প্রাইভেট একটা ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পোস্টে জব হওয়ার পরপরই আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন আমার একমাত্র প্রেমিকা তুতুল এর বাবা- আমার শ্রধ্যেয় হবু শশুর আব্বা। আমিও সেই সুযোগে স্বদ ব্যাবহার করতে ছাড়লাম না একদমই। সাথে সাথেই ডিমান্ড চেয়ে বসলাম পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুকের।
পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক চাওয়াটা যে অযৌক্তিক এবং নির্লজ্জ্বের পরিচয় দেওয়া হলো তা আমার অজানা নয়। তবুও আইন বিরোধি এই কাজটা করতে সে সময় আমার এতোটুকুও সংকোচ বোধ হলোনা। তুতুল এতে প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালো!’ কিন্তু তখন আমার মতো সুপাত্র হাতছাড়া করার মতো বোকা আমার হবু শশুর আব্বা ছিলেন না মোটেও। তাইতো মেয়ের কোন কথা কানে না তুলে বেশ ধুমধাম করেই তিনি তাঁর আদরের মেয়েটার বিয়েটা দিয়ে দিলেন আমার সাথে। পেয়ে গেলাম আমি রাজপ্রাসাদ সহ রাজকণ্যা। আহ্ কি ভাগ্য আমার!” কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হলো- যখন কোন ডিমান্ড ছাড়াই তুতুলকে বিয়ে করার জন্য প্রচন্ড পাগল ছিলাম আমি তখন তার বাবা রাজি হননি কিছুতেই।
অবশ্য রাজি না হওয়ারও বেশ কিছু যুক্তিসংগত কারন ছিলো। যেমন- প্রথমত আমি ছিলাম একজন বেকার, দ্বিতীয়ত পরবর্তিতে চাকরি পেলেও সেটা ছিলো আমার ছোট একটা প্রাইভেট কোম্পানীর মার্কেটিং জব, তৃৃতীয়ত আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থাটাও ছিলো তেমন একটা স্বচ্ছল নয়। অথচ সরকারি চাকুরির পর ব্যাংকের জবটার ডিমান্ড আমাদের সমাজে বেশ বেশি থাকায় শশুর আব্বা আমার রাজি না হয়ে যেন আর থাকতেই পারলেন না!” তবে এ আর দোষের কি?’ মেয়ের ভবিষ্যত ভাবনাতো বাবার থাকবেই। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো বছর, কিন্তু তেমন একটা শান্তি প্রতিষ্ঠা হলোনা আমাদের সংসারে। কেননা তুতুল আর আগের মতো থাকলোনা একদমই। সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলো তার মন, চাওয়া-পাওয়া ও চলা-ফেরার। আমি তাকে এখন একটা কথা বললে’ সে করে ঠিক তার উল্টোটা।
ডানে যেতে বললে যায় বামে, আর বামে যেতে বললে যায় ডানে। কোন কাজ কামতো করেইনা বরং ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ তুলে খাবে আর কথায় কথায় দিবে যৌতুকের খোঁটা। তাতে অবশ্য আমার কিছু আসে যায় না, কামের বেটির টাকাটা ছলা-কলাই ঠিক আদায় করে নিতে পারি শশুর বাড়ি থেকে!” শশুর আব্বা আমার একদম মস্ত দিলের মানুষ। একটা সময় ছিলো যখন তুতুল আমায় ছাড়া কিচ্ছু বুঝতোনা। চুরি করে দেখা করতে আসার সময়ও সে আমার জন্য টিফিন বাটিতে করে নুডুলস, কখনোবা আম বা চালতার আঁচার আর কখনো বা নিয়ে আসতো বাটি ভর্তি বিরিয়ানি। আহ্ কি চমৎকারই না ছিলো সেই দিনগুলি। কিন্তু এখন? এখন এক কাপ চা চাইলেও পারবোনা বলে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। আচ্ছা বিয়ের পর কি সব মেয়েরাই এমন হয়ে যায়?? ইসস্ কতোই না মিস করি আজ তার হাতের সেই মজার মজার রান্নাগুলো।
পাতি হাঁসের মাংস আর দেশি মুরগীর রোস্টটা যা বানাইতোনা!” সহ্য করতে না পেরে একদিন রাতে বাসায় ফিরে শুরু করলাম বেধড়ক পিটুনি। আহ্ বউ পিটাইতে যে এত্তো মজা তা আগে বুঝিনাই একদম। সকাল হতেই ঘটি-কম্বল বেঁধে বউ আমার গেলো চলে বাপের বাড়ি। আমিও একটু রিল্যাক্স পেয়ে মেতে উঠলাম আনন্দ ফুর্তীতে। ডিসটার্ব করার মতো থাকলো শুধু মোবাইল ফোনটা। দিনরাত শশুর আব্বা আর শাশুড়ি আম্মার কল!” সুযোগ বুঝে একটা নিউ মডেলের বাইক চেয়ে বসতেই টাকা পাঠিয়ে দিলেন আমার শ্রধ্যেয় শুশুর মশাই। ইসস্ বাবারা কতোই না ভালো। হঠাৎ তখন মনে পড়ে গেলো ছোট বেলার স্মৃতিগুলো।” না চাইতেই বাবা আমার কতো কিছুই না এনে দিতেন আমায়।
নিজের জন্য জুতো না কিনে- কিনে দিতেন আমাকে। নিজের নতুন পোশাকের কথা না ভেবে এনে দিতেন আমার জন্য। নজর রাখতেন আমার প্রতিটি প্রয়োজনের প্রতিই। আর মা? তাঁর কথাতো না বললেই নয়। রান্নার সময় মুঠি মুঠি চাউল তুলে রেখে সেই টাকাতেই একদিন কিনে দিলেন আমার শখের প্রিয় সাইকেলটা। কতোই না মমতা তাঁদের মনে। সপ্তাহ্ খানেক পর বউকে তার রাগ ভাঙিয়ে আনতে গেলাম শশুর বাড়ি আমার নিউ মডেলের লেটেস্ট বাইক এ চেপে। কিন্তু একি?’ বউ যে আমার সাথে কথাটাও বলেনা দেখি!!” এমনকি রাতে এক বিছানায় ঘুমাতেও এলোনা পর্যন্ত। ভেঙে গেলো যেন শত স্বপ্ন!” কিন্তু কি আর করার? মনকষ্ট নিয়েই কোনমতে জেগে জেগে কাটিয়ে দিলাম সেই রাতটা!!” পরদিন সকালে বউ আমায় ছাপছাপ জানিয়ে দিলো সে আর আমার সাথে যাবেনা। আলাদা হতে চাই সে, একটু শান্তি চায়।
আমি জানতাম এমনটাই হবে। এতো কষ্ট এতো নির্যাতন সহ্য করে আর কতোদিনই বা থাকা যায়!’ তাই আগে থেকেই একটি চিঠি লিখে রেখেছিলাম তুতুলের জন্য। চিঠিটা তার হাতে দিয়ে আমি আর অপেক্ষা না করে তখনই বেরিয়ে পড়লাম সেই বাড়ি থেকে। ওগো বউ, তোমার কি মনে আছে সেই সব দিনগুলোর কথা?? যখন কলেজ ফাঁকি দিয়ে তোমার স্কুলের সামনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতাম একটি বার তোমায় দেখার নেশায়!” যখন তিন ক্লাস উপরের ছাত্র হওয়া স্বত্তেও তোমাদের ব্যাচে প্রাইভেট পড়ার নাম করে এক কর্ণারে বসে চেয়ে চেয়ে দেখতাম তোমায়, শুধু তোমায়!” আচ্ছা একবার অসুস্থ হয়ে তুমি যে তিনদিন স্কুলে এসেছিলেনা বলে তোমায় দেখতে গিয়ে তোমার বাড়ির পেছনের বাঁশ বাগানটাই একাকিই আমি কাটিয়ে দিছিলাম সারাটা রাত!” সেসব কথা কি সব ভুলে গিয়েছো? নাকি আজও সব মনে আছে তোমার??
একবার স্কুলের নাট্যাভিনয় এ তুমি বউ সেজেছিলে বলে তোমায় যে আমি বউ বউ বলে সারাক্ষণ ক্ষ্যাপাতাম তা নিশ্চয় ভুলোনি আজো!” তারপর কিভাবে কিভাবেই যেনো খুব আপন হয়ে গেলে তুমি, আমাকেও করে নিলে তোমার আপন একজন। সেই দু’টি বছর আর আমাদের রিলেশনের পাঁচ মিলে সাতটি বছর কি কখনো ভুলতে পারি বলো?? জানি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমি, মহা অন্যায় করেছি। আমি পাপি একজন। কিন্তু কেন এমনটা করেছি তাতো জানতে চাওনি একবারো? আজ সময় এসেছে সবটা খুলে বলার। আমি বলতে চাই তোমায় অনেক কিছু…
তোমার বড় ভাই তুর্য পালিয়ে বিয়ে করেছেন একমাত্র তোমার বাবা মেনে নেননি বলে। মেনে নেননি কারন তোমার ভাবি অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবারের সন্তান ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর যখন মেনে নিলেন বাধ্য হয়ে, তখন কি করলেন তিনি? হঠাৎ দাবি করে বসলেন নগদ তিন লক্ষ টাকার!” তুমি কি জানো কতোটা কষ্ট করে সেই টাকাটা সংগ্রহ করেছিলেন তোমার ভাবির বাবা?? তাঁর ভিটে বাড়িটা বাদে শেষ সম্বল বাড়ির পাশের ফলের বাগানটুকুও বিক্রি করতে সেদিন বাধ্য হয়েছিলেন তিনি শুধু মাত্র মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে। তাতেই কি নিস্তার পেয়েছিলেন সেই বৃদ্ধ লোকটি? না পাননি!’ একের পর এক তাদের আঘাত করে গিয়েছে তোমার পরিবারের লোকজন। কখনো ফার্নিচারের জন্য নির্যাতন আবার কখনো নিউ মডেলের বাইক এর জন্য!” তাকে তোমাদের পছন্দ নয় বলে বারবার মানসিক নির্যাতন পর্যন্ত করতেও ছাড়োনি তোমরা। তাদের মধ্যে কি তুমিও একজন নও??
তোমার ভাবির একমাত্র ছোট ভাইটা টাকার অভাবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো একটা সাবজেক্টে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারছিলোনা তখন আমি তোমারই বাবার থেকে নেওয়া যৌতুকের সেই টাকাটা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি তোমারই নাম করে। আর বাইক? সেই টাকাটাও আমি তোমার নাম করেই তাদের হাতে তুলে দিয়েছি তোমার ভাবির ছোট্ট বোনটার বিবাহের খরচ যোগান দিতে। তুমিই বলো কোন অন্যায় করেছি কি?? তুতুল, তোমায় আমি শারিরিক বা মানসিক যে আঘাতটাই দিয়েছি না কেন’ তাতে তোমার চেয়ে আমার নিজের কষ্টটায় হয়েছে বহুগুন বেশি। জানিনা তুমি আজ তা বিশ্বাস করবে কিনা তবে এটাই সত্য। আমি চেয়েছি তুমি এবং তোমার পরিবারের সকলের মানসিক উন্নয়ন ঘটাতে। হয়তো ব্যার্থ হলাম!” তবুও আমার শেষ অনুরোধ তোমার কাছে.. ভাবিকে তুমি তোমার আপন বোনের মতোই আপন করে নাও।
তোমার বাবা মাকেও তাদের বাঁকা মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করো। আমি জানি তুমি পারবে, একমাত্র তুমিই পারবে এ অসাধ্য সাধন করতে। একই মানুষের মনে পাত্র বিশেষে ভালোবাসা, আদর, স্নেহের এপিঠ ওপিঠ কি এক হবেনা কখনোই?? বউগো, আজো তোমায় আমি সেই আগের মতোই ভালোবাসি। ভালোবাসি, ভালোবাসবো সারাটা জীবন। প্লিজ ফিরে এসো আমার ভূবনে। অপেক্ষায় থাকলাম তোমার আমি,,,