পাচঁ বছর পর আমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত । আমার নিজের অফিসে বসে আছি, আমান যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না,নিজের গায়ে চিমটি কাটলাম না স্বপ্ন নয় বাস্তব। পিয়ন কে কফির অর্ডার দিলাম। কফি তে চুমক দিতে দিতে পত্রিকা পড়ছি , একটা হেডলাইনে এসে চোখ আটকে গেল।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আশরাফ চৌধুরীর বাড়ি নিলাম করা হবে।আমার ঠোটে দুষ্ট হাসি কারন আশরাফ চৌধুরীর সমস্ত সম্পদই এভাবেই নিলাম হয় আর আমি তা ক্রয় করি শুধু ঐ বাড়িটাই বাকি ছিল এখন সেটাও কিনতে পারব তাই খুশি আমি।আমার সব ইচ্ছা পূর্ণ হচ্ছে আমি ঠিক এটাই চাচ্ছি , আশরাফ সাহেবের সাথে আমার একটা জিদ ছিল যে আমি তার থেকেও ধনী হব। পাচঁ বছর আগের কথা।ছোট থেকেই আমি খুব আদরের ছিলাম,বাবা মা দুজনেই আমার সকল চাহিদা পূর্ণ করতো,আমি চাওয়ার আগেই সব হাজির হত,খুব সুখের দিন ছিল আমার। আমি যখন এম বি এ শেষ করলাম বাবা আমাকে চাপ দিতে শুরু করে তার বিশাল বড় ব্যবসা দেখার জন্য কিন্তু আমার সেদিকে নজর নেই সারাক্ষণ বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেই। একদিন বাবা আমাকে রাগ করে বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়, বাবা হোটেলে খাও আর ঘুরে বেড়াও,চলে যাও আমার বাড়ি থেকে আমি তোমার মুখ দেখতে চাইনা, কোন দিন যদি প্রতিষ্ঠিত হও তবেই আমাকে মুখ দেখাবে।
– আমিও রাগ করে বলছিলাম , আমি যদি সমাজের দশজনের একজন না হতে পাড়ি আমি তোমাকে আমার মুখ দেখাব না। এই সে আশরাফ চৌধুরী আমার বাবা। আমি সেদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি আর প্রতিজ্ঞা করি আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। এক বন্ধুর কাছ থেকে দশ লাক্ষ টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করলাম, দিন দিন ব্যবসা বড় হতে থাকে ব্যাংক থেকে বড় ধরনের ঝণ নিয়ে ব্যবসা বড় করি দীর্ঘ পাচঁটা বছর পর আজ আমি প্রতিষ্ঠিত , । আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে ,আজ আমি আমার বাবার সম্পদ কিনছি । হঠ্যাৎ ফোনের আওয়াজে আমি বাস্তবে আসি-
– হ্যালো , কি ব্যাপার
– স্যার এক ভদ্র মহিলা আসছে ,বলছে- আপনার মা হয়, তাকে কি ভিতরে পাঠাব
– হ্যা,পাঠাও দরজা খুলে ভিতরে আসল মা
– কেমন আছ মা , এত দিন পরে মনে পড়ছে ছেলের কথা। আমি মার কাছে গিয়ে দাড়াই – ভাল না,খোকা । তর বাবা হাসপাতারে আই সিও তে, তর বাবা মনে হয় বাচঁবে না..
– অ, তাহলে ছেলেকে দেখতে নয় টাকার প্রয়োজনে আসছ। পকেট থেকে চেক বইয়ে চার লাক্ষ টাকা লিখে মার দিকে হাত বাড়ালাম । মা আমার দিকে তাকিয়ে জোড়ে একটা চড় মারলো , মা কেদেঁ দিল
– এ তুই কি বললি অমিত, আমি তর কাছে টাকা নেওয়ার জন্য নয় তকে নিতে এসেছি।তর বাবা শুধু অমিত অমিত বলে ডাকছে তাই তর কাছে আসছিলাম । তর টাকার লোভে নয়।এখন তর টাকা হইছে বাবা মাকে চিনিস না,তুই কি একবার চিন্তা করছিলি কেন তকে বাড়ি থেকে বের করে দিছে তর বাবা। তর বাবার ক্যান্সার ধনা পড়ছে, তাই তার মৃত্যুর পর যাতে তার কষ্টের উপার্জন নষ্ট না হয় সে জন্য তকে ব্যবসা দেখতে বলছে কিন্তু তুই বাবা কষ্টটা বুঝাল চেষ্টা করলি না, এজন্যই তকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে যাতে তুই জিদ করে কিছু করছ। যেদিন তুই বাড়ি ছেড়ে চলে এলি তর বাবা অনেক কেদেঁছিল । তর ব্যবসার টাকা তর বন্ধু নয় তর বাবা ওর মাধ্যমে তর কাছে পাঠিয়েছে আর তর বাবার কম্পানির সকল কাজ তকে দিয়েছে, তার জন্যই তুই আজ এখানে
– মা আমার ভুল হয়ে গেছে তুমি আমাকে মাপ করে দাও।বাবা ক্যান্সার তুমি আমাকে আগে বল নাই কেন, বড় ভুল হয়ে গেছে চল বাবার কাছে আমাকে মাপ চাইতে হবে না হলে আমি সারা জীবন ছোট হয়ে থাকব।
বাবার পাশে দাড়িয়ে আছি, চোখ খুলে আমাকে ইশারা দিল তার পাশে বসার জন্য – বাবা তুমি আমাকে মাপ করে দাও,আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা কি যেনো বলতে চায় কিন্তু বলতে পাড়ে না।আমি তার মুখের কাছে যাই, বাবা আমার কপালে চুম খেল, তারপর বাবার মুখটা ডান দিকে ঘুরে গেল। আমি বাবা বলে চিৎকার দিয়ে তার মরা দেহটাকে জড়িয়ে ধরে কাদঁছি । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি, তোমাকে ছাড়া আমি কি করব বাবা,তুমি ফিরে এসো বাবা। আমার চিৎকার তার কান পযন্ত পৌছালো না।
আজ বুঝতে পাড়ছি বাবা আমার জীবনের কতটা অংশ জুড়ে আছে।আই মিছ ইউ বাবা, তুমি আকাশের তারা হয়েও এখনও আমার জন্য দোয়া করছ।দেখ বাবা তোমার অমিত আজ দশজনের একজন হয়েছে । আমাদের বাবা যতই বকা দেক, রাগ করুক না কেন তারা কিন্তু আমাদের ভাল জন্যই করে কিন্তু আমরা তা বুঝি না, বুঝবো ঠিকই একদিন যে দিন আমরা বাবা হব। উৎসর্গ : সকল পিতার জন্য যারা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ করে দেয়, আমাদের সুখের জন্য।