এক্সাম হলে বসে বসে কবিতা মনের করার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই এক বাক্যের সাথে অপর বাক্যের মিল হচ্ছেনা,মাঝে মাঝে সাজিদের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছি,ব্যাটা আমারেও দেখা একা পাস করে আমাদের রেখে চলে যাবি নাকি,সাজিদ কে বলার কারণ হচ্ছে সে কিছুক্ষন পর পর পকেটে হাত ঢুকাচ্ছে তারপর গোপনে পকেটের দিকে তাকিয়ে খাতায় ফুল স্পীডে লিখা শুরু করছে।সাজিদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এক্সাম মে কুছ নকল হ্যায় তাই আবার ইশারা দিলাম কিন্তু সে আমার দিকে শুধু হাত তুলে থামিয়ে দিল।কিছুক্ষন পর আবার বললাম,ব্যাটা লুজ পেপার টা তো দিবি নাকি,তিন ব্রেঞ্চ পিছনে বসে আছিস তো কি হইছে?সে আবার আগের মত একি কায়দায় হাত তুলে থামিয়ে দিল।সাজিদের পকেটে হাত দেয়ার ব্যাপারটা স্যারের চোখ এড়িয়ে যায়নি,তিনি সাজিদ কে উঠে দাঁড়াতে বললেন।সাজিদ উঠে দাঁড়ানোর পর আমাদের দিকে তিনি তাকিয়ে বললেন,
-আমার দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় বলছি এই ছেলের কাছে নকল রয়েছে তোমরা কি বল?
আমি তো একমত ব্যাটা নকল এনেছিস নিজে লিখে লিখে খাতা ভরে ফেলছিস বন্ধুদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিস না।সাজিদ ফ্যাকাসে মুখে বলল,
-জ্বী না স্যার,আমার কাছে কোন নকল নেই।
-আমারে শিখাছ নকল আছে কিনা,বিয়াদব ছেলে নকল করছিস আবার বড় বড় কথা থাপ্পড় মেরে সব দাঁত মাটিতে ফেলে দেয়া দরকার।
আমিও মনে মনে বললাম অবশ্যই ফেলে দেয়া প্রয়োজন,ব্যাটা সব এক্সাম আমার লুজ দেখে লিখলি আজ কিনা আমাকেই দেখাচ্ছেনা।
-ইয়ে মানে স্যার সত্যি আমার কাছে নকল নেই।
-আমারে নকল আছে কিনা শিখাছ আমি বলছি আছে যদি না থাকে তাহলে আমি কান কেটে ফেলব।
দীর্ঘ ২০মিনিট স্যার সাজিদের শার্টের পকেট,প্যান্টের পকেট খুঁজে কোন নকল পেলেন না,শুধু ২০০০ টাকা এবং কয়েকটি প্রাণ ম্যাংগ চকলেট পাওয়া গেল।স্যারের চেহারা ক্রমশ লাল হচ্ছিল সাথে এই ঠান্ডায় ঘেমেও গিয়েছেন।লাল হচ্ছে রাগে নকল গেল কোথায়?ঘেমে যাচ্ছেন লজ্জায়।একবার ভাবলাম আমি বলি স্যার, আন্ডারের ভিতর লুকিয়ে ফেলতে পারে ওইটা খুললেই সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।কিন্তু পরে ভাবলাম যতই হারামী হউক বন্ধু তো।
.
স্যার যখন দেখলেন যে সত্যি নকল নেই তখন হতাশ হয়ে বললেন,
-নকল নেই তো বার বার প্যান্টের পকেট থেকে কি বের করে দেখছিলে?
-আসলে স্যার গত ২দিন আগে আমার প্যান্টের পকেট থেকে ১২০০ টাকা চুরি হয়েছে,চুর এতই ব্রিলিয়ান্ট যে আমার প্যান্টের পকেটে কিভাবে যে হাত ঢুকিয়ে কখন টাকা নিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।তাই আজ বার বার পকেট চেক করছিলাম সেইম ব্যাপার আজ যদি হয়।
স্যার আর কিছু বলেন নি একবার ভাবলাম বলি যে স্যার কান কখন কাটবেন কথা যখন দিয়েছেন সেটা রাখা মুসলমান হিসেবে আপনার দায়িত্ব তবে সাহসের অভাবে বলতে পারিনি।সাজিদ যখন আবার লিখতে শুরু করছে তখন ফিসফিস করে বললাম,হারামি তরে এত ইশারা দিয়ে বললাম লুজ দিতে তাহলে বার বার হাত দিয়ে থেমে যাওয়ার ইশারা কেন দিচ্ছিলি?সাজিদের উত্তর শুনে আমি হতবাক!সে বলল,আরে থামার নির্দেশ কোথায় দিলাম?আমি ভেবেছিলাম তুই মনে হয় আমি যে চকলেট খাচ্ছি সেটা দেখে চকলেট চাচ্ছিস যে আমারে চকলেট দে তাই হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছিলাম পাবি পাবি তর জন্য চকলেট রাখছি এক্সাম শেষ হলে দিব।তখন রাগে গজগজ করতে করতে বললাম ব্যাটা তর মনে কি আমি এক্সাম দিতে এসে তরে লুজ এর বদলা চকলেট দিতে বলব ব্যাটা ফাজিল।
.
এক্সাম শেষ করে ফুচকার খাওয়ার জায়গায় এসে দেখি সেখানে একদম কোণার দিকে সিহাব ও তার জিএফ বসে বসে ফুচকা খাচ্ছে।সিহাবের জিএফ বলা ঠিক হয়নি কারণ সিহাবের মতে তার জিএফ তার হাফ গার্লফ্রেন্ড।ফ্রেন্ডের থেকে বেশি গার্লফ্রেন্ডের থেকে কম সিহাব একবার,দুইবার,তিনবার চেষ্টা করেও ফুল গার্লফ্রেন্ড বানাতে পারেনি তাই হাফ নিয়েই এখন জীবন কাটাচ্ছে।সিহাবের বেশ কয়েকবার আমাকে বিভিন্ন প্যারায় ফেলে লাইফের ১২টা বাজিয়েছে আজ ব্যাটা কে হাতেনাতে শিক্ষা দিব।আমি এবং সাজেদ মোটামুটি একমত হয়ে গেলাম আজ হয় সিহাবের ১২টা বাজবে নয়ত হাফ গার্ল্ফ্রেন্ড চিরতরে চলে যাবে।যেহেতু সিহাবের জিএফ আমাদের আগে কখনো দেখেনি শুধু নাম শুনেছে সেহেতু তেমন কোন অসুবিধায় পরতে হবেনা।সিহাবের কাছে গিয়ে বললাম,
-কিরে জিএফ নিয়ে বসে বসে খাচ্ছিস আর আমরা বললেই টাকা নেই ফকির হয়ে যাছ।
সিহাব আমাদের আগমনে হকচকিয়ে বলল,
-আরে তোরা বস বস এ হচ্ছে নীলা আমার ফ্রেন্ড।
-ওহ আমরা ভেবেছিলাম তর জিএফ সরি আপু।
নীলা আমাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বলল,
-ইটস অকে।
আমি আবার বললাম,
-তা তর হাফ গার্লফ্রেন্ড কোথায়?রাক্ষস টা আজ তর সাথে নাই নাকি?
যদিও আমি জানি নীলাই হাফ গার্লফ্রেন্ড তবুও বললাম কারণ আমারে ফ্রেন্ড শিখানো হচ্ছে।
-ইয়ে মানে কি বলিস এসব ও রাক্ষস হতে যাবে কেন?
-তুই ওই তো সেদিন বললি,শালির বেটি ফুল গার্লফ্রেন্ড হবিনা,হাফ থাকবে।এইদিকে খাওয়ার ব্যাপারে তো সব ফুল ওই খাচ্ছিস ওর ফাস্টফুড,চাইনিজ এসব খাবারের পিছনের আমার বাপের টাকা সব শেষ।তাও শান্তি পেতাম যদি ফুল গার্লফ্রেন্ড হইত।
-ফাহিম থাম থাম ইয়ার এসব কি বলছিস?
-থামার কি আছে রে তুই বলছ নাই নাকি,আসলেই তো হাফ কি রে হইলে ফুল হবে।ব্যাটা সাজেদ তুই চুপ কেন?তুই কিছু বল।
সাজেদ মাথা উপর নিচ করে বলল,
-অবশ্যই,অবশ্যই ফাহিম ঠিক কথা বলেছে।সিহাব তর রিলেশনের কথা শুনে আমার সত্যি কষ্ট লাগে কোথাকার কোন ফকিরের মেয়ের প্রেমে পরে সব শেষ করে দিচ্ছিস।কয়েকদিন পর দেখা যাবে বাপ ব্যাটা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিস তুই হবি ভর্তি কিডনি বিক্রি করে আর তর বাপ হবে সম্পত্তি ও ছেলে হাড়ানোর শোকে।নীলা আপু আপনি বলেন এসব এর কোন মানে হয়।
-আমিও তাল ঠিক রেখে সুর চেঞ্জ করে বললাম তর উচিত ছিল নীলা আপুর মত একটা মেয়ের সাথে প্রেম করা।
নীলা আপু দেখি রাগে,দুঃখে পাথর হয়ে গেছেন আমরা সামনে না থাকলে হয়ত সিহাবের গলায় চেপে ধরে মেরে ফেলতেন।
-শালা তোরা আমার সামনে থেকে যা নীলা তুমি কিছু মনে কর না ওরা আসলে মজা করছে।
-আরে ব্যাটা মজা কি যা সত্য তা বললাম।তাছাড়া নীলা আপু মাইন্ড করবে কেন?আমরা তো নীলা আপু কে বলিনি,তর হাফ জিএফ রে বলছি।
-আরে ভাই থাম,তোরা প্লিজ যা এখন নইলে নইলে…
.
সিহাবের নইলে নইলে কথার মধ্যেই আমরা চলে এলাম,যাও বন্ধু এবার বাঁশ সামলানোর দায়িত্ব তোমার।বাসায় এসে রুপাকে ফোন দিয়ে বললাম,
-রুপা তুমি কি বলতে পার হাফ গার্লফ্রেন্ডের সুবিধা কি?
-তোমার এসব সুবিধা অসুবিধায় আমি নেই আগে বল এক্সাম কেমন হয়েছে?
-এক্সাম হয়েছে এক্সামের মত অল্পের জন্য স্যারের কানের উপর দিয়ে ঝড় এবং সাজিদের মাথার উপর দিয়ে রকেট গিয়েছে।
-ফাজলামি না করে বল কেমন হয়েছে?
-যা হবার তাই হয়েছে।
-তারমানে খারাপ হয়েছে পড়াশোনা না করলে তো এমনি হবে।
-তুমি কিন্তু বল নাই যে হাফ গার্লফ্রেন্ডের সুবিধা কি?তুমি না পারলে আমি বলে দিচ্ছি সব থেকে বড় সুবিধা হল দায়ভার নেই কারণ তারা প্রথম থেকেই ভালবাসি আবার ভালবাসিনা এর মধ্যে অবস্থান করছে সেহেতু অন্য যে কারোর সাথে বিয়ে হয়ে যাবার সময় হাফ বয়ফ্রেন্ড কে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছেনা।
-এসব নিয়ে কি গবেষণা শুরু করেছো।
-গবেষণা না,তবে ভাবছি।
.
৪/৫ দিন আমি সিহাবের সামনে যায়নি ফোন দিলে ফোন ও রিসিভ করিনি,হঠাৎ করে সেদিন দেখা আমাকে দেখে উদাস ভাবে বলল,
-দোস্ত সব শেষ।
-বলিস কি আমাদের ওই ঘটনার পর থেকে নাকি।
-আরে নাহ ওইটা তো সেইদিন বুঝাইছিলাম ফান ছিল।
-যাক আল্লাহ বাঁচিয়েছেন,আমাদের জন্য তো আর ছেড়ে যায়নি।হঠাৎ ব্রেকআপ এর কারন!
-ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তবে যাবার সময় বলে গিয়েছে কি জানিন?
-কি বলে গিয়েছে?
-সেও নাকি আমাকে ভালবেসেছিল।
-বলিস কি একদম ফুল ভালবাসা।
-হ্যাঁ রে সেও আমাকে সম্পূর্ণ ভালবেসেছিল।
.
আমিও বলে উঠলাম আহা রে বেচারি ভালবাসার কথাটা শেষ মুহুর্তে বলে আমাদের বিপদে ফেললি,দেখা যাবে সব শেষ নীলা এবং সিহাবের বিয়ে হচ্ছে কাজী অফিসে সাক্ষী হলাম আমি,রুপা ও সাজিদ।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা