বিচ্ছেদ এবং ভালোবাসা

বিচ্ছেদ এবং ভালোবাসা

রাত ২ টা বেজে ৩০ মিনিট। হঠাতই ঘুমটা ভেঙে গিয়ে উঠে
বসলো জুয়াইরিয়া। বিছানার পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি
খেয়ে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারটায় বসলো সে।
একটা দীর্ঘশ্বাস এর সাথে পূর্ণিমারর চাঁদের আলো আর মৃদূ
হাওয়া যেনো মিলে একাকার..!!
আসলে ইদানীং খুব ঘুম হয় কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ করে ভেঙে
যায়।
বারান্দা থেকে বেডরুমটা দেখা যায়। বাতাসে পর্দাটা উড়তে বিছানায়
নিষ্পাপ একটা ৩ বছর বয়সী ছেলের মুখটা চোখে পড়লো
জুয়ায়রিয়ার।
ছেলেটা অন্য কারোরই না তার এবং তার স্বামী শাকিল এর।
আজকাল কার সম্পর্কগুলা কতো ফিকে ভাবতেই অবাক লাগে।
আগের প্রজন্মে নাকি কতো মেয়ে সতীনের সাথে ঘর
করতো, এখন সামান্য ভুল বোঝাবোঝির জন্যেও ডিভোর্স
হয়ে যায়।
জুয়ায়রিয়া ভাবছিল,” কি তুচ্ছ বিষয়েই না কতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে
বসলাম। ছেলেটার মুখের দিকে একবারও তাকাইনি। মুখটা কি মলিন
হয়ে গেছে। প্রতিদিনই বাবা কবে আসবে বলে বলে কান্না
করে। আমার জন্য ছেলেটাকে কি করে বাবার ভালোবাসা
থেকে বঞ্চিত করি..!!”
একমাস হয়ে গেলো সে তো পারতো একবার ক্ষমা চাইতে
আসতে .. !!
.
জুয়ায়রিয়া আর শাকিলের ভালোবেসে পরিবারের সম্মতিতেই
বিয়ে হয়।
একটা সময় ছেলেটা মেয়েটার জন্য পাগল ছিলো। হঠাৎ ই
ছেলেটা পালটে গেলো। মেয়েটা খুব করে সম্পর্কটা
টিকিয়ে রাখতে চাইলো, কিন্তু ছেলেটা কোনো ভাবেই
সম্পর্কটা রাখতে চাইলো না।
দিন যায় মাস যায় বছর যায় মেয়েটা কিছুতেই ছেলেটাকে
ভুলতে পারেনা । এদিকে ছেলেটা নিজেকে যোগ্য করে
তুলে নিজেকে মেয়েটার পরিবারের কাছে প্রেজেন্ট
করে আর মেয়েটাকে বউ করে পাওয়ার জন্য দাবী করে। যার
পুরোটাই মেয়েটার অজানা।
একদিন মেয়েটার সাথে ছেলেটার দেখা। মেয়েটা অভিমানে
টয়টম্বুর। ছেলেটা আবার মেয়েটার জীবণে ফিরে আসতে
চাইলে সে অভিমান করে মুখ ফিরিয়ে নেয়..
একদিন ছেলেটা হাতটা সামনে বাড়িয়ে দিয়ে মেয়েটার সামনে
গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
মেয়েটি বলে-
→ কি চাও?
→ভালোবাসা
→নাই পথ ছাড়ো, হাত এইভাবে বাড়ায় রাখছ কেন?
→তোমার জন্য। কব্জির রগটা দিয়ে সারা শরীরের রক্ত বের
করে নাও
→কেন কি হইছে??
→চিকনগুনিয়া।
→মানে?
→মানে তোমার অবহেলা হইতেছে চিকনগুনিয়ার ভাইরাস, যা আমার
শরীরে তুমি ছেড়ে দিছো আর আমি হাড়-গিড়ায় ব্যথায়
কাতরাইতেছি।
→নেকামি.. আমার বুঝি কষ্ট হয় নাই?
→সরি তো বাবা..! আমাকে ক্ষমা করে দাওনা। আমার আর
কোনো উপায় ছিলোনা। তখন যদি তোমার সাথে সম্পর্ক টা
রেখে দিতাম, আজ হইতো তোমাকে আমার পাওয়া হতো না।
→এখনো পাবে না। আমার বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করছে।
ছেলে ভালো জব করে, আমি সম্মতি দিয়ে দিছি।
→ ছেলেটাতো আমিই..
.
মেয়েটি চমকে চ হয়ে গেলো। হ্যা.. এভাবেই জুয়াইরিয়া আর
শাকিলের নতুন করে পথচলা শুরু হয়।
.
আর তাদের কোল আলো করে জন্ম নেয় তাদের একমাত্র
ছেলে তুর্য।
কিন্তু একদিন একটা ঝড় ভালোবাসার ভিতটাকে নড়বড়ে করে
দেয় ।
শাকিলের অফিসে জয়েন্ট করে তার স্কুল জীবণের সেই
প্রেমিকা যার কিনা দু ‘বার স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়েছে।
সম্পর্কগুলা তখনই শুকিয়ে যায় যখন তৃতীয় কোনো ব্যক্তির
আগমন হয়।
.
একদিন অফিসে গিয়ে জুয়ায়রিয়া শাকিলের সাথে তার স্কুল ফ্রেন্ড
এর ঘনিষ্ঠতা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি।
ডিসিশন ফাইনাল হয়ে যায় তাদের ডিভোর্স হবে।
হ্যা ডিভোর্স – যেখানে সন্তান, দু’টি পরিবার, সমাজ,দু’টি মানুষের
দীর্ঘদিনের ভালোবাসা সবকিছুই তুচ্ছ।
.
আগামীকাল ডিভোর্স পেপার সাইন করতে দুজনেই কোর্টএ
উপস্থিত।
→ আই এম সরি জয়রিয়া।
→খবরদার , আমাকে জয়রিয়া ডাকবে না। আমি জুয়াইরিয়া
→আমিতো ভালোবেসে ডাকি।
→ ভালোবাসো?? রসিকতা করছ?? যদি ভালোইবাসতে তবে
অন্য মেয়ের সাথে…. ছিঃ ভাবতেও বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
→ তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছ। অতোটা গভীর কিন্তু ছিলো না।
আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি জয়রিয়া। খুব ভালোবাসি তোমাকে।
সেদিন এর পর থেকে আমি ওই মেয়ের সাথে আর কথা বলিনাই।
বিশ্বাস করো,আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ..
→ বিশ্বাস করিনা।
→ আমাদের ছেলের গায়ে হাত দিয়ে বলছি। বিশ্বাস করো খুব
ভালোবাসি তোমাকে।
আমি চাইনা এই ডিভোর্স হোক।
.
দুইজনের চোখেই জল। আসলে ভালোবাসার মানুষটা শত অন্যায়
করে এসেও ক্ষমা চাইলে আর রাগ করে থাকা যায় না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত