সন্দেহ

সন্দেহ

-“এই তুমি আজকে অফিস শেষে কোথায় গেছিলে।আর আসতে এতো দেরি করেছো কেনো।আগে তো দেরি করতে না”। (মেঘলা)
-“আসার সময় এক বন্ধুর সাথে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে”।(তুষার)
-“আমি সব বুঝি,সত্যি করে বলো কোথায় গিয়েছিলে”।(মেঘলা)
-“বললাম না কোথায় গিয়েছিলাম।আর কি বলবো।সারাদিন অফিস করে এসে তোমার উল্টাপাল্টা কথা শুনার সময় বা ইচ্ছে আমার নেই”।(তুষার)
-“আমি উল্টাপাল্টা কথা বলি তাই না।আর তুমি যা করো তা ঠিক তাই না।আজকে যার সাথে তুমি রিক্সায় ঘুরছিলে কে সে। বলো আমি এইটাও মিথ্যা বলছি”।(মেঘলা)
-“দেখো তোমাকে আগেই বলেছি আমি আমার বন্ধু আর কিছু না।আর অযথা সন্দেহ করবে না”।(তুষার)
-“আমি অযথা সন্দেহ করি ভালো।তুমি অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরতে পারবা আর আমি কিছু বলতে পারবো না।

তা কবে বিয়ে করছো নাকি বিয়ে করবা।তুমি আমাকে বলে দিও আমি আগে থেকেই সরে যাবো কেমন”।(মেঘলা)।
-“দেখো মেঘলা তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না।তোমাকে কে কি বলেছে আমি জানি না আর জানতে চাবো না।তবে
এতোটুকু বলবো আমাকে বিশ্বাস করতে পারো”।(তুষার)

“আর কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে সিগারেট টানতে থাকলাম।কিছু দিন ধরে মেঘলা এমন সব ব্যবহার করছে যা সহ্য করা অনেক কষ্টকর
তা আমি জানি।আগে এমন ছিলো হঠাৎ কি হলো কে জানে।আমাকে বিশ্বাস করে না আরো কতো কিছু”।

“আমাদের পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিলো।দুই বছরের বেশি হয়েছে আমাদের বিয়ে হয়েছো।আগের সেই মেঘলা আর এখন কার মেঘলার
মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে”। “যাই হোক এখন বাসায় যেতে হবে। কারন মেঘলা যে ধরনের মেয়ে তাতে আবার কিছু না করে বসে”।
-“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?নিশ্চয়ই সেই মেয়ের কাছে।আমি তো জানি এখন আর আমাকে তোমার ভালো লাগে না।আমাকে বললেই তো

পারতে আমি চলে যেতাম”।(মেঘলা)
-“দেখো মেঘলা এক কথা বার বার ভালো লাগে না।তোমাকে আমি বলেছি না এমন কিছু নেই।আমার খুব ক্ষুধা লাগছে খেতে চলো”।(তুষার)
-“না আমি খাবো না,তুমি খাও যাও। আমার সাথে আর কথা বলবে না”।(মেঘলা)
-“কি বলো তুমি এই গুলি,আমি আবার তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো নাকি।অনেক হইছে এখন চলো তো”।(তুষার)
“তারপর জোর করে খেতে নিয়ে যাই মেঘলাকে।আমি জানি মেঘলা আমাকে অনেক ভালোবাসে তাই এমন করে।আমিও মেঘলাকে
অনেক ভালোবাসি।তাই তো সব কিছু সহ্য করি।কিন্তু মাঝে মাঝে পারি না”। “রাতে ঘুমানোর সময় অনেক বুঝালাম। আমি জানি এখন বুঝবে কিন্তু কিছুক্ষন

পর আবার আগের মতো করবে”। “আসলে আমি এক দিন অফিস থেকে আসার সময় দেখি এক মহিলা বলাটা ঠিক হবে না মেয়ে বললে ভালো হবে কারন বয়স
বেশি না ২৩ কি ২৪ এমন আর সাথে একটা বাচ্ছা।আমি দেখলাম তারা খুব বিপদে পরছে কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না।তাই আমি তাদের
সাহায্য করছিলাম আর মেঘলা তা কিভাবে দেখে তা আমি জানি না। আর এই নিয়েই মেঘলা আমাকে সন্দেহ করে আমি নাকি বিয়ে
করেছি আমার নাকি ছেলে-মেয়ে আছে।এখন সব সময় আমাদের ঝগড়া হয়”।
“মেঘলা ঘুমিয়ে গেছে আমিও ঘুমিয়ে যাই।সকালে আবার অফিসে যেতে হবে”।
-“এই উঠো অফিসে যাবে না”।(মেঘলা)
-“যাবো তো।আর একটু পর উঠি”।(তুষার)
-“আটটা বাজে আর কতো ঘুমাবা”।(মেঘলা)
-“কি আটটা বাজে আগে বলবা না।আজকে
দেরি হয়েই গেলো”।(তুষার)
“তারপর তারাতারি রেডি হয়ে অফিসে চলে যাই।অফিসে বসে ভাবতে থাকি হয় তো সব কিছু আগের মতো হয়ে যাবে এখন।

কারন সকালে মেঘলা আমার সাথে ভালো ভাবে কথ বলেছে।শেষ কবে যে ভালো ভাবে কথা বলেছে আমার ঠিক মনে নেই”।
“এসব ভাবতে ভাবতে মেঘলার ফোন দিলো”।
-“কি করো তুমি”?(মেঘলা)
-“এই তো অফিসে বসে কাজ করছি।তুমি”?(তুষার)
-“তোমার কথা মনে পরছিলো তাই ফোন দিলাম। আচ্ছা আজকে একটু তারাতারি এসো কেমন।
আজকে আমরা বাহিরে ঘুরতে যাবো কেমন। অনেক দিন হলো তো কোথায় যাই না”। (মেঘলা)
-“আচ্ছা আমি তারাতারি আসবো।তুমি রেডি থেকো।আজকে রাতে আমরা বাহিরে খাবো”। (তুষার)
“যাক তাহলে সব কিছু ঠিক হয়ে গেলো। এখন সব কিছু আগের মতো হবে।আর ঝগড়া হবে না”।
“অফিসে কাজ করে শেষ করে বের হতে যাবো এমন সময় স্যার আমাকে তার রুমে যেতে বললো”।
– “স্যার আসতে পারি”।(তুষার)
-“হা!এসো।তোমার তো সব কাজ শেষ। তাই বলছিলাম কি এই কাজটা শেষ করে বাসায় যাও।খুব দরকারি তাই
তোমাকে বললাম।এখন শেষ করতে না পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে”।(স্যার)
-“আচ্ছা স্যার আপনি চিন্তা করবেন না আমি কাজটা শেষ করে তারপর বাসায় যাবো”।(তুষার)
-“আমি জানতাম কাজটা তুমি পারবে তাই তোমাকে দিলাম”।(স্যার)
“কাজ করছিলাম এমন সময় মেঘলা ফোন দিয়েছে।আমি জানি কেনো এখন ফোন দিয়েছে।কিন্তু আমি
এখন ফোন ধরতে পারবো না। কারন তারাতারি কাজ শেষ করে আমাকে বাসায় যেতে হবে।আর
এখন ফোন ধরলে এখন ফোন ধরলে কাজ শেষ করতে আরো সময় লাগবে। তাহলে আর মেঘলা কে নিয়ে
বাহিরে যেতে পারবো না।তাই ফোন কেটে দিচ্ছি”।
“কাজ শেষ এখন বাসায় যাবো। একি নয়টা বাজে আজ আর যাওয়া হবে না।মেঘলা অনেক রেগে আছে জানি।গোলাপ ফুল
নিয়ে যাই তাতে যদি মেঘলার রাগ কমে”।
“বাসায় যেয়ে গেট নক করার সাথে সাথে গেট খুলে দিলো”।
-“এতোক্ষন কোথায় ছিলে।তোমার না আমাকে নিয়ে বাহিরে যাবার কথা ছিলো”।(মেঘলা)
-“অফিস থেকে বের হবো তখন স্যার আবার একটা কাজ দেয় এইটা শেষ করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে।কাল
তোমাকে নিয়ে যাবো।আর এই ফুল গুলি তোমার জন্য।রাগ করে থেকো না”।(তুষার)
-“তোমার কি মনে হয় আমি কিছু বুঝি না তাই না।আর এই ফুল তাকে দেও যাকে নিয়ে এতোক্ষন বাহিরে ছিলে।তুমি এমন
আমি আগে জানতাম না”।(মেঘলা)
-“দেখো তোমাকে আমি অনেক বুঝাইছি আর বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। তোমার যা ভাবার তাই ভাবো।আমি এমন কিছু করিনি”।(তুষার)
-“আরেকটা বিয়ে করতে পারবা আর আমি কিছু বলতে পারবো না।কেনো তুমি এমন করলে।আচ্ছা থাকো তুমি আমি আর তোমার সাথে থাকবো না”।(মেঘলা)
-“আচ্ছা একটা কথা বলি মন দিয়া শুনো। আমি বেতন পেয়ে সব টাকা আমি তোমার হাতে দেই।আর অফিসের ভাড়ার টাকা
তুমি দেও আমাকে।আমার যদি আরেকটা সংসার থাকে তাহলে আমি সেই সংসার কেমনে চালাই,টাকা কোথায় পাই।সব
টাকা তো তোমাকে দেই তাহলে”।(তুষার)
-“তা আমি কিভাবে বলবো তুমি কিভাবে সেই সংসার চালাও।আমি আর কিছু জানতে চাই না।আমি আর তোমার
সাথে সাথে থাকতে পারবো না।তোমার বাবা-মা কেমন সব জেনে আমার সাথে বিয়ে ঠিক করে।আমাকে এভাবে ঠকাতে
পারলো।তোমার মতো একটা খারাপ ছেলের সাথে আমি থাকতে পারবো না”।(মেঘলা)
-“দেখো আমার বাবা-মাকে নিয়ে কথা বলবা না।আর আমি খারাপ ছেলে তাই না,আচ্ছা ঠিক আছে তোমার
থাকতে হবে না।আমি আর তোমাকে রাখবো না।তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।আর তোমাকে দেখিয়ে আমি
আবার বিয়ে করবো ঠিক আছে।অনেক বুঝাইছি তোমাকে আর না।তোমার সব কিছু সহ্য করছি কিছু বলি নাই।আমি
কাল ডিভোর্স পেপার রেডি করছি”।(তুষার)
“আসলে সন্দেহ এমন একটা জিনিষ যা একবার যদি কেউ কে নিয়ে কোন প্রকার সন্দেহ তৈরি হয় তাহলে তার
থেকে কখনো বের হয়ে আসা যায় না”।
“গল্পটি আসলে কাল্পনিক হলেও আমার পরিচিত এক জনের সাথে এমনটা হয়েছে।আমি বুঝতে পারছি
তার মনের অবস্থা।তাই সবাই কে একটা কথা বলছি যে কেউ সন্দেহ করবেন না।আর অন্য কারো কথা
বিশ্বাস করে আপনার কাছের মানুষ কে অবিশ্বাস করবেন না।একটা কথা মনে রাখবেন কেউ কারো
ভালো চাই না।কারো ভালো থাকা কেউ সহ্য করতে পারে না”।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত