সকাল থেকে’ই নীলার বক বক শুনতে হচ্ছে।আমি নাকি বাসার কোনো কাজ করি না। নীলা বক বক করেই যাচ্ছে আর আমি শুয়ে শুয়ে সব শুনছি আর মিটি মিটি হাসছি।নীলা আমার হাসি টের পেয়ে রেগে আগুন…
কম্বলটা এক টানে টেনে উঠিয়ে দিয়ে বললো,”বাজারে যাও, কোনো কাজ তো করবে না, শুধু ঘুমোতেই পারো…”
–আরে বাবা,এমনি সময় কি আমি ঘুমোই নাকি…! আজকে ছুটির দিন তাই ঘুমোচ্ছি…
–এতো কথা বলা লাগবে না,বাজারে যেতে বলছি যাও…
–একটু পরে যাচ্ছি, আরেকটু ঘুমিয়ে নিই…
–না আর ঘুমোলে চলবে না,এরপর বাজারে গেলে পচা জিনিষ ছাড়া কিছুই পাবে না…
–পাবো পাবো…এখনো ঠিকমতো বাজার বসে পারেনি…
–হুহ,সবাই তো তোমার মতো অলস,যে ঘুম থেকে উঠবে না…
–আরে শীত বলেও তো একটা কথা আছে…
–তুমি যাবা, নাকি এইবার পানি আনতে হবে…
–না,এতো সকালে পানি খাবো না,যাও চা নিয়ে এসো…
–চা তোমাকে খাওয়াচ্ছি,আমি গেলাম পানি আনতে…
–আরে বললাম তো এতো সকালে পানি খাবো না…
–পানি খাওয়ার জন্য আনছি না, তোমার গায়ে ঢালবো বলে আনতে যাব…
এই বলেই নীলা পানি আনতে গেলো…আমি আর রিস্ক নিলাম না,তাই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম।
–এই তো লক্ষ্মী ছেলে,উঠে পড়েছে…
এই বলেই নীলা হাসতে শুরু করলো…
আমি ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম আর বললাম,”হাসলে কিন্তু আমি যাব না…”
–আচ্ছা বাবা,হাসবো না…
–হুম…
–হুম,এইবার যাও…
–আচ্ছা,বলছিলাম কি…
–কি…??
–আরেকটু ঘুমোই না প্লিজ প্লিজ প্লিজ…
–আচ্ছা,আর একটু কিন্তু…?
–হুম…
–মনে থাকবে তো…?
–হুম,খুব থাকবে…
এদিকে একটু ঘুমোতে গিয়ে ঘুম থেকে জেগে দেখি প্রায় একঘণ্টা দেড়ি করে উঠেছি…
নীলা মনে হয় আমাকে আর আস্ত রাখবে না…
তাড়াতাড়ি উঠেই বললাম,”কই তোমার ব্যাগ কই…?”
অন্যদিকে কোনো উত্তর পেলাম না…
আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম…
আমি যেতেই নীলা আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো…
–এভাবে তাকাচ্ছো কেন…! যাচ্ছি তো,ব্যাগটা দাও…
–যাওয়া লাগবে না…
–কেন…??
–আজ তোমার জন্য কিছুই রান্না করবো না…
–আচ্ছা বুঝেছি,আমার মহারানী রাগ করেছে…রাগ করো না প্লিজ…
–রাগ করবো না তো কি করবো,বললে একটু ঘুমোবে কিন্তু উঠলে ঠিক একঘণ্টা পরে…এটা তোমার একটু…?
–আচ্ছা,সরি বললাম তো…
–যাও যাও আজ কে রান্না করে দেখি…
.
আমি তাড়াতাড়ি বাজারের ব্যাগটা নিয়ে বাজারের দিকে দৌড়াতে লাগলাম…
.
বাজার শেষে বাসায় আসার পর,,
–এগুলো কি…?
–কি আবার মাছ,মাছ চিনো না…?
–কুত্তা দেখতে তো পাচ্ছি মাছ,কিন্তু কি মাছ…?
–আরে কি মাছ এটাও চিনো না…? তেলাপিয়া মাছ…
–তেলাপিয়া তো বুঝলাম, কিন্তু পচা কেন…?
–কই পচা…! আমি পুরো দেখে দেখে আনছি…
–কচু দেখে আনছো
–আচ্ছা,ওই কচুই রান্না করো…(একটু মুচকি হেসে বললাম)
–এই হাসবা না,একদম হাসবা না,পচা মাছ আনছো আবার হাসা হচ্ছে…
–আমি বুঝবো কি করে পচা মাছ নাকি ভালো,এগুলোই পেয়েছি তাই এনেছি…
–এই গুলোই তো পাবা,দেড়িতে গেলে এগুলো পাবা না তো কি পাবা…! তোমার জন্য তো ভালো মাছ রেখে দেবে…
–আচ্ছা,এরপর থেকে ভালো মাছ আনবো,এইবার রান্না করো তো…
.
রান্না শেষ করে নীলা আমাকে খাওয়ার জন্য ডাক দিলো,,
খাওয়ার পরে,,
–আজ রান্নাটা ভালো হলো না তো…
–জানতাম হবে না…
–কিভাবে…?
–পচা মাছ কি কখনো ভালো হয়…??
–ও,এই ব্যাপার…
–হ্যা,এই ব্যাপার…
–আচ্ছা, কাল থেকে তাহলে ভালো মাছ আনবো…
–হুম,আনতেই হবে…
–হুম আনবো,কিন্তু একটু দেড়িতে ডেকো প্লিজ…
–সয়তান,কালকে যদি দেড়ি করে উঠো,তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন…কাল পানি আনতে আর অনুমতি নেবো না,সোজা এনে ঢেলে দেবো…
–আচ্ছা,আচ্ছা…দেড়ি করবো না…
এই বলেই আমি একটু বিশ্রাম নিতে গেলাম আর মনে মনে ভাবলাম,”শীতের সকালটা সত্যিই অনেক কষ্টকর, না জানি কালকে ভাগ্যে কি আছে…”
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা