পুজার ছুটির শেষে আজ প্রথম কলেজে এসেছে নিশান।পরনে হোয়াইট কটন জিন্স আর ব্ল্যাক টি-শার্ট ।এই দীর্ঘ ছুটির সময়ে সে টের পেয়েছে তার হৃদয়ে একটা মিষ্টি যন্ত্রনা জমাট বেঁধেছে ঋধিমার জন্য। ঋধিমা ওর সাথেই পড়ে বাংলা ডিপার্টমেন্টে। আর পাঁচটা মেয়েদের থেকে সে আলাদা, ঠোঁটকাটা গোছের, গায়ের রঙটা চাপা কিন্তু মুখশ্রীটা অসাধারণ যা তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে দেয়। নিশান ঠিক করেছে আজই ওকে প্রোপোজ করবে।
কলেজের গেটের সামনে বড়ো ইউক্যালিপটাস গাছের গোড়ায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে সময় যেন কাটতে চায় না।কি করি না করি ভাবতে ভাবতে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে যাবে, এমন সময় লক্ষ্য করে ঋধিমা কলেজের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে। আজ ওর পরনে চেরি পার্পল কালারের এর থ্রি-কোয়ার্টার টপ আর ব্ল্যাক কালার টাইট জিন্স, কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ, পায়ে হালকা জরীর কাজ করা হিল।দু কানে ছোট্ট দুল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, কাজল দিয়ে সুন্দর করে চোখ দুটো আঁকা যা আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে ওকে। ওই মায়াবী চোখে অনন্তকাল ডুবে যেতে ইচ্ছা করে নিশানের।
– কিরে এরকম হা করে কি দেখছিস আমাকে? ঋধিমার কথায় নিশানের চেতনা ফিরে আসে।
– না না। কিছু না তো।
– সত্যি বল কি দেখছিলি আমার। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে ওঠে ওর । বলে-
– বাজে কথা বলিস না তো সবসময়। চল ক্লাসের টাইম হয়ে এল।
– হুম চল। বললি না কিন্তু আমায়।
ঋধিমা নিশানের সাথে ইয়ার্কি করতে করতে ক্লাসে ঢুকে যায়। আজ কিছুতেই ক্লাসে মন বসছে না নিশানের। সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বলতে না পারা কথাটা ভিতরে মোচড় দিচ্ছে ওকে। মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকাচ্ছে ঋধিমার দিকে। একভাবে তাকাতে ওর সাহসে কুলায় না। ও একটু ভীতু লাজুক প্রকৃতির ছেলে। ক্লাস শেষ হতে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সাহস করে ঋধিমার সামনে গিয়ে বলে
– আজ ছুটির পরে একটু দাঁড়াস কিছু কথা বলার আছে তোকে। মাথা হেঁট করে বলে নিশান।
– কি বলবি এখনই বল। অতো লজ্জা কিসের তোর।
– না ছুটির পরেই বলব।
– আর কিছু বলবি?
– না। ছুটির পড়ে ‘নববিতান’ আসবি।
– কেন রে?
– আসবি কি বল?
– বাঃ বাঃ ছেলে আবার রাগ দেখাতে শিখে গেছে।
– আসবি? হ্যাঁ কি না বল?
– ওকে আসব।
– ঠিক আসিস কিন্তু।
কথাটা বলেই নিশান চলে আসে নিজের জায়গায়। ঋধিমা ও ব্যস্ত হয়ে পরে ওর বন্ধুদের সাথে। সময় যেন কাটতে চায়না নিশানের। যাক আজ সাহস করে বলে দেবে ও মনের কথা ঋধিমাকে। মনে মনে ভাবতে থাকে কি করে বলবে? এই জীবনে প্রথম বার কাউকে প্রোপোজ করবে ও। একটু যে ভয় করছে না এমনটাও নয়। তবুও আজ ওকে বলতেই হবে। ছুটির সাথে সাথেই নিশান চলে যায় ‘নববিতান’ এ। কলেজের সামনে পার্কটির নাম ‘নববিতান’ এখানেই আড্ডা দেয় কলেজের ছেলেমেয়েরা। কিছুটা পরেই এসে উপস্থিত হয় ঋধিমা।
– কি রে কি বলবি বলছিলি?
– হুম। তুই বস সব বলব।
– নে বসলাম। বল এবার।
– অনেকদিন ধরে একটা কথা বলব ভাবছি। কিন্তু বলতে পারছি না।
– এত ভূমিকা না করে যেটা বলতে চাইছিস বল।
– আমি তোকে ভালোবাসি।
এই ভালোবাসি কথাটা শুনলেই দপ করে জ্বলে ঋধিমা।মনে পরে যায় পুরানো প্রেমিকের প্রতারনার কথা ।যে ঋধিমাকে কখন ও ভালোবাসে নি শুধু শরীরটাকে ভোগ করেছিল। তারপর থেকে আর কখনও কাউকে বিশ্বাস করেনি ও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়নি।
ঋধিমা নিশানকে বলে
– কিন্তু কেন?
– জানি না। তবে ভীষণ ভালোবাসি।
– আমার শরীরটা পাবার জন্য তো?
– না না। তুই কি সব বলছিস।
– নাটক করতে হবে না তোকে। তুই ও অন্যদের মতো, বিশ্বাস করতে পারছি না। তোকে আমি ভালো ভাবতাম।
– ভুল ভাবছিস তুই আমায়।
– না ভাবছি না। যা সত্যি তাই ভাবছি।জীবনে আর কখন ও আমার সাথে কথা বলতে আসবি না। গুড বাই।
-ওকে তাই হবে। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি, তোর শরীরটাকে নয়। যদি কখন ও বুঝতে পারিস,আসিস আমার কাছে অপেক্ষায় থাকব।
পার্কের বেঞ্চে বসে ঋধিমার দূরে চলে যাওয়া দেখে নিশান। ঋধিমা মিশে যায় জনতার ভীড়ে। কান্নায় চোখ ঝাপসা হয়ে আসে সেই সাথে নামে এক অপরিচিত সন্ধ্যার জমাট অন্ধকার।
(সমাপ্ত)