ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প

— হ্যালো জিসান ?
— হ্যা বল।
— কি করিস?
— কিছুই না। তুই কি করছিস?
— সেইম ট্যু ইউ।
— তো?
— তো কি?
— কিজন্য ফোন দিলি বললিনাতো কিছু? কিছু বলবি তুই ?
— কেন? আমি ফোন দিলে কি ডিস্টার্ব ফিল করিস তুই?
— না তা নয়। এই ভোর সকাল বেলা ফোন দিলি তো, তাই ভাবলাম কোন দরকারে ফোন দিলি কিনা।
— অন্য মেয়েগুলো ফোন দিলে তো খুশিহয়ে যাস। আর আমার ক্ষেত্রেই শুধু ব্যস্ততা। তাই না?
— কে বললো যে আমি খুশি হই?

— কেন, গতকাল ক্যাম্পাস থেকে আসার সময় একটা মেয়ের ফোন আসল, তারপর সে কি কথা,তাও আবার হেসে হেসে। আমি সব দেখেছি।
— চোখ যেহেতু আছে সেহেতু তো দেখবিই। কিন্তু বুঝতে ভূল বুঝেছিস।
— যাহ ফুট, সব ছেলেই একরকম।
— ওইটা ডিপার্টমেন্টের বড় আপু ছিলো।
— যাই হোক মেয়ে তো।
— হ্যা মেয়ে। এখন কি করতে পারি ?

— কি আর করবি,ওনাকে আবার ফোন করে হেসে হেসে কথা বল। আমি রাখি। বাই
— আচ্ছা তুই এমন কেন?
— কেমন?
— ঝগড়া ছাড়া আর কিছু পারিস না?
— না কিছু পারি না। তোর মত ছেলের সাথে ঝগড়া না মারামারি করা উচিত। এতো কিসের পার্ট তোর?
— তোর মত মেয়ের সাথে পার্ট দেখানোই উচিত।
— ইইইইইইইইইইই
— হুম
— আই হেইট ইউ। তুই জিন্দেগীতেও আমার সাথে কথা বলবিনা।
— আমি তো তোর সাথে কথাই বলিনা। ফোনটা কে করেছে? আমি না তুই?
— ভূল করে ফেলেছি। আর কখনও করবো না। সরি।
— ইটস ওকে। মনে থাকে যেন।
— হু।রাখি। গুড বাই।
— বাই

(খট করে লাইন কেটে গেল) মোবাইলটা জীর্ণ পকেটে রাখতে রাখতে আমি মুচকি একটা হাসি দিলাম। তারপর আবার ট্রল বানাতে মনোযোগ দিলাম ছোটকাল থেকেই আমি আর পরী খুব ভাল বন্ধু। ওদের বাড়িও একদম পাশাপাশি। ওদের দুই পরিবারের মধ্যে যেন একেবারে রক্তের সম্পর্ক। শুধুপরিবারই নয় আমাদের মধ্যেও কখন যে বন্ধুত্বের চেয়েও গভীর আরেকটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে আমরা নিজেরাই জানে না।

সারাক্ষণ খুনশুটি লেগেই আছে। কিন্তু কেন যেন একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারি না। ঝগড়া করি কিন্তু আমরা দুজনই করি। আবার নিজেরাই মিটমাট করে ফেলি। দুজনই দুজনকে ভালবাসে। কিন্তু ভালবাসি কথাটা এ পর্যন্ত কেউ কাউকে বলে নি আমি সাধারণত ফেইসবুকে তেমন একটা বসে না। কিন্তু আজ যেহেতু ঝগড়া হয়েছে তাই একটু বসা উচিত। তাই রাতের দিকে লগ ইন করল সে। পরী ইনবক্সে গিয়ে দেখল active about 5 minutes ago বুঝতে পারলো মহারাণীও তাকেই খুঁজছেন। সেও চ্যাট অন করে বসে রইল। আরো প্রায় দশ মিনিট পরে পরী অনলাইনে এল।আমি মনে মনে অনেক খুশি হলেও নক দিলাম না। অপেক্ষা করতে লাগল কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরেও পরী নক দিল না। আমি আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। তারপর যেই না পরীকে নক দিতে যাবে তখনই পরী মেসেজ পাঠাল,

— ওই
— কি?
— কিছু না। বাই।
— সকালের রাগ এখনও কমে নি?
— না।
— তো কি করলে মহারাণীর রাগ ভাঙবে?
— আমাকে বিয়ে কর।
— বিয়ে? তাওতোর মত পেত্নীকে? অসম্ভব।
— কি?
— আমাকে কোন ভূতে পাইল যে আমি তোকে বিয়ে করব?
— তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
— জিন্দেগীতেও না।
— সত্যি?
— সত্যি সত্যি সত্যি
— ও আচ্ছা। তাহলে বাই।
— ঘুমাবি?
— হুম
— আচ্ছা গুড নাইট।

পরী অফলাইনে চলে গেল।কথাটা মজা করে বললেও পরী হয়ত সিরিয়াসলিই নিয়েছে এবং সিরিয়াসলিই রাগ করেছে। যাই হোক, কাল সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে সামনাসামনি সব রাগ ভাঙাবে, এই চিন্তা করে আমি ঘুমিয়ে পড়িয় সকালে পরীকে অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে জিসান । কিন্তু রিসিভ করছে না মেয়েটা। মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অজানা ভয় দেখা দিল আমার। শেষে আন্টির কাছে ফোন দিলাম

— আসসালামু ওয়ালাইকুম আন্টি,
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ জিসান?
— জ্বী আন্টি ভালো। আপনি?
— আমিও ভাল আছি।
— আচ্ছা আন্টি পরী কোথায়?
— ও তো ওর রুমে। কেন?
— না আজ ক্যাম্পাসে আসলনা তো তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।
— ও আচ্ছা। না হঠাৎ ওর মাথা ব্যাথা করছে বলে আজ গেল না।
— আচ্ছা। তো এখন কেমন আছে?
— এইতো ভালই।
— ও আচ্ছা।
— জিসান আজ বিকেলের দিকে একটু আমাদের বাসায় এস তো।
— আচ্ছা আন্টি আসব।
— আচ্ছা রাখি তাহলে।
— আচ্ছা আন্টি।

কেন বাসায় আসতে বললেন, একবারও জিজ্ঞেস করিনাই। ভাবলাম রাতে গেলেই জানতে পারবো রাতে দেখা গেল আমার মা ও যাচ্ছেন পরীদের বাসায়। এতক্ষনে আমি একটু আগ্রহ জন্মাল। তারপরেও আরো কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা কলাম পরীদের বাসায় গিয়ে দেখলাম বাসার মানুষজন সবাই দৌড়া দৌড়িতে আছেন। পরীকে দেখা যাচ্ছে না। হয়ত নিজের রুমেই আছে। কিন্তু কেন যেন আমি পরীর রুমে গেলাম না একসময় আর থাকতে পারলাম না আমি । পরীর মা কেই জিজ্ঞেস করে ফেলাম শেষ পর্যন্ত। কিন্তু উত্তরে যা শুনলো তাতে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কারন, বর্তমানে যে অনুষ্ঠানে আছে সে অনুষ্ঠান হল পরীকে বরপক্ষ দেখতে আসার অনুষ্ঠান আমি সবকিছুতেই যেন ঝাপসা দেখছে।নিজের কান,চোখ কোনটাকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা। মনে পড়ে গেল গতকাল রাতের কথা পরী জিজ্ঞেস করেছিল ওকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু আমি তখন ওর কথার কোন গুরুত্বই দেয় নি।

ও কি আর জানত এক রাতেই পরী এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেবে! এবার কোন কিছু না ভেবেই আমি সোজা পরীর ঘরে চলে গেলাম ।অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ওকে আজ। অন্যদিন হলে আমি পরীর দিকে একবার তাকাতাম । কিন্তু আজ তাকানোর কোন ইচ্ছাই নেই আমার । কারন পরী আজ সেজেছে অন্য কারোর জন্য। আমাকে দেখে নিধি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। তারপরেও আমি কিছু একটা বলতে চাইলো কিন্তু কি বলবে আমি ? নিজের সুযোগটা তো নিজেই হারিয়ে ফেলেছি। পরী কোনই দোষ নেই।

আবার কি ভেবে পরী রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। এবার একেবারে পরীদের বাসা থেকেই বেড়িয়ে পড়লাম পুরো পৃথিবীটাই অসহ্য লাগছে। এই সামান্য ভূল এতো বড় কষ্ট কেন দিল আমাকে? আর নিধিই বা কেমন? একবার বললও না আজ ওকে দেখতে আসবে! অনেকদিন পরী আমাকে বারে যাবার জন্য বলছিল। আমি ওকে পাত্তাই দিতাম না। আজ আমিই পরীকে ফোন দিয়ে বের হতে বলাম। তারপর অন্ধকারের দিকে পা বাড়ালাম নিজের অজান্তেই আর নিমিষেই হারিয়ে যেতে থাকলো……

–জিসান এই জিসান?
— উমমমম?
— কিরে উঠ, আর কত ঘুমাবি? ক্যাম্পাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
— ক্যাম্পাস ?

লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম আমি। নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলো,নাহ, বাস্তবেই আছি আমি। তাহলে এতোক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিলাম ভার্সিটিতে গিয়ে প্রথমেই নিধির ক্লাসে গেলাম আমি। নাহ স্বপ্নটা মিথ্যে। নিধি দিব্যি ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আমি পরীর কাছে গিয়ে বলাম

–পরী তোর সাথে কিছু কথা আছে।
— কি কথা?
— একটু পারসোনাল কথা।একটু এদিকে চল।
— আচ্ছা এখন আমার ক্লাস শুরু হবে, ক্লাস শেষে তোকে ফোন দিব। তারপর তোর পারসোনাল কথা বলিস,কেমন?
— না তোকে এখনই শুনতে হবে।
— আমার ক্লাস?
— পাঁচ মিনিটে নিশ্চয়ই খুব দেরি হবে না। পরীদেখল আমি খুব ঘামছে। হঠাৎ ভয় পেয়ে গেল পরী। তাই রাজি হয়ে বান্ধবীদের থেকে একটু আড়ালে আসল। তারপর বললো, . — কি ব্যাপার বলতো জিসান? তুই এভাবে ঘামছিস কেন?

— কাল রাতে আমি তোর সাথে ফান করেছিলাম।
— হুম। তো?
— আমি তোকে বিয়ে করতে চাই।
— তো?
— তুই প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাসনা। বলেই হঠাৎ আমি পরীর হাত ধরে কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলাম। পরী খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। কি বলবে বুঝতে পারছে নাহ। আমাকে কে এমন অসহায় অবস্থায় কখনও দেখেনি ও।

— তোর হঠাৎ কি হল জিসান ?
— কালরাতে একটা ভীষণ বাজে স্বপ্ন দেখেছি।
— কি দেখলি? — দেখলাম তুই আমাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করছিস। এইবার পরী মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল অমনি বললো,
— আসলে জিসান , সত্যি বলতে কি তুই যা দেখেছিস তাই সত্যি। আমাকে আজ দেখতে আসবে।
— মানে?
— মানে বিয়ের দিন পাকাপাকি করতে আসবে আর কি।
— তুই রাজি এই বিয়েতে?
— হ্যা। শুনেছি ছেলে নাকি অনেক স্মার্ট।

তোর মত ভ্যাবলানা।এ রকম একটা স্মার্ট ছেলে রেখে তোর মত ভ্যাবলাকে কোন দুঃখে বিয়ে করব, বল? বলেই হেটে চলে আসার ভান করল পরী। কিছুদূর আসার পরেও যখন আমি ডাকলাম না তখন পিছনে তাকালো। আমি মাটিতে বসে মাথা নিচু করে আছে। হঠাৎ ই পরীর মন খারাপ হয়ে গেল। ছেলেটাকে ও অনেক ভালবাসে। আর আমি যে তাকে কেমন ভালবাসে তাতো সামনেই দেখছে। আর পারলনা। ফিরে এসে আমার সামনে এসে বলল,

-এই উঠ। আমি দাড়ালাম।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে অবাকহয়ে গেল পরী। কারণ চোখদুটো লালহয়ে গেছে একদম। যেন এখন কেঁদেই ফেলবে ,

— আমাকে হারানোর এতো ভয় তোর? টুপ করে একফোটা চোখের জল পড়লো পরীর হাতে।কিছুই বলল না জিসান । চুপ করে মাথা নিচু অবস্থায়ই দাড়িয়ে রইল। .তারপর পরী হঠাৎ আমার শার্টের কলার ধরে মুখের কাছে এনে বলল,

-এই ভ্যাবলা,আমি কোথাও যাচ্ছিনা। আর কাঁদিস না।তোকে ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করব না। ভ্যাবলারমত আর কাঁদিস নাতো।

— তাহলে একবার ভালবাসি বল?
— ভালবাসি তোকে। অনেক ভালবাসি এই ভ্যাবলাটাকে বলেই পরী হাসতে হাসতে চলে গেল। আর পিছন থেকে আমি হঠাৎ আশপাশ না ভেবে একটু জোরেই বলে উঠল, ভালবাসি পরী খুব বেশিই ভালবাসি।বলনা কখনো ছেড়ে চলে যাবিনা আমায়? পরী আর হাসতে পারেনা।দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।আর বলে

— কখনো না জিসান থাক না তাদের মতো করে কান্না মিশ্রিত ভালোবাসা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত