সমাধান

সমাধান

হ্যালো, হ্যাঁ বল, হঠাৎ এই অধমকে মনে পড়ল?

— হুম, কেন মনে পড়া বারণ?
— না তা কেন? দরকার ছাড়া আমাকে তো কারোর মনে পড়েনা।
— না সুমিদি, এরম বলছ কেন? আমি কি সবার মত? তবে আজ সত্যিই তোমার মতামতের দরকার আমার।
-কেন তোর বর থাকতে আমার মতের দরকার পড়ল কেন?
—কেন না মতটা ওকে নিয়েই।
—মানে?
—মানে রোমিতের সাথে আর থাকতে পারছিনা আমি। ডিভোর্স দিতে চাই।
— ভাই সকাল সকাল গাঁজা টেনে ফোন করছিস নাকি?
—ওহ সুমি দি, আমি সিরিয়াস।
—কেন রে, রোমিত তোকে মারে?
—না।

—তবে অন্য মহিলার সাথে সম্পর্ক?
—সেরম কিছু তো বুঝিনি কখনো।
—তবে ও আচ্ছা বুঝেছি, স‌েই মায়ের কথায় ওঠাবসা স্বভাব টার জন্য? ফোনে কান ভাঙানি দিচ্ছে?
— না সুমিদি, এসব পাঁচ বছরে আমার গা সওয়া হয়ে গেছে। এতে আর কিছুই এসে যায়না।
—ওরে পাগল, তবে কি লাইফের নতুন অ্যাডভেঞ্চার এটা? ডিভোর্স ডিভোর্স খেলা?
— রাখলাম সুমি দি। পরে কথা হবে।
—ওরে আমার সোনা বোন, রাগ করে না, হয়েছে টা কি রোমিত কিপটেমো করছে? ফরেন ট্রিপে নিয়ে যাচ্ছে না?
—সুমি দি, তুমি ও তো বাকি সবার মত কথা বলছ।

ডোমেস্টির ভায়োলেন্স আর অন্য মহিলার সাথে সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোনো কারণ হতে পারেনা? বাকি সব খিল্লির সমান? আর ফরেন ট্রিপের পয়সা আমিই কামাতে পারছি, রোমিতের কাছে বায়না করব কেন? তুমি বাকিদের মত হয়ে গেলে সুমিদি। আজও সম্পর্কের মাঝের সূক্ষ্ম ব্যাপার গুলোয় কেউ গুরুত্ব দেয়না। তুমি যখন বাংলা গদ্যগুলো পড়াতে কি সুন্দর সম্পর্কের অদ‍‌‍‍ৃশ্য জাল গুলো মেলে ধরতে। সেগুলো শুনে শুনেই তো ভালোবাসার ওপর আস্থা জন্মেছিল। তোমার লেখাতে ও তো তুমি মেয়েদের মনের গোপন আকাঙ্ক্ষা গুলো তুলে ধর। তাহলে আমাকে এরম বলছ কেন?

—দ্যাখ অনু, গল্প আর বাস্তবের পার্থক্য এখানেই, গল্পের শেষে সমস্যার সমাধান হয়ে যায় আর বাস্তবে সমঝোতায় আসতে হয় সমাধানের জন্য। তুই কি ভাবছিস যে রোমিত কে ডিভোর্স করে দিলেই এক চুটকিতে তোর সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? বিলিভ মি, সমস্যা আরও বাড়বে। যে আত্মীয়রা তুই একাকিত্বে ভুগলে কথা বলে না, হঠাৎ তাদের ঘনঘন ফোন আসা শুরু হবে। তোর সামনে রোমিত কে গালি দেবে, আর পিছন ঘুরলেই তোর নিন্দা। বলবে তুই ঘর ভেঙেছিস। আজও আমাদের সমাজে ঘর ভাঙার দায় মেয়েদেরই দেওয়া হয়।

— তুমি আমার মা র কথাগুলোই রিপিট করলে। তাছাড়া মা ও জানতে চায়নি সমস্যা টা কি। শুধু বলল, অ্যাডজাস্ট করে নিতে। রোমিতের মত সৎ, পরিশ্রমী ছেলে আজকালকার দিনে পাওয়া যায়না। বড়দের এত সম্মান করে।

— বল অনু বল কি সমস্যা? সত্যি আমি খুব টিপিক্যাল বিহেভ করলাম। বল সোনা বল।
— সুমিদি, আমাদের জীবনটা খুব গতানুগতিক হয়ে গেছে। কোনো ভালোবাসা, উষ্ণতা আর অবশিষ্ট নেই আমাদের সম্পর্কে। সকাল থেকে ব্রেকফাস্ট, অফিস, বাড়ি।তারপর বাড়ি ফিরে যে যার মতো। রোমিত টিভি আর মোবাইল গেমে ঢুকে বসে থাকে আর নয়তো ল্যাপটপে অফিসের পেন্ডিং কাজ।

—আরে টিভি দেখতে দিবি না। বলবি চলো বাইরে ডিনার করে আসি, নয়তো বলবি চলো একসাথে সিনেমা দেখি।
—হুম, টিভি নিয়ে ঝামেলা করাতে বেডরুমে আর একটা বিয়াল্লিশ ইঞ্চি টিভি লাগিয়ে দিয়েছে আমার জন্য। আর ডিনার বললে উবের ইটসে অর্ডার করে দেয়। বসে বসে ক্রিকেট ম্যাচ, নিউজ দেখে বাট আমি একটু ছাদে যেতে বললেই ঘুমে ঢুলতে থাকে। খেতে খেতেও মোবাইলে ডুবে থাকে। আমি কিছু বললে বলে আমার নিজের কোনো হবি নেই, তাই আমি সারাক্ষণ ওর পেছনে ঘ্যান ঘ্যান করি। আমার এরকম টেকেন ফর গ্র্যান্টেড থাকতে ভালো লাগেনা সুমি দি।

—এই এই বোকা মেয়ে কাঁদেনা। রোমিত তোকে ভালোবাসেনা?
—জানিনা, বাসে হয়তো। ওর বত্রিশ বছরের জন্মদিনে ওকে বত্রিশ টা ওর পছন্দের জিনিস গিফট করেছিলাম জানো? একমাস ধরে সব দোকানে দোকানে ঘুরে নিজের হাতে কিনেছি। ও কি ব্র্যান্ড পছন্দ করে শার্টের, কি পারফিউম পছন্দ করে। বার্থডের দিন এত রান্না আর গিফট দেখে বলল, আমি কি বাচ্চা ছেলে নাকি? এসব বেকার নিজের টাইম নষ্ট করেছ।

— হুম, বেশিরভাগ ছেলেরা এরমই হয়রে।
—না সুমি দি কক্ষনো সবাই হয়না। আমার জন্মদিনের দিন রোববার ছিল, সকাল থেকে আমি কান্নাকাটি করাতে বিকেলে অনিচ্ছায় ঘুরতে বেরল আমার সাথে। সেখানেও দুজন দুজনের সাথে একটাও কথা বলিনি। ওর বক্তব্য আমি একজন টিপিক্যাল প্যানপ্যানে বউ। আমার জব নিয়ে সব প্যাশন চলে গেছে আর আমি দিনে দিনে বরের ঘাড় ধরে ঝুলে থাকা বউ হয়ে যাচ্ছি।

—হুম তা পাঁচ বছর তো হল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর ব্যাপারে কি ভাবলি?
—রোমিত ইন্টারেস্টেড নয় এখনই। বলেছে পরে দেখা যাবে। ওর প্রিন্সিপাল হল, বাঁচো আর বাঁচতে দাও। একসাথে থেকে ভালোভাবে বাঁচা আর হচ্ছে না গো। আমি চেষ্টা করে দেখেছি। আমি নিজের মত থাকলে ও খুশী, ওকে সঙ্গ দিতে বললেই সমস্যা শুরু। তুমি বল সুমি দি নিজের মত বাঁচার জন্য একসাথে থাকার কি দরকার?

—এতো জটিল ব্যাপার রে অনু, আপাত দৃষ্টিতে কোনো সমস্যাই নয়, আবার ভিতরে গিয়ে দেখলে এ এক ঘুণপোকা।
—হ্যাঁ সুমি দি, খুব একাকীত্ব লাগে। জানো এক এক সময় রাগে ভাবি পরকীয়া করব, আমারও তো কিছু চাহিদা আছে, আমিও তো রক্ত মাংসের মানুষ। কিন্ত এসব পারিনা গো, রোমিতের ভালোবাসা আর নয়তো বাড়ির সংস্কার আটকে দেয়। আমার চারপাশে যে অদৃশ্য গন্ডি আমি নিজেই কেটে দিয়েছি, গন্ডি পেরোলে তো নিজের চোখেই আমি চোখ মেলাতে পারবনা।

—অনু তুই এত কষ্টে আছিস আমাকে আগে বলিসনি? এত বড় কবে হয়ে গেলি?
—বড়? রোমিতের কাছে গোলাপ ফুল চাই বলে রোমিত আমাকে ইমম্যাচিওর বলে।
—রোমিত আসলে ইমম্যাচিওর,

ও তাই তোর অনুভূতি গুলোকে ঠাট্টার চোখে দেখছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে ও তোকে ভালোবাসেনা। হয়তো এই মুহূর্তে ওর কাছে অন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো ও অন্য কিছু অ্যাচিভ করতে চায়। ও সময় চায় তোর কাছে, ওকে একটু সময় দে দেখি। ভালোবাসিস তো ওকে খুব, একটু অপেক্ষা কর দেখি ওর জন্য। বাইরেটা গুছিয়ে নিতে দে ওকে একটু, দ্যাখ ও ঠিক ফিরে আসবে। তোর এই ইমোশন গুলোই ফিরিয়ে আনবে ওকে। তোর সমস্যার সমাধান ছাড়াছাড়ি নয়, সমাধান হল সময়। ওকে কিছুদিন নিজের মত সময় দে। তুইও নিজেকে সময় দে, দেখিস তোর এই অস্হির ভাব চলে যাবে।

—কত সুন্দর বললে সুমি দি। তোমার মত কেউ বোঝাতে পারেনা। ঠিক বলেছ আমি সময় দেব, নিজেকে, রোমিত কে ও। ওকে ছেড়ে তো আমি থাকতেই পারবনা।
—এই এবার আমাকেও সময় দে দেখি, আজ যাবি আয়ুস্মানের মুভিটা দেখতে? নাইট শো?
—হান্ড্রেড পার্সেন্ট ।আই লাভ ইউ সুমি দি।
— হুহ, রোমিতের সাথে সব মিটমাট হয়ে গেলে এই সুমিদি কেই আর মনে পড়বে না।
—এরম বোলো না সুমি দি।
—আরে পাগলি মজা করছিলাম। আমি ঠিক সাতটায় গাড়ি নিয়ে চলে আসব, ঝোলাবি না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত