মেয়েটিকে তুমি চিনো জাহিদ??প্রশ্নটি করার পরে জাহিদ একটু চমকে উঠলো!নাহ আমি চিনিনা। তাহলে অইভাবে তাকিয়ে ছিলে কেনো? ঝকমকে দামী শাড়ী পরে প্রাইভেট গাড়ী থেকে এক দম্পতি নেমে এলো।মেয়েটি দেখতে মোটামুটি সুন্দর। মেকাপ করে আর দামী প্রসাধনী দিয়ে নিজেকে আরো সুন্দর করে তোলার চেষ্টা করেছে বোঝাই যাচ্ছে । সাথে একজন মধ্যবয়স্ক লোক।মেয়েটি যেভাবে উনার হাত ধরে আছে!তাতে বোঝা যাচ্ছে, ইনি মেয়েটির হাসবেন্ড। আমরা রিকশা থেকে নেমে বিয়ে বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় মেয়েটিকে খেয়াল করলাম।উনারাও এখানকার গেস্ট।যাই হোক আমরা ভিতোরে গিয়ে বসলাম।
জাহিদ বললো চলো তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেই।আমার বন্ধু আর তার স্ত্রীর সাথে।আমরা সেদিকেই এগিয়েই গেলাম।নতুন কনেকে দেখে আমার তিন দু বছরের মেয়ে আধো আধো ভাজ্ঞা শব্দে জিজ্ঞেস করে উঠলো,আম্মু দেকো দেকো পুতুল আমি আর জাহিদ ওর কথায় হেসে উঠলাম।নতুন বউ ওর কথায় আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে উঠলো..ওহ সো…. কিউট!!প্লিজ ওকে আমার কোলে দিন। আমরা নতুন দম্পতির সাথে আলাপে বিজি ছিলাম ঠিক তখন খেয়াল করলাম দূর থেকে সেই ঝকঝকে শাড়ী পরা মেয়েটি আড় চোখে চেয়ে আছে জাহিদের দিকে। আমি প্রথমে ব্যাপারটিকে ইগ্নোর করলেও পরে বেশ অবাক হই!! খাওয়া দাওয়া যখন শেষ তখন জাহিদ বললো,শিমুল তুমি একটু বসো এখানে, আমি আসছি।
আমার কৌতুহল হলো,কারন একটু আগেই সেই মেয়েটিকে জাহিদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু বলতে দেখেছি,কিন্তু ঠিক কি বলেছে শুনিনি।আমি জাহিদকে আমার চাইতে বেশি ব্লেভ করি।কিন্তু আমি যে ওকে ভালোবাসি,খুব ভালোবাসি তাই নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।জাহিদের পিছু নিলাম। কিছুদূর গিয়ে দেখলাম সেই মেয়েটি দাড়িয়ে আছে,জাহিদ হাটতে হাটতে সেদিকেই গিয়ে দাড়ালো।আমি একটু এগিয়ে কাছে গিয়ে দাড়ালাম।নিজেকে আড়াল করে ওদের কথা শুনার ট্রাই করলাম।আমার কোলে পুস্প ঘুমুচ্ছে।বুক ধরফর করে উঠলো ওদেরকে এক সাথে দেখে।নিজেকে কন্ট্রল করে কান দিলাম সেদিকে।শুনলাম মেয়েটি বলছে….
—বাহহ বিয়ে করেছো!!আবার মেয়েও হয়েছে।তা প্রেম করে বিয়ে করলে বুঝি??
—তা তুমি যেনে কি করবে?তুমি তো নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছো টাকার কাছে,টাকার বিছানায় ঘুমিয়ে সাধ মিটেনা??আমার সাথে আবার কিসের কথা তোমার??
—তুমি আমায় চিনোনা,আমার সাথে এমন বিহেভ করলে আমি তোমার স্ত্রিকে সব বলে দিবো,বলবো তুমি আমায় ভালোবাসতে,দেখি কি করে তুমি সুখি থাকো।আমি তোমাকে সুখি হতে দিবোনা।আজ তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখে আমার প্রচ্চুর রাগ হচ্ছে।আমি চাইলে তোমাকে সব দিতে পারি,গাড়ী,টাকা,বাড়ি সব…তুমি শুধু আবার আমার সাথে রিলেশন বজায় রাখো।
–আমি যদি এখন এখানে গেস্ট হয়ে না আসতাম না,তাহলে তোমার গালে ঠাস ঠাস করে দু চর লাগিয়ে দিতাম।অহংকারী, দেমাগি মেয়ে।কান খুলে শুনে রাখো.. আমি এক সময় তোমাকে জান দিয়ে ভালোবাসতাম,তুমি সেই ভালোবাসাকে পায়ে চেপে দুমরে মুচরে দিয়েছো।আমি যখন সেই আঘাত সইতে না পেরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছি ঠিক তখন আমার বাচার আশা দেখিয়েছে শিমুল।সে তোমার মত অহংকারী নয়।সে আমার মধ্যবিত্ত অবস্থাকে মেনে নিয়ে আমার সাথে নিজেকে আষ্টে পিষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে।আর এখন আমাদের দুজনের ভালোবাসার অংশ আমাদের একমাত্র মেয়ে পুস্প।
তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো।আমার প্রতি শিমুলের অগাধ আস্থা রয়েছে।তুমি একবার কেন!হাজার বার বললেও ও আমায় অবিশ্বাস করবে না।আমি শিমুলকে বলেছিলাম আমার এক কালো অতীত আছে।কিন্তু তুমিইই যে সেই অতীত তা সে জানেনা।এখন নাহয় জানবে।কিন্তু আমার বিশ্বাস৷ সে মেনে নিবে। আমার দু চোখ বেয়ে অশ্রু নিজে নিজেই পরতে লাগলো।আজ নিজেকে সত্যি খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আমার।আমি আর কিছু শুনার প্রয়োজন মনে করলাম না।ধিরে ধিরে সরে এলাম।
কিছুক্ষন পরে জাহিদ এলে আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম,জীবনে শত কালো অধ্যায়গুলোকে দুজনে মিলে প্রতিরোধ করবো।কেননা একজন মানুষের কালো অতীত কখনো তার সৌভাগ্যের পথে বাধা হতে পারেনা।ভালো থাকাটা নিজেদের উপর নির্ভর করে।চাইলেই ভালো থাকা যায়। আর তাই অন্যের ভুলের জন্যে কখনই নিজের মনকে ক্ষত করতে নেই।