হঠাৎ পাওয়া

হঠাৎ পাওয়া

নাহ্ আজও অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে আটটা বেজে গেল নিখিলেশের।এখনও সেন্ট্রাল মেট্রো থেকে কবি সুভাষ মেট্রোস্টেশনে নেমে টুকটাক আনাজপাতি বাজার সেরে বাড়ি ফিরতে ঘণ্টাখানেক।এদিকে পাড়ার ক্লাবের বন্ধুরাও কদিন হল ওকে খুব করে ধরেছে সামনের রবিবার গাড়ি করে দলবেঁধে ডায়মন্ডহারবারে নদীর ধারে পিকনিক করবে,মাথাপিছু হাজার টাকা চাঁদা ধার্য হয়েছে।আজই ওদের টাকা দেবার শেষ তারিখ। এরপর বাজারঘাট হবে,রাধুনী ঠিক করতে হবে। অন্যদিকে মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ওর পকেটে অল্প কিছু পড়ে আছে।

এখন পিকনিকের টাকা দিলে বাড়িতে নিখিলেশের বউ কেকা আবার ঝামেলা শুরু করবে নাতো ? তবে কি একবার ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দেবে সবটা?নিখিলেশের ফোনের অবস্থাও তো তথৈবচ।বছর তিন পার হয়ে গেল,নতুন একটা ফোন কিনব কিনব করেও কেনা হচ্ছে না।মধ্যবিত্তের এই এক জ্বালা।বাচ্চার পড়াশুনোর খরচ,অসুস্থ মায়ের ওষুধের খরচ,বউয়ের সখ,আহ্লাদ সব মিটিয়ে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়,নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কই।না থাক এখন আর পিকনিকের জন্য অযথা হাজার টাকা খরচ করে লাভ নেই বরঞ্চ ওর সাথে কিছু টাকা যোগ দিলে পরের মাসে নিখিলেশের মেয়ে রুশার স্কুলে উইন্টার ক্যাম্পের টাকাটা জমা করে দেওয়া যাবে নির্দিষ্ট দিনে ভিড়ে ঠাসা মেট্রোতে চিঁড়েচ্যাপ্টা হতে হতে ভাবে ও।

যাইহোক মেট্রো থেকে নেমে কেনাকাটা সেরে বাড়ির গেটে ঢুকতেই নিখিলেশের নাকে ধাক্কা মারে লুচি ভাজার মিষ্টি গন্ধটা।এই অসময়ে লুচি, অন্যদিন তো বাড়ি ফিরে ওই কখনো চায়ের সাথে একটু মুড়ি,চানাচুর কখনো বা ঘরে ভাজা চিঁড়ে,বাদাম খায় ও।তবে কি কোনো অতিথি এলো যার জন্য এই আয়োজন?আগুপিছু না ভেবে কলিংবেল বাজাতেই কেকা বেরিয়ে এসে দরজা খোলে।আর মায়ের পিছন পিছন রুশা মানে ওদের মেয়ে বলে,”বাবা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

__”কিসের সারপ্রাইজ রে মামণি?আজ আবার কি উপলক্ষ্য?”সস্নেহে মেয়ের মাথার চুলগুলো ঘেঁটে দিতে দিতে বলে নিখিলেশ।

__”ওমা তুমি জাননা আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস(International Mens Day)।আর যে মানুষটা কাণ্ডারির মত আমাদের সংসারের হাল ধরে রেখেছে মানে তুমি তার জন্য এই আয়োজন তো করাই যায়।তাইনা?যাও এমনিতেই হালকা ঠাণ্ডা পড়ছে।বেশি দেরি করলে লুচিগুলো মিইয়ে যাবে।মুখ হাত ধুয়ে খেতে এসো…”কেকা বলে স্বামী নিখিলেশের উদ্দেশ্যে।

__”কিন্তু আমার জন্য এত খরচ করতে গেলে কেন কেকা?বুঝতেই পারছ এই সময়টা একটু টানাটানি…”নিখিলেশ বলে।

__”ও নিয়ে চিন্তা করোনা।তুমি তো জান বিয়ের আগে আমি বেকিং,কুকারি ক্লাসে যেতাম।আগে রুশা ছোট ছিল বলে ওদিকে আর নজর দিতে পারিনি।কিন্তু এখন ও বড় হয়ে গেছে।তাই নিজের একটা ছোট্ট বেকারী খুলেছি।তুমি অফিসে বেরিয়ে যাও,রুশা ওর স্কুল,কোচিং নিয়ে ব্যস্ত।আমিও দিব্যি সময় বার করে কাজটা করতে পারছি।বেশ কিছু উপার্জনও হচ্ছে মন্দ কি বল?তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলেই আগে কিছু জানাইনি। সংসার খরচের থেকে টাকা থেকে আমি কিছু নিইনি।নিজের উপার্জন থেকেই তোমার জন্য আমার তরফ থেকে আজকের দিনের উপহার দেব বলে। আর অনেকদিন ধরে দেখছি তোমার মোবাইলের খারাপ অবস্থা যখন তখন অফ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাটে থাক,চিন্তা তো হয়।তাই একটা মোবাইল কিনে ফেলেছি। দেখ তোমার ভালোলাগে কিনা!ব্যাককভারটা চেরি লাল রঙের নিলাম তুমি পছন্দ কর রংটা…” কেকা বলে নিখিলেশের দিকে মোবাইলের বাক্সটা এগিয়ে দিয়ে।

নিখিলেশ মৃদু হেসে বলে,”এই সব আয়োজন আমার জন্য এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে।আসলে জীবনযুদ্ধে ছুটে চলতে চলতে যখন বড়ই ক্লান্ত তখন এই হটাৎ পাওয়া খুশি টুকরো মুহূর্তগুলো নতুন করে এগিয়ে চলার শক্তি দেয়।আর মানছি আজ পুরুষ দিবস,কিন্তু সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে এই যে নতুন করে তোমাকে খুঁজে পেলাম এটাই কি আমার কম প্রাপ্তি?” রাতে খাবার টেবিলে উষ্ণতার আঁচে জমে ওঠে ওদের সুখী পরিবারের জলছবি।।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত