-এই মিনা, শোন
-কি তাড়াতাড়ি বল, বাসায় যেতে হবে। দেরি হলে আম্মু বকবে।
-আরে দোস আজ যে কথাটা বলবো এটা তাড়াতাড়ি বলা যায় না।
-না হলে নাই। কাল শুনবো। প্রপোজ ট্রপোজ তো করবি না। তাহলে সমস্যা কি।
-দোস তুই বুঝে ফেললি কেমনে, হুম?
-সর বান্দর, থাবা খাবি কিন্তু। এর আগে তুই না হলেও পচিশ বার প্রপোজ করেছিস। আচ্ছা সত্যি করে বলতো, এমন অভিনয় করে আমাকে কতবার লাভ ইউ বলেছিস। একটা সময় আমি ভাবতাম তোমার সঙ্গে আমার ওই ধরণের সম্পর্ক হতে পারে কিন্তু এখন হয় না। বন্ধুর বাইরে কিছু ভাবলে কিন্তু তোর মাথা ফাটাবো।
-আচ্ছা মিনা, অমাকে কি তোর সত্যি সত্যি জাস্ট ফ্রেন্ড মনে হয়?
-হুম, তো আবার কি মনে হবে!!
এবার আমি মিনার হাতটা ধরে ইমোশনাল কণ্ঠে বললাম। দোস বিশ্বাস কর, তুই অনেক ভাল। তোকে যে আমার এত্তো ভাল লাগে বুঝতে পারি না। যখন তুই দূরে কোথায় বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করিস আমি তোকে ফ্ল করি। তোর হাসি, চাহনি, কথা বলার ঢং সবকিছুই আমার ভাল লাগে। কিন্তু কেন জানি সিরিয়াস হয়ে তোকে বলতে পারি না। আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়ে হল তুই। আমার মনে হয় , যদি তোকে জীবনের এই সংক্ষিপ্ত পথে পাশে পাই আর কিছুর দরকার হবে না।
বিশ্বাস কর, যতো বার তোকে প্রপোজ করেছি তুই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিস আমাকে বোঝার চেষ্টা করিসনি। দোস, তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিস না। তোকে কোনদিন কষ্ট দিবো না। তোর হাসিটা আজীবন দেখার ব্যবস্থা করে দে না দোস।
মিনা আমার কথাগুলো শুনে সত্যি সত্যি ইমোশন হয়ে পড়ল। হতভম্ব হয়ে গেল। সে ভাবতেই পারেনি আমি এমন করে বলতে পারি। আমার তখন নিজের ওপরও বিশ্বাস হচ্ছিল না। এতো সুন্দর করে কিভাবে সাজিয়ে কথাগুলো বলে ফেললাম। মিনার অবস্থা দেখে আমি মনে ভাবছি নাটকটা সুন্দরই হবে। মিনা সিরিয়াস হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ফাহিম! দেখ ইয়ার্কি করছিস না তো?
আমি মুখে আকাশ পাতাল সত্যতা এনে, একটা নিষ্পাপি ভাব ধরে বললাম বিশ্বাস কর দোস। তোকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি। আমি সবসময় ফান করি। কিন্তু এটা মোটেই ফান করছি না মিনার ঠোঁটে তখন একফালি হাসি।এই হাসির মানে আমি খুব ভাল করে জানি। মিনা হ্যা-ই বলবে।। মিনা বলল, ফাহিম শোন, একটা সত্যিকথা কি জানিস? কি? আমিও তোকে ভীষণ ভালবাসি। কিন্তু কোনদিন বলতে পারিনি। এরআগে তুই যতবার প্রপোজ করেছিস, তোকে যাচাই করার জন্য হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। তুইও পরে বোঝাতে চেষ্টা করিসনি। বলেছিস, হুম ফান ছিল। আচ্ছা চল, আজ সারাদিন আমরা ঘুরবো। বাসায় দেরি করে গেলে আম্মু আমার গুষ্ঠি উদ্ধার করে ফেলবে। তাই বললাম, আজ না দোস আরেকদিন যাবো। কিন্তু মিনা কিছুতেই ছাড়ল না।
-কিরে দোস তোর মা না রাগ করবে, আমি চাই না তুই বকা খাস।
-আরে আম্মু তো আমাকে রোজ বকে। বকা তার স্বাভাব হয়ে গেছে। তুই চল তো
সুন্দর একটা জায়গায় গিয়ে আমরা বসলাম। একটু দূরে লম্বা লম্বা ঘাস। মিনা বলল, ওইখান থেকে লম্বা ঘাস তুলে আন, যা।
-এনে কি করবো?
-ঘাস দিয়ে আংটি বানিয়ে ফিলমি কায়দায় আমাকে প্রপোজ করবি। আমার সখ যে আমাকে ভালবাসবে। সে খুব রোমান্টিকভাবে প্রফোজ করবে।
আমি একটা ঘাস দিয়ে আংটি বানিয়ে, হাটু গেড়ে বসে মিনাকে প্রপোজ করলাম। ওর চোখে পানি চলে এল। আমি হেসে দিয়ে বললাম, দোস নাটকটা কেমন হল আমাদের। সুন্দর না? মিনা খানিক সময় নীরব বসে থেকে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল। আমার কথা শুনলো না। ওকে থামানের অনেক চেষ্টা করলাম। মিনার প্রথম চোখের পানি আর দ্বিতীয় চেখের পানির মধ্যে ছিল আকাশ পাতাল ব্যবধান। ও খুব কষ্ট পেয়েছিল সেদিন। আজ ওর সুন্দর একটি ছেলে হয়েছে।স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে ছেলেটির নাম রেখেছে ফাহিম। প্রতিদিন অন্তত ওর সঙ্গে আমার একবার দেখা হবেই। সে কোনদিন কথা বলে না। আমি বলি না। চোখ নিচে নামিয়ে চলে আসি। কিছু বন্ধু থাকে অকৃত্রিম, দায়হীন সম্পর্ক। নিজের সবকথা খুলে বলা যায়। একজন বন্ধুই ভাল বলতে পারে মানুষটি খারাপ না ভাল। কেন যে সেদিন ফান করতে গেলাম -আজও বিষয়টি আমাকে প্যারা। আর কোত্থেকে যে সেদিন এতো আবেগ এসেছিল।
আজ খুব ইচ্ছে করে মিনার হাত ধরে ক্ষমা চাই। কিন্তু সেই সুযোগ কি হবে কোনদিন। মিনা হয়ত কোনদিন আমাকে ক্ষমা করবে না। মিনার একটি চিঠি আমার কাছে আছে। যেটি সে পাঠিয়েছে তার বিয়ের পরে। চিঠিতে সে কিছুই বলেনি। একটি উপদেশ দিয়েছে মাত্র। সুন্দর একটি মেয়ে দেখে বিয়ে করতে বলেছে। যে খুব খেয়াল রাখবে। আর সে আমাকে আজীবন ভালবাসবে। মেয়েটি প্রচুর আবেগি ছিল। সরি মিনা। সবার সামনে ক্ষমা চাইলাম। শেফালি ফুল তোমার প্রিয়। একদিন যদি সেই পুরনো দিনের মতো হাত ভর্তি শেফালি নিয়ে হাজির হই কেমন লাগবে তোমার। আমি জানি কিছুই হবে না। আবেগহীন মানুষটার আজ এতো আবেগ কেন? সময়ের মূল্য না দিলে বুঝি এমনই হয়।