মাহমুদ আর আতিকা স্মরণীয় রাতে দুইজন দুইজনের হাত ধরে ওয়াদা করলো-
→কেউ কখনো একজন আরেকজনকে ছেড়ে যাবে না।যতকষ্ট হোক একজন আরেকজনের পাশে থাকবে।শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত!
.
এমন করে সব দাম্পত্য বাসররাতে ওয়াদা করে।তবে কেউ ওয়াদা রাখে কেউ আবার ভঙ্গ করে।মাহমুদ আতিকার শাড়ির আচলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে স্মরণীয় রাত স্মরণীয় করে রাখে।শুরু করলো তাদের দাম্পত্য জীবন!
.
মাহমুদ সৎ একজন কর্মজীবী।১৫ হাজার টাকায় মা,ছোটবোন ফারিয়া, স্ত্রী আতিকা’কে নিয়ে সুখের সংসার কাঁটতেছে।বিয়ের তিনমাস পর থেকে আতিকা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে পড়তো।একসময়ে মাহমুদ জানতে পারে তার স্ত্রীর আতিকার দুইটা কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়!
.
ডাক্তার বাবু মাহমুদ’কে ভরসা দেয়- আপনার স্ত্রী অপারেশন করলে আল্লাহর রহমতে বাঁচবে তবে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা খরচ হবে!
.
মাহমুদ চিন্তিত হয়ে পড়লো!ভেবে কুল পাচ্ছে না এতটাকা কোথায় পাবে।যা টাকা জমা ছিলো আতিকার অসুস্থ হওয়ার কারণে খরচ করে ফেলছে।কে দিবে এতটাকা?কোথায় পাবে এতটাকা?এ প্রশ্নগুলো বারবার তাকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করতেছে!
.
পাড়ার কিছু লোকজন মাহমুদ এর কিছু আত্মীয়স্বজনরা সমালোচনা করতেছে ৭ লক্ষ টাকা খরচ না করে ৫ লক্ষ টাকা দেনমহর দিয়ে এ বউকে বিদায় দিলে ভালো হয়।এ অলক্ষ্মী অসুস্থ মেয়েকে ঘরে রেখে লাভ কি?প্রায় সময়
অসুস্থ থাকে।
.
মাহমুদ এগুলো সব শুনতেছে ঘরে এসে দেখতেছে আতিকা শুয়ে আছে। চোখের কোণে গড়ে পড়তেছে অশ্রু।অশ্রুসিক্ত চোখের ভাষা আতিকা মাহমুদ’কে এটা বুঝাতে যাচ্ছে-
.
__তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে কি?
.
অাতিকার চোখের কোণে অশ্রু দেখে মাহমুদ
ধরে নিলো-পাগলীর কানে হয়তো ডির্ভোস নামের শব্দটা এসে গেছে।শুনছে মানুষের সমালোচনার কথাগু্লো।কিন্তু আতিকার মুখে বিচিত্র হাসির আভাস।রবীন্দ্রনাথের ভাষায়..
.
“কাহারো হাসি ছুরির মতো কাটে
কাহারো হাসি অশ্রুজলের মতো”
অব্যশই আতিকার হাসি অশ্রুজলের মতো ! এভাবে চলতে থাকে তাদের সংসারধীরে ধীরে আরো অসুস্থতা হতে থাকে আতিকা।বাপ দাদার সম্পত্তি ছিলো বিক্রি করেও ৭ লক্ষ টাকা হয় নাই।ঝড়ের রাতে শুরু হলো আতিকার ব্যথা। নিয়ে গেলো এলাকার ক্লিনিক এ সেখানে ইনজেকেশন এ দ্বারা ব্যথা কমলেও অপারেশন করতে হবে শহরে গিয়ে।নতুর কিডনি না দিলে আতিকা আর বাঁচবে না!
.
সকাল হতে না হতে আতিকা’কে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্য রওনা দিবে মাহমুদ।খুব ক্লান্ত শরীর এ আতিকা মাহমুদ’কে বলে-
.
_শহরে গিয়ে কি হবে,যে টাকা আছে আপনার কাছে তাতে তো আমি অভাগীর জন্য কিডনি পাবে না।বরং বাড়ি ফিরে যাই আপনার বুকে মাথা রেগে শেষ নিশ্বাসটুকু গেলে হয়।
.
মাহমুদ আতিকা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে-
.
_যতক্ষণ সম্ভব আমি মাহমুদ তোমার স্বামী এ হাত দিয়ে শক্ত করে তোমাকে ধরে রাখবো।
আমার দুইটা কিডনি থাকার পরেও কি তোমাকে আমি কিভাবে যেতে দিবো।শেষ চেষ্টা আমি করবো তোমার জন্য।এ কথা শুনে আতিকা খুব কাঁদছে মাহমুদ’কে জড়িয়ে ধরে!
.
স্বামীর একটা কিডনি দিয়ে আতিকা হয়তো নতুন জীবন ফিরে পাবে। শুরু হবে তাদের সংসার। ফিরে আসবে তাদের ছোট ঘরে সুখ।মহান আল্লাহ চাইলে সব হবে উনি সর্ব সর্বশক্তিমান।উনি মানবজাতি’কে পরীক্ষা করেন।মানবজাতি যখন কোনো ওয়াদা করে সেটার পরিক্ষা করেন উনি।হয়তো মাহমুদ আতিকার ও পরিক্ষা করছেন।
.
আতিকা তার স্বামীর একটা কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকুক।বেঁচে থাকুক আতিকা মাহমুদ এর বুকে মাথায় রেখে সুখদুঃখের কথা বলার জন্য!
.
#নোট
.
চলতে গেলে অনেক বাঁধা আসবে।সে বাঁধা অতিক্রম করা হলো সফলতা।যতো কষ্ট হোক না কেন একজন আরেকজনের হাত কখনো ছেড়ে দিবেন না।শক্ত করে ধরে রাখবেন।
নিশ্চয় মহান আল্লাহ ধৈর্যশীল মানুষদের ভালোবাসেন!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা