প্রাক্তন প্রেমিক

প্রাক্তন প্রেমিক

আজকাল আঙুলে নেলপলিশ মাখছ নাকি?

– একদমই না। তুমি বরং আজকাল চশমা পর‍তে ভুলে যাচ্ছ।

– ওহ। আসলেই তো। কি অদ্ভুত! জীবন্ত! তুমি সামনে বসে আছ। অথচ আমি তোমাকে দেখছি আমার ফ্যান্টাসিতে দেখলাম তুমি অপরিপক্ক কিশোরীর মতন আঙুলে নেলপলিশ মাখছ৷ মাখতে গিয়ে বুমেরাং করে ফেলছ। হাহা।

– বয়স হয়েছে তোমার। ভারী কথাগুলো এবার রাখ। এসব শুনতে শুনতে আর ভাল লাগেনা!

– ভাল লেগেছিল কবে? কখন? কোন ক্রান্তিলগ্নে? বলতে পারো?

– আমার মাথাটা ঝিম ধরে আছে, আমায় একটু একা ছেড়ে দাও প্লিজ!

– ঘুমালেতো চলবেনা, আজ কয় তারিখ মনে আছে?

– ২৮ তারিখ, জানুয়ারি। ২০১৯। আমি জানি তুমি কি বলবে!

– জানই যখন, তাড়িয়ে দিয়ে নিজেকে লুকাতে চাইছ কেন?

– কি করতে হবে বল।

– চোখ বন্ধ কর।

– আর কতবছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবে মিতুল! আমাদের বিয়ের ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। আর কত! গত ১৪ বছর প্রত্যেক বিবাহবার্ষিকীতে তুমি একই কাজ করেছ! কবিতা শুনিয়ে প্রথমে আমাকে মোহিত করে ফেলেছ, এরপর একের পর এক প্রশ্ন করে গেছ। কেন? কেন কর এমন?

– তুমি চোখ বন্ধ কর। প্লিজ।

– ওকে, করলাম। কিন্তু আগামী বছর এই কাজ আমি আর করব না। কোনভাবেই না।

– কোন কবিতাটা পড়ব জানো আজ?

– জন মিল্টনের কোন কবিতা? “অন হিজ ব্লাইন্ডনেস”?

– না।

– তাহলে?

– নির্মলেন্দু গুণ এর শুধু তোমার জন্যে।

– আমি চোখ বন্ধ করলাম।

পাঠ করছি নির্মলেন্দু গুণ এর শুধু তোমার জন্যে “কতবার যে আমি তোমোকে স্পর্শ করতে গিয়েগুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন।তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েওকতবার যে আমি সে কথা বলিনিসে কথা আমার ঈশ্বর জানেন।

তোমার হাতের মৃদু কড়ানাড়ার শব্দ শুনে জেগে উঠবার জন্য দরোজার সঙ্গে চুম্বকের মতো আমি গেঁথে রেখেছিলাম আমার কর্ণযুগল; তুমি এসে আমাকে ডেকে বলবেঃ ‘এই ওঠো, আমি, আ…মি…।’ আর অমি এ-কী শুনলাম এমন উল্লাসে নিজেকে নিক্ষেপ করবো তোমার উদ্দেশ্যে কতবার যে এরকম একটি দৃশ্যের কথা আমি মনে মনে কল্পনা করেছি, সে-কথা আমার ঈশ্বর জানেন। আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য, আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য, আমার ঈশ্বর জানেন- আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য। তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে, আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য”

– স্নিগ্ধা।

– হুম।

– তুমি কি মোহিত?

– হুম।

– স্নিগ্ধা।

– হুম।

– তোমার প্রিয় ফুল যেন কোনটা?

– হাসনাহেনা।

– কেন? আগেতো ছিল কলমি। কতবার এনে দিয়েছি তোমাকে।

– বয়সের সাথে প্রিয় অপ্রিয় বদলায় মিতুল সাহেব।

– আর তোমার প্রিয় বই?

– ম্যাক্সিম গোর্কির মা।

– এটাও বদলেছে দেখছি। গতবছর বলেছিলে সমরেশ মজুমদারের কালপুরুষ।

– বাংলায় ঝুকেছি ইদানিং।

– বিরিয়ানি খাও?

– গত ছ মাসে আমায় বিরিয়ানি রাঁধতে দেখেছ?

– তুমিতো বিরিয়ানির জন্যে পাগল ছিলে স্নিগ্ধা!

– জানিনা, ইদানিং আর ভাল লাগেনা।

– প্রিয় গান?

– সামারটাইম স্যাডনেস। লানা ডেল রের গানটা। ভীষণ সুন্দর। শুনে নিও পারলে, ভাল লাগবে। তবে গভীর রাতে শুনবে।

– প্রিয় গান ও বদলে গেছে। তাও আবার দৃশ্যমান পরিবর্তন। কোনদিন তোমাকে ইংলিশ গানের ছায়াও মাড়াতে দেখিনি।

– মিতুল সাহেব, সময়ের সাথে অনেক কিছুই বদলে যায়!

– আসলেই কি বদলায়? নাকি বদলে যায়?

– বদলে যাওয়া বদলে দেয়।

– বাহ। স্নিগ্ধা!

– হুম।

– তোমার প্রিয় শব্দ কি, স্নিগ্ধা?

– স্বপ্নীল! আমার প্রিয় শব্দ স্বপ্নীল!

– তুমি নিশ্চিত তো?

– হ্যা আমি নিশ্চিত! শতভাগ নিশ্চিত। আমার প্রিয় শব্দ স্বপ্নীল!

– বাহ, আগে যেন কোন শব্দটা প্রিয় ছিল?

– স্বপ্নীল ই তো! স্বপ্নীল আমার প্রিয় শব্দ! প্রিয় নাম! সবসময়।

– স্নিগ্ধা!

– হুম!

– তোমার প্রিয় ফুল বদলালো, প্রিয় বই বদলালো, প্রিয় গান বদলালো অথচ প্রিয় শব্দটা বদলালোনা!

– কিছু জিনিস কখনোই বদলানো যায়না! কখনোই না!

– স্নিগ্ধা।

– হুম।

– গত ১৫ বছর আমাদের প্রত্যেক বিবাহবার্ষিকীতে আমি একই কাজ তোমার সাথে বারবার কেন করেছি জানতে চাও?

– জানতে চাই! বল কেন? আজকে বলতেই হবে।

– চোখ খোল।

– খুললাম।

– আমার দিকে তাকাও স্নিগ্ধা!

– তাকালাম!

– গত ১৫ বছর প্রত্যেক বিবাহবার্ষিকীতে তোমার সাথে একই কাজ বারংবার করেছি, শুধুমাত্র তোমার প্রিয় শব্দ “স্বপ্নীলের” পরিবর্তে “মিতুল” শুনব বলে!

– মানে?

– কারণ স্বপ্নীল যে তোমার প্রাক্তন প্রেমিকের নাম, স্নিগ্ধা!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত