তোমার মাঝে

তোমার মাঝে

– কেমন আছো??
নীল খেত থেবে বই কেনার জন্য এ দোকান সে দোকান করছি। ঠিক তখন কেউ একজন আমার নাম ধরে কথাটি বলললো। আমি একটু স্থীর হয়ে চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম। তেমন কাউকেই চোখে পড়লো না। তাই আবার হাটা শুরু করবো তখনি কেউ একজন আমার হাত ধরল.
ঘুরে তাকিয়ে দেখি সাফা দাড়িয়ে আছে।
– কি ব্যাপার..এত করে ডাকছি। কথা শুনতে পাওনা?
একটু ইতস্থতা করে, বললাম.
– আসলে আমি বুঝিনি যে কেই একজন আমাকে ডাকছে।
– আমি কি কেউ একজনের মধ্যে?
সাফার কথা শুনে স্মীত হেসে উঠলাম। তার মুখের দিকে এখনো আমি তাকায়নি। জানি, আমি যদি আবার তাকায় আগের মত সরই মায়াতে পড়ে যাবো। যার ফল স্বরুপ আমি হয়ে পড়বো এক ছন্নছাড়া মানব।
– কি হল কি? তুমি কি কথা কম বলা ধরেছো নাকি? চলো হাটি।
আমি নির্বাক হয়ে ওর কথাগুলো শুনতে লাগলাম। ভাবতে লাগলাম, কি চাই মেয়েটা? সে আজ কেনো এমন করছে?
– কেমন আছো আবির? (সাফা)
– ভালো না থাকার তো কারন নেই। তুমি?
– আমি ভালো নেই।
কথাগুলো বলছিলাম নীল ক্ষেত থেকে বেরিয়ে হাটতে হাটতে। আমি সাফার সাথে হাটতে কেমন অস্বস্তি বোধ করছি।
– কেনো ভালো নেই? (আমি)
– কেউ একজনকে ভালোবাসি তো কিন্তু সে আমাকে চাই না আর।
– ওওও..
সাফার কথাশুনে মনে মনে হেসে উঠলাম। আমি জানি সেই একজনটা হল আমি। এটাও জানি আমি তাকে কেন চাই না। কারন, মানুষ ভুল করে, তবে বিশ্বাস নিয়ে
যে খেলে তাকে চাওয়া যায় না।
– তুমি কি কম কথা বলা শিখেছো?
– আচ্ছা তুমি হঠাৎ এ দিকে কি মনে করে? (আমি)
– এমনি আসলাম
দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। সে কেনো আজ কথা বলছে আমার সাথে? সে কি বুঝতে পারছে না আমি যে বিদ্ধস্ত হচ্ছি? অনুভুতিহীন হয়ে পড়ছি আমি আবারো। যা আমি চাই না কখনই আর। নিরাবতা ভেঙে সে জিগাস করলো..
– একটা কথা জিগাস করি? (সাফা)
– হুমম..
– তুমি কি আমাকে ভুলতে পেরেছো? আমাকে আগের মত ভালোবাসো তাই না?
আমি থমকে দাড়ালাম। তার দিবে এবার মুখ তুলে তাকালাম আমি। সে আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। আর আমি খুজতে লাগলাম তার প্রশ্নের উত্তর। উত্তরগুলো আমার অজানা নয়। তবে সামনে যে আমার দ্বিধার এক মস্তবড় দেয়াল ঠাই দাড়িয়ে আছে। সেই দেয়াল টপকে সাফার প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা আমার এক অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
– কি হল কি..বলো আমাকে সব? আমি জানতে চাই। আর যদি তোমার উত্তর হ্যা হয় তবে আজই আমাকে গ্রহন করতে হবে আমি ফিরে আসতে চাই আবার তোমার মাঝে।
– হাহাহাহাহাহা…(আমি)
– হাসছো কেনো?
– এমনি..আচ্ছা কি চাও তুমি?
– তোমাকে? তোমার জীবনে আমি আবার আসতে চাই। দিবে না কি আর একবার সুযোগ আমাকে? (সাফা)
সাফার কথাগুলো শুনে চুপ হয়ে গেলাম। ইচ্ছে করছে তাকে বলি হুমম ভালোবাসি আমি। ফিরে এসো আবার। কিন্তু আমার ইগো বলছে, দরকার নেই ওমন মেয়েকে। যে তোর ভালোবাসা নিয়ে মজা করেছে। যে তোর অবস্থান কে নিয়ে খেলা করেছে, যে তোর মনকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করেছে তাকে কখনই ফিরিয়ে নিস না। তাই আমি সাফাকে বললাম..
– কি দরকার এসবের আবার? যেমন আছি থাকি না। ভালোই তো আছি। তুমিও তো ভালো আছো।
– নাহ আমি ভালো নেই। আমি তোমাকে চাই।
একটু চুপ থেকে আমি বললাম..
– শোনো, হ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি। হ্যা আমি তোমাকে আজো মিস করি। তবে চাই না তুমি আবার আমার জীবনে ফিরে এসো। আমি চাই না সব নতুন করে শুরু করতে। আমি এটাও চাই না পুরোনো কিছু স্মৃতি ভুলে তোমার হাতে হাত রেখে পথ চলতে।
– কিন্তু কেনো?
– সেটা তুমি নিজেই জানো।
.
আমি আর কিছু না বলে একটা রিকশা ডেকে সোজা চলে আসলাম। একবারো পিছন ফিরে তাকাইনি আমি। তবে মনে হচ্ছিলো সে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। থাকুক সে তাকিয়ে, ওমন মেয়ের সাথে এমনই হওয়া দরকার। রিকশাতে বসে আজ থেকে গত দুই বছরের পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে হতে লাগলো,
.
।।
– তোমার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিলো আবির?
– হুমমম বলো.
– আসলে জানিনা তুমি কথাগুলো কিভাবে নিবা..
– আরে বলোতো..
– আসলে, আমি ব্রেক আপ চাই।
কথাটি শুনেই আমি চমকে উঠি। কি বলে মেয়েটা? সে নাকি ব্রেক আপ চাই। আমি বোবার মত দাড়িয়ে রইলাম। মুখ দিয়ে কোনো প্রকার কথা বের হচ্ছে না। অনেক কষ্টে জিগাস করলাম..
– কেনো.??
– আসলে আবির আমার আর তোমাকে ভালো লাগে না। তোমার কেয়ারগুলো আর আমার সহ্য হয় না। তোমার কথা শুনলেই যেন কেমন রাগ চলে আসে এখন নিজের মাঝে। মোট কথা আমি তোমাকে আর সহ্য করতে পারছি না।
– কিন্তু কেন বাবু, আমি তো তেমন কিছুই করিনি
– হুমম করোনি তবে আমাকে তোমার আর ভালো লাগছে না।
– আচ্ছা আমি তোমার কেয়ার কম নিবো। কম কথা বলবো। তবুও এভাবে ছেড়ে যেও না।
– ধুরর,,তোকে আর ভালো লাগছে না আমাকে। আমার ব্রেক আপ চাই। তুই থাক তোর মত
– কিন্তু তুমি যে আমাকে আগে এসেই প্রপোজ করেছিলে।
– তখন তোকে ভালো লাগতো। এখন সেই মোহটা কেটে গেছে।
– তাই বলে এভাবে আমার সাথে সব শেষ করে দিবা? তোমার একটুও বুক কাপলো না?
– তার জন্য সরি আমি।
– ঠাসসসস..
আমি আর কিছু না বলে ওর গালে একটা কষে থাপ্পড় দিয়ে চলে আসি। স্থান হয় আমার অন্ধকার রুমে। সারাদিন পড়ে থাকতাম একা। আসতে আসতে নিজেকে সামলিয়ে নিই।
একদিন বাইরে বের হয়ে দেখি, সাফা অন্য একটি ছেলের সাথে একই রিকশাতে ঘুরছে। তখনি প্রকাশ হয়ে গেলো আমাকে ভালো না লাগার আসল কারন,..
..
– মামা এসে পড়েছি..
রিকাশা মামার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে ঢুকছি। তখনি মনে পড়ে গেলো সাফার কথা।
মেয়েটি কতটা স্বার্থপর। সে সুযোগ সন্ধানি ছিলো। কিন্তু আমি যে তাকে সত্যিই ভালোবাসি। সেদিন সেই দৃশ্য দেখে অনেক কেদেছিলাম।
তবে আজ আর কোনো কান্না নই। কারন, আমি আমি জয়ী হয়েছি, এক বিশাক্ত মানষীর কাছ হতে। যার সর্বার্গে বিষে ভরপুর।
মনে মনে ভাবলাম, ভালোবাসা কি সত্যিই কোনো খেলা? যদি খেলা হয়, তবে মনে রাখা উচিৎ, ভালোবাসা নিয়ে যে খেলে তার অপার পাশে সে হয়ত বোকার মত তোমার খেলাতে মত্ত থাকবে। কিন্তু সেই অপার পাশের ব্যাক্তিটি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে পাশে থাকার চেষ্টা করবে। আর তুমি তাকে নিয়ে খেলবে।
মনে রেখে তুমি হয়ত কাউকে নিয়ে খেলছো, হয়ত সে তোমার কাছে কিছুই নয়। কিন্তু তার কাছে তুমি অনেক মুল্যবান বড় কিছু।

……………………………..(সমাপ্ত)……………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত