স্বামী বাসায় এসেছেন। সাথে নিয়ে এসেছেন তিনজন শৈশবের বন্ধু। বন্ধুদের সাথে উনার দীর্ঘদিন পর দেখা। বাসায় এসেই স্বামী বন্ধুদের বসিয়ে গেলেন রান্নাঘরে। স্ত্রী ততক্ষণে রেঁধে উনার বাকী কাজ করছিলেন। স্বামী এসেই স্ত্রীর কানে কানে জিজ্ঞেস করলেন, “রান্না কি শেষ?”
স্ত্রী পেছনে ফিরে বললেন, “হুম মাত্রই শেষ করলাম। এখন বাসন মাজার কাজটা সারছি।” স্বামী অস্থির হয়ে বললেন, “আচ্ছা যাই রেঁধেছো তাড়াতাড়ি বেড়ে ফেল। আমার তিনজন শৈশবের বন্ধু কে নিয়ে এসেছি। অনেকদিন পর তাদের সাথে দেখা তাই না এনে পারলাম না।”
স্ত্রী মুচকি হেসে বললেন, “সেটা তো স্বাভাবিক। তোমার শৈশবের বন্ধুদের সাথে এতোদিন পর দেখা হয়েছে আর তুমি তাদের বাসায় আনবেনা এমন কি হয়! তুমি গিয়ে তাদের সাথে গল্প কর আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
আজ স্ত্রী তাঁর স্বামীর পছন্দের, শুটকি তরকারি, টমেটোর ভর্তা আর ডাল রান্না করেছেন। কিন্তু খাবারের পরিমাণ এতোটা না যে পাঁচ জনের হয়ে যাবে। তাছাড়া মাসের শেষ তাই ঘরে অন্যান্য কিছু নেই যে স্ত্রী রান্না করবেন। স্ত্রী তাড়াতাড়ি বাসন মাজার কাজটা সেরে খাবার বেড়ে নিলেন। স্বামী অন্য রুমে বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছেন আর স্ত্রী এই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন যে খাবারে কি কুলাবে!
স্ত্রী খাবার বেড়ে বন্ধুরা যে রুমে আছেন সেখানে গেলেন। খাবার টা খাবার টেবিলে সাজিয়ে বন্ধুদের কে পালাক্রমে নমস্কার জানালেন। স্বামীকেও স্ত্রী বন্ধুদের সাথে খাবার দিলেন। স্বামী বন্ধুদের সাথে বসে তালে তাল মিলিয়ে খাচ্ছেন আর শৈশবের স্মৃতি আদান প্রদান করছেন। অন্যদিকে ভাতের পাত্রে ভাত সামান্যই আছে। যেটুকু ভাত আছে তাতে একজনের পেটের এক কোণাও ভরবে না। স্ত্রী ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়লেন এই ভেবে যদি কেউ ভাত চেয়ে বসে! বন্ধুরা পেট ভরে খেয়ে স্বামী কে বলল, “তুই আর আগের মতো খেতে পারিসনা কেন রে? তোর থালায় অর্ধেক খাবারই রয়ে গেছে।”
স্বামী ভালো করেই জানেন ঘরে আর খাবার নেই। কেননা রান্নাঘরে স্বামী দেখেছেন খাবারের পরিমাণ খুব বেশি নয়। স্বামী মুচকি হেসে বললেন, “আরে দোস্ত আমি না কয়েকদিন ডায়েট এ আছি। পেট টা বেশ বের হয়ে গেছে। তোর ভাবীও বকা দেয়। পরে যদি আমাকে ছেড়ে দেয়! তাই আমি পেট কে ছেড়ে দিচ্ছি।” বন্ধুমহলে হাসির রোল পড়ে গেল। বন্ধুরা সবাই চলে গেল। স্ত্রী তখন এসে তাঁর স্বামী কে জিজ্ঞেস করলেন, “বন্ধুদের মিথ্যে বললেন কেন? আপনি তো ডায়েট করেননা!”
স্বামী তখন বললেন, “দেখেছি রান্নাঘরে খাবার কম। তার উপর বাজার-টাজার কিছুই হয়নি৷ তোমাকেও আমার ভালোকরে চেনা৷ তুমি একবেলা উপোষে ঘুমিয়ে পড়বে কিন্তু বলবেনা। তাই আমি অর্ধেকটাই খেলাম, বাকীটা তুমি খেয়ে নিও। খাবেনা?” স্ত্রী কেঁদে ফেললেন। স্বামী তাঁর স্ত্রীর চোখের জলখানি মুছে দিয়ে বললেন, “আহহা কাঁদছো কেন? আচ্ছা আস আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিই।”