মধু চন্দ্রিমা

মধু চন্দ্রিমা

গত বছর ঈদের কেনাকাটা করতে যশোর কালেক্টরেট পার্কের ভিতর থেকে মার্কেটর দিকে যাচ্ছিলাম।যেতে যেতে হঠাৎই দেখি কোর্টের ভিতর থেকে এক ছেলে এক মেয়েকে হাত ধরে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে আসছে।মেয়েটা বেশ সুন্দরী,নজর কারার মত।পোশাক পরিচ্ছেদও ছিল বাহারী।মেয়েটার ভাব ভঙ্গি দেখে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিল,মেয়েটা ছেলেটার সাথে যেতে রাজি নয়।এক পর্যায়ে ছেলেটা মেয়েটার গালে কষিয়ে এক চড় মারে।হাত ধরে জোর করে টেনে হিচড়ে কোর্টের সিঁড়ি বেয়ে মেয়ে নিয়ে যায়।যেতে যেতে বলে,,

-চল থানায় চল।আজ তোকে আমি পুলিশে দেবো। ছেলেটার এমন কথা শুনে কৌতুহল বেড়ে গেল,জানার ইচ্ছা হলো।আসলে ব্যাপার টা কি।ওদের সাথে আরো একটা মেয়ে ছিল।হয়ত মেয়েটার বান্ধবি বা বোন কিছু হবে।ইতিমধ্যে তাকে আবার বলতে শুনলাম,,

-এই ভাইয়া,নিলার হাত ছাড়েন।নিলাকে নিয়ে যাওয়ার আগে প্রমান দেখান যে ও আপনার বউ। এই কথা শুনে নিলা নামের মেয়েটা বলে উঠলো,,

-আমি এনার বউ না,বউ ছিলাম।এখন আর নেই।

এবার এদের দুজনার কথা শুনে কৌতুহলের পরিমান আরো বেশি বেড়ে গেল।শুধু আমি না,পুরো এলাকার মানুষ একসাথে জড়ো হয়ে কৌতুহল নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।বোঝার চেষ্টা করছে আসল কাহিনী কি।মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় ভীর জমে গেল। ছেলেটা মেয়েটাকে হাত ধরে টানতে টানতে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আমিও পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখার কৌতুহল নিয়ে তাদের পিছু নিলাম।শুধু আমি না,উপস্থিত সব মানুষই তাদের পিছনে পিছনে হাটা শুরু করলো।যতই সামনের দিকে যাচ্ছি ততই মেয়েটা কন্ঠে শুনতে পাচ্ছি,,

-তুই ছেড়ে দে আমাকে,আমি তোর বউ না, বউ ছিলাম।এখন আর নাই। মেয়েটা যতবার বলে,ছেলেটা ততবার কষিয়ে মেয়েটার গালে ঠাস ঠাস চড় মারে। কিছুদুর গিয়ে ওরা দাড়িয়ে যায়।ছেলেটা মেয়েটাকে বলে,,

-তুই আমার বউ না??আচ্ছা লাগা তোর মায়ের কাছে ফোন।তোর মা কি বলে দেখ।তুই আমার চার বছরের বিয়া করা বউ।

–বউ ছিলাম,এখন আর নাই।আর এসব বিষয়ে আমি আমার মাকে টানতে পারব না। এই নিয়ে ওদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে। ইতিমধ্যে এক মুরব্বি তাদের ভিতরে ঢুকে জানতে চাইলেন,,

-কি ব্যাপার।কি হইছে এখানে।স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া হলে,বাড়ি গিয়ে করো।পথে ঘাটে কি শুরু করছো। মুরব্বির কথা শুনে মেয়েটা বলে উঠলো,,
-কিসের স্বামী।উনি আমার স্বামী না।

ছেলেটা এই কথা শুনে রেগে গিয়ে আবারও এক চড় দিলো মেয়ের গালে।চড় দিয়ে নিজেই কান্না করতে করতে বলতে শুরু করলো,,

-শোনেন আপ্নারা।ও আমার চার বছরের বিয়া করা বউ।ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম।কিন্তু কে জানতো,ও আমাকে না আমার টাকাকে ভালবাসতো।গত চার বছর ধরে আমাকে ভেঙে খেয়ে নিঃস্ব করে এখন আমি কে আমাকে চিনেনা।আমাদের যদি ডিভোর্স হয়ে যেত তাহলে সহজ ছিল বিষয় টা,কিন্তু ও বর্তমানেও আমার বিয়া করা বউ।আমি যখন নিঃস্ব তখন ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।বিশ্বাস না হলে ওর মায়ের কাছে ফোন দিচ্ছি তার কাছ থেকে শুনেন।আমাকে ছেড়ে চলে গেলে ওর মায়ের কাছেও জায়গা হয় না ওর।কোথায় কি থাকে জানিনা,যোগাযোগ করতে চাইলে যোগাযোগ রাখেনা।শুধু এটুকু জানি বড়লোক বাপের ছেলেদের সাথে প্রেমের নামে হষ্টিনষ্টি করে বেড়ায়।এই যে আজ ওরে আমি হাতেনাতে ধরেছি প্রমান সহ,কোন একটা ছেলের সাথে হষ্টিনষ্টি করতে আসছিলো পার্কে।আমি যখন ধরে ফেল্লাম,ছেলেটা দৌড়ে পালিয়ে গেল। ছেলেটার কথা শুনে আমার সবাই-ই থ মেরে গেলাম।এমনও কি বউ হয়।অথচ মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে মনে হয় কিছু জানেনা,বোঝেনা,নিশ্পাপ।মেয়েটাও আবার কান্না করে আর বলে,,,

-যা বলছে সব মিথ্যা কথা।আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।আমি এনার বউ নাই এখন আর।
আবার সাথের মেয়েটা বলছে,,

-আপনি ওর হাত ছাড়েন তো,নিলা বলছে তো আপনি ওর স্বামী নন।আর কিছু করার আগে যান প্রমান নিয়ে আসেন যে নিলা আপনার বউ।

এদের এসব কথোপকথন শুনে কার কথা বিশ্বাস করবো বুঝতে পারছিনা।পুরো বিষয়টা আরো ঘোলাটে হয়ে গেল।চারপাশে আবার মানুষের কান ফুসফুস চলছে।আসল রহস্য তো তখনই উদঘাটন হলো যখন দেখলাম সামনের দিক থেকে দুটো বাইকে করে চার পাশটা ছেলে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। আসল রহস্য হলো ছেলেটার কথাটাই ঠিক।ধরা খাওয়ার পরে মেয়েটার প্রেমিক পালিয়ে গিয়ে দলবল জোগাড় করে নিয়ে আসছে ছেলেটাকে ধাওয়া করতে।কিন্তু এই ছেলেটার তেজ দেখে কে।সে নিজে একাই একশো।মেয়েটার প্রেমিক সামনে আসতেই কলার ধরে বলল,,

-পরের বউয়ের সাথে নষ্টামি করে বেড়াস,তোর সাহস তো কম না। আর ঠিক তখনই প্রেমিকের সাথে যত পোলাপান ছিল,সবাই তেড়ে এসে বলে,,

-আরে মিয়া,নিলা যদি আপনার বিয়া করা বউ হয় তবে নিজের বউকে সামলে নিয়ে যান।পরের ছেলের কলারে হাত দিছেন ক্যান।ছাড়েন ফুয়াদ রে। এই বলে ছেলে পেলে ফুয়াদের কলার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো।ছেলে গুলোর সাথে আশেপাশের মানুষদেরও বলতে শুনলাম,,

-ঠিকই তো,তার বিয়া করা বউ যদি নস্টামি করতে পারে তবে পরের ছেলের দোষ কোথায়।নিজের বউ নিজে সামলাক,পরের ছেলের কলার ধরবে ক্যান। পরিস্থিতি মোটামুটি কন্ট্রোলে।ঠিক তখনই ফুয়াদ নিলার হাত ধরে বলে,,,

-নিলা তো বলেই দিছে ও আপনার বউ না। বর্তমানে ও আমার প্রেমিকা।সুতরাং নিলা এখন আমার সাথেই যাবে। এই শুনে নিলা তার বরের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে ফুয়াদের হাত ধরে বলল,,,

-হ্যা আপনি আমার বর না এখন।আমি ফুয়াদের সাথেই যাবো। ফুয়াদ নিলার কথা শুনে নিলার বর তো এবার আউট অফ কন্ট্রোল।রেগে গিয়ে দুই হাত দিয়ে দুই চড়।একটা নিলার গালে আরেকটা ফুয়াদের গালে। আর ফুয়াদের গালে চড় মারার কারনে পরিস্থিতি এবার নিলার বরের বিপরীতে চলে গেল।আশেপাশের সব লোক বলে উঠল এই কাজ করা ঠিক হয়নি,পরের ছেলের কি দোষ,নিজের বউই তো ঠিক নাই।ফুয়াদের সাথে যত ছেলে ছিল সবাই এবার রেগে গিয়ে নিলার বরকে মার শুরু করলো।।মারে আর বলে,,,

-তুই ফুয়াদের গায়ে কেন হাত দিলি।

নিলার বরও কম না,প্যান্টের পকেট থেকে লোহার চেইন জাতীয় কি যেন একটা বের করে পাল্টা মার শুরু করলো।
মারামারি চলছে,,,,সেই ফাঁকে সবার সামনে দিয়ে ফুয়াদ নিলাকে বাইকে করে নিয়ে উধাও।নিলার বর হা করে তাকিয়ে আছে।সাথে আমরা সবাই ও।কি করে কি হলো বুঝলাম না।ছেলেগুলা নিলার বরকে মারছে,নিলার বর চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো ব্যাথাই যেন তাকে স্পর্শ করছেনা।ছেলেটাকে মেরে রক্তাক্ত করলো ওরা।কেউ কোনো প্রতিবাদ করলো না।কাউকে আবার বলতে শুনলাম শহুরে ব্যাপার কার বিষয়ে কে নাক গলাবে।ফেসে গেলে তখন আবার ঝামেলা। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি কন্ট্রোলে নিয়ে আসলো।ছেলে গুলো চলে গেল।হতভাগা নিলার বরটা রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু লোকজন ছেলেটাকে নিয়ে হাসপাতালের দিক। রওনা দেয়।তাকিয়ে ছিলাম যতদুর চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম। আসলে রক্তাক্ত হয়েও ছেলেটা ব্যথা পাবে কি করে।ছেলেটা তো আগে থেকেই ব্যথিত।তাই-ই হয়ত কোনো ব্যাথা তাকে স্পর্শ করেনি।

তবে এই ঘটনা থেকে একটা বিষয়ে ক্লিয়ার হলাম।লোকে বলে ঘরের বউ লক্ষী হয়,কিন্তু না কিছু কিছু বউ অলক্ষীও হয়।বউরা নাকি স্বামীর সেবা ছাড়া আর কিছুই চায় না।কিন্তু না,এমনও কিছু বউ আছে যাদের টাকা ছাড়া কিছুই চাইনা।স্বামী চাহিদা মিটাতে পারলে তো ভালো,তা হলে লিপ্ত হয় নষ্টামিতে। আর যেসব বউদের মাঝে এমন চরিত্র বিরাজমান,তারা কখনও কারো বউ-ই হতে পারেনা।এক কথায় তারা ডাইনি।তারা নারী হয়ে জন্ম নিলেও প্রকৃত নারী হতে পারিনি।তারা নারী জাতির কলঙ্ক।

আর এসব নারী জাতির কলঙ্ক কিছু নারী নামক ডাইনিদের জন্য আজ পুরো নারী জাতি কটুক্তির স্বীকার হয়।যেমন গু খায় সব মাছে নাম পরে পাঙাস মাছের।ঠিক তেমনই এক নারী কুকর্ম করলে আজকাল সব নারীদের ইঙ্গিত করে বলা হয় সব নারী জাতই খারাপ।আদৌ কি তাই?উহুম মোটেও না।নারী জাত মায়ের জাত।আর কোনো মা ই কোনো দিন খারাপ হয় না।পৃথিবীতেভাল খারাপ দুই-ই আছে।সুতরাং যে নারী কুকর্ম করে বেড়ায় শুধু মাত্র তাকেই ইঙ্গিতে করে বলতে হবে,পুরো জাতিকে নয়।তবে হ্যা এটা সত্য,,,বর্তমানের কিছু নারীর কুকর্মের জন্য সত্যিই আজ নারী জাতি লজ্জিত।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত