প্রেমের কাহিনি

প্রেমের কাহিনি

আমার বান্ধবী মারিয়া আমাকে বেশ ভালোভাবে গোল খাইয়ে দিয়েছে।কোন বান্ধবী বান্ধবীকে নিয়ে এভাবে খেলে আমি মারিয়ার সাথে না মিশলে বুঝতে পারতামনা। মারিয়া আমার প্রথম প্রেমটা নিয়েই খেলেছে।আর আমি ছ্যাকা খেয়েছি।

নতুন নতুন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে অজানা অচেনা অনেকের মধ্য থেকে প্রথম মারিয়াকে বান্ধবী হিসেবে বেচে নিয়েছি।ফার্স্ট ইয়ার থেকে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আমাদের। সবসময় দুজন একসাথে থাকি।যখন একসাথে থাকিনা তখন হুয়াট্সআপ,মেসেঞ্জারে হলেও আমাদের টুংটাং কথা হয়।আমি কোন ড্রেস পড়ে আসছি না আসছি তার খোজ রাখে সে। কারণ মারিয়া থাকে উত্তরায়।আর আমি থাকি হোস্টেলে।তাই ভার্সিটি ছুটির পর গেইটে বের হয়ে দুজনকে দুই পথে হাটতে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি ভার্সিটির গেইটে এক ছেলে আমার ড্রেসের সাথে মিল রেখে ড্রেস পড়ে প্রতিদিন দাড়িয়ে থাকে।আমায় দেখলে মিটিমিটি হাসে।লম্বা,শ্যামলা টাইপের ছেলেটাকে দেখতে দেখতে একদিন আমার ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা তৈরি হলো।ভাবলাম সরাসরিতো আর ভালোবাসার কথা বলা যায়না।মারিয়াকে বললে মারিয়া নিশ্চয় হেল্প করবে।

কিন্তু মারিয়া পাষাণির মতো বলল,নিজের কাজ নিজে করা ভালো।আমি সরাসরি হেল্প করতে পারবনা তবে আমি কিছু বুদ্ধি দিচ্ছি সেই বুদ্ধি নিয়ে এগিয়ে যা,আশা করি সফল হবি।আমি দূর থেকে দেখব।একসেপ্ট করলেও দেখে নিব না করলেও দেখে নিব।আমিও তখন বুঝতে পারিনি মারিয়া কোন দেখে নেওয়ার কথা বলছে। মারিয়া দুর থেকে আমায় হেল্প করছে।মারিয়ার প্রথম হেল্প ছিলো,ছেলেটার তথ্য সংগ্রহ করে দেওয়া।প্রথম কাজটা সে একদিনে করে ফেলল। ছেলেটার নাম আদনান।থাকেন মিরপুরে।একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে। বুঝেই গেলাম বাবা-মায়ের মেয়ের জামাই হিসেবে বেশ পছন্দ হবে।শুধু পটিয়ে ফুটিয়ে প্রেম করতে পারলেই হল।তারপর সোজা এক ছাদের নিচে দুজনের বসবাস।

মারিয়ার কথা অনুযায়ী একদিন আমি আর টয়া মিলে সেই ছেলেটার কাছে গেলাম।মারিয়ার কথা অনুযায়ী কোনো অরিয়েন্টেশন না থাকলেও প্রপোজ করব বলে ওর থেকে ধার নিয়ে নীল শাড়ি পড়ে এসেছি।আর সেই ছেলেটা নীল একটা টিশার্ট পড়ে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বোকার মতো হাসছে।আরে এটা কি হাসার সময় নাকি পাগলা,এটাতো প্রেমময় দৃষ্টিতে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে প্রেম বিনিময়ের সময়।আমিও তার দিকে তাকিয়ে থাকব সেও আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।প্রথম প্রথম প্রেমে পড়লে এসবিতো হয়। মারিয়া গেইটের ভিতরে সাইডে করে দাড়িয়ে আছে।গেইট থেকে বের হওয়ার সময় বলে দিয়েছে আমি কি বলি আর কি না বলি তা যেন ও শুনতে পায়। ছেলেটা আমাকে গেইট হতে বের হতে দেখে নড়েচড়ে দাড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল। আমিও এগিয়ে গিয়ে প্রথমে বললাম,এক্সকিউজ মি,আদনান সাহেব। ছেলেটা এবার আমার দিকে ফিরে তাকাল।তারপর বলল,জি বলেন।

–আসলে বেশ কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি আপনি আমার ড্রেসের সাথে মিল রেখে ড্রেস পড়ে আসেন।

ছেলেটা মনে হয় আমার মুখ থেকে এই কথা শুনতে চাইছিল।আমার কথা শেষ হওয়ার আগে আদনান বলল,একদম ঠিক বলছেন,ইটস মিরাকল।এটা আমিও প্রায় ভাবি।আমি যেদিন লাল টিশার্ট পড়ি আপনি সেদিন লাল হিজাব পড়ে আসেন।যেদিন কালো পড়ি সেদিন আপনিও।আমাদের দুজনের মধ্যে সাইকোলজি কতো ভালোভাবে কাজ করছে দেখেন। উনার কথায় খুব খুশি হলাম।আগে থেকে ফোটে থাকা প্রেমের লাড্ডুটা আরো বড় হয়ে গেল।খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ফেললাম,আসলে আপনাকে এভাবে অপেক্ষা করতে দেখে আমার ভালো লাগে।

–জি,আমারো ভালো লাগে।

বাহ ভালোইতো।জীবনে এমন একজনের জন্য এতো বছর ধরে অপেক্ষা করছি,যার আমার জন্য অপেক্ষা করতে ভালোলাগবে।আমি দেরি করে এসে সরি বললেও হাসিমুখে বলবে,আরে কি বল তুমি,আমারতো তোমার জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে।যাইহোক মনের মতো মানুষের মুখ থেকে তার মনের কথাটা শুনতে কার না ভালোলাগে।আমিও আজ তার মুখ থেকে প্রথম ভালোবাসার কথা শুনব।তাই আমি একটু রোমান্টিক মোড় নিয়ে বললাম, আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?

–জি অনেক ভালোবাসি। কাকে?
–আমার বউকে। মজা করছেন নাকি সত্যি আপনি বিবাহিত?
–ঝি বিয়ে করেছি প্রায় তিনমাস হলো,আমার বউ এইবার নিউ এডমিশন।তাঁকে নিতে প্রতিদিন এখানে আসি।আপনিও কি নিউ এডমিশন? আমার রোমান্টিক মোড় ততোক্ষণে দুঃখের মোড় নিয়ে নিলো। জি ভাইয়া নিউ এডমিশন।মার্কেটিং নিয়ে ভর্তি হয়ছি।

–আরে আমার বউওতো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট। নাম মারিয়া। আরে বলেনটা কি?আপনি মারিয়ার হাসবেন্ড?
–জি মারিয়ার হাসবেন্ড।

মারিয়া আমায় কোনদিন বলেনায় যে তার বিয়ে হয়েছে। মেয়েটা আমাকে এভাবে গোল খাইয়ে দিল? মারিয়া ততোক্ষণে গেইট থেকে বের হয়ে হাসতে হাসতে আমাকে এসে বলল,সরিরে জান পাখি,তুই আমার সবচেয়ে সুন্দরী এবং কাছের বান্ধবী বলে তোকে দিয়েই লোকটাকে একটু টেস্ট করে নিলাম।তোর ড্রেসের কালার ম্যাচিং করে ওকে ড্রেস পড়তে দিতাম। দেখেছিলাম সে এমন কিছু মিরাকলে তোর প্রতি দুর্বল হয় কিনা।আর দেখেছি সে সত্যি আমায় ভালোবাসে কিনা ।

এইবার প্রথম ছ্যাকা খাওয়ার মোড়টা ক্রোধে রুপান্তর হলো।ইচ্ছে করছিলো মারিয়াকে খুন করি।মেয়েটা আমায় প্রাণ পাখি বলতে বলতে জান টা নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিল। কি আর করা।নিজের সম্মান বাচাতে আমিও হাসতে হাসতে বললাম,আরে পাগলি সরি বলছিস কেন? আমিওতো এসব জেনেশুনে করেছি। তোর মোবাইলে তোদের দুজনের ছবি দেখেই বুঝতে পারছিলাম তুই বিবাহিত। তুই আমাকে বলিসনি বলে আমিও না জানার ভান ধরে তোদের সাথে খেলেছি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত