> খুব সকালে উঠে বরের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে হয় নীলাকে।নাস্তা যদি সঠিক সময়ে সে বরকে পরিবেশন না করে তাহলে না খেয়েই তার বর অফিসে চলে যায়।আর সেটা নীলার কাছে খুব খারাপ লাগে।বার বার বরকে দুপুরে ফোন করে শোনে যে তিনি দুপুরে খেয়েছেন কিনা ঠিকমত। কিন্তু তার বরের ব্যস্ততা অফিসে অনেক। তাই সব সময় তিনি নীলার সাথে খারাপ ভাবে কথা বলতেন।তার এরূপ আচরনে নীলা কোনো দিন আক্ষেপ প্রকাশ করে নি।শুধু নীরবে নিষ্পাপ এই মেয়েটি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে দেখা যেত।
বাড়ির সকলের মতেই বিয়ে হয়েছিল নীলা আর রেহান সাহেবের।যদিও এই বিয়েতে নীলার মত ছিল না।নীলার মনে অন্য এক জন স্বপ্নের কুমার আগে থেকে ছিলই।বাড়িতে তার কথা নীলা বলেছিলও নীলা।কিন্তু বাড়ি থেকে সেই ছেলে কে মেনে নেওয়া হয়নি।তাই নীলা বাড়ির অমতেই তার মনের মানুষকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল।কিন্তু বাবার অসুস্থতার কাছে পরাজিত হয় মেয়েটি।শেষে তার মনের মানুষকে ছাড়তে বাধ্য হয় সে।পরিবারের মান সম্মান আর বাবার কথা ভেবে পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করে নীলা।
প্রথম কয়েক মাস ভালই কেটেছিল নীলা আর রেহান সাহেবের সংসার।নীলাও কষ্ট করে ধীরে ধীরে রেহান সাহেব কে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু যেদিন রেহান সাহেব জানলেন যে,নীলার অন্য কোথাও সম্পর্ক ছিল সেদিন থেকে তিনি নীলার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে থাকেন।ভাল করে কথাও বলেন না নীলার সাথে। সারাদিন অফিসের কাজেই ব্যস্ত থাকেন তিনি। পুরো বিষয়টি নীলার কাছে পরিষ্কার যে কেনো তার বর এমন আচরন করছে। তাই রেহান সাহেবের মনে পুষে থাকা ভুল গুলোকে শুধরিয়ে দিতে একদিন রাতে নীলা রেহান সাহেবের সাথে খোলাখুলি ভাবে কথা বলতে চাইল।
রেহান সাহেব কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকলেন।নীলা বুঝে গেল রেহান সাহেব তার সাথে কথা বলতে চান না। কিন্তু এইভাবে আর কত? এই সম্পর্ক আর কিছুদিন এভাবে চলতে থাকলে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তাই নীলা এক প্রকার জোড় করেই রেহান সাহেবের সাথে ভুল বোঝাবুঝি মিটাতে লাগল। দেখো,রেহান মানুষের অতীত বলে একটা কিছু থাকে। এখন সেই অতীতের কথা ভেবে তার ভবিষ্যৎ তো আর নষ্ট করা যায় না। মানছি যে অতীতে আমার অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল।কিন্তু এখন তুমি আমার বর্তমান,তুমিই আমার ভবিষ্যৎ।
তুমি যদি এখন অতীত নিয়ে আমাদের সম্পর্ক কে এই ভাবে নষ্ট করো তাহলে কি ভাবে চলবে আমাদের জীবন? আর সেই ছেলের সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক ও হয়নি।তুমি প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো।!!! এখন আমার পুরো টা জুড়ে তুমি।হ্যা হয়ত আরো আগে তোমাকে একবার জানানো উচিত ছিল আমার অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল কিন্তু বলতে পারি নি।কেনো জানি এক দ্বিধা কাজ করত মনে। কিন্তু প্লিজ বিশ্বাস করো,আমি এখন শুধু তোমাকেই ভালবাসি।আর আজ যদি তুমি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দাও তবে কোনোদিন আমি আর হয়ত উঠে দাঁড়াতে পারব না।প্লিজ রেহান একটু বুঝার চেষ্টা করো।
নীলার সব কথা শুনার পরেও রেহান সাহেবের মনের সন্দেহ দূর হয় না।তিনি কেনো জানি নীলাকে সহ্য করতে পারছিলেন না,তাই নীলার কথা না শুনেই নিজের ঘরে গিয়ে লাইট অফ করে ঘুমিয়ে যান।আর নীলা ড্রইং রুমেই কাঁদতে কাঁদতে থেকে যায়। পরদিন সকালে নীলার ঘুম ভাঙ্গে দেড়িতে।রুমে গিয়ে দেখে রেহান সাহেব রুমে নেই। ঘড়িতে দেখে সকাল ৮টা বেজে ৩৭ মিনিট। আর রেহান সাহেবের অফিস থাকে সকাল ৮টায়। নীলা বুঝে নিয়েছে কোনো কিছু না বলেই তিনি অফিস চলে গিয়েছেন। দুপুর বেলা আজ আর নীলা রেহান সাহেব কে ফোন দেয় নি।রেহান সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।ভাবতে থাকেন গত রাতে নীলা হয়ত অনেক কষ্ট পেয়েছে।আর সত্যিই তো নীলার দোষই বা কোথায়?
আগের কথা সে তো ভুলেই গিয়েছে।এখন ওর জীবনে শুধু আমিই। নাহ আমার বড্ড বেশি ভুল হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলে ছি মেয়েটিকে।যাই গিয়ে একটা সারপ্রাইজ দেই। তাহলে হয়ত মন ভাল হয়ে যাবে।বেরিয়ে যান রেহান সাহেব অফিস থেকে তৎক্ষণাৎ। বাজার থেকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ আর স্যরির একটা কার্ড নিয়ে বাসায় চলে যান তিনি।কিন্তু নীলাকে আর সারপ্রাইজ দিতে পারেন না।বরং নীলাই রেহান সাহেবকে সারপ্রাইজ দেয়। পুরো বাসা যখন তন্নতন্ন করে খুঁজে রেহান সাহেব নীলাকে পায় না তখন স্টোর রুমে গিয়ে দেখেন নীলা গলায় দঁড়ি দিয়ে ঝুঁলে আছে।
মনে হচ্ছে নিষ্প্রাণ দেহ টা কোনো কিছু চাচ্ছিল রেহান সাহেবের কাছ থেকে কিন্তু প্রানহীন দেহ টা রেহান সাহেবের কাছে আসতে পারছে না। ঝুঁলিয়ে থাকা দেহ টা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রেহান সাহেব।কিন্তু কিচ্ছু করার নেই তার।যা ভুল হবার তা হয়েই গিয়েছে। হয়ত বেশি সন্দেহ আর এত বেশি রাগ রেহান সাহেবের কাছ থেকে নীলা নামের মেয়েটিকে কেড়ে নিল। হয়ত বা এটা ভাগ্যেরই নির্মম পরিহাস।