ভালোবাসা

ভালোবাসা

–এই,তুমি দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে আমার শরীর দেখছো নাকি ?(প্রীতি)
–আরে না,,,তোমাকে দেখছিলাম আমি,,(ফাহিম)
–আমাকে ?মিথ্যে বলো না তো ,,,আমি তোমার মতলব বুঝিনা মনে করেছো ?(প্রীতি)
–সে যাই বলো,,তুমি তো আমার বউ তাই না ?দেখতে তো আর বাধা নেই,,(ফাহিম)
–রান্না ঘরের দরজায় এসে উকি মারা একদম ই ঠিক ই না,,,

আর আমার রান্না করতে অসুবিধা হয় ।আচ্ছা তুমি একটু রান্নায় সাহায্য করো তো,,,(প্রীতি) এই কথা বলতেই ফাহিম চলে গেলো ।প্রীতি জানে ফাহিড সেই লেভেলের অলস ।এক গ্লাস পানিও নিজে ভরে খাবে না ।তাই তাকে তারাতে এই এক কথায় ই যথেষ্ঠ ।

প্রীতি আর ফাহিমের প্রেম অনেক আগের ।তাদের সব কিছুই ঠিক চলছিলো কিন্তু একদিন হঠাৎ তাদেরকে রিকশায় প্রীতির বাবা দেখে ফেলে ।প্রীতি ভয় এ একদম কথা বলে না সেদিন ফাহিম এর সাথে কথা ই বলেনি ।বাসায় কি হবে সেই চিন্তায় তার কিছুই ভালো লাগছে না ।তার বাবা আজকে তাকে মেরেই ফেলবে এটা নিশ্চিত ।সন্ধা হয় ফাহিম তাকে অনেক বুঝিয়ে বাসায় পৌছে দেয় ।বাসায় যাওয়ার সময় তার হাত পা ভয়ে কাপছিলো ।বাসায় যেয়ে সে তার রুমে চুপচাপ বসে ছিলো হঠাৎ তার বাবা তাকে ডাক দিলো ।প্রীতি কোনো রকম স্বাভাবিক হয়ে তার বাবার সামনে গেলো ।প্রীতি বসার সাথে সাথেই তার বাবা বলে উঠলো,,,

–তোমার বিয়ে ঠিক করেছি,,আমার অফিসের এক কলিগ এর ছেলে ।সরকারি চাকরি করে,,আমার মনে হয় না তোমার এতে কোনো অমত আছে,,।তুমি কি বলো,,,?(প্রীতির বাবা)
–বাবা ,একটা কথা বলি কিছু মনে করো না ।আমি একজনকে পছন্দ করি,,(প্রীতি)
–নামি কি ? কি করে সে ?(প্রীতির বাবা)
–ফাহিম,,,অনার্স শেষ করেছে ।চাকরি খুজছে,,,হয়ে যাবে কিছু দিন এর মাঝেই ।(প্রীতি)
–সরকারি চাকরি ?এতো সহজ না ?

এমন কত অনার্স পাশ পরে আছে ।এসব ছেড়ে দাও ,,,তোমার জন্য যে ছেলে ঠিক করেছি সে অনেক ভালো স্মার্ট ।তুমি তার সাথে অনেক ভালো,সুখেই থাকবে,,।তোমাকে ভাবার সময় দিলাম একটু পড়ে আমাকে জানিয়ো,,,(প্রীতির বাবা) প্রীতি কোনো কথা বাড়ায়নি ,সে একদম চুপচাপ বসেছিলো ।কি করবে কিছু ই বুজতে পারছিলো না ।তাই সে ফাহিম কে কল দিলো ।অনেকক্ষন কল হওয়ার পর রিসিভ করতেই,,,

–হ্যালো,,ফাহিম,বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে ।ছেলে সরকারি একটা চাকরি করে ,দেখতেও নাকি অনেক ভালো ।(প্রীতি)

–ছেলের গুনাগুন শোনাতে কল দিয়েছো নাকি ?বিয়ে যে ঠিক হবে সেটা তো আগেই বলেছিলাম ।এখন নাটক এর মতো তুমি একটা সরকারি চাকরিজীবি ছেলে কে বিয়ে করে সুখী হও ।এর বাইরে আমার কোনো কিছুই করার নেই,,,(ফাহিম)

–তোমাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো ?(প্রীতি)
–কত মানুষ ই তো চলে যায় ।কেউ তো আর কষ্টে থাকে না ।আর তোমরা মেয়েরা সরকারিজীবি পেলে সব কষ্ট ভুলে যাওয়া কোনো ব্যাপার ই না,,,
–এভাবে কথা বলছো কেনো ?কালকেই তুমি আমার বাবাকে সব কিছু বলবে ,,

কোনো কথার উত্তর এর অপেক্ষা না করেই কল কেটে দেয় প্রীতি ।রাত কখন শেষ হবে এটাই ভেবে পাচ্ছে না ফাহিম ।সকালে ফাহিম প্রীতির বাসায় যায় ।তার বাবা বাসায় ই ছিলো ।তার বাবা তাকে বসতে বলে চা তে চুমুক দিতে দিতে বললো,,,

–বুঝলে বাবা,আমার মেয়েকে আমি সুখী দেখতে চাই ,,।সরকারি চাকরি করে ছেলে ,,আমার মেয়েকে অনেক ভালো রাখবে ,,(প্রীতির বাবা)

–আমিও তো ভালো রাখতে পারবো ।(ফাহিম)
–তর্কে যাবো না ।একটা কোম্পানিতে বিশ হাজার টাকার চাকরি করো ,,,সুখে রাখা কি মুখের কথা নাকি ?এমন কত দেখেছি,,,,।তমি বরং অন্য কিছু ভাবো,,(প্রীতির বাবা) ফাহিম আর কিছুই বলতে পারে নি ।যখন ই ভাবছিলো উঠে যাবে তখন ই আবার প্রীতির বাবা বলে উঠলো,,,

–ছয় মাসের মধ্যে যদি একটা ভালো সরকারি চাকরি করতে পারো তাহলে আমি তোমার সাথেই মেয়ে বিয়ে দিবো ।তা না হলে বিয়ে দিবো না,,,এটাই শেষ কথা আমার,,,(প্রীতির বাবা) এই কথা বলেই উনি উনার রুমে চলে গেলেন ।ফাহিম চিন্তা করতে করতে বেরিয়ে গেলো ।ফাহিম সব কিছু প্রীতিকে খুলে বলে ।প্রীতির এখন কি করা উচিৎ সে ভেবেই পাচ্ছে না ।তখন ই ফাহিম বলে উঠলো,,,

–ছয় মাস অনেক সময় ,তুমি নিজেকে শক্ত করো ।আমাকে ভুলার চেষ্টা করো একদিন ঠিক ই পারবে,,,।শুধু তুমি আমি না অনেক মানুষের ই এমন হয় ।তুমি ভালো থাকো এটাই আমি চাই,,,,,(ফাহিম) প্রীতি অনবরতই কাদতে থাকে ।ফাহিম কোনো কথা না বলেই সেখান থেকে উঠে যায়।প্রীতি অনেক বার ডেকেছে কিন্তু ফাহিম ফিরেও তাকায়নি ।এরপর দীর্ঘ ছয় মাস পর ই প্রীতির বিয়ে ঠিক হয় ।প্রীতি সারাদিন ই অনবরত কান্না করে ।অন্যদিকে ফাহিমের সব যোগাযোগ বন্ধ ।প্রীতির বিয়ে ঘনিয়ে আসে । ছয় মাস পর কালকে প্রীতির বিয়ে ।চারদিকে আনন্দ আর উল্লাস এর ভিতর দিয়েই ধীর পায়ে হেটে আসে ফাহিম ।প্রীতির বাবা তাকে দেখেই কাছে ডাকে,,,

–তা বাবা কি খবর তোমার ?(প্রীতির বাবা)
–জ্বী,ভালো,,,আমি পারিনি আর,,(ফাহিম)
–পারোনি তো কি হয়েছে ?কালকে প্রীতির বিয়ে ,

সেটা না হয় খেয়ে যেয়ো ।আমার একটা মাত্র মেয়ে অনেক  ভালোবাসি তাকে সব সময় ই খুশি দেখতে চাই,,,(প্রীতির বাবা) ফাহিম কোনো কথা না বলেই চলে যায় ।প্রীতি তার কোনো এক বান্ধুবির কাছে শোনেছে যে ফাহিম এসেছে কিন্তু সে দেখা না করেই কেনো চলে গেলো ?সে বুঝতে পারলো তার এই বিয়ে ঠেকাবার ক্ষমতা নাই ।সকাল হলো ,সবাই বিয়েতে নানা রকম সেজেছে ।বিয়ের আসরে যখন প্রীতিকে সাজিয়ে আনা হলো ,তখন তার বাবা তাকে বললো,,,

–তোর সুখের জন্যই এসব করেছি,,তুই অনেক ভালো থাকবি ।(প্রীতির বাবা)
–হ্যা,আমি তোমাদের কথা রাখতে পেরেছি ।আমি অনেক ভালো থাকবো,,(প্রীতি)

এই কথা বলেই কান্না করে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ।ফাহিম আজকে নীল একটা পান্জাবি পড়ে এসেছে ।একটা আনকমন কালার বলা ই যায় ।বিয়ের যখন কিছুক্ষন বাকি তখন ফাহিম টেবিলের এক কোনায় বসে আছে ।হঠাৎ প্রীতির বাবা তাকে ডাক দিলো ।সে যাওয়া মাত্রই ফাহিমকে হাত ধরে টেনে জামাই এর আসনে বসালো ।ফাহিম কিছু ই বুঝতে পারলো না ।হ্যা,ফাহিম আর প্রীতির ই বিয়ে হয়েছে ।তাদের দুজনের কেউ ই ভাবতে পারেনি এমনটা হবে ।প্রীতির বাবা কেনো এই বিয়েটা দিলো সেটাও বুঝতে পারছিলো না প্রীতি ও ফাহিম ।যখন ফাহিম বিয়ে করে প্রীতিকে বাসায় নিয়ে আসলো সবাই অবাক হয়েছিলো ।বাসর ঘরে দুজনেই বসে আছে ,হঠাৎ ই ফাহিমের ফোনে প্রীতির বাবার কল এলো,রিসিভ করতেই,,

–হ্যা,ফাহিম প্রীতিকে একটু দাও তো,,,(প্রীতির বাবা)
–হ্যা,বাবা বলো,,(প্রীতি)
–আমি তো তোকে জোড় করে বিয়ে দিতে পারবো না ।

তুই কোথায় ভালো থাকবি সেটা তো তুই ই ভালো জানিস ।আর ফাহিম তো ভালো ছেলে ।তা না হলে সে পারেনি ঠিক ই তবুও তোর কাছে এসেছে ।আমি জানি ফাহিম তোকে ভালো রাখবে ।আমার বিশ্বাস ছিলো তুই অঘঠন কিছু করবি না ।সেদিন ফোন করে যখন ফাহিমকে বলছিলি ,আমরা ই তোর প্রথম ভালোবাসা আর তারপর ফাহিম ।আমি সত্তি তোকে সুখী দেখতে চাই,,তোরা অনেক ভালো থাকবি ।তোর মা তো ফাহিম কে মানতে ই চাইছে না,ফাহিম এর ই মন জয় করতে হবে তার ।তোদের জীবন সুখী হোক এই দোয়া করি,,,(প্রীতির বাবা) এই কথা বলেই কল কেটে দেয় ।প্রীতি অনবরত কাদঁছে আর বলছে ,”অনেক ভালোবাসি বাবা তোমাকে,,” ।সুন্দর সব দিন ই পার হচ্ছিলো ।প্রীতি জীবনে রান্না করেনি তবুও সে ফাহিমের জন্য রান্না করছে ।বাসা থেকে তাকে ফোন করলে সে শত কষ্টের মাঝেও তার পরিবারকে জানায় সে সুখী আছে ।এক বছরে একবারও যায়নি নিজের বাসায় ।সে এখন ফাহিম এর সংসার এর একজন সদস্য ।তাদের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই ।

আজ প্রীতি আর ফাহিম যাচ্ছে প্রীতির বাসায় ।সাথে অনেক কিছু নিয়েছে ,কারন ফাহিমের একটা সরকারি চাকরি হয়েছে ।এই কথা শোনে পরিবারের সবাই খুশি হলো ।এখন প্রীতির মা ও তাকে মেনে নিয়েছে ।প্রীতি তার জীবনের সবটুকু ভালোবাসা ই দিয়েছে ।এখন তারা কত সুখেই না আছে,,,। হঠাৎ মেয়ের চিৎকারে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে গেলো ।যেয়ে দেখে তার মেয়ে ফাহিম এর চুল এ ঝুটি বানিয়েছে ।এটা দেখে ফাহিম এই যে না করছে তবুও কথা শোনছে না ।প্রীতি মিটমিট হাসে আর ভাবে এই সুখ টা যেনো আজীবন থাকে ।তখন ই প্রীতির মেয়ে তাসফিয়া বলে উঠলো,,,

–আম্মু,আব্বুকে গোসল কলাবাম,,,
–আচ্ছা ফাহিম,তোমাকে কত দিন বলছি যে মেয়েক এমন ভাষা শিখিয়ো না তো ।ময়মনসিংহের এই ভাষা থেকে পরে এ ভাষাই শিখে ফেলবে শুদ্ব করে কথা বলতে পারবে না,,,(প্রীতি)
–আরে পারবো,,(ফাহিম)

এই কথা বলেই ফাহিম প্রীতিকে হাত ধরে এক টান দিয়ে তার কাছে নিয়ে এসে বললো,তোমাকে অনেক ভালোবাসি ।সামনে থাকা তাসফিয়ার সদ্য কথা ফোটা গলায় সেও বলে উঠে,,

–ওয়াও কি সুন্দল ,আমিও ভালোপাসি,,

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত