আমার শ্বশুরবাড়িতে আর পা রাখবে না বলে দিলাম। ( আমি) আদিব ব্যাগ গুছাচ্ছে এই মুহূর্তে সে বাসা থেকে বেড়িয়ে যাবে। আমার উপর রাগ করে। এই নিয়ে ১০ বার হল আমাকে বলেছে আমি যেন ওর সাথে কোনো যোগাযোগ না করি। আচ্ছা, মেয়েরা রাগ করে তো বাপের বাড়ি চলে যায় আর ছেলেরা কই যায়? ওদের তো বাপের বাড়ি বলতে আলাদা কোনো বাড়ি নেই তাহলে আদিব এখন কোথায় যাবে।
আমি রাগ করে বিছানার এক কোণে বসে আছি আর বলে দিয়েছি আর যেন আমার শ্বশুরবাড়িতে না আসে। একটু রান্নাবান্না ই তো কম পারি তাই বলে পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে তুলনা করবে উনার রান্নার প্রশংসা করতে হবে..! ইচ্ছে করছিল ওকে কি করি। যাক, কোথায় যাবে যাক। আমিও দেখে নিব। কতদিন থাকতে পারে। আবার সন্দেহ হচ্ছিল পাশের বাড়ির ভাবী কিনা ওকে পেয়ে উল্টা পরামর্শ দেয়। উনাদের বিশ্বাস নেই বেশি দিল দরিয়াওয়ালা মানুষ তো।
তাই চুপিচুপি গেট অব্দি গিয়ে দেখলাম আদিব কোনদিকে যাচ্ছে। সোজা টেক্সি নিয়ে চলে গেল। এখন আবার অন্য টেনশন হচ্ছে কোথায় যাবে? বন্ধু দের কাছে। নাহ শহরে এত ভালো বন্ধু নেই তাহলে কি কলিগ এর বাসায় মেয়ে কলিগ…? এত রাতে কোথাও একটা তো যাবে। মেয়ে কলিগের কথা মনে করতে ই যেন মাথাটা ঘুরতে লাগল। ইশশ, ভুল করলাম নাকি কিছু। ফোন করব? না থাক একরাত যেকোনো জায়গায় গিয়ে থাকতে ই পারে। হোটেল বুক করে থাকবে আমি ই শুধু শুধু নেগেটিভ চিন্তা করছি। কাল যাক এরপরে ঠিক চলে আসবে। আজ ধৈর্য্য ধরে থাকি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ই আমার শ্বশুর শাশুড়িকে চা নাস্তা দিয়ে রান্নার দিকে এগুলাম। গতরাতে রুই মাছের করলা টা একটু মুখে দিতে ই যেন ভিতরটা গুলিয়ে আসছিল।
আরে এসব সুস্থ মানুষ খেতে পারে নাকি..! তারপরও আদিব দু প্লেট খেয়েছে বেচারা বালকের ধৈর্য্য আছে বলতে হবে। খেয়েছে, রান্না খারাপ হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু মাঝখানে পাশের বাসার ভাবীকে ই কেন আনতে হবে উনার রান্নার হাত খুব ভালো একদম অমৃত কেন বলতে হবে। করলা দিয়ে কি রুই মাছ রান্না করা যায় না! অন্যকেউ রান্না করে না তাতে আমার কি আমি করেছি। তাহলে যাও ঐ ভাবীর অমৃত খাও আমার রান্না তো গরল মারা যাবে খেলে। ইউটিউব দেখে খুব ভালো ভাবে মাংশ আর মাছ রান্না করলাম। আমার শ্বশুর শাশুড়ি বেড়াতে এসেছেন আজ সাত দিন হল। কেমন উল্টাপাল্টা রান্না করে খাওয়াই তেমন একটা ভালো হয় না। মা মাঝে মাঝে দেখিয়ে দেন তখন একটু ভালো হয়। গতকাল আবার উনারা বাসায় ছিলেন না চাচার বাসায় গিয়ে ছিলেন। তাই আমি আমার ইচ্ছে খুশি মত রান্না করেছি করলা দিয়ে রুই।
রান্না বেশ ভালো ভাবে শেষ করে টেবিলে খাবার নিয়ে মা বাবাকে ডাকলাম। টেবিলে এসে ই মা আদিবের কথা জিজ্ঞেস করলেন ও তো এই সময় বাসায় থাকে। আমিও বললাম, ব্যবসার কাজে কাল একটু বাইরে গেছে আজ চলে আসবে। আপনারা ছিলেন না তো তাই বলে যেতে পারেনি হঠাৎ করে যেতে হয়েছে। আমার শাশুড়ি আর কিছু না বলে খেতে বসলেন। খাওয়াদাওয়া শেষ করে বিকাল চারটা এখনো আদিব আসেনি। চিন্তা হচ্ছিল কি করি। অনেকক্ষণ ভেবে আর কিছু না পেয়ে কল দিলাম কিন্তু মোবাইল অফ..! বার বার ট্রাই করছি একই উত্তর। খুব টেনশন হচ্ছিল বেশি বলে ফেলেছি নাকি !
নাহ একটুও বেশি বলিনি কেন ঐ ভাবীকে আনবে উনি ওর কে। ১ দিন চলে গেল চিন্তা করলাম পাশের বাসার ভাবীর একটু খোজ খবর নেই পুরুষ মানুষদের আবার বিশ্বাস নেই। ভাবীদের প্রতি উনাদের ভালোবাসা একটু বেশি। ছোটখাট গোপন সূত্রে জানতে পারলাম পাশের বাসার ভাবী বাড়িতে নেই। একটু শান্তি পেলাম কিন্তু পরক্ষণে মনে হল আদিবকে নিয়ে পালিয়ে যায় নি তো। এ যুগে তো অনেক কিছু ই ঘটে। ভাবী কোথায় গেছে ঠিকমত সেটা জানিও না। আরো চিন্তা বেড়ে গেল। তার মাঝে মোবাইলে টুং টাং শব্দে বিরক্ত করছে। ভাইবোনরা মিলে কোথায় বেড়াতে গিয়েছে তাদের পোস্টে আমাকে ট্যাগ করার কি মানে। আমি মরি আমার জ্বালায় আর ওরা আছে ফুর্তিতে।
কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। মোবাইল এখনো অফ দুদিন আজ কোথায় গেছে কেমন আছে কে জানে নাকি সত্যি সত্যি উল্টাপাল্টা কিছু করেছে ! বার বার বলে গেছে যেন যোগাযোগ না করি। তার পরিচিত যত জনকে চিনি সবার কাছে খবর নিয়েছি কোথাও নেই। কি করব কি করব ভাবতে সন্ধ্যা। শ্বশুড় শাশুড়িকে কি বলে দিব ! বলে দিব ভেবে চা নিয়ে উনাদের সামনে গেলাম। শ্বশুর চা মুখে দিতে ই কেমন করে উঠলেন। উনি আবার একটু কড়া ভয় পাই। আমি চায়ে চিনির বদলে লবণ দিয়ে দিয়েছি..! আমিও বললাম, আপনার তো ডায়াবেটিস তাই চায়ে চিনি না দিয়ে লবণ দিয়েছি আপনার জন্য।
কি করব এসব বলা ছাড়া উপায় নেই। আমার শাশুড়িও বললেন, বেশ করেছে দিয়েছে একদিন এভাবে খেলে কিছু হবে না। চিনি খেয়েও তো রাগ কমে না। ভালো করেছ মা এখন থেকে সবসময় লবণ দিয়ে চা দিবে। উনাদের ঝগড়ার আবহাওয়া দেখে কিছু বলতে পারলাম না। আমার শাশুড়ি যথেষ্ট ভালোবাসেন আমায় শ্বশুরও ভালো তবে একটু খিটখিটে আরকি। ভয়ে আর কিছু না বলে চলে আসলাম। মাকে ফোন দিব..! দিলাম। ফোন ধরতে ই মা তাড়াহুরু করে কথা শেষ করে বললেন রান্না করতে হবে অনেক কিছু এখন কথা বলতে পারবে না। আমি আমার কথা বলার আগে ই ফোনটা কেটে দিল।
এই নাকি মা। বিয়ে দিয়ে মেয়েকে একেবারে পর করে দিয়েছে। একটু সময়ও নেই মেয়ের জন্য। আবার মোবাইলে টু টাং শব্দ বিরক্ত লাগছিল। রাগে দুঃখে আমার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে। কি করব না করব কিছু ই ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় যাদের দরকার তারাও তাদের মত ব্যস্ত আমি যে একটা মানুষ চোখে ই লাগছে না। বোনকে মেসেঞ্জারে নক করলাম। করার সাথে সাথে বলে, আপু একটু পরে কথা বলি পিক আপলোড দিব আজকের যা মজা করেছি না। বলে বুঝাতে পারব না তোকে।
ওর এসব কথা শুনে আমি মোবাইল টা আছাড় মারতে ইচ্ছে করছিল। এই বোনের জন্য কিনা আমি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আইসক্রিম কিনে আনতাম। দুনিয়াতে কেউ আপন না ভেবে আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলাম কখন বুঝতে পারিনি। সকালে উঠে ই ঠিক করলাম বাবার কাছে যাব। বাবা ছাড়া আর কেউ এসবে হেল্প করতে পারবে না। বাবাকে ফোন দিব ভাবতে ই হঠাৎ বাবার ফোন আসল। ফোন ধরে ই কিছু বলতে যাওয়ার আগে ই বাবা বললেন, আজ আমি আমার শ্বশুড় শাশুড়িকে নিয়ে যেন বাবার বাসায় যাই। বাবা, স্বামী থাকলে তো শ্বশুর শাশুড়ি থাকবে বলে আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠব তখনি বাবা ধমক দিয়ে বললেন, কিসব আবোলতাবোল কথা দুপুরে যেন পৌছে যাই।
আমিও বললাম, বাবা আদিব তো আরে, ঝগড়া হয়েছে ঠিক হয়ে যাবে। এসব এমনকি হয় হয় এসব হয়। আদিব যে তিন দিন ধরে বাসা থেকে চলে গেছে তা বলতে ই পারলাম না। ফোন রেখে দিল। কিছু করার নেই বাবার সাথে সামনাসামনি কথা বলতে হবে। রেডি হয়ে মা বাবাকে নিয়ে বাড়িতে গেলাম। খুব খারাপ লাগছে বেশি বেশি বলে ফেলেছি হয়ত তাই বলে এমন করবে ৩ দিন ধরে ফোন অফ। বাসায় ঢুকতে ই মা বাবা সব এলেন কথা বলে সামনে এগিয়ে দেখি টেবিলে কত আয়োজন কত কিছু রান্না করা হয়েছে। বাবা কে আড়ালে বলতে যাব তখনি পিছন থেকে শুনলাম মা কাকে ভাত বেড়ে দিচ্ছেন। তাকিয়ে তো আমার চোখ কপালে! আদিব খাচ্ছে! আর মা কত যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন।
আমার দিকে তাকিয়ে একটা ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বলল, তোমার রান্না খেতে খেতে অতিষ্ট তাই রাগ করার উছিলায় বেড়িয়ে পরলাম। তুমি না বলেছিলে, তোমার শ্বশুরবাড়িতে যেন না যাই তাই আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে চলে এসেছি। শুধু কি তোমার শ্বশুরবাড়ি আছে আমার নেই! ( আদিব) মা বাবা বাসার সবাই মিলে হাসছে। আমাকে কাঁদিয়ে বেশ ভালো ই থাকছেন এই কয়দিন। বাসায় ঢুকতে না দেওয়ায় যে উনি আমার বাপেরবাড়ি দখলে নিবে বুঝতে ই পারিনি। আমার শাশুড়ি আমাকে স্বান্ত্বনা দিয়ে বললনে, কান্না করে না মা। ঐ শয়তান টাকে আচ্ছা করে জুতো পেটা করব। আমার মেয়েকে কাঁদায়।