পবিত্র একটা মেয়ে

পবিত্র একটা মেয়ে

আজ আমার বিয়ের প্রথম রাত। ভিতরে অজানা একটা ভয় কাজ করছে। কেন করছে সেটা জানি না। হাত পা কাঁপছে, ঘাম দিয়ে ভিতরে একটু অস্বস্তিকর অনুভব করছি। বিয়ের প্রথম রাত বলেই কথা। নতুন একটা মানুষের কাছে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করাই একজন আদর্শ পুরুষের নিদর্শন। মেয়েটার সাথে কি থেকে কি করব, কিভাবে কথা বলব, কি ই বা বলব, এটাই সন্ধ্যার পর থেকে আমাকে সবচেয়ে বেশি বিচলিত করে ফেলছে। এই নিয়ে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারছি না , ঠাট্টা করতে পারে।

ঠিক এই মুহূর্তে বারান্দায় হাঁটা হাঁটি করছি আর ভাবছি ভিতরে গিয়ে মেয়েটার সামনে কিভাবে নিজেকে দাঁড় করাবো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আমার মধ্যে এক চিমটি নরক ঢেলে দিচ্ছে আর সেটা আমাকে যত সময় যাচ্ছে তত খুটে খুটে খাচ্ছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে বিয়েটা করেছিলাম অথচ এখন দেখি উল্টো শেইম আমার মধ্যে চেপে বসে আছে। ভিতরে যাব যাব বলে অনেক্ষণ হলো কিন্তু যাওয়া হচ্ছে না।অবশ্য আমি একটু লাজুক টাইপের ছেলে এটা বলা যায়। খুব সম্ভবত এজন্যই মেয়েটার কাছে যেতে লজ্জা লাগছে। ওর নাম আরিশা। মায়ের মুখ থেকে যতদূর শুনলাম মেয়েটা দেখতে চাঁদের মতো, মাদ্রাসার দাগে পড়াশোনা করেছে এমনকি অত্যন্ত পর্দাশীল। সত্যি বলতে আমি এখনো আরিশাকে দেখিনি, না দেখেই বিয়েটা করেছিলাম। দেখতে কেমন, গায়ের রঙ কেমন সব কিছু আমার চোখের আড়ালে। শুধু আমার মা আর ছোট বোন তৃপ্তির মুখে এতটুকুই শোনেছি মেয়েটা দেখতে যথেষ্ট সুন্দর। তাই না দেখে বিয়েটা করেছি।

ওকে না দেখে বিয়ে করার পিছনেও অবশ্য একটা কারণ আছে। যেই দিন আরিশাকে ওদের বাড়িতে দেখতে যাই সেই দিন আরিশা আমার সামনে আসেনি। ওদের ড্রয়িংরুমে আমি আমার বোন তৃপ্তি মা বাবা সবাই একসাথে বসেছিলাম আরিশাকে দেখার জন্য। অনেক্ষণ বসে থাকার পর খেয়াল করলাম উনারা আরিশাকে আমাদের সামনে আনছেন না। এক যুগ কাটিয়ে দিতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেও শুভ দৃষ্টি দেখতে পারছি না। কারণটা হলো প্রথমত আমরা আরিশাকে দেখতে গেলাম অথচ তারা আরিশাকে নিয়ে আসছে না, দ্বিতীয়ত বাবা অনেক্ষণ যাবৎ আরিশার বাবার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। এটা আমার কাছে মোটেও ভাল লাগছে না।

অনেক আশা নিয়ে আরিশাকে দেখতে আসলাম অথচ তারা আরিশাকে নিয়ে আসা তো দূরের কথা বরং মনে হচ্ছে আরিশার বাবা আমার বাবার সাথে হাসির ফ্যাক্টরি খুলে বসে আছে।তখন ভিতরে একরাশ বিরক্তি কাজ করছিলো। মনে করছে উঠে সোজা বাসার দিকে রওনা হই । এতো বিরক্তিকর অপেক্ষা জিনিসটা সেটা ওই দিনেই বুঝলাম। আমি তৃপ্তিকে ইশারা দিয়ে বললাম, কি হচ্ছে এই সব। তৃপ্তি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল, আমিও বুঝতেছি না। এমন সময় আরিশার মা পর্দার আড়াল থেকে আমার মাকে ডেকে ভিতরে নিয়ে গেল তারপর বলল, “আরিশা তো আপনার ছেলের সামনে বিয়ের আগে দেখা করতে চাইছে না। বলছে আপনার যদি পছন্দ হয় তাহলে ছেলেকে গিয়ে মেয়ে পছন্দ হয়েছে এটা বলতে।

— তার মানে আরিশা বলতে চাচ্ছে আমার মতই ছেলের মত তাই তো ? (আমার মা)
— হ্যা হ্যা এটাই। (আরিশার মা) মা কথা না বাড়িয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
— আচ্ছা ঠিক আছে। কই আপনার মেয়ে আমাকে দেখা.!!!

তারপর উনি মাকে আরিশার রুমে নিয়ে গেলেন। আরিশাকে দেখেই মায়ের ভীষণ পছন্দ হলো এবং সাথে সাথে ডিচাইড করল যেভাবেই হোক আরিশার সাথে আমার বিয়ে দিবেন৷ মা আরিশার সাথে অনেক্ষণ কথা বলে ড্রয়িং রুমে ফিরে এসে তৃপ্তিকে বলল, যা ভিতরে গিয়ে তোর হবু ভাবীকে দেখে আয়। তৃপ্তি আমার পাশ থেকে উঠে ভিতরে চলে গেল। মায়ের মুখে এমন কথা শোনে রীতিমতো হতবাগ হয়ে গেলাম। মায়ের কথা শোনে বুঝলাম মেয়েকে বোধয় এখানে আনবে না। মা আমার পাশে বসল। আমি মাকে আস্তে করে বললাম,

— মেয়েকে এখানে আনবে নাহ…!!! মা মুচকি হেঁসে বলল,
–নাহ মেয়েকে তুই দেখতে পারবি না। মেয়ে একটু পর্দাশীল। তাই আমি দেখে আসলাম।
— মানে কি তার মানে আমি ওকে দেখব না ?? মা আমার পিঠে হাত রেখে বলল,
— আস্তে বল ওরা কেউ শোনবে। মেয়ে দেখতে চাঁদের মতো। ও তোর সাথে বিয়ের আগে দেখা করতে চাইছে না।
— কি বলছো এটা কোন কথা হলো।
— বাবা তুই কিছু মনে করিস না।

তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ মেয়ে যথেষ্ট সুন্দর। আমি এই মেয়ের সাথেই তোর বিয়ে দিব। মায়ের এতো আগ্রহ দেখে বুঝতে পারলাম মেয়ে দেখতো শুনতে খারাপ হবে না। ভালই হবে মনে হয়। এজন্য আমি আর কিছু বলিনি। সব মা ই ছেলের ভালো চায় খারাপ চায় না। কিছুক্ষণ পর তৃপ্তি আরিশাকে দেখে আসল। আসার সময় লক্ষ্য করলাম তৃপ্তির মুখে মৃদু হাসি আর চোখ গুলো বড়সড় করে মায়ের পাশে এসে বসল৷ মা তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে দেখে আসলি। তৃপ্তি আনন্দের সাথে বলল, হুম দেখেছি। ভাইয়া শোন ভাবীকে দেখে আমার পছন্দ হয়েছে। তোর সাথে বেশ মানাবে৷ আমি মুচকি হেসে বললাম, সত্যি তো ??

— হুম সত্যি ভাবী চোখে পড়ার মতো। মা কিছু না বলেই হঠাৎ করে আমার পাশ থেকে ওঠে আবার আরিশার ঘরে গেল। তারপর ওর গালে হাত রেখে জিজ্ঞাস করল,

— আচ্ছা মা আরিশা। আমার ছেলে দেখতে কেমন তোমার এটা জানতে ইচ্ছে করে না।

আরিশা একটু হাসি দিয়ে বলল, যে ছেলে নিজের মায়ের মুখের কথা শোনে আমাকে নিঃসন্দেহে বিয়ে করতে পারবে। সেই ছেলে আর যাই হোক মনের দিকটা খারাপ হতে পারে না। মা আরিশা মুখে এমন উওর শোনে মোটামুটি বিস্মিত হয়ে গেলেন। এই মেয়ে কেমন মা সেটা আন্দাজ করতে পারছে। অতঃপর মা আরিশার কাছ থেকে চলে এসে ওর বাবার সাথে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে চলে আসে। তার এক সপ্তাহের মাথায় আজ আমাদের বিয়েটা হয়। এক কথায় আমি উদ্দীপনার সাথে বিয়েটা শেষ করলাম। যাইহোক, এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। রাত এগারোটা বাজে বারটার মুখোমুখি। ভিতরের লজ্জা মিশ্রিত ভয়টা এখনো কাটেনি।এবার বুকে যতটা পেরেছি সাহস জোগাড় করে রুমের দিকে রওনা হলাম। অমনি দেখি তৃপ্তি আমাদের রুম থেকে বাহির হলো হয়তো আরিশার সাথে আমার গীবত গাইছে আর কিচ্ছু না।

— কিরে ভাইয়া তুই এখনো বারান্দায় ঘুরঘুর করছিস ? লজ্জা লাগে তাই না…..!!!
— কিসের লজ্জা। এখানে লজ্জার কি আছে। এমনি হাঁটাহাঁটি করছি সবাই ঘুমিয়ে পড়ুক তারপর যাব।
— ভাইয়া অলরেডি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তোকে ভাল করেই চিনি তুই কেমন। আমার কাছে কিছু লুকিয়ে লাভ নেই তোর মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যায় তুই যে লজ্জায় বিভোর হয়ে আছিস।
— হ তুই সব জানছ তুই তো গণক। যা এবার ঘুমাতে যাহ !!
— যাচ্ছি। আর ঘুরাঘুরি করিস না এবার যা। ভাবী তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

তৃপ্তি যাওয়ার পর আমি ধীরে ধীরে রুমের দিকে পা বাড়ালাম । দেখি আরিশা বউ সাজে খুপরি মেরে বসে আছে। মাথায় ঘোমটা শুধু হাত গুলো দেখে যাচ্ছে। মেহেদীর সাজে হাত দুটো অন্যরকম লাগছে। আমি আসতে করে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। বুকে হার্টবিট কেবল বেড়েই যাচ্ছে। অনেক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম আমিও কিছু বলছি না আরিশও কিছু বলছে না। এমন সময় আরিশা আস্তে করে বলল,

— আপনি কথা বলছে না কেন ? এই প্রথম আরিশার কথা শোনলাম। অসম্ভব সুন্দর ওর কন্ঠ। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
— কেমন আছেন। আরিশা একটু হাসি দিয়ে বলল,
— হুম ভাল আছি আপনি ?
— হ্যা ভালো।
— আমার কাছে আসতে এতো দেরী করলেন কেনো ?
— হাতে একটু কাজ ছিলো তাই একটু দেরী হলো ।
— নাকি আমার কাছে আসতে লজ্জা লাগছে।

— না তেমন কিছু না।
— ওও তবে তৃপ্তি বলেছে আপনি নাকি ভীতুর ডিম।
— হি হি হি তৃপ্তি এটাও বলেছে আপনাকে।
— বলবে না আপনি আসতে লেট করছেন তাই তৃপ্তিকে আপনার সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম।
— তৃপ্তি আমার নামে আর কি কি বলছিলো। আরিশা একটু রেগে গিয়ে বলল,
— এতো কিছু বলতে পারব না, আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না, আপনি এতো কথা বলেন কেনো….?? আমাকে না দেখে বিয়ে করলেন এখন বিয়ের পরেও দেখবেন না। কেমন পুরুষ আপনি ?

— হুম.. দেখতো তো চাই, বলতে সাহস পাচ্ছি না!!
— আমি আপনার বউ আমাকে দেখতে আবার সাহস লাগে নাকি ??
— তবুও আমার ভিতরে কেমন যেন ভয় লাগছে।

আচমকা আরিশা ওর মাথার উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে নিলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে নিয়ে চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না। এতো সুন্দর আমার বউ। একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

— আপনাকে একটা কথা বলব। ( আরিশা)
— জ্বি বলুন।
— আমি ছোট থেকে পর্দার আড়ালে বড় হয়েছি। কোন বেগানা পুরুষের স্পর্শ আমার শরীরে লাগতে দেইনি এমনকি কখনো কথাও বলিনি। আপনি প্রথম!!

আমি আসলে সব মিলিয়ে প্রিপেয়ার না। তাই আপনি যদি আমাকে কয়েকটা দিন সময় দেন তাহলে ভাল হয়। তবে এর আগে আপনি আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন না। আমি নিজ থেকেই আপনাকে বলব। আরিশার মুখে এমন কথা শোনে যতটুকু বুঝলাম। নতুন পরিবেশে পা রাখছে নতুন জীবন নিয়ে তাই হয়তো ডিসকম্পটেবল ফীল করছে। কয়েকদিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। এজন্য ওর কথায় সম্মতি জানলাম।

— আচ্ছা আপনি যেভাবে বলবেন আমি ওই ভাবে চলব। আপনি বললার আগ পর্যন্ত আমি আপনাকে স্পর্শ করব না।
— আমি জানি এই রাতটা একজন পুরুষের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ একটা রাত। বিয়ের প্রথম তার বলেই কথা। কিন্তু আমি সত্যি বলছি আমি একদম প্রস্তুত নাহ। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

— আরে না কি বলছেন। আমি নিজেও প্রস্তুত না।আমি কিছু মনে করিনি।
— গায়ের পাঞ্জাবিটা এখনো খোলেননি কেন….!!! অনেক রাত হয়েছে আমার খুব ক্লান্ত লাগছে। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি একটু ঘুমাব।
— আচ্ছা আপনি ঘুমিয়ে পড়েন। আমি গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নিচে ঘুমি পড়ব।
— ছিঃ ছিঃ আপনি নিচে ঘুমবেন কেন ? আমার সাথেই ঘুমাবেন।

এটা বলেই আরিশা শুয়ে পড়ল। চোখে মুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। গেঞ্জি গায়ে দিয়ে এসে দেখি আরিশা ঘুমিয়ে পড়ল। আমিও ওর পাশে শুয়ে পড়লাম আর এক দৃষ্টিতে ওর তাকিয়ে রইলাম। আমার ভিতরে তখন কি রকম অনুভূতি কাজ করছে বলে বুঝাতে পারব না। তার কিছুক্ষণ পর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দের ঘুমটা ভাঙ্গল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা পনের। পাশে আরিশা নেই। বালিশ থেকে মাথা উঠানো মাত্রই দেখি আরিশা তাহাজ্জুদতের নামাজ পড়ছে আর খুব কান্না করছে। এতো ভাল একটা মেয়ের সাথে আমি সংসার করব ভাবতেই অবাক লাগছে। এই ফাঁকে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ফজরের আযানের সাথে সাথে উঠে গেলাম নামাজ পড়ার জন্য । খেয়াল করে দেখলাম আরিশা এখনো নামাজের বিছানায় বসে আছে। বুঝতে দেরী রইলা না আরশি আর ঘুমায়নি। এতোক্ষণ নামাজের বিছানায় কাটিয়ে দিল। আমি অজু করে এসে আরিশার পাশে দাঁড়ালাম। ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, — সব সময় পড়েন ?

— হুম আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি।
— আলহামদুলিল্লাহ । তাহলে জান্নাতের আশা করতে পারি তো ? ওর মুখে এমন প্রশ্ন শোনে অবাক হয়ে মাথা নাড়িয়ে, হ্যা সূচক উওর দিলাম। এরপর এক সাথে নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম।
— এই যে শুনছেন বেলা হয়েছে আর কত ঘুমোবেন ?

চোখ খুলে দেখি আরিশা। কাল রাত ওকে যতটুকু দেখেছি আজ দিনের আলোতে আরো ভাল করে দেখতে পারছি। মায়া মায়া চেয়ারা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে ৷ কিন্তু আরিশার বারণ করছে। ও বলার আগ পর্যন্ত আমি ওকে স্পর্শ করবো না।

— অমন করে তাকিয়ে আছেন কেনো…!! এবার উঠুন। এটা বলেই আরিশা একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। উঠে দেখি সবাই নাস্তা করছে, আমিও ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে বসলাম। আরিশা আমার সামনে বসে ছিলো। ওর প্রতি আমি সত্যিই দূর্বল হয়ে পড়ছি। খাওয়ার সময় অনেকবার আড় চোখে তাকালাম। যতো দেখছি ততই ভালো লাগছে। হঠাৎ তৃপ্তি বলে উঠল আর কত দেখবি। ওর এমন কথা শোনে আমি হকচকিয়ে প্রথমে ওর দিকে তাকালাম তারপর আরিশার দিকে তাকালাম দেখি আরিশা মুচকি মুচকি হাসছে। তার মানে আমি যে আরিশার দিকে তাকালাম তৃপ্তির কথা শোনে সে বুঝতে পেরেছে । বাবা মা টের পায়নি বিষয়টা।

মনে করছে তৃপ্তিকে ভাল দেখে একটা চড় মারি। সারাক্ষণ আমার পিছু পিছু পড়ে থাকে।বাসায় ছোট বোন থাকলে এটাই একটা বিরাট সমস্যা। যা করি সাবধানতার সাথেই করি। তবুও ওর চোখে ধরা দিতেই হয়। নাস্তা করে রুমে চলে আসলাম। বিয়ের জন্য অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিলাম এখনো তিনদিন বাকি। ভেবেছিলাম আরিশাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাব। কিন্তু ও যেতে চাইবে না কারণ আরিশা ঘুরাঘুরি চেয়ে পর্দার আড়ালে থাকতে বেশি পছন্দ করে। তবুও একবার জিজ্ঞাস করলাম। নাহ!! যেমনটা ভেবেছিলাম ও যেতে চাচ্ছে না। এর মধ্যে তিনদিন পার হয়ে গেল। এখন থেকে রীতিমতো অফিসে যেতে হচ্ছে সকাল নয়টার দিকে বাসা থেকে বাহির হই ফিরতে ফিরতে রাত আটটা পার হয়। ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছে। আরিশকে ঠিক মতো সময় দিতে পারছি না। মেয়েটা দিন দিন আমার রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে অথচ তাকে স্পর্শ করতে পারছি না।

পরিবারের সবাই তাকে বড্ড বেশি ভালবাসে। রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসলাম আরিশা আমার সামনের চেয়ারে। খাওয়ার সময় হঠাৎ করে নিচ দিয়ে আমার পায়ে কে যেন চিমটি কাটল। আমার পুরো শরীরে শিহরণ দিয়ে অন্য রকম একটা স্পর্শানুভূতি পেলাম। বেশ ভালই লেগেছিলো। আমি নিশ্চিত ছিলাম এটা আরিশা ছিল। কারণ এমন কিছু ও ছাড়া আর কেউ করবে না। আমি আড়চোখে ওর দিকে তাকালাম দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে। মাথায় ওড়না সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। রাতে খাওয়ার পর আমি নিজের বেডের উপর বসে বসে মোবাইলে নোটিফিকেশন দেখছি। কিছুক্ষণ পর আরিশা হাতের কাজ সেরে রুমে চলে আসল। ওর চোখে মুখে খুশির চাপ। আমার পাশে এসে বসল।

— আপনাকে একটা কথা বলব ! ( আরিশা)
— হুম বলুন।
— না থাক …!!!
— কি বলবেন বলুন। আমি কিছু মনে করব না।
— না আজ থাক পরে বলব।

আমি আর জোর করেনি যথারীতি সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছিলাম অমিত আরিশা এসে আমার পিছনে দাঁড়ালো।

— কিছু বলবেন। ( আমি)
— হুম। আমি ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললাম,
— শুনি আমার বউ কি বলতে চায়।
— আপনি কিছু বুঝেন না আমি কি বলতে চাচ্ছি।
— না আমি বুঝি না আপনি বলুন।
— আপনি চাইলে এখন থেকে আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন। এটা শোনার পর আমার কি যে ভাল লাগছে বলে বুঝাতে পারব নাহ। এর পর আরিশাকে বললাম,
— এই দিকে আসুন।

আরিশা টিপটিপ করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তার পর আমি আলতো করে ওর গালে হাত দিয়ে কপালে একটা চুমু দিলাম। দেওয়ার সময় আরিশা পুরো শরীর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়ে সত্যিই পবিত্র একটা মেয়ে। এর শরীরে কোন কলঙ্কের দাগ নেই। আমি ওকে কখনোই কষ্ট দিব না, কখনোই না একে বারেই না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত