অসমাপ্ত ভালবাসা

অসমাপ্ত ভালবাসা

এক চাচাতো বোনের প্রেমে পরেছিলাম। আমি তখন নবম শ্রেনিতে পড়ি। আর চাচাতো বোনও পড়ে নবম শ্রেনিতে। তখন আমার বয়স ১৫/১৬ ছিলো।বর্তমানের মতো ছিলাম না। আমাদের ঘরের পাশেই ছিল জলিল চাচার ঘর। উনারই মেয়ে ফারিয়া (কাল্পনিক)।আমি আর ফারিয়া একই স্কুলে পড়াশোনা করি। তাই আমাদের স্কুলে যাওয়া আসাটা এক সাথেই হতো।

ফারিয়া আর আমার আচরণ ছিলো বন্ধুত্বের মতো। ছোট বেলা থেকেই আমরা একসাথেই বড় হয়েছি। একদিন আমরা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। পথের মধ্যেই শুরু হয় অঝোর বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মাজে কোন দোকানপাটে যায়গা না পেয়ে আমরা দারালাম একটি বড় গাছের নিচে। তবুও আমরা ভিজে গেলাম। আমি ফারিয়ার মুখামুখি হয়ে দাড়িয়ে আছি। বৃষ্টিতে যখন ফারিয়ার মুখ আর চুল ভিজে একাকার।আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। কারন, ভিজে চুলে মেয়েদের এতো সুন্দর লাগে তা আমার আগে জানা ছিলো না। সেদিন ফারিয়াকে মায়াবী লাগার কারনে মনে মনে তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।

সেদিন আর বৃষ্টি না থামায় আমরা ভিজে ভিজে বাড়িতে চলে আসলাম। আসার সময় যখন বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা ফারিয়ার মুখে পড়ছিল তখন তাকে আরো বেশি মায়াবী লাগছিল। আমি সেই দিন ফারিয়ার ঐ মায়াবী মুখটার কথাই ভেবে যাচ্ছি। কেন যেন ফারিয়াকে ছাড়া আর কোন কিছু ভাবত ভালো লাগছে না। আজ কেন যেন তার সামনে জেতে লজ্জা করছে। একসাথে বাড়ি ফিরার পর আর ওর সামনেও যাইনি। আমাদের ঘর পাশাপাশি তাই রাতদিন যখনই হোক একজনের বাসায় আরেকজনের চলে আসা।সন্ধ্যা হতেই পরতে বসলাম,কারন তখন আবার সামনে পরিক্ষা। ঠিক তখনি ফারিয়ার আগমন।

-কিরে তানবীর আজ তোকে স্কুল থেকে আসার পর দেখতে পাচ্ছি না যে। (ফারিয়া)
-এমনেই,ভালো লাগছে না তাই (আমি)
-অন্যদিন ভালো না লাগলে তো আমার কাছে যাছ,আজকে কি হলো তোর (ফারিয়া)

-কিছু না, দেখলাম তুই কাজ করিস তাই আর তোর কাছে গেলাম না (আমি)

-আচ্ছা হইছে, এখন কি করিস (ফারিয়া)

-দেখোছ না পরতেছি (আমি)
এর ফাঁকে ফারিয়া আমার সামনে থাকা খাতা নিয়ে গেলো
-পুরো খাতা জুরে আমার নাম কেন(ফারিয়া)
-তোর নাম খাতায় লেখতে কি মানা আছে (আমি)
-না,তা অবস্য ঠিক। আচ্ছা আমি আসি,তুই পড়, এ বলে সে মুচকি হেসে চলে গেল।

আজকে কেন যেন আমি কথা বলতে সাহস ফেলাম না।অন্য দিন আমিও বকবক করে তার মাথা পাগল করে দিতাম। আমি কিছুক্ষন পর রাতের খাবার শেষ করে ঘর থেকে বের হলাম।এরপর আস্তে আস্তে ফারিয়ার রুমের জানালা দিয়ে তাকে চুপি চুপি দেখতে লাগলাম।লাইটের আলোয় যেন ঝলমল করছে ফারিয়ার মুখ।। কিছুক্ষন দারিয়ে থাকার পর চাচা ঘর থেকে বের হলো।কে ওখানে, বলার সাথে সাথেই চলে আসলাম দেখার আগে।চাচা লাইট নিয়ে বের হয়েছে, দেখতে কেউ আছে কিনা।কিন্তু আমিতো তার আগেই ঘোরে ডুকে হাজির।।। এখন আমার শুধু একটাই ভাবনা শুধু ফারিয়াকে নিয়ে।এখন প্রতিটি রাত খুব কষ্টে কাটে। শুধু একটা কারনে কখন যে ফারিয়াকে দেখবো। এরপর সকাল হতেই আমি আর ফারিয়া স্কুলে চললাম। আমরা পাশাপাশি হাটছি আর। আমি ফারিয়ার দিকে আড়চোখে দেখছি, কারন কেন জানি আজকে ফারিয়াকে অপূর্ব লাগছে।

-কিরে তানবীর, তোর কি মন খারাপ। (ফারিয়া)
-না, কেনো??(আমি)
-না মানে, আজ দুদিন হলো তুই যেন কেমন হয়ে গেলি।আমার সাথে আর আগের মতো কথা বলিস না।(ফারিয়া)
– না কিছুনা এমনিতেই। (আমি)
-কি হয়েছে বল,চাচা বকাবকি করেছ
-না আসলে তেমন কিছুনা। (আমি)
-তো কি হয়েছে বল। (ফারিয়া)
-আসলে তোকে না একটা কথা বলার ছিল, কথাটা দুইদিন হলো বলবো বলে বলা হয়নি। (আমি)
-কি বলবি বল। (ফারিয়া)
-আসলে তোকে না আমি অনেক ভালবাসি রে। (আমি)
-????(ফারিয়া)
-কিরে কি হলো কিছু তো বল(আমি)
-আচ্ছা পরে বলবো স্কুল এসে গেছে(ফারিয়া)
-ও, আচ্ছা চল(আমি)

আসলে ওর সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে স্কুল চলে এসেছে খেয়ালি করিনি। অতপর ছুটির পরে স্কুল মাঠে ফারিয়াকে অনেক খুঁজলাম, কিন্তু কোথাও তাকে দেকতে পেলাম না।তাকে না পেয়ে তার এক বান্ধবিকে ডাক দিলাম। জান্নাত৷৷

-কিরে কি শুনি এগুলো (জান্নাত)
-কি শুনলি আবার তুই (আমি)
-ফারিয়া সব বলেছে।(জান্নাত)
-আচ্ছা শুনছচ ভালো করছোচ,এবার বল ফারিয়া কই। (আমি)
-ও তো চলে গেছে (জান্নাত)
-ওচলে গেছে, (আমি)
– হুমম, আচ্ছা আমি আসি(জান্নাত)
-আচ্ছা যা (আমি)

ও আমাকে রেখে চলে গেল, ও আবার আব্বু-আম্মুর কাছে এসব বলবে না তো।তাহলে তো আবার তাদের কাছে কেলানি খেতে হবে।এ ভয়ে সারা দিন ঘুরাফেরা করে সন্ধায় বাড়ি ফিরলাম। এরপর বাড়ি ফিরতেই ফারিয়া আমার কাছে দৌড়ে আসলো। এসে জিঙ্গেস করলো কিরে সারাদিন কোথায় ছিলি।
বন্ধুদের সাথে।

-আচ্ছা তুই আমাকে রেখে চলেএলি কেন। (আমি)
-এমনিতেই। (ফারিয়া)
-ওও, তো ঐ কথাটার উওর তো পেলাম না(আমি)
-কোনটা(ফারিয়া)
-ঐযে বললাম ভালবাসি(আমি )
-আমি তো তোকে ভালোবাসিই,একথা আবার বলতে হয় নাকি(ফারিয়া )
-আরে এই ভালোবাসা সেই ভালোবাসা না, এটা হলো সেই ভালোবাসা, যেই ভালোবাসা দিয়ে তোকে বিয়ে করে রাখতে পারবো । (আমি)
-আচ্ছা সেটা সময় হলে দেখা যাবে,এবার বাড়ি যা,গিয়ে খাওয়া -দাওয়া কর। (ফারিয়া )

এরপর থেকে আমাদের দিনগুলো খুব আনন্দে কাটতে লাগলো। হটাৎ একদিন রাএে আমি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে আছি, এমন সময় দরজায় কে যেন করা নারলো।আমি দরজা খুলে দেখি ফারিয়া,দরজা খোলার সাথে সাথে সে আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।আর বলতে লাগলো!!!!

– আমিও তোকে অনেক ভালোবাসিরে, আমি তোকে ছাড়া বাচতে পারবোনারে।(ফারিয়া)
-কি হয়েছে সেটাতো বল(আমি)
-সকালে আমাকে দেখতে আসবে পাএ পক্ষ, পছন্দ হলেই নাকি বিয়ে পরিয়ে নিয়ে যাবে(ফারিয়া)
এটা বলে ফারিয়া কেদেই যাচ্ছে
-তার কান্না থামিয়ে তাকে বললাম দেখা যাক কি করা যায় (আমি)
-আমাকে নিয়ে পালিয়ে যা তুই, তুই আমাকে যেখানে নিবি আমি সেখানেই যাব(ফারিয়া)

কিছুক্ষণ পর ফারিয়া চলে গেলো। আমিও মনে মনে ভাবছি সকাল হলে চাচার পায়ে ধরে হলেও ফারিয়ার বিয়ের কথা বলবো। একটুপর আব্বু আসলো আমার রুমে। এত রাতে কারন কি বুঝলাম না। রুমে ঢুকেই মারতে শুরু করলো আমাকে। আর বলছে এতটুকু বয়সে বিয়ে এই বলেই মারলো। আমি বুঝতে পারলাম আব্বু আমাদের কথা শুনে ফেলছে। আমাকে এতই মেরেছে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছি। চোখ মেলে দেখে ঘড়িতে দুপুর ২টা বাজে। আর আমাকে ডাক্তার স্যালাইন দিয়ে রেখেছে।

আমি উঠে আগে দৌড়ে গেলাম জলিল চাচার বাড়ি। গিয়ে দেখি সবাই ফারিয়াকে বিদায় দিচ্ছে। বিয়ে হয়ে গেছে তার গায়ে লালশাড়ি। আমার দিকে তাকিয়ে ফারিয়া চোখের পানি ফেলেই যাচ্ছে।।এই চোখের পানি পালানোর কারণ আর কেউ জানুক বা না জানুক,অবশ্য আমি জানি। আমিও বাসায় এসে কাপড় গুছিয়ে চলে আসলাম শহরে। আব্বু-আম্মু আমাকে অনেক আটকানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু কোন লাভ হলো না। শহরে ছোট চাচারা থাকে তাদের কাছে। আমি শহরেই পড়াশোনা করতে থাকলাম।

গ্রামে আর আসিনি। ৮-৯বছর পর যাচ্ছি বাড়িতে আজ। এখন আমি পড়াশোনা করে ডাক্তার হয়ে গেছি। আব্বু-আম্মু আমাকে দেখতে আসতো আমাকে বাড়ি নিতে চাইতো। আমি যেতাম না। রাগ একটাই ছিলো যেনো শহরেরই থাকার মতো যোগ্যতা করতেই হবে।

এই সব কিছু এখন ট্রেনে বসে ভাবছি পুরনো কথা। প্রায় ৪ঘন্টা পর চলে এলাম গ্রামে। গ্রামের যেনো সব কিছুই আগের মতোই আছে। বাড়ি আসতে সবাই দেখতে আসলো আমাকে। এত বছর পর বাড়ি ফিরা। আমি আমার রুমে বসে আছি তখনই আমার কানে বেজে উঠলো চিরচেনা কন্ঠ।এই কন্ঠ শুনে আমি তারাতারি ঘর থেকে উঠানে বের হলাম। ওমা এতো দেখি ফারিয়া।

আমার দিকে তাকিয়ে আছে ফারিয়া । তার সাথে দুটা বাচ্চাও আছে দেখছি। ফারিয়া যেনো কেমন হয়ে গেলো। তার চোখ দিয়ে পানি পরছে। আমি তারদিকে তাকিয়ে চোখের পানির কারন বুঝতে পারলাম। এই যে ভালবাসা না পাওয়ার পানি। দুদিন গ্রামে থেকে চলে যাচ্ছি শহরে।কারন এখানে থাকলে বুকের বাম পাশে কেন জানি চিনচিন ব্যাথা করে। চলে আসার সময়ও ফারিয়ার চোখে পানি দেখলাম। আমারও চোখ দিয়ে পানি বের হয়েছে। কেউ দেখেনি হয়তো। এই নিঝুম প্রকৃতি হয়তো দেখছে।

,,,, সমাপ্ত,,,,

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত