বৌ চাও নাকি বোন। আমার গায়ে হাত তোলার সাহস কি করে হয় তোমার বৌ এর? আজকে ফয়সালা করো ভাইয়া। আমি আমার ছোট বোন তিথির কথা শুনে খানিকটা থমকে গেলাম। এই তো সেই তিথি যার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। টাকার জন্য যখন বিয়েটা হচ্ছিল না তখন আমার স্ত্রী বেলী তার সব গয়না গুলো বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেছিল। তখন বেলী কতো ই না ভাল ছিল তিথির কাছে। আজ সে তিথির কাছেই খারাপ। কি নিষ্ঠুর মানুষ।আমি তিথির দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘তুই তো জানিস সব কিছু। তারপরো কেন এমন প্রশ্ন করছিস? ‘শোন বাবা সামিউল তোমার স্ত্রী এখন ভীষণ নাটকবাজ হয়েছে। তার দূঃখে আমরা সবাই দূঃখিত কিন্তু তাই বলে যাকে তাকে এভাবে আঘাত করবে বলো? আজ তোমার ছোট বোন কে আঘাত করেছে কাল তোমাকেও আঘাত করবে। না, না এমন মেয়ের সাথে তোমার সংসার করা মানায় না।
আমি মনি চাচার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ চাচা বেলী কে তো ঘর বন্দী করে রাখাই হয়। আমিই ওকে তিন বেলা খাবার দি। ওর যাবতীয় সব কাজ তো আমিই করি। কাউকে তো জ্বালায় না সে। ওর কোন কিছুই নাটক নয়। ওর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আপনারা সবাই জানেন। আমি ত বাড়ির সবাইকে বলে দিয়েছি যেন কেউ বেলী আর আমার ঘরে না ঢুকে। তারপর ও কেন তিথি বেলীর ঘরে ঢুকতে গেল? কেনই বা ঝগড়া করলে বেলীর সাথে?
‘হ্যা এখন সব দোষ তো আমার তাই না রে ভাইয়া? বৌয়ের গোলাম নাকি তুই? আরে ওরকম মেয়ে তো হাজার টা পাওয়া যাবে। ওসব পাগল ছাগল পুষে কি হবে? তা ছাড়া ডিভোর্স দিবি না ঠিক আছে ওকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দে।
তিথির কথা গুলো শুনে নিজের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছিল আমার। রাগ টা বেলীর জন্য না তিথির জন্য। আমি শান্ত গলায় তিথির দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আমি বেলীকে ছাড়তে পারবো না। ওর আমাকে ছাড়া আর এই দুনিয়ায় কেউ নেই। ওকে আমি ছাড়তে পারবো না। আর না পারবো মা বাবা কে ছাড়তে। সবাই এক সাথে থাকবো এই বাড়িতে। দয়া করে বেলীকে তরা কেউ ডিসটার্ব করিস না।
আমার কথা শুনে চাচা আমাকে বৌয়ের ভেড়া উপাধি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমিও বসার ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকলাম। ঘরে ঢুকতেই বেলী আমার পা জড়িয়ে ধরে কাদঁতে থাকলো। যেন কোন বাচ্চা কাঁদছে। আমি মেঝেতে বেলীর পাশে বসে পরলাম। বেলী মুখ মুছিয়ে দিলাম। বেলী শুধু এই দুনিয়ায় আমাকে চেনে। আর আশেপাশে কাউকেই সে চেনে না। মাঝে মধ্যে তার হারানো সৃতি ফিরে আসে তখন সে মন দিয়ে প্রাণ দিয়ে মিষ্টি কে খুজতে থাকে। আর আমাকে তখন মিষ্টির আব্বু বলে ডাকে। ঐ এক মুহূর্ত ই যেন আমার পাওয়া। সব ক্লান্তি কস্টের অবশান।
আমি বেলীর দিকে তাকিয়ে আছি। বেলী চুপচাপ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বেলী আর আমার দাম্পত্য জীবন যথেষ্ট সুখের ছিল। এইতো দেড় বছর আগেও সে স্বাভাবিক ছিল। তার চোখে কত স্বপ্ন ছিল। কি সুন্দর করে সংসার সামলাতো। বাড়ির সবাই তাকে মাথায় করে রাখতো। এই তো সেদিনের কথা বেলীর কোল জুড়ে মিষ্টি এলো। সেদিন কি খুশি আমি আর পরিবারের সবাই। চাঁদ এর মতো মেয়ে আমার মিস্টি কি যে সুন্দর আধো আধো কথা বলতো। বাবা, বাবা বলে পিছন পিছন দৌড়াতো। কিন্তু দেড় বছর এর ব্যবধানে কোথা থেকে কি হয়ে গেল।
সেদিন ছুটির দিন ছিল। বাড়ির ছাদে কাজ হচ্ছিল। আমি দুপুর বেলা খেয়ে পত্রিকা পড়েছিলাম। মিষ্টি আমার আশে পাশে ছিল। কিন্তু কখন যে সে আমার চোখের আড়ালে ছাদে চলে গেছিলো তা আমি বুঝতে পারি নি। হঠাৎ খুব জোরে কিছু একটা পরার শব্দ পেলাম। প্রথমে খেয়াল না করলেও আশে পাশে মিষ্টিকে দেখতে না পেয়ে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। ততক্ষণে মানুষ জন জড়ো হয়ে গেছে। কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকছে। বেলী রান্না ঘরে থাকায় কিছু শুনতে পায়নি। আমি দৌড়ে নিচে গেলাম। আর সব শেষ। ‘এই মিষ্টির আব্বু শুনছো? এই, এই। বেলীর কথায় হুশ ফিরলো আমার। বেলীর দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ক্ষুধা লেগেছে? ভাত খাবে?
আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বেলী বললো, ‘আমাকে কি ছেড়ে দিবে তুমি? মিষ্টির মতো হারিয়ে যাবে? বেলীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম। বেলীর ঐ শীতল চোখ জোড়া আমাকে প্রতিদিন জানিয়ে দেয় যে আমি ছাড়া তার কেউ নেই। আমি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বেলীকে বললাম, ‘তুমি কি জানো তোমাকে ভালবাসি? তুমি কি জানো তোমাকে ঠিক সেই প্রথম দেখার দিন থেকে ভালবাসি? তুমি কি জানো আমি তোমায় আজও ঠিক তেমনি ভালবাসি যেমনটা কয়েক বছর আগে বাসতাম?
তোমাকে যে কোনদিন ছাড়তে পারবো না সে তুমি যেমনি হও। মিষ্টি কি শুধু তোমার একার ছিল বেলী? তুমি তার শোক সামলাতে না পেরে পাগল হলে তাহলে আমি সুস্থ রইলাম কি করে? তাহলে কি আমি বাবা হতে পারি নি কখনো? বলো না বেলী? বেলী আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ দুজনই চুপ করে রইলাম। কেউ কোন কথা বলছি না। বেলীর হাত ধরে বসে আছি। এমন সময় বেলী বললো, ‘আমার ক্ষুধা লেগেছে।