বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বলতে গেলে ঝড়ই হচ্ছে আর এই দিকে কারেন্টও নেই। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখবো ভেবেও সম্ভব হয় নি। কারন জানালার কাছে যেতেই বার বার ভিজে যাচ্ছি তাই জানালাটা বন্ধ করে রাখলাম। অন্ধকার রুমে একা একা বসে আছি। বাসার বাকি সবাই হয়ত ঘুমিয়ে আছে কারন এখন প্রায় দুপুর ৩টা বাজে। এমন দুপুরে বৃষ্টি মানেই তো ঘুম কিন্তু কিছু মানুষের কাছে ঘুম সেটা তো সোনার হরিণ। তাই রান্না ঘরে চলে গেলাম আর পছন্দ মত এক কাপ কফি বানিয়ে নিলাম। আর রুমে এসে আমার টেবিলের উপর থেকে একটা ডায়রী আর একটা কলম নিলাম। অবশ্য ডায়রীটা আমার কেনা নয় বরং একজন আমায় গিফট দিয়ে বলে ছিল ” যখন নিজেকে একা মনে হবে তখন মনের এলোমেলো কথা গুলো ডায়রীতে লিখে রেখো হয়ত মনটা একটু হলেও ভাল লাগবে “। আর তাছাড়া এমন বৃষ্টির দুপুরে নির্ঘুম চোখে হালকা অন্ধকার ঘরে জেগে থাকা এর চেয়ে বড় একা কেউ আছে কি? আর অনেক দিন যাবত লেখালেখিও হয় না তাই একটু অতীত থেকে ঘুরে আসা যাক।
ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরছি হেঁটে হেঁটে তবে আকাশের অবস্থাটা মোটেও ভাল নয়। কখন থেকে গর্জন করছে, যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে একটা প্রবাদ জানতাম “যত গর্জে তত বর্ষে না”। আর সেই প্রবাদের উপর লক্ষ্য রেখে হেঁটে চলেছি কিন্তু আমার প্রবাদটা মিথ্যা করে দিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল আর হাঁটাও সম্ভব নয় তাই আশে পাশে দাঁড়ানোর কোন জায়গা দেখতে লাগলাম। একটু সামনেই যাত্রী ছাউনী দেখে দৌড়ে গেলাম। তবে এখানে এসেও মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলেছি কারন ৬টা মেয়ের মাঝে আমি একা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছি। আমি কারো দিকে না তাকিয়ে কাঁচুমাচু হয়ে একটা কিনারায় দাঁড়িয়ে রইলাম। অবশ্য আমার হাটুর উপর বৃষ্টি ঠিকই পরছে। আরেকটু জোরে বৃষ্টি শুরু হলে হয়ত আমার কোমড় পর্যন্ত ভিজবে।
এই দিকে আমি আমার ব্যাগ বাঁচাতে ব্যস্ত। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বলল “একটু এদিকে এগিয়ে দাঁড়ান নয়ত ভিজে যাবেন, যদি আপনার সমস্যা না হয়”। আমিও চুপচাপ তাই করলাম। এদিকে বৃষ্টি থামার নামে খবর নেই আর আমিও চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছি। তবে ওইদিকের মেয়ে গুলো কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে। তবে ক্ষানিকটা মনে হলো আমাকে নিয়েই কিছু বলছে। একবার তো মনে হলো ছেলে ইভটেজিং করছে। বৃষ্টিটা হালকা কমে এসেছে তাই আমি বেড়িয়ে গেলাম। যদিও এখনো তেমন থামে নি। আর ভাগ্য প্রসন্ন থাকায় একটা রিকশা পেয়ে গেলাম আর বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাসায় এসে ভিজে কাপড় বদলিয়ে নিতেই কফি নিয়ে মা আসলো। আসলে কফি আমার খুব প্রিয় আর আমি ঠান্ডার দিনে এটা খেতেও পছন্দ করি। মা আমার দিকে না তাকিয়েই টেবিলের উপর কফিটা রেখে বলল…
— এমন ভিজে বাসায় আসার প্রয়োজন ছিল? কোথাও একটু দাঁড়িয়ে বৃষ্টি টা থামার অপেক্ষা করতি?
— হুমম সেই চেষ্টাই করে ছিলাম কিন্তু বৃষ্টি টা হয়ত চেয়ে ছিল আমায় ভিজিয়ে দিবে তাই আর অপেক্ষা না করে বৃষ্টির মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে দিলাম।
— হুমম এখন জ্বর ঠান্ডা বাধলে তো আমায়ই দেখাশুনা করতে হবে।
— হুমম তাই তো তারাতারি কফি নিয়ে চলে আসলে।
মা আমার কথার জবাব না দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। বলতে গেলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার মা। মায়ের সাথে ছোট থেকেই সব কথা শেয়ার করে আসছি। একটা চেয়ারে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে কফিটা হাতে নিলাম। আর যখনই চোখটা বন্ধ করলাম তখনই পাশে দাঁড়ানো মেয়েটার চেহারা চোখে ভাসলো। এটা হয়ত অস্বাভাবিক কিছু না তবে স্বাভাবিক বললেও ভুল হবে। তবে যাই হোক, হয়ত মেয়েটা আমার ক্ষণিকের ভাল লাগা।
এরপর কয়েকদিন কেটে যায় আর সময়ের সাথে আস্তে আস্তে চেহারাটাও ভুলে যাই প্রায়। একদিন ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরীতে কিছুটা সময় পার করলাম। প্রায় দুপুর শেষ হয়ে বিকেল হতে চলল আর ভার্সিটি টা এখন প্রায় ফাঁকা। আমিও বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। কিন্তু ভার্সিটির গেটের সামনে এসে থেমে গেলাম। অনেক গুলো ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে ২টা মেয়ে মিলে চকলেট দিচ্ছে। ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগলো তাই আমি পকেট থেকে আমার মোবাইলটা বের করে এইসবের কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। কিছু ছেলে মেয়ে লাফাচ্ছে আর মেয়ে ২টা চকলেট দিতে ব্যস্ত। অবশ্য এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। আর এখানের একটা মেয়েকে চেনা মনে হচ্ছে। একটু লক্ষ্য করতেই বুঝলাম এই মেয়েটাই ওই দিন এক ছাউনীতে দেখা হওয়া ক্ষণিকের ভাল লাগার মেয়েটি। আমি একটু এগিয়ে গেলাম আর মেয়েটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। মেয়েটা হয়ত প্রথমে লক্ষ্য করে নি তাই আমার হাতে ২টা চকলেট দিয়ে দিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হা করে রইলো আর আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে সেখাম থেকে প্রস্থান করলাম। মেয়েটাকে আজকেও বেশ লাগলো সেই কাজল চোখে।
এভাবে মাঝে মাঝেই ওই মেয়েটার সাথে আমার দেখা হতো তবে শুধু তাকিয়ে থাকতাম। এর চেয়ে বেশি কিছুই না। প্রায় এক মাস কেটে যায়। আজ রাতে ডিনার টেবিলে সবাই বসে আলোচনা করছিলাম বড় ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য। মেয়ে নাকি বাবার পছন্দ আর মেয়ে নাকি বাবার বন্ধুর মেয়ে। আর আমাদের বাসায় বাবার কথার উপর কেউ কথা বলে না। কারন আমরা মনে করি বাবা যা করবে সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করবে। তাই ঠিক হলো আগামীকাল বিকালে ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। দেখতে যাবো বললে ভুল হবে তবে বাবা বলল আংটি পড়িয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করে আসবে। আমি তো সেই মাপের খুশি, বড় ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।
ঠিক সময় মত মেয়ে দেখতে আমরা চলে আসলাম। আমি তো ভাইয়ার সাথেই বসে আছি। প্রথমে আমাদের অনেক খাবার দেওয়া হলো। অবশ্য ভাইয়া লজ্জায় কিছু না খেলেও আমারটা সহ ভাইয়ার টা আমিই খেলাম। কিছুক্ষন পর মেয়েকে নিয়ে আসলো। যখন একটা মেয়ে হাতে শরবত নিয়ে আসলো আমি তো ওই মেয়েকেই দেখেই অবাক কারন এটা আর কেউ নয় বরং আমার ক্ষণিক ক্ষণিক করে গড়ে উঠা পার্মানেন্ট ভাল লাগা। তখনই আমার চোখটা ওই মেয়ের চোখে পড়তে ওই মেয়েও অবাক হয়ে গেল। সাথে সাথে আমার মুখ দিয়ে একটা প্রশ্ন বেড়িয়ে গেল ” ওই তুমিই মেয়ে নাকি? ” আমার প্রশ্ন শুনে মেয়ের বাবা হাসতে হাসতে বলল ” আরে না এটা তো আমার ছোট মেয়ে। “। কিছুক্ষণের জন্য শান্তি অনুভব করলাম কিন্তু মেয়েটা আমার দিকে সেই কৌতুহলী নজরেই তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটি গিয়ে ওর বাবার পাশে দাড়িয়ে কি যেন বলল? আর ওর বাবা আঙ্গুল দিয়ে আমার ভাইকে ইশারা করলো। যতটুকু বুঝলাম মেয়েটা হয়ত আমাকেই ভাবছে ওর বোনের হবু জামাই হিসেবে। ভাববেই না কেন, দেখতে তো ভাইয়ের থেকে হ্যান্ডসামই।
একটু পর মেয়েকে নিয়ে আসা হয় আর কিছুক্ষন পর ছেলে মেয়েকে আলাদা কথা বলার জন্য মেয়ের রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর আমিও সেই সুযোগে ভাবলাম বাড়িটা একটু ঘুরে দেখা যাক। তাই বাবাকে বলে আমি একা একাই হেঁটে দেখতে লাগলাম। অবশ্য দেখতে দেখতে এক পর্যায় ছাদে চলে যাই। আর ছাদে অনেক ফুলের টপ। দেখতে ভালোই লাগছে।আমি ভাবলাম একটা ফুল নিয়ে আমার হবু বৌদিকে গিফট করবো তাই ফুল ছিড়তে গেলাম। তখনই পিছন থেকে একটা আওয়াজ “একদম ফুল ছিড়বেন না”। পিছনে তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটা আবার। যাক ভালই হলো, এই সুযোগে নামটাও জেনে যাওয়া যাক। তখন আমি বললাম…
— আরে তুমি এসেছো, ভালই হলো।
— এই যে অপরিচিত জনকে আপনি বলুন। আপনি সবার সামনে এটা কি বললেন?
— কি বললাম? ও আমি তো ভাবলাম তোমাকে দেখতে এসেছি তাই একটু রিয়েক্ট দিলাম।
— সেটা না হয় ঠিক আছে কিন্তু আপনি বললেন ” তুমিই মেয়ে নাকি “। কথাটা এমন ভাবে বললেন যে মনে হলো আমি কোন ছেলে।
— হা হা যাই হোক, কথা বাড়িয়ে লাভ নেই তোমার নামটাই তো জানা হয় নি।
— আপনার সাথে আমার যেই সম্পর্কটা হতে যাচ্ছে এখানে তো শুধু কথার বাড়াবাড়িই হবে আর আমি নামটা বলবো না।পারলে নিজে থেকে খুঁজে নেন।
— ওকে দেখা যাক।
মেয়েটা আর কিছু না বলে যেতে লাগলো তবে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল ” প্রথম দেখায় কাউকে আপনি বলা উচিত, তুমি ডাকার সময় তো অনেকটাই পাবেন? ” কথাটা বলে মেয়েটা চলে গেল আর আমি নির্বাক চলচ্চিত্র হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এভাবে বিয়ের দিনটা চলে আসলো আর আজ গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো। সবাই যে যার মত ঘুমাতে যাচ্ছে। আমিও একটা সোফায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করলাম। মোবাইল নিয়ে তো আর ঘুমানো সম্ভব না তাই মোবাইল টা একটা টেবিলের উপর রেখে ঘুমাতে যাবো আর তখনই মোবাইল টা বেজে উঠলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি অপরিচিত নাম্বার। আমি আবার অপরিচিত নাম্বার একটু তারাতারি রিসিভ করি তাই ফোনটা রিসিভ করলাম।
— হ্যালো।
— আপনি কি মিস্টার রাজ বলছেন?
— হুম কিন্তু আপনি কে?
— পরিচয়টা না হয় তোলাই থাক। তবে একটা কথা আপনি এমন হাবলু মার্কা কেন? একটু তো রোমান্টিক হতে পারেন।
— আপনি তো অপরিচিত তাই আপনার সাথে কেমন করে রোমান্টিক হবো?
— ফোনে না হয় অপরিচিত তবে বাস্তবে তো চিনেন।
— বাস্তবে চিনি। তাহলে আপনার নামটা একটু বলেন?
— বলা যাবে না। পারলে একটু খুজেঁই নেন দেখি। এখন রাখি।
— আরে শুনেন…
আমার কথা বলা শেষ না হতেই ফোনটা কেটে দিলো। একবার ভাবলাম ফোনটা ব্যাক করি তবে করলাম না। এমনি সারা দিন কাজ করার কারনে ঘুমে ধরছে তাই শোয়ার সাথে সাথে ঘুম। সকালের বাসায় মানুষের চেঁচামেচিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে ১০টা বাজে। আমার ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হলেও কাজের অর্ডার আসতে দেরি হয় নি। আমাকে নাকি এখন বাজার থেকে চালের বস্তা আনতে যেতে হবে। তাই আর রেস্ট না নিয়ে স্নান করে চলে গেলাম বাজারে। এভাবে কাজ করতে করতে আমার দিনটা কেটে গেল। কাল রাতে যে কোনো রমনী ফোন দিয়েছিল মনেই ছিল না। আসলে গল্পে পড়ি বিয়ের দিন জামাইয়ের ছোট ভাই কত দুষ্টামী করে কিন্তু আমার বেলায় তো পুরো উল্টা। কাজ করতে করতে সময় যাচ্ছে। এখন সবাই বর যাত্রী হিসেবে রওনা দিলাম। আমি অবশ্য ভাইয়ার সাথেই গাড়ীতে উঠলাম। আসলে বিয়ের নিয়ম নীতি গুলো শিখে রাখা উচিত তো, ভাইয়ার পরেই তো আমার সিরিয়াল।
মেয়ের বাড়িতে গাড়ী চলে আসলো আর গাড়ী থেকে নামতেই আমাদের গেট ধরা হলো। ওয়াও কত্তো সুন্দরী মাইয়া গো, তারপরও আমি নাকি সিঙ্গেল। সবাই টাকা নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিলো। মেয়েদের দাবী হলো ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু এতো টাকা কি সত্যি কোথাও দেয়? তাই ক্রমাগত মেয়ে পক্ষের সাথে যুদ্ধ করে টাকার পরিমান ৬ হাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোন রকমে টাকা দিয়ে ভিতরে আসলাম কিন্তু কোথাও তো মেয়ের ছোট বোনকে দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া এতদিন কাজের চাপে তো মেয়ের নামটাও তো জানা হলো না। এই নাকি আমি মেয়ের উপর ক্রাশ খেয়েছি। মেয়েকে খু্ঁজতে খুঁজতে আমি কনের রুমে চলে আসলাম। সবাই দেখি আমার ভাইয়ের হবু বউয়ের সাথে ছবি তুলছে । কিন্তু আমি তো দেবর, আমিই শুধু তুলি নি। তাই আর দেরি না করে তারাতারি বৌদির সাথে গিয়ে বসে পড়লাম। আর ওনার কানের সামনে আস্তে আস্তে বলতে লাগলাম..
— বৌদি তোমার ছোট বোনের নামটা কী গো?
— কেন এতো দিনেও তুমি জানো না।
— আসলে কাজের চাপে আর জানা হয় নি।
— ওর নাম তো অর্পিতা।
— ও ভালোই হলো কিন্তু মহারাণী এখন কোথায়?
— দেখো কোথাও কাজ করছে হয়ত…
— ঠিকই বললে, ছোটদের দিয়ে শুধু বড়রা কাজ করায়। আমি গেলাম।
সারাটা বাড়ি জোরে ওরে খুঁজলাম কিন্তু এই অর্পিতাকে আর পেলাম না। তখন আবার সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো…
— ওই আপনাকে আমি চিনি না কিন্তু কেন ফোন দিচ্ছেন বলেন তো?
— আরে রাজ সাহেব আপনাকে হেল্প করতেই তো ফোন দিলাম।
— মানে?
— আপনি তো মেয়ের ছোট বোনকে খুঁজচ্ছেন তাই তো।
— হুমম কিন্তু পাবো কই?
— আপনার আশে পাশেই আছে একটু খুঁজে দেখেন।
— এটা আমি জানি যে অর্পিতা আমার আশে পাশে আছে তাই বলে দেওয়া লাগবে না। ফোন কাটেন।
— বাহ্ ওর নামটাও জেনে গেছেন।
— এটা তো একটা সিম্পল কাজ ছিল। যাই হোক,এক সময় আপনাকেও খুঁজে বের করবো দেখে নিয়েন।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলাম। এতো ঘুরাঘুরি না করে এখানে বসে থাকলেও ভাল কারন বিয়ের এখানেই তো অর্পিতা আসবেই। আমি একটা চেয়ারে বসে ছিলাম তখন একটা মেয়ে এসে বলল ” নিন শরবত নিন “। প্রথম মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম ” না লাগবে না “। মেয়েটা আর কথা বলে চলে যেতে লাগলো কিন্তু মেয়েটার কথা গুলো শুনে মনে হলো অর্পিতার কন্ঠ তাই মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখি একটু সামনে শরবতের ট্রে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আরে ওরে তো চেনাই যাচ্ছে না। আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওর সামনে গেলাম আর অর্পিতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি ওর সামনে যেতেই…
— কি মিস্টার শরবত লাগবে?
— না আসলে আমি অর্পিতা নামে একজনকে খুঁজছিলাম। ভাবলাম ওর হাতে শরবত খাবো। তুমি কি একটু আমায় হেল্প করতে পারো?
— মায়ের কাছে মাসির গল্প শোনানো হচ্ছে আর আমার নামটা কে বলল?
—যেই হোক বলল কেউ একজন।
— পচা ছেলে একটা।
বলেই ও চলে যেতে লাগলো তখন আমি ওর হাতেরর ট্রে থেকে একটা শরবতের গ্লাস রেখে দিলাম। ও হেসে হেসে চলে যাচ্ছে তখন আমি শরবত টা মুখে দিলাম। “ও ত্তেরি এটা শরবত নাকি মরিচের বস্তা “। দৌড় লাগালাম ওয়াশ রুমে। এই মেয়েটা একটা ফাজিল। দাঁড়াও তোমাকে মজা দেখাচ্ছি। বিয়েটা শেষ হতেই দুই পক্ষের লোকই বসে বসে গল্প করছি। কেউ গান গাইতেছে আর কেউ কৌতুক বলছে। আর কেউ কেউ মেয়ে পটাতে ব্যস্ত। এখানে অর্পিতাও বসে আছে। আমি একটু এখান থেকে চলে আসলাম। তারপর ভাবলাম এবার একটু দুষ্টামী করা যাক। আমাকে যে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিতো কন্ঠ টা অর্পিতার সাথে মিলে আর ওর কথার ধরনও এমন। তাই একটু ফোন দিয়ে দেখা যাক ও কি না?আমি আমার অন্য একটা সিম দিয়ে অর্পিতার নাম্বারে ফোন দিলাম। প্রথম রিংয়ে ফোন ধরে নি তবে ২য় বার ফোন দিতে ঠিকই ধরলো।আর অর্পিতা বলল..
— হ্যালো কে বলছেন?
— আপনি অর্পিতা তো।
— আপনি কে বলছেন?
— আমি আপনার ফ্রেন্ড তানিয়ার ফ্রেন্ড।( সব ফ্রেন্ডের মাঝে এই তানিয়া নামে কেউ না কেউ থাকে তাই ট্রাই করলাম)
— কোন তানিয়া ঠিক চিনলাম না।
— আরে যাই হোক, আপনি অর্পিতা তো।
— হুমম কিন্তু আপনি কে?
— আমি রাজ।
আমি হাসতে হাসতে ফোনটা কেটে দিলাম। এখন মেয়ে তুমি আগুনের মত জ্বলবে আর মাখনের মত গলবে। আমাকে মরিচ খাওয়ালে না, এখন দেখো কেমন লাগে? আমি আবার সবার সাথে যোগ দিলাম। অর্পিতা আমার দিকে তাকাচ্ছে আর রাগ দেখাচ্ছে। আমার তো ওর রাগটাই বেশ লাগছে।হঠাৎ ও রাগ দেখিয়ে এখান থেকে উঠে গেল তাই আমিও গেলাম ওর রাগ ভাঙ্গাতে। ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর আমি ওর পিছনে গিয়ে বললাম…
— মেডাম বুঝি রাগ করেছে?
— রাজ আপনি কাজটা একদম ঠিক করেন নি।
— আরে ভুল কি করলাম?নিজে মজা করলে ষোল আনা আর আমি করলে এক আনাও না।
— এক আনা মানে কোন আনাই না। একটু মজা করতে দিলে না ফাজিল ছেলে।
— হা হা আমার কিন্তু বেশ লাগছে।
এরপর অর্পিতার সাথে আমার কথার মালা তৈরি হয়। আমরা দুইজন সব সময় বকবক করতাম তবে অর্পিতা আমায় তেমন একটা বুঝতো না। শুধু রাগ দেখাতো। বিয়ের সকল কর্ম কান্ড শেষ করে বৌদিকে সাথে নিয়ে আমরা বাসার দিকে রওনা দিলাম। এরপর প্রায় ১ বছর কেটে যায়। আমি আর অর্পিতা একে অপরকে ভালবাসলেও মুখ ফোটে বলার সাহস কারো নেই। আসলে এখন তো মাত্র অনার্স ২ বর্ষের ছাত্র। একদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই মনে হলো আমার চোখের সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। আমি তারাতারি উঠে বসলাম আর তাকিয়ে দেখি অর্পিতা দাঁড়িয়ে আছে। এতো সকালে অর্পিতা আমাদের বাসায়। ও আমার পাশে বসলো…
— আপনি তো অনেক ঘুমান।
— আরে না। আসলে গতকাল রাতে ঘুমাতে একটু লেট হয়ে গেছিল তাই ঘুম ভাঙ্গতেও লেট হলো।
— হুমম যাই হোক,শুভ জন্মদিন।
— ও তুমি কেমন করে জানো?
— হা হা সেটা আপনার না জানলেও চলবে।
— অর্পিতা একটা বছর তো পার হয়ে গেল, এখনো কি আমাকে তুমি করে ডাকা যায় না?
— আপনি ডাকেও একটা স্পেশালীটি থাকে যা সবাই বুঝে না। এটা নাও (একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো)
— কি এতে?
— খুলেই দেখো না। তারপর আমি খুলে দেখি এতে একটা ডায়রী আর কলম রাখা আছে। আমি অর্পিতার দিকে তাকাতেই ও বলল…
— কখনো যদি নিজেকে একা মনে করো তাহলে ডায়রীটাতে নিজের মনের জমানো কথা গুলো লেখে নিও। দেখবে তোমার প্রিয় মানুষ যদি তোমায় সত্যি ভালবাসে তাহলে ঠিকই বুঝবে।
আমাকে কথা গুলো বলে অর্পিতা চুপচাপ রুম থেকে চলে গেল।
মেঘের গর্জনে আমরা ভ্রম কাটলো। আসলো জীবনের গল্পটা লেখতে লেখতে গল্পের মাঝেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। এদিকে আমার কফিটাও ঠান্ডা হয়ে গেছে। আজ নিজেকে বড্ড একা অনুভব হচ্ছে। গল্পটা আমার জীবনের ২ বছর আগে হয়ে গেছে। তবে অর্পিতাকে আপন করে আমি পাই নি। কেউ কাউকে বলি নি ভালবাসি তবু একজন আরেক জনকে প্রচুর ভালবাসি। আমাদের ব্যাপারটা জানাজানি হওয়ায় বাসায় এক প্রকার সমস্যা হয়। আমি তো প্রতিষ্ঠিত ছিলাম না তাই অর্পিতাকে হারাতে হয়েছে। তবে আমি দোয়া করি অর্পিতার জীবনটা সুখের হোক। সব গল্প কেন জানি বাস্তব হয় না, কিছু গল্পে শুধু বাস্তবতাই থেকে যায়।