অসমাপ্ত ভালোবাসা

অসমাপ্ত ভালোবাসা

ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়ের পর দীর্ঘ দুই বছর প্রেম করে শ্রাবনী আর সুমন। ফেসবুকে কবিতা আর ছোট গল্প লেখার সুবাদে সুমনের সাথে পরিচয় হয় শ্রাবনীর।সুমনের লেখাকে ভালোবাসতে বাসতে কখন যে সুমনকেই ভালোবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারে নি।আজ তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাবা মাকে না জানিয়েই বিয়ে করবে।ওরা দুজন দুজনকে পাগলের মত ভালোবাসে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান দুজনেই।তাই হয়ত এতো সাহস।তাদের ভাবনা,বিয়ে করে বাবা মায়ের সামনে দাড়ালে তারা মেনে নিতে বাধ্য।অতঃপর তাদের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হলো।

:- বাবা আমি বিয়ে করেছি।
:- ছেলেটাকে কতদিন ধরে চিন তুমি..?
:- দু বছরের সম্পর্ক আমাদের বাবা। ও খুব ভালো ছেলে।আমাকে খুব ভালোবাসে ও। আমাকে অনেক সুখে রাখবে!আমাদের দোয়া করো বাবা।

:- আমি তোমার বাবা না।

যেভাবে বিয়ে করেছো সেভাবে বেড়িয়ে যাও। ঠিক একইভাবে মুখ ফিরিয়ে নেই সুমনের পরিবার..!! সুমন বিপাকে পড়ে যায়। কোথায় যাবে.? কি করবে.? সাথে নতুন বউ.! এক বন্ধুকে ফোন দেয় সুমন।সে এসে ওদের একটা বাসা ভাড়া নিয়ে দেয়..! সুমন আর শ্রাবনীর একটা নতুন সংসার হয়।অনেক ভালো কাটতে থাকে ওদের দিনকাল..! কিছুদিন পর_

:- তুমি আর কবিতা,গল্প লেখ না কেন..?
:- বিয়ের পর ওসব লিখতে নাই..বিয়ের পর একজন কবি মরে যায়। জন্ম হয় একজন পুরুষের। ওসব পুরুষরা যা লেখেন তা গল্প না, আর গল্প হলেও তা মুখে তোলা যায় না।

:-যত্তসব ফালতু কথা।

একটা ব্যাপার অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করছে শ্রাবনী। সুমন রাতে ভালো করে ঘুমায় না। কিছু একটা নিয়ে ভাবে। ঘুম থেকে উঠে পায়চারি করে। আবার কম্পিউটারে কী যেন করে। টুক টাক করে অনেক কিছু কিনেই ঘর সাজিয়েছে ওরা। এই কম্পিউটারটি তারই নতুন সংযোজন। কী নিয়ে ও ভাবছে, জানতে চায় শ্রাবনী। না বলার মতো করেই যা মনে আসে তাই বলে সুমন।পরিষ্কার করে কিছুই বলে না। কয়েকবার এ নিয়ে মন খারাপও করেছে শ্রাবনী। বিয়ের ৩ বছর পার হয়ে গেছে। দুজনের পরিবারই জানে এখন সবকিছু। প্রথমে সব কিছু ওলট-পালট থাকলেও এখন সব কিছু আবার আগের মতো। মা- বাবার আশীর্বাদ নিয়ে ওরা বহাল তবিয়তেই আছে।

:- এই, তুমি রাতে ঘুমাও না কেন?
:- ঘুমাই না?! আমি নাইটগার্ড নাকি?
:- ফাজলামো করো না, আমি দেখেছি তুমি বেশ রাতে উঠে যাও আর হাঁটাহাটি করো, মাঝে মাঝে কম্পিউটারে কী যেন করো।

:- বাপ রে, ঘরের মধ্যে দেখি ফেলু দি। দিদিমনি আমি ভদ্রবেশী ডাকাত। ডাকাতি করতে এসেছি তোমার সব কিছু। মু হা হা হা

:- তুমি বলবে সিরিয়াসলি।
:- আমি আসলে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করি। রাতে ওর সাথেই চ্যাট করি।
:- কী বললে?
:- কিছু না।

শ্রাবনী এর পরে আর কিছু নিয়েই কোন প্রশ্ন করে না। সুমনের এসব ও সহ্য করতে পারছেনা। কিন্তু মুখেও বলার কিছু নেই। একদিন দেখলো সুমন সারারাত বসে বসে কিবোর্ড চাপলো। একটুও ঘুমালো না। দুদিন পরে একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটলো। এরকম চললো পর পর তিন দিন। এমন করেই পার হলো আড়াইটা মাস। ঘরের মাঝে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে শ্রাবনীর । কোন কিছুই ওর ভালো লাগেনা। সুমন কতোখানি দূরে সরে গেছে ওর কাছ থেকে।

এই কী সেই সুমন যাকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলাম শ্রাবনী ভাবে এভাবে ঘর করা যায় না। নিজের ঘরে নিজেকে অচেনা করে রাখা যায় না। নিজের সাজানো সংসারে নিজেকে এভাবে একা করে রাখা যায় না। তবে কী আমি সুমনকে ছেড়ে দেবো শ্রাবনী ভাবে, কিন্তু আমি চলে গেলে ওকে কে দেখবে। কে রাতের বেলা কাথা টেনে দেবে ওর বুকের উপর। কে ওর জামাগুলো গুছিয়ে রাখবে। ঘুমিয়ে গেলে কে ওর চোখের চশমা খুলে দেবে। চ্যাটের ঐ মেয়ে এসে করবে এসব? এতো নিচে নেমে যাবে সুমন। সুমনের জন্য কাঁদতে থাকে শ্রাবনী। আজ রাত পেরিয়ে কাল ভোর। কাল ওর জন্য রান্না করে রেখে বিকেলে বের হয়ে যাবে শ্রাবনী। সুমনের ঘরটা শেষ বারের মতো পরিষ্কার করে রেখে যাবে। ওর ব্রাশে পেস্ট ভরিয়ে রেখে যেতে হবে। ওর গামছা, ওর ট্রাউজার – সব কিছু জায়গা মতো রেখে যাবে ও।

পরদিন সকাল নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে গেছে সুমন, কী যেন একটা কাজ আছে বললো। দুপুর একটা পার হলো। শ্রাবনীর সব গোছানো শেষ। দুপুর তিন টে বাজে। নীল আরেকটা শাড়ি পড়েছে ও। কলিংবেল বাজলো। দরজা খুলে দেখলো সুমন দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হলো ও। কারন ও এখনই ঘর ছাড়বে আর এখনই সুমন এলো। ওর গোছানো স্যুটকেসটা দেখলেও তো সুমন অনেক কষ্ট পাবে। সুমনের বুক পকেটে একটা সাদা খাম। আর হাতে দু’প্যাকেট মিষ্টি, সাথে প্যাকেটে মোড়ানো কিছু একটা। সাদা খামটা সুমন এগিয়ে দিলো শ্রাবনীর দিকে। দরজা আটকে খামটা খুলতেই বেরিয়ে এলো আঁশি হাজার টাকার একটা চেক।

:- এটা কী? কীসের চেক? মানে, কীসের টাকা এটা?
:- তোমার যত-যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর এটা।

এই বলে সুমন প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো শ্রাবনীর দিকে। শ্রাবনী প্যাকেট খুলে দেখলো সুমনের নিজের লেখা একটা বই। “শ্রাবনীর ভালোবাসার গল্প”। শ্রাবনী সুমনের দিকে তাকালো। তারপর পাগলের মতো পাতা ওল্টাতে লাগলো। হ্যাঁ, সব আছে, সব। সুমন আর শ্রাবনীর জীবনের প্রত্যেকটা ঘটনা লিখেছে সুমন। ছোট বড় সব কথা লিখেছে । কিচ্ছু বাদ দেয় নি ও। এতো ঘটনা ও মনে রাখলো কীভাবে। হ্যাঁ সব আছে, সব আছে এই বইয়ে। আর সাধারণ সাধারণ সব কথা গুলো কী অসামান্য হয়ে উঠেছে ওর লেখায়। শ্রাবনীর চিতকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো। পারলো না। এর পরিবর্তে ঝর ঝর করে চোখের জল পড়তে লাগলো। তাহলে সুমন একারনে এতোদিন চিন্তিত ছিলো আর রাত জেগে লিখেছে আমাদেরই ভালোবাসার গল্প।

:- এবার আশা করি তুমি স্যুটকেসটা ভেতরে রেখে আসতে পারো।
:- তুমি জানতে আমি আজ চলে যাবো?
:– আমি ভালোবেসে তোমাকে জীবনে জড়িয়েছি।

তোমার প্রতিটা চুলের খবর আমি রাখি, আর মনের খবর রাখবো না? শ্রাবনী এবার সুমন কে জড়িয়ে ধরে চিতকার করে কাঁদে। অবুঝের মতো সে কান্না। বাঁধনহারা সে কান্না। কান্না থামিয়ে সুমন শ্রাবনীকে বলে, বইয়ের শেষ পাতাটা দেখবে একবার। শ্রাবনী শেষ পাতাটা খোলে, সেখানে লেখা আছে –

“ বইটা যখন

ওরা হাতে দিলাম ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। এরকম অবাক হয়ে ও যখন তাকায় মনে হয় ওর মতো এতো মায়াবতী পৃথিবীর আর কোন মেয়ে হতে পারেনা। এই মায়াবতীকে ভালোবেসে আমি ধন্য। বইয়ের কয়েকটা পাতা পাগলের মতো উল্টেই ও কেঁদে ফেললো।

আমি ওকে যখনই বললাম, এবার তুমি স্যুটকেসটা ভেতরে রেখে আসতে পারো, ও আমাকে জড়িয়ে বাচ্চা একটা মেয়ের মতো চিতকার করে কাঁদলো। আমার মনে হলো, কতো বড় দায়িত্ব আমার কাঁধে। একটি মেয়ের সারাজীবনের হাসি-কান্নার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমার। তারপরও আমাদের গল্প এগিয়ে চলে, গল্পের বইয়ে একটি একটি করে পাতা বাড়ে। প্রতি ভোরে প্রতি বিকেলে উষ্ণ আলিঙ্গনে হাঁটি-হাঁটি-পা- পা করে বাড়ে আমাদের অসমাপ্ত ভালোবাসা…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত