুনতে হবে আজকে। তাতে সমস্যা কি এমন ভালোবাসা দেখলে তো বসের বকাঝকা কেন অনেক কিছু শোনা ও সহ্য করা যায়, গায়ে লাগবে না। নিজেকেও অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।