আজকের দিনটা অন্য দিনের চেয়ে ব্যতিক্রম। কারন আজ আমি আর নিত্তিয়া ডিভোর্স ফাইলে সাইন করে আইনগত ভাবে আলাদা হয়ে যাবো।ওর সাথে আমার বিয়েটা ওর মতের বিরুদ্ধে হয়ে ছিল। গত ছয় মাস আগেই ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করে ছিলাম যা আজ হতে যাচ্ছে।
সকালে ঘুমটা ভাঙ্গতেই বিছানায় নিত্তিয়াকে পেলাম না। মনে হয় আজ একটু তারাতারি ঘুম থেকে উঠে গেছে। আর বাইরে হালকা বৃষ্টি পরছে। এমনি এখন ভোর আর তার উপর হালকা হাওয়ার সাথে হালকা বৃষ্টি। তাই গা ভিজানোর লোভটা সামলাতে পারলাম না। তাই ছাদে চলে গেলাম। তাছাড়া এখন যদি বৃষ্টি ছোয়া না নেই তাহলে আরো ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারন সামনেই শীতকাল চলে আসবে।
মুক্ত বাতাসে মনটা আকাশের বুকে মুক্ত করে দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বাতাসের স্বাদ গ্রহনের বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। কিছুখন পর ছাদ থেকে চোখটা পড়লো বাসার উঠানের দিকে। কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কারন, নিত্তিয়া শিউলি ফুল কুঁড়াচ্ছিল। আমাদের শিউলি গাছটা ছাদের সাথে অনেকটা লেগে আছে তাই ভাবলাম একটু দুষ্টামী করা যাক। আমি গাছটা ধরে জোরে নাড়া দিলাম। যার ফল স্বরূপ গাছে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোটা গুলো পরলো নিত্তিয়ার উপর। নিত্তিয়া একটু বিরক্ত চোখে উপরে তাকালো। হয়ত ও ভাবলো বৃষ্টি বুঝি জোরে আসছে।কিন্তু উপরে আমাকে দেখে ওর মুখের রংটাই পাল্টে গেল। ও ফুল কুড়ানো বাদ দিয়ে রুমে চলে গেল। হতে পারে আমার উপর অতিরিক্ত রাগ নয়ত অল্প একটু ক্ষোভ জমেছে ওর মনে। ও কেন আমায় পছন্দ করে না তা আমি জানি না। গত ছয়টা মাস ও আমার সাথে দরকার ব্যতীত কোন কথাই বলে নি। যদিও একই বিছানায় থাকতাম তবু আমাদের মাঝে বালিশসহ সীমানা ছিল অনেক। এমনও অনেক সময় কাটিয়েছি ও মাঝ রাতে উঠে জানালার পাশে দাড়িয়ে কাঁদছিল আর আমি শুধু ওর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কারন, ওর জীবনে একটা অতীত আছে যা আমায় আজও বলে নি। তবে শুধু বলছিল ও অন্য একটা ছেলেকে ভালবাসতো।
আমি প্রথমে বলছিলাম ও চাইলে আমি ওই ছেলের সাথে ওর দেখা করিয়ে দিবো কিন্তু ও তাতেও রাজি নয়। গত ছয় মাস ধরে আমার থেকে কি লুকাতে চাইছে আমি জানি না। একবার ওকে একা একা কাঁদতে দেখে আমি ওর হাতের উপর আমার হাত রাখি আর এতেই পুরুষদের নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলে। পুরুষরা নাকি মেয়েদের এক প্রকার ভোগের জিনিস মনে করে এইসবই। তবুও এই ছয় মাসে আমি ওর উপর জোর গলায় কথা বলি নি। ওর কাছে জানতে চাইছিলাম ও ডিভোর্সের পর কি করতে চায় তখন নিত্তিয়া বলে ও নিজে চাকরী করতে চায়। তবে যাই হোক, নিত্তিয়া আমার বাবা মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি। আমার আত্মীয়স্বজনের সামনে যোগ্য বউয়ের মত আমার সাথেই ছিল। আমি জানি না নিত্তিয়ার অতীত কি? তবে বর্তমানে আমি নিত্তিয়াকে ভালবেসে ফেলেছি এটাই জানি।
ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে চলে আসলাম আর এসে দেখি নিত্তিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব তারাতারি ও স্নান করে নিয়েছে।তাই আমি বললাম…
— আজ এতো সকাল সকাল স্নান করলে?
–হুমম কেন আপনার সমস্যা আছে?
— আরে না। তোমার কোন কিছুতেই সমস্যা ছিল না আর এখন কেন সমস্যা থাকবে?
নিত্তিয়া আমার কথায় কেমন ভাবে যেন তাকালো। মনে হচ্ছে কত প্রশ্ন লুকিয়ে রেখেছি। সত্যি অনেক কথাই লুকিয়ে রেখেছি। হয়ত নিত্তিয়া কখনো বুঝবে না। হঠাৎ নিত্তিয়া বলে উঠলো…
— এই যে আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন। খাওয়া দাওয়া করবেন না বুঝি?
— এতে সকালে। তোমার রান্না করা হয়ে গেছে।
— হুমম সেই কখন ঘুম থেকে উঠে রান্না করে ফেলেছি।
— বাহ্ আজ আমার থেকে মুক্তি পাবে বলে এতো আয়োজন।
— না তবে..
— তবে কি?
— তবে কিছু না। ধরে নেন হয়ত আজ এই বাসায় আমার শেষ দিন বলে তারাতারি রান্না করে নিলাম।
— আচ্ছা বার বার আমার থেকে কথা লুকিয়ে তুমি কি মজা পাও?
— ওই তারাতারি করেন তো নয়ত বেশি সময় লাগবে ডিভোর্স অফিসে যাওয়ার জন্য।
ও কথাটা বলে আমার সামনে থেকে চলে যাচ্ছিল তাই আমি ওর হাতটা চেপে ধরলাম। তখন ও আমার হাতের দিকে চেয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল…
— হাতটা ছাড়েন?
— যতখন বলবে না কি আমার থেকে লুকিয়ে রাখছো ততখন ছাড়বো না।
— আমার কিন্তু লাগছে।
— তবু তুমি বলো কি হইছে তোমার?
নিত্তিয়া আর কোন কথা না বলে সরাসরি আমায় চড় মেরে বসলো। যা আমাকে সহ ও নিজেই থমকে গেল। আমি ওর হাতটা ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু ও এখন নিজেকে অপরাধী মনে করছে।তখন আমি শুধু একটা কথাই বললাম…
— যাক নিত্তিয়া গত ছয় মাসে ভালবাসার ফল আজ বুঝিয়ে দিলে। যাও তুমি ব্যাগ ঘুছিয়ে নাও। আমি কিছুখনের মাঝে ফ্রেশ হয়ে আসছি।
কথাটা বলেই আমি ওয়াশরুমে চলে আসলাম। হয়ত পিছনে আওয়াজহীন হয়ে নিত্তিয়া আমায় ডাকছে তবে আমার শোনার প্রয়োজন মনে হচ্ছে না।আমি তারাতারি ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসলাম।
নিত্তিয়াকে দেখলাম রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলের সামনে চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর সামনে যেতেই ও বলল…
— নাস্তা করে নেন।
— খিদে নেই। তোমার ইচ্ছা করলে খেয়ে নিতে পারো।
— আসলে আমি চড়টা…
— কথা বললেই অফিস পৌঁছাতে সময় বেশি লেগে যাবে।
আমি আর ওর কোন কথা না শুনে বাসার বাইরে এসে নিত্তিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
নিত্তিয়া মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চুপচাপ আমার সামনে আসলো। আমি আর কোন কথা না বলে একটা রিকশা ভাড়া করে উঠে পরলাম। দুইজনেই পাশাপাশি বসে আছি তবে কারো মুখে কোন আওয়াজ নেই। রিকশা অনেকটা পথ যাওয়ার পর একটা পার্কের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ নিত্তিয়া বলল….
— আঙ্কেল রিকশাটা একটু থামান তো।
ওর রিকশা থামানোর কারনে আমিও রিকশা থেকে নেমে নিত্তিয়ার কথায় ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। তখন আমি বললাম…
— এখানে নামালে কেন? ওই দিকে তো সময় বয়ে যাচ্ছে।
— যাচ্ছে তো যেতে দেন। আপনি আমার পিছন পিছন আসেন।
তারপর নিত্তিয়ার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম। একটা পুকুরের সামনে গিয়ে নিত্তিয়া থামলো আর মাঝামাঝি সিঁড়িতে গিয়ে বসলো আর আমায় বসতে বলল। আমিও ওর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসলাম।কিছুখন নিরবতার পর নিত্তিয়া বলল…
— রাজ, আপনি আমায় ভালবাসেন তাই না।
— আজকের দিনে এই বাক্যটার কোন মানে হয় না।
— জানি অনেক রাগ আমার উপর। একটি বার আমার অতীতটা শুনেন আর তারপর ভেবে দেখেন আমি ঠিক কি না?
— অতীতটা শোনার জন্যই তো ৬ মাস অপেক্ষা করে আছি।
— হুমম তাহলে শুনেন। আজ থেকে বেশি দিনের ঘটনা না। আপনার সাথে আমার বিয়ে হয় ৬ মাস হইছে আর এর এক মাস আগে আমাকে কিছু খারাপ ছেলে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বাস করেন, ওরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারে নি। কারন এর আগেই পুলিশ ওদের গাড়িটা ধরে ফেলে। আমাদের এলাকার একটা ছেলে আমায় বিরক্ত করতো। আমায় অনেকবার প্রপোজ করে কিন্তু আমি ফিরিয়ে দেই। এরপর রাস্তায় আমাকে দেখলে খারাপ খারাপ মন্তব্য করতো। একদিন লাইব্রেরি থেকে আসার সময় আমায় তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু আমার সাথের বান্ধবী সাথে সাথে পুলিশকে ফোন দেয়। যার কারনে কোন ক্ষতির আগেই আমি বেচেঁ যাই। তাই পুরুষদের আমি দেখতে পারি না আর আমার বাবা মা এই সত্যটা না জানিয়ে আপনার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে। আর আমি বলছিলাম না আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল। হুমম সত্যি ছিল। যেদিন আমায় তুলে নিয়ে যায়, তারপর পর দিন যখন আমি এটা ওরে বলি তখন ও আমায় নানা রকম কথা বলে। আমার চরিত্র নিয়ে কথা তুলে। এই কারনে আরো ক্ষোভ আছে পুরুষ সমাজের উপর।
কথা গুলো বলেই নিত্তিয়া কাঁদতে লাগলো। হুমম ওর সাথে অন্যায় হয়েছে। যেমন অন্যায় করলো বাজে ছেলে গুলো ঠিক তার চেয়ে বেশি অন্যায় করেছে ওর বয়ফ্রেন্ড। তাই বলে ওদের অন্যায়ের শাস্তি আমায় কেন দিবে? আমি তো ওরে ভালবাসি, এটা ও বুঝে না। তাই আমি ওরে বললাম….
— নিত্তিয়া তোমার সাথে সব দিক দিয়েই অন্যায় হয়েছে। কিন্তু সব ছেলে এক হবে তার কোন গ্যারান্টি নাই। এমন কিছু ছেলে আছে যারা শুধু একজনকে মন প্রান দিয়ে ভালবাসে। আর মেয়েরা কোন ভোগের জিনিস না। মেয়েরা হলো সাহস, শক্তি আর বুদ্ধির আরেক রূপ। প্রতিটা ছেলের জীবন পূরন করতে কিন্তু একটা মেয়েরই দরকার। কিন্তু সবাই তা বুঝে না। কিন্তু যে তোমায় বুঝতে চায় তাকে ভালবাসার সুযোগ না দিয়ে দূরে ঠেলে দিচ্ছো।
— কি করবো? যার জীবনটা ভুলে অাক্রান্ত হয়ে আছে তার সাথে তোমায় জড়াতে চাই না।
— খুব ভাল চিন্তা। এবার চলো, অলরেডি অনেক সময় শেষ হয়ে গেছে।
— হুমম।
পার্ক থেকে বার হয়ে আরেকটা রিকশা নিয়ে সোজা অফিসে চলে গেলাম। কেন জানি নিত্তিয়া এখনো কান্না করছে কিন্তু ওর তো আজ মুক্তির দিন। আর ও এটাই চেয়ে ছিল।
ডিভোর্স পেপারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর নিত্তিয়া। উকিলের কথায় আমি খুব সাধারন ভাবেই সাইন করে পেপারটা নিত্তিয়ার দিকে দিলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। পেপারের উপর মনে হলো দুই ফোটা জল পরেছে। কিন্তু নিত্তিয়া তার হাত দিয়ে ফোটাঁ গুলো ঢেকে দিলো। আর সাইন করে আমার দিকে ফিরিয়ে দিলো। তারপর উকিলের বিল মিটিয়ে পেপারটা নিয়ে নিত্তিয়াকে ওর বাসায় পৌঁছে দিতে গেলাম। রিকশায় বসে আছি আর নিত্তিয়া কেঁদেই চলেছে।
— কি হলো এখন কাঁদছো কেন? তোমার কথা মতই তো সব হলো।
— এমনই কাঁদছি। আচ্ছা আপনাকে যদি আমি গত ৬ মাসে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে মাফ করে দিয়েন।
— যদি এক দুইটা কষ্ট দিতে তাহলে হাঁসতে হাঁসতে মাফ করে দিতাম কিন্তু তোমার কষ্ট দেওয়ার পরিমান তো অনেক তাই মাফ করার কোন প্রশ্নই আসে না।
— ও আচ্ছা তো আমি আপনাকে কষ্ট দিছি এমন ৫টা কষ্টের কথা বলেন তো।
— ওকে, ১. আমার শখ ছিল আমার বিয়ের পর থেকে আমার বউ আমার টাই বেঁধে দিবে যা তুমি দাও নি। ২. তোমার হাতটা ধরার অধিকার টুকুও দাও নি। ৩. লম্বা একটা চড় দিলে। ৪. তোমার জন্য নিয়ে আসা একটা ফুলও তুমি চুলে লাগাও নি। ৫. আমি অফিসে থাকলে একবার ফোন দিয়ে আমার খাওয়া হইছে কিনা জানতে চাও নি বরং আমি রোজ তোমার খোঁজ নিয়েছি।
— থাক হইছে। একটা নতুন বিয়ে করে নেন তারপর আপনার বউ আপনার খোঁজ নিবে।
— সকালের খাবারে পেট না ভড়লে কখনো রাতের খাবারে পেট ভড়ে না।
— মানে?
–মানে তুমি থাকতে আমার খোঁজ নাও নি আর আরেকটা বিয়ে করলে তো আমার কপালে বাশঁ ছাড়া আর কিছু জুটবে না।
— আরে কিছু হবে না।
— ওকে যাও আমি বিয়ে করবো কিন্তু সিঙ্গেল মেয়ে পাবো কোথায়? সবই তো তোমারই মত কারো না কারো গলায় ঝুলে আছে।
— হুহহ আচ্ছা তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েদের থেকে কারো উপর ক্রাশ খাও। তারপর আমি ব্যবস্থা করে দিবো নে।
— আমি ক্রাশ খাই না কারন মা বলেছে রাস্তা ঘাটে কিছু খেতে নেই।
— ও আচ্ছা, তাহলে আর কি?
— এক কাজ করো তোমার ছোট বোন অন্তরার সাথে আমার কানেকশনটা করে দাও না।
— হুমম ঠিকই বললে। আর পাড়ার লোকে বলবে এক বাসার দুই মেয়ে বিয়ে করছে এক ছেলে।
— হি হি হি মজাই হবে।
— চুপ করো তো হেঁসো না।
— কেন?
— এমনি?
আর একটা কথা না বলেই চুপচাপ নিত্তিয়ার বাসায় গেলাম। খুব কাছে বলে রিকশায় গেলাম। ওদের দরজার কলিং বেল চাপতেই নিত্তিয়ার মা এসে দরজা খুলে আমায় দেখে রুমে আসার জন্য বলল কিন্তু নিত্তিয়ার দিকে তাকালো না। আমি নিত্তিয়ার মাকে আন্টি বলি তাই বললাম….
— আন্টি আমি আসবো না। আসলে নিত্তিয়া আপনাদের দেখার জন্য খুব মন খারাপ করছিল। তাই ওরে রেখে যাচ্ছি। পরে এক সময় এসে নিয়ে যাবো নে।
— বাবা তুমিও একটা দিন থেকে যাও।
— না আন্টি অন্য একদিন আসবো। আপাতত ওরে ঘরে নিয়ে যান।
— হুমম।
আমি চলে আসার সময় নিত্তিয়ার দিকে তাঁকাতেই ওর চোখ দিয়ে জল পরে গেল। মেয়েরা যে কত্তো কান্না করতে পারে। আমি ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সরাসরি অফিসে চলে গেলাম।
রাতে বাসায় ফিরে সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। যদিও ঘরটা গুছানো ছিল তবু মনে হচ্ছিল কত দিন ধরে হয়ত গুছানো হয় না। খুব কষ্ট হচ্ছিল তবু খাওয়া দাওয়া করে এসে ঘুমিয়ে পরলাম। কিন্তু ঘুম সে তো আর আসছে না। কারন এতোদিন পাশে কারো নিঃশ্বাসের শব্দ অনুভব করতাম কিন্তু তাও পাচ্ছি না। আচ্ছা নিত্তিয়ার কি আমার জন্য একটুও খারাপ লাগছে না। যদি খারাপ নাই বা লাগে তাহলে আমি চলে আসার সময় কাঁদছিল কেন? যাই হোক, ওর মনে কি একটুও জায়গা করে নিতে পারি নি।
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি ৯টা বাজে। মানে নিত্তিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে ছিলাম তার খেয়াল নেই। তাই তারাতারি ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রওনা দিলাম। ইচ্ছা করছিল নিত্তিয়াকে ফোন দেই কিন্তু বার বার আমি ওর কাছে হার মানবো কেন? ও কি একবার ফোন দিতে পারে না। হঠাৎ নিত্তিয়ার ফোন এসে হাজির। এই প্রথম নিত্তিয়া আমায় ফোন দিছে। ফোনটা ধরতেই…
— হুমম নিত্তিয়া বলো।
— অফিসে যাচ্ছেন বুঝি।
— হুমম রিকশায় আছি।
— ও আচ্ছা।
— কেন কিছু বলবে নাকি?
— না।
— আচ্ছা নিত্তিয়া আমায় কি মিস করো না?
— মিথ্যা বলছি মিস করি না।
ওর কথাটা শুনেই আমি ফোনটা কেঁটে দিলাম আর রিকশাওয়ালাকে নিত্তিয়ার বাসার সামনে নিতে বললাম। নিত্তিয়া ফোন দিচ্ছে কিন্তু আমি ফোনটা ধরছি না। প্রায় ৩০ মিনিটে ও ১৭ টা ফোন দিছে আর আমি একটাও ধরি নি। যদি ও আমায় মিস করে তাহলে শিউর আমার নিয়ে চিন্তা করবে কেন আমি ওর ফোন ধরি না।
রিকশা থেকে নেমেই ওরে ফোন ব্যাক করলাম আর ও সাথে সাথে রিসিভ করলো। আর বকতে শুরু করলো….
— ওই একটু ফোনটা ধরে কি বলা যায় না যে তুমি ঠিক আছো।
— ফোনটা না ধরেই ভাল হইছে। আমাকে আপনি করে ডাকার বদলে তুমি করে ডাকলে।
— এটা বললেই ডাকতাম। এতো চিন্তা দাও কেন হে? পচা ছেলে কোথাকার?এক্কেবারে পচা, শয়তান আর বদের হাড্ডি তুমি।
— হা হা হা একটু আমায় কিছু বলার তো সুযোগ দাও।
— হুমম বলো।
— একটু তোমার রুমের বেলকনিতে আসতে পারবে।
— আসছি।
বলেই দৌঁড়ে আসলো আর আমায় দেখে চমকেই গেল।
— তুমি এখানে আসছো কেন?( চোখ মুছতে মুছতে)
— তুমিই তো বললে আমায় মিস করছো তাই চলে আসলাম।
— কোথায় বললাম তোমায় মিস করি?
— ওই তুমি বললে না মিথ্যা বলছো তুমি আমায় মিস করো না। তার মানে সত্যি হলো মিস করো।
— হুহহ কত্তো বুঝে বাঁদর একটা।
— তোমায় চোখের জল মুছতে দেখতেও কিন্তু ঝাক্কাস লাগে।
— ওই চুপ, এখন বাসায় আসো।
— ওকে।
ওদের দরজায় কলিং বেল চাপতেই নিত্তিয়ার ছোট বোন অন্তরা দরজা খুলল…
— আরে দুলাভাই ভাল আছেন?
— হুমম
— ভিতরে আসেন। বউকে দেখতে মন চাইছিল বুঝি তাই অফিসে যাওয়ার বদলে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলেন।
— আরে না। আমি আসলাম তোমার সাথে প্রেম করবো বলে। এক মাত্র শালী তুমি আমার।
— হুহহ হইছে থাক। যান উপরেই যান।
আমি হাঁসতে হাঁসতে চলে গেলাম উপরে। দেখি নিত্তিয়া খাটে বসে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
— কি হলো এখনো কাঁদছো কেন?
— কই কাঁদছি?
— হুমম দেখতেই পাচ্ছি। ( ওর চোখের জল মুছে দিলাম)
— হুমম যদি গতকাল এই চোখের জল দেখতে পারতে তাহলে আমায় পেপারে সাইন করতে দিতে না।
–সাইন না করতে দিলে তো বুঝতেও পারতাম এই মেয়েটা এতো পাগলী আর আমায় এত্তো ভালবাসে।
— কচু ভালবাসে তোমায়।
— ও তাই নাকি। তাহলে যাই অন্তরার সাথে একটু প্রেম করে আসি।
— ওই এখান থেকে উঠলে তোমার পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিবো বললাম।
— ওকে চুপ হয়ে থাকলাম।
— আমি জানি আমি তোমাকে আমায় ছোয়ার অধিকার দেই নি। কিন্তু তোমার আনা ফুল গুলো আমার কাছেই রেখেছি। প্রতিদিন তুমি যখন টাই বাঁধতে আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম কখন তুমি ডাকবে। আর প্রতিদিন দুপুরে তোমায় ফোন না দিলেও তোমার ফোন আসার অপেক্ষায় ছিলাম। সেটা হয়ত তুমি বুঝতে না।
— ওরে বাব্বা এত্তো ভালবাসো আর এতটুকু বুঝতে দাও নি।
— তুমি অনেক বেশি বুঝো তো তাই কিছু বুঝো না।
— তো এখন এই কাগজটার কি হবে?(ওর সামনে পেপারটা রাখলাম)
— জানি না।
— তুমি যত্ন করেই রেখে দাও কারন এটা কোন ডিভোর্সের পেপার না বরং তোমায় রেজিস্ট্রি করে আবার বিয়ে করছিলাম গতকাল।
— ওরে শয়তান আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সব করলে তাই না। ( বলেই আমায় মারতে লাগলো)
— যেহেতু ভালবাসি সেহেতু হারাতে চাই না। আর যে কলম দিয়ে তোমায় গতকাল বিয়ে করলাম সেই কলম দিয়ে কখনো ডিভোর্স দিতে পারবে না।
— হুমম কখনো ভাববেও না আর এইসব। এই পাগলীটাও তোমায় বড্ড বেশি ভালবাসে।
বলেই আমার বুকে মুখ লুকালো। সত্যি পাগলী একটা।