– ভাইয়া এই ভাইয়া ওঠ না আর কতো ঘুমাবি?
– আর একটু ঘুমাই না আপু।?
– ১০ টা বাজে ভাইয়া। আমার চকলেট শেষ হয়ে গেছে।
– কি? আমার মিষ্টি পরীর চকলেট শেষ হয়ে গেছে আমায় আগে বলবে না?
– এখন তো বললাম।
– এখনি এনে দিচ্ছি আপু।
– ভাইয়া নাস্তা করে যাও।
– আগে আমার মিষ্টি পরীর চকলেট নিয়ে আসি।
– না ভাইয়া আমার চকলেট এনে দিলে যতটা খুশি হবো তার থেকে বেশি খুশি হবো তুমি খেয়ে বের হলে।
– তাই চলো আপু একসাথে খাব।
– হুম চলো।
ও হচ্ছে আমার কলিজার টুকরো আমার একমাত্র ছোট বোন অধরা। আমি ওকে মিষ্টি পরী বলে ডাকি। আমি ছাড়া আর কাউকে এই নামে ডাকটে দেয় না। নাস্তা করে বের হলাম চকলেট আনতে। বের হওয়ার সময় বার বার করে বলে দিয়েছে যাতে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরি। বাসায় কেউ আমায় শাসন করে না। কারন সবাই জানে আমায় শাসন করার জন্য অধরা আছে। আমি যাই করি না কেন ওর পারমিশন নিয়ে করি। ওর বয়স কেবল ৭। তাতেই সব বুড়ির মতো কথা বলে।
– আপু এই আপু
– হ্যা ভাইয়া
– এই নাও তোমার চকলেট।
– থাংকু
– এখন আমায় পাপ্পি দাও।
– উম্মাআহহ। ভাইয়া একটা কথা বলি?
– বলো এতে পারমিশন এর কি আছে?
– আমি তো তোমার অনেক ছোট তবুও তুমি আমায় আপু বলে ডাকো কেন?
– ওহ এই ব্যাপার
– হুম।
– তবে শোন। তুমি আমায় বড়দের মতো শাসন করো না
– হুম
– তাই তোমায় আপু বলি।
– ওহহ।
– আপু আমি একটু বাইরে যাই
– কেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসি।
– ওকে তবে রাত করো না
– আচ্ছা আপু।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় আম্মুর ফোন। আর আম্মুর ফোন থেকে একমাত্র আমার মিষ্টি পরীটা ফোন করে।
– হ্যা মিষ্টি পরী বলো।
– বাবা কই তুই? ( আম্মু)
– এই তো আম্মু পাশেই। আমার মিষ্টি পরীটা কই?
– ওর কেন জানি জ্বর আসছে
– কি বলো? কখন থেকে? ঔষধ আনছে?
– না এখনো আনা হয় নি
– তোমরা কি পাগল হয়ে গেছ। আমি আসছি। এক মুহূর্ত দেরি না করে ঔষধ নিয়ে বাসায় গেলাম। গিয়েদেখি অধরা শুয়ে আছে
– ভাইয়া আসছো।?
– হ্যা মিষ্টি পরী আমি আসছি। কি হইছে তোমার আপু?
– কপালটা গরম হইছে তাই শুয়ে আছি
– ওহহ। তুমি থাকো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
– আচ্ছা
– আম্মু ঔষধগুলো খাওয়াই দাও।
– তুই ছাড়া কেউ পারবে খাওয়াতে।
– ওহহ ওকে।
– আপু এই নাও ঔষধ খাও।
– ঔষধ আমায় ভালো লাগে না
– একটু খাও আপু।
– আচ্ছা দাও।
– মিষ্টি পরী আমার।।।
– ভাইয়া একটা কথা বলি?
– বলো
– আমি কি খুব ভালো।
– হ্যা মিষ্টি পরী তুমি খুব ভালো।
– আমি যদি আল্লাহ এর কাছে চলে যাই তখন কাকেমিষ্টি পরী বলে ডাকবে?
– কি বলছো এসব? এসব কথা বলে না মিষ্টি পরী। তোমারআগে যেটা আমি আল্লাহর কাছে চলে যাই।
– না ভাইয়া তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
– তাহলে আমি তোমায় ছাড়া কিভাবে থাকবো বলো?
– সবাই বলে যে ভালো মানুষকে নাকি আল্লাহ তার কাছে তাড়াতাড়ি নিয়ে যান। তাই বললাম।
– এসব কথা আর কখনো বলবে না। আমি তোমায় কোথাও যেতে দিব না। ( কেঁদে কেঁদে)
– আচ্ছা ভাইয়া।
সেদিন ভাই বোন মিলে অনেক কেঁদেছিলাম বুঝতে পরি নি কেন। এভাবেই কেটে গেল অনেক দিন। আমার কলেজে ক্লাস শুরু হওয়ার কারণে মেসে চলে গেলাম। যাওয়ার সময় পরীটা অনেক কেদেছিল। আমিও কেঁদেছিলাম। চলে আসলাম শহরের ব্যাস্ত জীবনে। প্রথমে কিছুই ভালোলাগতো না। কিছু দিন পর সব গুছিয়ে নিলাম। প্রতিদিনই প্রায় মিষ্টি পরীর সাথে কথা হতো। পরীক্ষার ব্যাস্ততার কারনে কিছু দিন ভালো করে পরীটার সাথে কথা বলা হয় নি। আজ পরীক্ষা শেষ হবে। সকালবেলা আব্বুর ফোন
– হ্যা আব্বু বলেন
– কি করো বাবা
– এই তো পরীক্ষা দিতে যাবো। – পরীক্ষা শেষ হলেবাসায় আসিও।
– কেন আব্বু?
– পাগলীটা তোমায় দেখতে চাচ্ছে।
– আমার পরীটা কেমন আছে আব্বু?
– ভালো। চলে এসো। ( ভেজা কন্ঠে)
– ওকে। তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শেষ করে এখন বাসায় যাচ্ছি
★ পরীটাকে কি ফোন দিবো?
★ না ওকে সারপ্রাইজ দিবো।
★ আমায় দেখার পর অনেক খুশি হবে পরীটা। এসব কথা ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম। পরীটারজন্য অনেকগুলো চকলেট নিয়ে আসছি।
– আব্বু আম্মু আর পরী কই।
– বাইকে ওঠো।
– আব্বু আমরা হাসপাতালে আসলাম কেন?
– ভিতরে চলো আগে।
– আম্মু ভালো আছে তো
– হ্যা।
– আর আমার পরী? আমার পরী কেমন আছে?
– অধরা একটু অসুস্থ।
– মানে?? কি হয়েছে? ( কেঁদে)
– এই পাগল কাদছো কেন?
– কি হয়েছে আগে বলেন।
– ঐ একটু মাথা ব্যাথ্যা হয়েছিল।
– আম্মু আমার পরী কই
– বেডে শুয়ে আছে।
– মিষ্টি পরী
– ঘুমাচ্ছো আপু?
– এই আপু চোখটা খোলো দেখো আমি আসছি।
– তোমার জন্য চকলেট এনেছি
-মিষ্টি পরী এই মিষ্টি পরী ওঠ না বোন আমার
– এই কি করছেন। রোগকে ঘুমের ঔষধ দিয়েছি। বাইরে যান। ( ডাক্তার)
– ওকে।বাইরে এসে
– কি হয়েছে সত্যি করে বলো আমায়?
– তাহলে শোন ( আম্মু)
– বলো না ও সহ্য করতে পারবে না। ( আব্বু)
– বলো আমায় নইলে ছুরি দিয়ে হাত কাটবো।
– অধরার ( কেঁদে)
– পরীর কি?
– বলো
– ব্রেন টিউমার ( চিৎকার করে কেঁদে) আমি কিছুই বলতে পারছি না আব্বু আম্মু কাঁদছে। আমি যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। ওখানেই থেমে রইলাম।একটু পরে পরীর ঘুম ভাংলো
– আম্মু ভাইয়া আসে নাই।
– আসছে মা।
– কই ভাইয়া।
– সুমন তোকে ডাকে কাঁদতে কাঁদতে ভিতরে গেলাম
– বসো ভাইয়া।
– ( ওর পাশে বসলাম)
– কেমন আছো?
– ভালো পরী। তুমি কেমন আছো?
– ভাইয়া একবার মিষ্টি পরী বলে ডাকবে?
– মিষ্টি পরী ( বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে)
– আমি না থাকলে কাকে মিষ্টি পরী বলে ডাকবে ভাইয়া?
– এমন বলে না মিষ্টি পরী। তোমার কিছু হবে না।
– আমি জানি ভাইয়া ডাক্তার বলেছে আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।
– সব মিথ্যা কথা আপু।
– কিছু কথা বলবো সব সময় মনে রাখবে
– ওকে আপু
– তোমার যদি কখনো মেয়ে হয় তবে আমার নামটা তাকে দিও
★ কখনো কাঁদবে না। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। আমি তারা হয়ে তোমায় রোজ দেখবো
★ কখনো বাজে খাবার( সিগারেট) খাবে না। কারণ আমার ভাইয়া বাজে না।
★ আম্মু আব্বুর কথা শুনবে।
– আচ্ছা আপু। আমি সব করবো তবুও তুমি আমায় ছেড়ে যেওনা। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না পরী।
– আম্মু আমার পাগল ভাইয়ার শাসন এখন থেকে তুমি করবে।
– আমি পারবো না রে মা।
– বলেছিলাম না ভাইয়া ভালো মানুষদের আল্লাহ নিজের কাছে রাখে আর তুমি তো বলতে আমি ভালো তাই আল্লাহ আমাকেও নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।
– এমন বলে না পরী তোমার কিছু হবে না।
– ভাইয়া আমার মাথা প্রচুর ব্যাথ্যা করছে ভাইয়া আর সহ্য হচ্ছে না
– ডাক্তার ডাক্তার আমার পরী
– সরি সি ইজ নো মোর
– কি ডাক্তারী পড়ছিস জীবিত মানুষকে মৃত বলিস।
এই আপু ওঠ না। কথা বল আপু প্লিজ আপু একবার চোখ খোল না। দেখ আমায়। এই বোন বোন রে এমন করিস না। আমায় একা রেখে যাসনা। আমি পারবো না বাঁচতে। আম্মু ওকে বলো চোখ খুলতে। আব্বু বলো না ও একটা বার বলুক এই ভাইয়া আমার চকলেট শেষ হয়ে গেছে। চুপ করে আছো কেন কেউ কিছু বলছো না কে? এখন কে আমায় ঘুম থেকে তুলবে কে শাসন করবে। কার জন্য বাসায় আসবো মিষ্টি পরীর মৃতুর ছয় মাস হয়ে গেল।
– বাবা কই যাস?
– মিষ্টি পরীর জন্য চকলেট নিয়ে আসি।
– কার জন্য আনবি
– মিষ্টি পরী ঠিক তখনি মনে হলো ওতো আর আমার কাছে নাই। কষ্টে হৃদয়টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।।।। ভালো থাকিস মিষ্টি পরী।।।