অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, নীলার জূড়াজূড়িতে ঠিক এই মুহুর্তে একটা শপিং মলের জুয়েলারি শপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চিরচেনা সেই হৃদয়।
.
–বাহ!কি সুন্দর দেখতে তাইনা ?আমার না এটা চাই, (ওখানে থাকা একটা সোনার হারের দিকে আঙ্গূল দিয়ে ইশারা করে নীলা হৃদয় কে কথাটা বললো)
.
,
প্রাণবন্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হৃদয়,এসব হারটার কিনে কাউকে উপহার দেয়ার সামর্থ্য অন্তত ওদের নেই…হারটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছু মুহূর্ত চেয়ে রইলো ও;
.
.অস্পষ্ট একটা কাশি দিয়ে ;তারপর একটু নরম কন্ঠে নীলাকে বললো,
.
–ঠিক আছে নীলা কোন একদিন গিফট করবো তোমাকে,(মিথ্যে সান্তনা দিয়ে)
.
—কি?না না…কোনো একদিন নয়…….তুমি জানোনা…২মাস পর আমার বার্থ ডে;সেদিন যেন তোমার থেকে উপহারস্বরূপ এই গিফট টা পাই; ~~আশা করি পাবো??
.
—আমি চেস্টা করবো ;(মাথা নিচু করে)
.
.এদিকে চিন্তায় পরে গেলো হৃদয়, কিভাবে সে নীলাকে হারটা উপহার দিবে,ওর কাছে তো ওই হার কেনার এক -তৃতীয়াংশ টাকাও নেই,অবশেষে অনেক ভেবে চিনতে নীলার জন্যে একটা গিফট কিনলো ও।
.
২মাস পর নীলার বার্থ ডে তে……….
.
—-আমার গিফট টা?(নীলা)
.
ঠিক তখন হৃদয় ওর পকেট থেকে একটা রঙিন কাগজে মোড়ানো গিফট বের করে নীলাকে দেয়।“`হয়তো হার গিফট করেছে ও এই ভেবে খুশি হয়ে নীলা তড়িঘড়ি ভাবে তখনি সেটা খুলে ফেললো,
.
.—এটা তো একটা হাতঘড়ি!!(আশ্চর
্যের সাথে কিছুটা বিরক্ত হয়ে)
.
—হুম হাত ঘড়ি। এই ঘড়ির স্পেশালিটি কি জানো?
.–নাহ!তুমিই বলো..(বিষণ্ণ মনে)
.—তাহলে শোনো,”এই হাতঘড়িতে যখনি তুমি পানির ছিটা ফেলবে ;তখন ঘড়ির ভীতর থেকে আমার আওয়াজে i LOVE YOU রেকর্ড বাজবে….
.
—এটা কোন ধরনের টিটকারি হৃদয়??আমাকে বোকা বানাও তাইনা??এটা বলতে বলতে পাশের একটা গ্লাস থেকে পানির ছিটা হাতঘড়িটার উপর ফেলে…
.
সত্যিই তো হৃদয় কিছুক্ষন আগে যা বললো ঠিক সেটাই হচ্ছে, হৃদয় এর কন্ঠে I love u বাক্য ঘড়িটা থেকে আসছে…..
.
.—এইসব তো ঠিক আছে মানলাম, কিন্তু আমার পরবর্তী বার্থ ডে তে কিন্তু ওই হারটাই চাই,তখন আবার আমি কোনা কিন্তু শুনবনা আর..!
.
এবারো হৃদয় ওকে মিথ্যে সান্তনা দিয়ে বলল, ‘যাও নেক্সট বার্থ ডে হারটা তোমাকে দিবোই দিবো’
.
নীলা খুশি হলো ওর কথা শুনে!
.
.হৃদয় সর্বাত্মক চেস্টা করতে থাকলো হারটার টাকা জোগাড় করার,কিন্তু কিছুতেই সম্ভব হয়ে উঠছিল না;এমনি অবস্থায়,
.
১বছর পর নীলার পরবর্তী বার্থডে চলে এলো….
.
.হৃদয় খালি হাতে গেলো,
—–তুমি এবারো খালি হাতে এসেছো??উফফফ…..(নীলা)
.হৃদয় নীলার সামনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে ওর খোচা খোচা কথা শুনছিল,কোনো কথা বলছিলনা ;
.
.নীলা বলেই যাচ্ছে আর ও কিছুই বলছেনা এমনকি টু শব্দও করছেনা খালি বেহায়ার মত সব শুনেই যাচ্ছে,
.
এতে করে নীলা প্রচণ্ড রকমের রেগে যায় এবং তুই তাকারি শুরু করে বলে,” আসলে কি জানিস তোর আমাকে ভালো উপহার দেয়ার কোণো যোগ্যতাই নেই,তুই শুধু আমাকে হারটা গিফট দিবি দিবি বলে ঘুরাচ্ছিস ছোটলোক,কি চেয়েছিলাম হুম?সামান্য একটা হারই তো চেয়েছিলাম সেটাও দিতে পারলিনা,তোকে কোন দূঃখে যে ভালোবেসেছিলাম, তোকে ভালোবেসে আমি আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল করেছি….!
.
.হৃদয় শক্ত ছেলে ছিল তাই কথা গুলো শুনে কাদলোনা, শুধু চোখটা পানিতে টলমল করলো, যেকোনো মুহুর্তে সেই পানিগুলো চোখ থেকে নিচের দিকে অগ্রসর হবে।
.
টলমলানো চোখে হৃদয় শুধু নীলার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো (মুখে অনুশোচনার ছাপ).
.
–এভাবে আর তাকাতে হবেনা তোমাকে, বেরিয়ে যাও এখান থেকে যাস্ট গেট লস্ট……!কোনো দিন তোমার মুখ আমার সামনে আনবানা।
.
–হৃদয় চলে গেলো,যাওয়ার আগে বলে গেলো ‘যেদিন তোমাকে ওইটা দিতে পারবো সেদিনই তোমার সামনে আসবো।
.
.কিছুদিন পর,
.নীলা ছাদে হাটতে হাটতে ওর মা’র সাথে ফোনে কথা বলছিলো..
.
—মা, তুমি পাত্র খুজো আমি বিয়ে করতে রাজি…!(অভিমান করে)
.
–বলিস কি মা?সত্যি তো?আলহামদুলিল্ল
াহ….
.
–হুম জলদি ঠিক করো আমি যততাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে টা সেরে ফেলতে চাই..
.
—আচ্ছা মা সব তোর কথামতই হবে…
.
কথা বলতে বলতে হঠাৎ ওর পা ছাদে জমে থাকা শ্যাওলার স্যাঁতসেঁতে পানিতে পড়ে এবং পা পিছলে ছাদ থেকে পড়ে যায়,
.
.৫ঘন্টা পর হাসপাতালে…..
.
–কি ব্যাপার ডাক্তার আপনি কিছু বলছেননা কেন?(নীলার মা)
.
–আসলে ব্যাপার টা হলো, আপনার মেয়ে………
.
—কি হয়েছে আমার মেয়ের??
.
—she is safe now, আপনি এখন ওনার কাছে যেতে পারেন বলেই ডাক্তার চলে গেলো….
.
.নীলার মা কেবিনে প্রবেশ করলো, ওর কাছে গিয়ে বললো…
.
—-আজ তোর ভালোবাসারি জয় হলো মা,শুধুমাত্র তোর ভালোবাসাই জিতেছে,
.
ওর মায়ের মুখে এমন অদ্ভুত কথা শুনে জিজ্ঞেস করলো,”আমি কিছু বুঝলামনা মা’
.
.ওর মা তখন বললো, যখন তুমি আমার সাথে কথা বলছিলে….
.ফ্ল্যাশব্যাক
—মা তুমি পাত্র খুজো আমি বিয়ে করতে রাজি?
.
তখন হৃদয় তোমার জন্যে ওই সোনার হার টা নিয়ে এসেছিলো তখনি ও দেখলো যে,তোমার পা ছাদ থেকে পিছলাচ্ছে আর তুমি যেকোন সময় পরে যাবে।
.
.ঠিক তখন ছেলেটা তোমাকে বাচাতে এসেছিলো কিন্তু দূরভাগ্যবশত ওরও পা তোমার মতো পানিতে পিছলে যায়,আর মা তুমি কি জানো?আজ তুমি বেচে আছো কেবল মাত্র হৃদয় নামের ওই ছেলেটার জন্যে কারণ ;যখন তোমরা দুজনি পা পিছলে নিচে পড়ো তখন ছেলেটার শরীর তোমার আগে মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং তোমার শরীর ছেলেটির উপরে ছিল,
.
.তুমি ছেলেটার উপরে পড়েছিলে তাই বেচে গেছো কিন্তু……(কথ
া বলতে বলতে আটকে যায় নীলার মা)
.
.কিন্তু কি মা?এখন হৃদয় কোথায় আছে?
.
.নীলার মা কোনো উত্তর দেয়না।চোখে মুখে বিষণ্ণতা। এরকম দেখে নীলা আরো ঘাবড়ে যায় আর ওর মাকে ধরে বলতে লাগে, ‘মা বলো হৃদয় কোথায়?ও ঠিক আছে তো,কি হলো মা কথা বলো প্লিজ মা,
.
.এমতাবস্থায় ডাক্তার আসে, ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল নীলা,
.
—ডাক্তার, হৃদয় কোথায়?
.
–(আফসোস করে)সরি আমরা তাকে বাচাতে পারিনি, তিনি মারা গেছেন,ওনার হাতে কি যেন ছিলো সেটা আপনার মাকে দিয়েছি।
.
.নীলার মা নীলাকে সোনার হারটা দেয়,নীলা হু হু করে মনের ভীতর থেকে কেদে উঠে,
.
.সব চেয়ে মজার বিষয় কি জানেন?যখন মেয়েটা কাদছিলো তখন মেয়েটির অশ্রুবিন্দু ওর হাতে দেয়া হৃদয় এর হাতঘড়িতে পড়ছিলো আর বেজে উঠছিল সেই তিনটি শব্দ
‘I love You’
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা