বাজারে সচরাচর মন্টুকে পাঠায়না বাড়ির কেউ, ওখান থেকে ঠিক টু পাইস কামাই করবেই করবে। বাবা বলে ছিঃ ছিঃছিঃ যে থালায় তুই খাস, সেই থালায় তুই মুতিস! ছিঃছিঃ বাবার কথায় লজ্জা পায় মন্টু, কি কথার ছিরি! ছেলে পুলে বড় হলে তাদের যে হাত খরচা লাগে সেটা বুঝে দিয়ে দিলেই হয়, তা না খালি উল্টো পাল্টা কথা, আগে বাবার থেকে ঝেড়ে সকালের সিগারেট নিয়ে পায়খানায় ঢুকতো মন্টু, ছোট্ট বন্ধ ঘরে মগজে ধোঁয়া দিলে সিস্টেমটা বেশ ক্লিয়ার হয় মন্টুর, মেজাজটা বেশ ফুরফুরে লাগে। কিন্তু তার বাপটাও একটা সেয়ানা ঘুঘু, বুঝতে পেরে এখন আর সিগারেট রাখেনা, বিড়ি রাখে।
ফুলকিকে একদিন জোর করে চুমু খেয়ে ছিলো, এক ধাক্কা মেরে ফুলকি বলেছিল, শালাঃ ছোটোলোক, মুখে শালা বিড়ির গন্ধ নিয়ে চুমু খেতে আসে! কি করবে মন্টু, মায়ের কাছে হাত খরচা চাইলেই বলে, এক পয়সা কামাই করার মুরোদ নেই, ঘরে গান্ডেপিন্ডে গিলে আবার হাত খরচা কিসের, ঐ বন্ধুদের সাথে ধোঁয়া গেলার পয়সা আমি দিতে পারবো না। মাকে কি করে বলবে সামনেই ফুলকির জন্মদিন, যা ফিগার না যা পরে তাতেই ঝক্কাস লাগে। একটা জিন্স যদি দিতে পারতো বা ঐ লাল টুকটুকে হিলটা! শালা যা জিনিসের দাম! ধুসসস্ নিজেকে এতো ছোটো লাগে না!
বাবার একটা চালু হোটেল আছে হাই রোডের ধারে। যেদিন বাবা হোটেলের বাজার করতে যায় সেদিন একটু সুযোগ পায় সেখানে বসার জন্য মন্টু। সেদিন সুযোগ পেয়ে দুশো টাকার দুটো নোট সরিয়েছে মন্টু। আজ পর্যন্ত ভাঙানোর সুযোগ পায়নি। আজ বাজারে যাওয়ার সময় পকেটে ভরেছে সেটাকে। বাজারে ঢুকতেই পটলার সাথে দেখা, সে বললো যাও গুরু বাজার পুরো আগুন, পেঁয়াজ কিনে নাও কিছু। একশো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আরও বাড়বে দাম।
বাজারে ঢুকে দুকিলো পেঁয়াজ কিনে ফুলকিকে দিয়ে এলো।আজকের দিনে পেঁয়াজ দুর্মূল্য, মধ্যবিত্তের কাছে সোনার মতো দামী,পেঁয়াজ পেয়ে ফুলকি যা খুশি হবে না,এই ভেবে মন্টুর মুখটা খুশিতে ভরে উঠলো।একটা বড় চকলেটও কিনে ফেললো ফুলকির কথা ভেবে। ভাগ্যিস ওর দাদা ছিলোনা তখন পেঁয়াজ নিয়ে ফুলকি বললো, কি করবো পেঁয়াজ নিয়ে? কলার তুলে মন্টু বললো,যা দাম বাড়ছে পেঁয়াজের,সেই ভেব কিনে নিলাম তোর জন্য।পেঁয়াজি ভালোবাসিস তো তুই,খাবি ভেজে ভেজে।
বিকালে পঞ্চার দোকানের মাঠে আসিস একবার, কথা আছে বোলে বাড়ির পথ ধরলো সে, আজকে সাহস করে বলে দেবে ফুলকিকে ভালোবাসার কথাটা, নইলে অন্যকেউ তুলে নিতে পারে তাকে,যা ডাগর হচ্ছে না দিন দিন! সময়ের কাজ সময়ে না করলে মন্টু ব্যাটা আঙুল চুষেই রয়ে যাবে। দুপুরে পোনা মাছের ঝাল দিয়ে সাটিয়ে খেয়ে একটা টানা ঘুম দিলো মন্টু। বাজার থেকে আজ পুরো কুড়ি টাকা কামাই তার। মা আজ হিসাব চায়নি, চাইলেই বা কি, মন্টু মনে মনে একটা হিসেব সাজিয়ে রেখেছিল। বিকালে বেশ করে টেরি বাগিয়ে বেরতে গিয়ে বাধা পেলো মন্টু।
বোন বললো পঞ্চাশটা টাকা ছাড়তো দাদা, বন্ধুরা মিলে সিনেমায় যাবো। আর সবার সাথে পেরে উঠলেও তার সাথে পেরে ওঠেনা মন্টু, পড়াশোনায় ভালো বলে বাবা মা তাকে মাথায় করে রাখে। ওকে দিয়ে মাঝে মাঝে কবিতা লিখিয়ে ফুলকিকে দেয় সে, ফুলকি খুব তারিফ করে তার কবিতার। ফুলকির হাসি মুখের জন্য কই দে টাকাটা বলে হাত পেতে দাড়ায় বোন। তিরিশ টাকায় একটা রফা করে মন্টু বেরিয়ে দেখে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে তার, ফুলকি যদি চলে গিয়ে থাকে তো সে যেতেই তাকে এক থাবা পেঁয়াজি দিয়ে বলে কটা বাজে দেখেছো, এই নাও তোমার জন্য লুকিয়ে নিয়ে এসেছি, তাড়াতাড়ি আমায় যেতে হবে বাড়ি, সাতটার দিকে রতন আসবে তার বাবা মায়ের সাথে, বিয়ের পাকা কথা বলতে।
বিয়েতে কিন্তু তুমি বরযাত্রীদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিও। দাদা বলেছেন মন্টুকে ফুলকির বিয়েতে অনেক দায়িত্ব নিতে হবে, খুব কাজের ছেলে! মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে মন্টু, কি শোনালো তাকে ফুলকি! কি হলো খাও বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো ফুলকি, তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মন্টু একটা পেঁয়াজি মুখে ফেললো। বড্ড বিস্বাদ লাগছে পেঁয়াজির স্বাদ, তার চেয়ে একটু বিষ ফুলকি দিলে হাসিমুখে খেয়ে নিতো মন্টু। চকলেটটা দিতে গিয়ে তাকে দিতে পারলোনা আর।