গার্লফ্রেন্ড সমাচার

গার্লফ্রেন্ড সমাচার

বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে আম্মা পান্তা ভাত দিয়েছে। আম্মার এমন ধোকা খেয়ে ডিপ্রেশনে পরে মুড়ির ঠোঙ্গা নিয়ে বটগাছে বসে আছি। কুটকুট করে মুড়ি খাচ্ছি। বটগাছের উপরে বসে মুড়ি না খেলে ডিপ্রেশন কমেনা। ঠিক তখন-ই আমার গার্লফ্রেন্ড মারিয়ার ফোন। রিসিভ করতেই মারিয়া বলল….

–কি করো বাবু?
-বটগাছের উপরে মুড়ির ঠোঙ্গা নিয়ে বসে আছি।
–মানে?
-মুড়ি খাচ্ছি, খাবা?
–দেখো ফাইজলামি করবানা বলে দিলাম।
-আরে সত্যিই আমি বটগাছের উপরে বসে মুড়ি খাচ্ছি।
–আরেকবার ফাইজলামি করলে তোর কানের নিচে মারুম হারামি।

নাহ সত্যি কইলেও দেখি বিশ্বাস করেনা। এর লাইগাই মানুষ বলে সত্য কথার ভাত নাই। আমার ভাত না থাকলেও মুড়ি সহ ঠোঙ্গা আছে। আমি মারিয়াকে ভিডিও কল দিলাম। মুড়ি মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বললাম…..

-এখন বিশ্বাস হয়?
–এই তুমি পাগল নাকি, কিছুইতো বুঝলাম না।
-আরে কিছুনা, এমনিই বসে আছি। মারিয়া ফিক করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলল….
–তুমি পারোও বটে, এই শোনো?
-হুম বলো আমার কুনোব্যাঙ টা।
–বান্দরের মতন ডাল ধরে ঝুলে একটা পিক দাওনা ঝান্ঠুস।
-কিইইইইইইই?

–রাগো কেন বাবু, একটা পিকইতো চাইলাম।
-অসম্ভব, কি বলছো? মাথা ঠিক আছে নাকি?
–দেখো পিক না দিলে কিন্তু আমি রাগ করব হু।
-বাবু বোঝার চেষ্টা করো। এমনে পিক তুলতে গিয়ে যদি পরে যাই।
–আমার ভালোবাসার জোড় থাকতে তুমি কখনো পরবেনা।

মনেমনে বললাম খাচ্চুন্নি আলগা পিড়িতের জায়গা পাওনা। কি করব কিছুই মাথায় আসছেনা। এদিকে মারিয়াও সিরিয়াসলি হয়েছে। কিন্তু পিকচার দিলে ওযে ইজ্জৎের ফেলুদা করবে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। মারিয়া বলল….

–দেখো রাগ হচ্ছে কিন্তু।
-বাবু পাখি, লক্ষ্মী জানু এমন করেনা।
–আমার একটাই কথা পিক না দিলে কথা বলবনা।
-ও গুল্টুসি….
–পিক দিবি কিনা?

কি আর করার উপায়ন্তর না পেয়ে মারিয়াকে বান্দরের মতন ডাল ধরে ঝুলে একটা পিক দিলাম। মারিয়া বলল ‘ওলে গুলুমুলুটা, এত্তগুলা লাপ্পুউউ।’ বলেই ফোন কেঁটে দিলো। আমি ভাবছি কি যে করে আল্লাই জানে। যা ভাবছিলাম তাই হলো। মারিয়া আমার ছবি ইডিট করে গার্লস গ্রুপে পোস্ট দিয়েছে। ক্যাপশনঃ মাই বাবু বানর। ক্যাপশন দেখে শিহরিত। আহাম্মকের দুলাভাই হয়ে গেলাম। ছবিতে শতাধিক হাহা রিয়াক্ট। কমেন্টে আমাকে ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার গ্রামের মতি চাচা তার ফেইক আইডি দিয়ে সেই পোস্টে কমেন্ট করেছে…’এমন বানরকে রোজ দু’বেলা করে কাতুকুতু দেওয়া উচিৎ।’ মারিয়াকে কল দিয়ে রাগারাগি শুরু করলাম। মারিয়া ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল….

–হ্যাঁ আমিতো খারাপই, তোমাকে কষ্ট দেই। তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো পোস্ট দিছি। কই অন্য কারো ছবিতো পোস্ট দেইনি। ভালো থেকো….

মারিয়া কল কেঁটে দিলো। কি মেয়েরে বাবা বাঁশ দিয়ে আবার ন্যাকা কান্না করে। মনচায় ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে জাস্ট ধুয়ে দেই। যা হওয়ার হয়েছে তাই আর রাগ করলাম না। মারিয়াকে কল দিয়ে বললাম যাতে পিকটা ডিলিট করে দেয়। দিলোও তাই, তবে সবাই দেখার পর। মাঝেমাঝে মনে হয় প্রেম না করে যদি রোজ দরজার চিপায় আঙ্গুল রেখে চাপ দিতাম তাও ভালো হতো।

পার্কের বেঞ্চে মারিয়ার আসার অপেক্ষায় বসে আছি। কখন আসবে কে জানে। মেয়ে মানুষযে এত লেট করে কি করে আল্লাই জানে। পার্কের এক বেঞ্চে একটা বাচ্চা মেয়ে বসেবসে চিপস খাচ্ছে। ভাবলাম মেয়েটার সাথে একটু মজা করা দরকার। আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে চিপসের প্যাকেট দেখিয়ে বললাম….

-কি খাও মামুনি।
–দেকচনা, চিপ কাই।

-আমাকে একটা দিবে? অমনি মেয়েটা কান্না শুরু করলো। কিছুই বুজলাম না চিপস চাওয়ার সাথেই কেন কান্না করলো। মেয়েটার কান্না শুনে ওর মা চলে আসলো। মেয়েটা আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো। মহিলাটা বলল….

–কি হয়েছে ভাই, আপনি আমার মেয়েকে কি বলছেন?
-আরে আপু তেমন কিছুইনা, একাএকা ছিলাম ভাবলাম একটু মজা করি।
–হয়েছে হয়েছে থাক ভাই আর বলতে হবেনা। আপনারে দেখলেই কল্লাকাটা মনে হয়, ফাউল লোক একটা।

বলেই মহিলাটি তার মেয়েকে নিয়ে চলে গেলো। বুঝলামনা কোন এঙ্গেলে আমাকে কল্লাকাটা মনে হয়। হায় নারীজাতি! তোমাদের মতন কিছু কুটনিদের টুস করে মারা উচিৎ। মারিয়া আসলো একটু পর এসেই বলল….

–বাবু সরি, দেরি হলো।
-দেরিতো প্রতিদিনই হয়।
–আরে আজকে তোমায় নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখছি বাবু। আমি খুশীতে বাক-বাকুম অবস্থা। আহারে! অবশেষে মারিয়া আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। বললাম….
–কি দেখছো?
-না মানে দেখছি তুমি সবুজ রঙের লুঙ্গী, সবুজ শার্ট, সবুজ টুপি, সবুজ চশমা পরে আমার সাথে ঘুরছো।
–হুর এটা কোন স্বপ্ন হলো? এমন স্বপ্নের মায়রে বাপ।
-জানো আমি ভাবছি আজকে তোমার সাথে ওভাবে ঘুরব।

–মানে? (ভ্রু কুঁচকে বললাম)
-প্লিজ বাবু এমন করেনা, আমার খুব ইচ্ছে স্বপ্ন পুরণ করব। আর তোমাকে বডিবিল্ডারের মতন লাগবে।
–দেখো এটা বাড়াবাড়ি হবে।
-জানিনা কিচ্ছু আমি, আজকে আমি তোমাকে শপিং করিয়ে দিব চলো।
–কাহিনী কি? আজকে তুমি শপিং করিয়ে দিবা মানে?
-হ্যাঁ সবুজ রঙের লুঙ্গী, সবুজ শার্ট, সবুজ টুপি, সবুজ চশমা আমিই কিনে দিব।

মনেমনে ভাবলাম সবইতো ওর তাহলে সমস্যা কই। আমারতো আর নিজের কিনতে হচ্ছে না। বুক ফুলিয়ে বললাম, ‘তাহলে চলো, এমন হাজার স্বপ্নও পুরণ করতে আমার আপত্তি নেই।’ মারিয়ার সাথে শপিং করতে এসেছি। মারিয়া আমাকে সবুজ রঙের লুঙ্গী, সবুজ শার্ট, সবুজ টুপি, সবুজ চশমা কিনে দিলো। বলল….

-যাও এগুলো পরে আসো।
–কিইইই এখনি।
-হ্যাঁ এখনি।

কি আর করার, সবুজ রঙের লুঙ্গী, সবুজ শার্ট, সবুজ টুপি, সবুজ চশমা নিয়ে জেন্টস কর্ণারে গেলাম। সবকিছু পরলাম। আয়নার সামনে গিয়ে মাগো বলে চিৎকার দিলাম। মারিয়া বলছিলো আমাকে বডিবিল্ডারের মতন লাগবে কিন্তু আয়নায় নিজেকে তেলিসামাদের মতন লাগছে। শপিংমল থেকে বের হয়ে আসলাম সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মারিয়াতো সেই খুশি। সারাদিন অনেক ঘুরলাম, সেলফি তুললাম। কিন্তু আজকের সব বাজেট মারিয়া দিছে। নিজেকে স্বার্থক প্রেমিক মনে হছে। সন্ধায় ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আম্মার চিৎকার চেঁচামিচিতে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। চোখ ডলতে ডলতে বললাম….

–কি হয়েছে? আম্মা রাগে কিড়মিড় করতে করতে বলল….
-তুই এখনি বেড়িয়ে যা বাসা থেকে। এ ঘরে তোর জায়গা নেই।
–কি করলাম?

আম্মা আমার কথার উত্তর না দিয়ে উনার ফোন দেখালো। যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা। সবুজ রঙের লুঙ্গী, সবুজ শার্ট, সবুজ টুপি, সবুজ চশমা পরে মারিয়ার সাথে সেলফি উঠছিলাম। আর মারিয়া সেই সুযোগে আমাদের ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে, সাথে ক্যাপশন দিয়েছেঃ’ মি এন্ড মাই হারপিকের ডিব্বা।’ হারামজাদি করছে কিরে আমাকে হারপিক বলছে, ইজ্জৎ শেষ৷ কমেন্ট দেখলাম। সবগুলোই বাঁশমার্কা। আম্মার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আম্মা রাগে ফুঁসছে। আর কি জানি খুঁজছে। আমি আবুল মার্কা হাসি দিয়ে আম্মাকে বললাম….

–এগ্লা ইডিট করা যায়। আর কি খুঁজছ?
-লাঠি, তুই বাসা থেকে বের হ, এ বাসায় কোন হারপিকের জায়গা নাই। গেট আউট।
–বাব্বাহহহ নানির বেডি ইংলিশও মারে। আইস্যকর

আম্মা লাঠি নিয়ে তেড়ে আসলো। লক্ষণ ভালো না দেখে টুপ করে কেঁটে পরলাম। কিন্তু মারিয়ার অপমান সহ্য করা যায় না। এমন ভালোবাসার গুল্লি মারি। মারিয়াকে ব্লক করে দিলাম, ফোন করে টুটটুট গালি দিলাম। রিলেশন ব্রেকাপ। সবছেড়ে মুড়ির ঠোঙ্গা নিয়ে বটগাছে বসে থাকব। চিল ব্রো..!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত