সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো কিছুতেই টেকে না। হয় প্রেমিক,নাহলে প্রেমিকা যে কেউ একজন ছেড়ে যাবেই।যে যায় সে তো চলেই যায়।আর ফেরে না কখনো।সে বোধহয় পালিয়ে বেঁচে যায়। আর যে থাকে, সেও বাঁচে।তখন তার কাছে বাঁচা মরা দুই সমান। কারণ তার ভিতরের মানুষটা কবেই মরে যায়।তখন একরাশ স্মৃতি মাথায় ভীড় করে বসে।আর ঠিক এমনই ভাবনা নিয়েই বিষণ্ণ হৃদয়ে ছেলেটি দিন গুজরান করছিল।কারণ, ভালোবাসার মানুষের দূরে চলে যাওয়াটা কে আর মানতে পারে?
ছেলেটির নাম রাজা।রাজা প্রচণ্ড ভাবে ভালো বেসেছিল মেয়েটিকে।যদিও মেয়েটিও কম ভালো বাসত না।নিজের নাম রাজা বলে মেয়েটিকে রাণী বলে ডাকত।আর এই রাণীই এত ভালোবেসেও একদিন রাজাকে ছেড়ে চলে গেল।কেউ কাউকে ভালো বাসলে তাকে কি ছেড়ে যায়?সবাই তো এটাই বলে,সত্যি যদি কেউ কাউকে ভালো বেসে থাকে তাহলে সে ছেড়ে যায় না।রাণী কিন্তু রাজাকে ছেড়ে দিয়েই চলে গিয়েছিল।
এই রাজাই আমার ছোট বেলার বন্ধু।রাজা অর্থাৎ রাজর্ষি দত্ত।রাজর্ষি নামটা অতোটা পরিচিত নয়,যতটা রাজা নামে পরিচিত।নিম্নবিত্ত পরিবারে বাবার একমাত্র ছেলে।ভালোবেসে ছিল বিত্তবান পরিবার মেয়ে রাণীকে।নামটা ওর রাণী নয়,ও আসলে রাজার ভালোবাসার রাণী।ওর নাম ঐন্দ্রিলা।ঐন্দ্রিলা যেমন সুন্দরি,তেমনি অসম্ভব সুন্দর তার নৃত্যে পারদর্শিতা।
ফেসবুকের দৌলতে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে পরিচয় হয় রাজার।ঐন্দ্রিলা তখন ক্লাস ইলেভেন।ঐন্দ্রিলার সঙ্গে কথা বলে রাজার ভালো লেগে যায় ঐন্দ্রিলাকে।মনে মনে ভালোও বেসে ফেলে তাকে। তাই মনের কথা জানাতে বিন্দুমাত্র দেরি করেনি রাজা।প্রেম প্রস্তাবকে খুব তাড়াতাড়ি যে গ্রহণ করেছিল ঐন্দ্রিলা,তা মোটেই নয়।কারণ যে কোনো সম্পর্ক তৈরি হতে গেলে লাগে বন্ধুত্ব। তাই আগে বন্ধুত্ব হোক পরে ভেবে দেখা যাবে এমনটাই জানিয়েছিল রাজাকে।তাই হয়তো রাজার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।মোটামুটি মাস তিনেক কাটার পর যখন বন্ধুত্বের রশিটা মঝবুত হল,তখন ঐন্দ্রিলা জানিয়েছিল সেও ভালবাসে রাজাকে।রাজা তো ভীষণ খুশি,আনন্দে আত্মহারা।কি করবে আর ভেবে পায়না।আর সব কথা আমাকে না জানালে ওর শান্তি নেই।সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে ফোন করে বলে..
“-রোহন, একটা গুড নিউজ আছে।”
“-গুড নিউজ? কিসের গুড নিউজ রে?”
“-তোকে ঐন্দ্রিলার কথা বলেছিলাম না?ঐন্দ্রিলা আজ আমাকে একসেপ্ট করেছে রে। আমি ভীষণ খুশি।”
“-যাক, সবুর কা ফল মিঠা হোতা হ্যায়।”
“-তা ঠিক।”
তারপর থেকেই রাজা আর ঐন্দ্রিলার প্রেম পর্ব শুরু হয়। দুজন দুজনের প্রেমে মশগুল।ইতিমধ্যে রাজা একদিন আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ঐন্দ্রিলার।কথা বলে বেশ ভালো মনের মেয়ে বলেই মনে হয়। তারপর থেকে ঐন্দ্রিলা আমাকে দাদাভাই বলে ডাকত।কীভাবে কার সাথে কোন্ সম্পর্ক করে আপন করতে হবে সেটা ঐন্দ্রিলা বেশ ভালো ভাবেই জানত।সব থেকে বড়ো কথা ঐন্দ্রিলা ধনী পরিবারের মেয়ে হয়েও এত টুকুও অর্থের অহংকার তার ছিল না। আর আমার বন্ধু রাজার আর্থিক অবস্থা তো খুব একটা ভালো ছিল না। বাবার টাকা থাকলে মেয়েরা নাকি অহংকারি হয়, অনেকের মনে এমন ধারণা কাজ করে সেটা যে ভুল একটা ধারণা সেটা ঐন্দ্রিলাকে দেখলেই বোঝা যায়। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো মন থেকেই হয়,সেখানে জাত পাত টাকা পয়সা বড়ো নয়।রাজার সব টুকু জেনেই ঐন্দ্রিলা ভালো বেসেছিল রাজাকে।অপর দিক থেকে রাজাও ঐন্দ্রিলাকে চোখে হারায়।
এমনি করে প্রায় একবছর কেটে যায়।মাঝে মধ্যে রাজা নিজে গিয়েই ঐন্দ্রিলার সাথে দেখা করে আসত।বাড়ির বাইরে দূরে গিয়ে দেখা করার মতো ছাড়পত্র ঐন্দ্রিলার ছিল না।তাই ঐন্দ্রিলার বাড়ির কাছাকাছি কোথাও দুজনের দেখা হত..কখনো গঙ্গার ফেরিঘাট,আবার কখনো মঙ্গল পাণ্ডে পার্ক। তবে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে রাজার এই সম্পর্কটা রাজার বাড়িতে প্রায় সকলেই জানত।ইতিমধ্যে সরস্বতী পুজোর দিন একটা ছোটো দুর্ঘটনা ঘটে যায়।সরস্বতী পুজো মানেই বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডে।আর ঐ দিন একটু স্বাধীনতা কম বেশি সকলেই পায়।তাই রাজা আর ঐন্দ্রিলা ঠিক করে ওই দিন ভিক্টোরিয়ায় ঘুরবে,আর পাঁচটা প্রেমিক প্রেমিকা যেমন ঐ দিন ঘুরে বেড়ায়।কিন্তু ভিক্টোরিয়ায় এসে ঐন্দ্রিলা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।কিছুক্ষণের জন্য সেন্স লেস হয়ে যায়।সেন্স ফিরলে শুরু হয় অসহ্য মাথার যন্ত্রণা।আর ভিক্টোরিয়া ঘোরা হয়না,এমতাবস্থায় রাজাও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরে।কোনোরকমে ঐন্দ্রিলাকে ওর বাড়ি পৌঁছে দেয়।
এরপর থেকেই ঐন্দ্রিলা মাথার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকে। কলকাতায় অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কিছুই কাজ হয় না।দিনের পর দিন যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। এরপর ঐন্দ্রিলা একদিন রাজাকে জানায় চিকিৎসার জন্য ওকে ব্যাঙ্গালোর যেতে হতে পারে।কি এমন হয়েছে যে ব্যাঙ্গালোর যেতে হবে।মনের মধ্যে ভীষণ ভয় কাজ করতে থাকে রাজার।আমি মনে অভয় দিই রাজাকে।বোঝাতে থাকি কিছুই হবে না, বলি “ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে দেখিস।”
কিছুদিন পর ঐন্দ্রিলা ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরে আসে। রাজার আশঙ্কাই সত্যি হয়। ঐন্দ্রিলা জানায়.. অনেক বড়ো কিছু একটা হয়েছে।কিন্তু বাড়ির লোক ওকে জানায় নি ওর কি হয়েছে। তারপর থেকে শুধু ফোন করে রাজাকে বলে “আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না। যে কয়টা দিন বাঁচব তুমি শুধু কথা বলে যেও। পারলে অন্য কাউকে ভালোবাসতে শুরু করো। নাহলে তুমিও যে আর বাঁচতে পারবে না।” সত্যিই দুজন দুজনকে এত ভালো বাসে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।এর পর থেকে ফোন করলেই ঐন্দ্রিলা শুধুই কাঁদত আর বলতো.. “আর তো মাত্র কটা দিন.. তোমাকে আর জ্বালাবো না।”
আস্তে আস্তে ফোন করে কথা বলাটাও কমে গেল, কারণ ডাক্তার যে মানা করেছে আর ফোনে কথা বার্তা বেশি না বলতে।রোজ রোজ বর্ধমান থেকে ব্যারাকপুর আসাও সম্ভব নয় রাজার। বাড়িতে গিয়েও যে একবার দেখা করে আসবে সেটাও সম্ভব নয়, কারণ ঐন্দ্রিলার এই সম্পর্কটা ওর মা জানলেও বাবা, দাদা কেউই জানত না।অসুস্থ হওয়ার পর থেকে বাইরে বেরোনো বন্ধ একপ্রকার।প্রায় সময়ই ফোন সুইচ অফ থাকে। সপ্তাহে একদিন কথা হয় কিনা সন্দেহ।তারপর একদিন রাজাকে ফোন করে বলে “আমাকে ভুলে যেও।আমি তো আর বাঁচবই না। জীবনে অন্য কাউকে খুঁজে নিও।তোমার ভালোবাসায় আমি চির ঋণী থেকে গেলাম।”
তারপর থেকে ঐন্দ্রিলার ফোন সুইচ অফ হয়ে যায়।আরো কোনো দিনও ফোনে পায়না ঐন্দ্রিলাকে।এক অন্ধকারময় জীবনে পৌঁছে যায় রাজা, হারিয়ে ফেলে তার ভালো বাসার রাণীকে।শত চেষ্টা করেও রাণীর সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি। হাসি খুশি প্রাণোচ্ছল ছেলেটা কেমন যেন হয়ে যেতে থাকে।তারপর থেকে রাজা আমাকে একটা কথাই বলত “হারিয়েই গেল.. সারা জীবনের জন্য রাণীকে আর পাওয়া হল না রে রোহন।”
সত্যিই হারিয়ে গেল রাণী। রাজার কষ্টটা আমি বুঝতে পারি।কিন্তু রাজাকে কি যে বলব সে বলার ভাষা আমার কাছে ছিল না।এরপর থেকে আমি আর কোনো দিনও তার রাণীর কথা জিজ্ঞাসা করিনি।জীবনের মাঝপথে একটা ভালোবাসার গল্প এভাবেই অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল।
এরপর থেকে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর। রাজাও চাকরি পেয়ে কলকাতায় চলে আসে। আমিও কর্মসূত্রে কলকাতায় চলে আসি।কলকাতায় চাকরি, তাই পাকাপোক্ত ভাবে কলকাতায় থাকার আস্তানা করে নিই।বিয়েটিয়ে করে তখন বলতে গেলে ঘোর সংসারি।রাজার সঙ্গে সেভাবে আর দেখা হয় না।চাকরি পাওয়ার পর ওর সাথে দু একবার দমদম স্টেশনে দেখা হয়েছিল।তখনই বলেছিল বিয়ে করার ইচ্ছা ওর নেই। যাকে মন থেকে ভালো বেসেছিল, সে ই যখন জীবনে নেই,তখন অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন সে আর দেখে না।তারপর থেকে ওর সাথে সেভাবে কথা হয় না।চাকরি বাকরি আর সংসারের ঘেরাটোপে মানুষ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগটা এমনিতেই কমে আসে।ছুটির দিন থাকলে তবেই দেখা হওয়া সম্ভব হতে পারে।
এমনই এক ছুটির দিনে এসেছি নন্দনে।নন্দনে তখন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল চলছে।একটা হলিউডের মুভি দেখব আমি আর শ্রীপর্ণা।শ্রীপর্ণা আমার সহধর্মিণী।হঠাৎ করেই নন্দন চত্বরে চোখে পরে রাজাকে।রাজাকে এখানে দেখতে পাব ভাবিনি।কিন্তু আশ্চর্য হই রাজা একা নয়,সঙ্গে আর একজন।বুঝতে পারি রাজা বিয়ে করেছে।মনে মনে ভীষণ খুশি হই সেদিনের সেই অবসাদগ্রস্ত ছেলেটি সুন্দর জীবন পথে ফিরতে পেরেছে দেখে।যাকে ভালোবেসে ছিল তাকে পায়নি তো কি হয়েছে, অন্য কেউ ওর জীবনটাকে খুশিতে ভরিয়ে দিয়েছে দেখে ভালো লাগছে।তাই আর দেরি না করে ছুটে গিয়ে রাজাকে বলি..
“-আরে রাজা তুই? তোকে এখানে দেখতে পাব সত্যিই ভাবিনি।”
“-আরে রোহন… কেমন আছিস বল?”
“-ভালো রে।বিয়ে করেছিস তো দেখছি। এমন একটা ভালো খবর তো জানতেই পারলাম না?”
“-তোকে জানাবো না এমনটা কোনো দিন হয়েছে? আসলে তোর সাথে লাস্ট দেখা হবার পরেই আমার মোবাইলটা হারিয়ে যায়। আর কোনো ভাবেই তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।”
“-ও আচ্ছা তাই তোকে ফোন করতে গিয়ে সুইচ অফ বলেছিল। আমার বিয়েতে তো তোকে ইনভাইটাও করতে পারিনি।”
“-সরি ভাই।”
“-আরে সরি টরি ছাড়।বৌদির সাথে পরিচয়টা করা।”
“-নতুন করে আবার কি পরিচয় করাবো..পরিচয় তো অনেক আগেই হয়ে গেছে.. ”
“-মানে?”
“-আজ আমার সামনে যাকে তুই দেখছিস ও তো ঐন্দ্রিলা.. আমার ভালোবাসার রাণী।”
পাশ থেকে ঐন্দ্রিলা জিজ্ঞাসা করে বসে..
“-কে গো? দাদাভাই নাকি?”
“-হ্যাঁ তোমার দাদাভাই..”
“-আরে ঐন্দ্রিলা আমাকে কি চিনতে পারছ না নাকি?সানগ্লাসটা চোখ থেকে সরাও”.. বলে একটু চেঁচিয়ে উঠি।
“-আসলে রোহন, ঐন্দ্রিলা আজ দৃষ্টি শক্তি হীন। দুটো চোখেই দেখতে পায়না। তাই হয়তো ও…. ”
“-সরি ঐন্দ্রিলা, আমি তো বুঝতে পারিনি.. তাই বলে ফেলেছি।আসলে আমিই তোমাকে চিনতে পারিনি। সেই কবে তোমাকে একবারই দেখেছিলাম… ”
“-আরে এতে সরি বলার কি আছে?তুই বা জানবি কি করে তাই না।আসলে সব কিছুই ভাগ্যের পরিহাস। জানিস রোহন আমি দশ বছর পর আমার ভালোবাসার রাণীকে খুঁজে পেয়েছি।”
“-কিন্তু কীভাবে?”
“-চল না কোথাও গিয়ে বসি চারজন মিলে। মুভি না হয় পরে কোনো একদিন দেখা যাবে..”
“-বেশ তো ,তাই হোক…”
সেদিন আমরা চার জন মুভি না দেখে এক সুন্দর আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে ভেসে গিয়ে ছিলাম অতীত চারিতায়।আর আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে জেনে নিয়েছিলাম রাজার কাছ থেকে তার হারিয়ে যাওয়ার রাণীর গল্প।
ঐন্দ্রিলা অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই রাজার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ সে যে কঠিন রোগে আক্রান্ত তাতে তার বাঁচার আশা একে বারেই ছিল না।তাই অতো বড় দুঃখটা রাজা পাক, সেটা ঐন্দ্রিলা চায়নি। তাই অনেক আগে থেকেই রাজার জীবন থেকে সরে যেতে চেয়েছিল। তারপর ঐন্দ্রিলা অপারেশনের জন্য ব্যাঙ্গালোর যায়। একটা মেজর অপারেশন হয়। অপারেশন সাকসেস ফুল হলেও ঐন্দ্রিলা চির দিনের জন্য দৃষ্টি শক্তি হারায়।বেঁচে থেকেও সারা জীবনটা তার কাছে অন্ধকারময় হয়ে যায়।অপারেশন হওয়ার পর যদি বেঁচে ফেরে তাহলে রাজার সঙ্গে আবার যোগাযোগ করে ফিরে আসবে, কিন্তু দৃষ্টি শক্তি হারাবার পর আর সে ইচ্ছা মনের মধ্যে রোপণ করেনি, কারো সুস্থ সুন্দর জীবনে ঐন্দ্রিলা আর ফিরে যেতে চায়নি।
কিছু কিছু অমর সঙ্গী থাকে, নিজেরা চাইলেও তারা আলাদা হতে পারে না। তাই তাদের অমর প্রেম এক সুতোয় বাঁধা পরে আবার।একদিন রাজা হঠাৎ করে ঠিক পুজোর আগে একটা সপিং মলে দেখা পেয়ে যায় ঐন্দ্রিলার। ঐন্দ্রিলা তার মায়ের হাত ধরে সপিংমল থেকে কেনা কাটা করে বেরিয়ে যাচ্ছে। এত বছর পরেও ঐন্দ্রিলাকে চিনতে তার অসুবিধা হয়নি।ছুটে গিয়ে ঐন্দ্রিলার দুহাত চেপে ধরে।এত দিন পর এভাবে ঐন্দ্রিলাকে খুঁজে পাবে সেটা সে কল্পনাও করেনি।ঐন্দ্রিলা প্রথমে রাজার সাথে কথা বলতে চায়নি, সে ভেবেছিল রাজা হয়তো অন্য কাউকে বিয়ে করে সংসার সাজিয়েছে।তাই অতীতের কিছু তার পরবর্তী লাইফে প্রভাব ফেলুক, সেটা সে চায়নি।
কিন্তু যখন সে শুনেছে রাজা বিয়ে করেনি ,তখনো পর্যন্ত তাকে ভালো বাসে তারপর কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।রাজা চাইলেও ঐন্দ্রিলা পুরনো সম্পর্কে ফিরতে চায় না। কারণ যার দৃষ্টি শক্তিই নেই,তার সারা জীবনটাই তো অন্ধকারে নিমজ্জিত। কারণ রাজার আলোকময় জীবনে কোনো গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত হোক,সেটা ঐন্দ্রিলা চায় না।কিন্তু তাতে কি?রাজার তো দুটো চোখ আছে। তার চোখ দিয়েই ঐন্দ্রিলা দেখবে গোটা জগৎ।যে ভালোবাসা ঐন্দ্রিলার থেকে পেয়েছে, সেই ভালোবাসায় তো কোনো খামতি ছিল না। তাই কোনো দয়া দাক্ষিণ্য নয়, ভালোবাসার অধিকারে রাজা ফিরে পেতে চায় রাণীকে।বাইরের দুটো চোখে দেখতে না পাওয়াটা বড়ো কথা নয়,রাজা রাণীকে দেখেছে তার মনের চোখে। আর তাতেই একে অপরের সাথে বেঁধেছে গাঁটছড়া।আলাদা হয়নি একে অপরের থেকে।
তাই ভালোবাসতে হলে বোধহয় এমন ভাবেই বাসা উচিত, কাউকে ছুঁয়ে দেখতে হলে এভাবেই ছোঁওয়া উচিত যাতে সারাজীবনের জন্য হাতটা ধরা থাকে।তাতে প্রতিটা প্রেম অমর প্রেম হয়ে উঠবে অন্তত, আর প্রত্যেকটা প্রেমিক প্রেমিকা রাজা রাণীর মতো জন্ম জন্মান্তর অমর সঙ্গী হয়ে থেকে যাবে চিরদিন।