এক ফালি চাঁদ

এক ফালি চাঁদ

রাস্তার ডান পাশটা নিয়ে হাঁটছি।হাতে একটা গোল্ড-লিফ,আস্ত সিগারেট টা পুড়ে পুড়ে জলসে যাচ্ছে,মুখে নিতে মন সায় দিচ্ছে না।একটার পর একটা গাড়ি ঝড়ো গতিতে আমার পাশ কেটে চলে যাচ্ছে।কি আজব!চার চাকার একটা গাড়ির উপর মানুষ কতোটা নির্ভরশীল।অথচ এই গাড়িগুলোই মানুষের আবিষ্কার।
.
রাত:১১:৩০ মিনিট।
একটা ব্রিজের এক প্রান্তে দাড়িয়ে অন্ধকার দেখছি।কানে ভেসে আসছে শহরের আরুচিপুর্ন কোলাহল।সবাই নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে।আমার এতো একটা তাড়া নেই।কোথায় যেনো শুনেছিলাম আশাহীন আর স্বপ্নহীন মানুষদের তাড়া থাকে না।
.
ফোনটা কেপে উঠলো,আজকাল তেমন একটা কল আসে না আমার ফোনে।আর আসবেই বা কেন?কয়দিন আগেই তো সিমটা চেঞ্জ করলাম।যাইহোক ফোনটা তুলেই কানে ভেসে আসলো চিরচেনা পরিচিত কন্ঠ।
-হ্যালো!
-শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করছো?(পাখি)
-হুম।(আমি)
-সিমটা চেঞ্জ করার কি বেশিই দরকার ছিলো।
-জানি না।
-আচ্ছা একটা কথা বলবে?
-বলার মতো হলে বলবো?
-আমায় কি এখনো ভালবাসো?
-না।
-মিথ্যা কেন বলছো?
-মিথ্যা বলার কি আছে?আগামীকাল থেকে হয়তো নতুন কাউকে ভালবাসতে হবে।
-শুনে খুব খুশি হলাম।তাছাড়া এখন থেকে নিজের চাপাকান্নাটা একটু হলেও তো কমবে।
-রাখছি।
-আচ্ছা ভালো থেকেো।
-ভালোই থাকবো।
-আচ্ছা তুমি আমায় মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছো তো?
-অনেক আগেই।
কিছু না বলেই ফোনটা রেখে দিলাম।
.
বাসায় ফিরতে হবে।মা হয়তো চিন্তা করছে।
ওহ্ হ্যা পাখির কথায় আসা যাক।৬ মাস আগে পাখির সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটে।এখন প্রায়ই ফোন দেয় আর কান্না করে।পাখিকে হারানোর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছি।মায়ের অবদার রাখতে বিয়েতে রাজি হতেই হলো।তাছাড়া যে স্বার্থপরের মতো চলে গেলো তার জন্য জীবন থমকে রাখার কোনো মানেই হয় না।আগামী কাল আচমকা ভাবেই বিয়ে হতে চললো।যার সাথেই বিয়ে তাকে এখনো দেখি নি।মেয়েও নাকি দেখার প্রয়োজন মনে করে নি।পারিবারিক সিদ্ধান্তই নিজের সিদ্ধান্ত।তার মতে পরিবারের আর কেউ তো পর নয়।এই কথাটাতে যুক্তি খুজছিলাম,শেষ পাই নি।যাই হোক এসব ভেবে কাজ নাই।
.
বিয়ের দিনশেষে-
রাত:১:১০ মিনিট
ছাদে দাঁড়িয়ে আছি,শহরটাকে আজ জন-মানবহীন মনে হচ্ছে।ঘরে একজন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।সর্বশেষ সিগারেট টা শেষ করে নেমে আসলাম,গন্তব্য পরিচিত ঘরের অপরিচিত পরিবেশ।
.
সব রকম পর্বই শেষ করে বসে আছি,একটা অপরিচিত মুখের সামনে।নিশ্চুপ পরিবেশ,নিরবতা বিরাজমান।নিরবতা আমিই ভাঙলাম।
-আপনার নামটা মনে হয় তুহি।
-নিশ্চুপ!
-কিছু কথা বলবো,মনযোগ সহকারে শুনবেন আশা করি।(আমি)
-জ্বি বলুন?
-কথাগুলো বলতে মন সায় দিচ্ছিলো না,কিন্তু মিথ্যা দিয়েই সম্পর্ক গড়ার চেয়ে সত্য দিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করাই শ্রেয়।
-সম্পর্ক গড়তেই তো এতকিছু,নষ্টের কথা কেন বলছেন?
-আসলে কথা গুলো বিয়ের আগেই বলা দরকার ছিলো।কিন্তু সবকিছু যেন খুব তাড়াতাড়িই হয়ে গেলো।
-নিশ্চুপ!
-আমি একজনে ভালবাসতাম,সেই বাসতো কিন্তু ছয়মাস হলো সেই সম্পর্কটার ইতি ঘটেছে।
-তুহি এবার মাথাটা উপরে তুলে একবার তাকালো আমার দিকে,বুঝতে পারলাম,সে এমন কথার শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।কিন্তু আমার কিছু করার নেই বলতেই হবে।
-শুধু তাইই নয়!
-তুহি আবারও মাথা নিচে এবং নিশ্চুপ।
-ফিজিকেল রিলেশান!!
-তুহি দ্বিতীয়বারের মতো আমার দিকে তাকালো,এবার চোখ সরাচ্ছে না।বুঝতে চেষ্টা করছে আমি সত্য বলছি না মিথ্যা বলছি।
-এটাই সত্য!জানি,তুমি এটা মেনে নিতে পারছো না।তবুও ক্ষমা করো।বাকিটা তোমার ইচ্ছা।ঘুমিয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে।
.
ঘুম থেকে উঠে দেখলাম তুহি ঘরে নেই।সারারাত কেঁদেছে মেয়েটা,নিজেকেই অপরাধি মনে হচ্ছে।কোথায় গেলো জানতে ইচ্ছে করছে না,হয়তো ছাদে নয়তো বাড়ান্দায়।
.
আজ বিয়ের ছয় দিন পার হলো,এই ছয়দিনে তুহি অনেকটা শুকিয়ে গেছে,চোখের নিচে কালো বর্ণ ধারন করেছে।একটা টু শব্দ পর্যন্ত করে না মেয়েটো।মাঝরাতেই কানে ভেসে আসে কান্নার শব্দ।এখনো তুহি সব কিছু মেনে নিতে পারে নি।তুহিকে মুক্তি দেওয়া দরকার।কি দরকার একটা জীবন একটা আত্মা ধমিয়ে রাখার।
.
তুহি ঘরে নেই,নিশ্চয় ছাদে।
-তুহি?
-কিছু বলবেন?
-এটা নাও?
-কি এটা?
-ডিবোর্স পেপার।আমার স্বাক্ষর করা আছে।তুমি করে দিলেই হবে।
-ভেবে বলছেন তো?
-হুম।ভেবেই বলছি,তাছাড়া তোমার সামনে আরও অনেক সময় পরে আছে।অল্প অল্প সুখ,অল্প কিছু আশা,সবই তো অপেক্ষা করছে।কি দরকার এখানে পরে থেকে নিজেকে কষ্ট দেওয়া।
-আপনি?
-বাকি জীবন যতদিন বাঁচি সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে যাবো।
-ধন্যবাদ।কাল সকালেই আমি চলে যাচ্ছি।
ডিবোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে ছাদ থেকে চলে গেলো তুহি।আমি আমার মতো শহরটাকে দেখা শুরু করলাম।তুহি চলে গেলে গ্রামের বাড়ি চলে যাবো।
.
ঘুম ভাঙতেই কপালে কারও হাতের স্পর্শ পেলাম।
-তুমি যাও নি?
-যেতেই তো চাচ্ছিলাম,কিন্তু তোমায় এই অবস্থায় রেখে যায় কি করে বলো?
-মানে?
-মানে আমি কোথাও যাচ্ছি না।জানো কবুল বলার সাথেই তো আমি তোমায় ভালবেসে ফেলেছি।তাই এসব শুনে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলাম।
-কিন্তু কাল রাতে তো বলেছিলে চলে যাবে।
-ভয় দেখাচ্ছিলাম,এখন তো দেখি তুমি ভয় পেয়ে জ্বর বাধিয়ে দিলে।
-কি বলছো এসব?
-ঠিকই বলছি।আমি তোমাকে এই কয়দিনে আরও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
-এটা স্বপ্ন কিছুক্ষন পরেই সব শেষ হয়ে যাবে,আমি বুঝে গেছি।হা হা!!
-ওই চুপ!একদম কথা বলবা না।অনেক জ্বর এসেছে তোমার শরীরে তাই আবোল তাবোল বলছো।আমি সব মেনে নিয়েছি।আমি বুঝতে পারছি তুমি এসবের জন্য নিজের বিবেকের কাছে এখনো শাস্তি পাচ্ছো।যার বিবেক জাগ্রত হয়ে যায় তাকে ছেড়ে চলে যাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।আমায় ক্ষমা করো এত কষ্ট দেওয়ার জন্য।
-সত্যিই আজ আমি ভাগ্যবান।
-আমিও।
-কেন?
-তোমার মতো একজন স্বামি পেয়েছি,যে মিথ্যা দিয়ে নয় সত্য দিয়ে ভালবাসতে জানে।
-তাই বুঝি?
-হুম,এখন চুপটি করে শুয়ে থাকো আমি খাবার নিয়ে আসছি।
.
তুহি নিজ হাতে আমায় খাইয়ে দিচ্ছে,আমি অপলক দৃষ্টিতে দেখছি।
এক টুকরো স্বর্গের সুখ আমার ঘরে।এক ফালি চাঁদ আমার ঘরে।এ যেন স্বপ্নের মতো।কিছু কিছু মুহুর্তই বুঝি স্বপ্নের মতোই হয়।
……………………………….সমাপ্ত…………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত