জনৈক আধুনিক রংবাজ এবং মহারানী আগুনবতী

জনৈক আধুনিক রংবাজ এবং মহারানী আগুনবতী

১. সারারাত প্রচন্ড বর্ষণে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া আকাশটা আজ বোধ হয় ঠিক করেছে কিছুতেই সূর্যের ডাকে চোখ খুলবে না । সময়টা বলছে এখন সকাল, অথচ মেঘের নকশী কাথায় জড়ানো আকাশ সেটা মানতেই চাচ্ছেনা । কিছুক্ষন পরপরই ভীষণ গর্জন তুলে সে বলতে চাইছে , আজ তার ছুটি । বেশ ভাল , আমারও চোখ মেলতে মন চাইছে না । আকাশের ভীষণ গর্জনে আমার আরামের ঘুমটা একটু আগেই ভেঙ্গে গেছে ,তাও কেন যেন উঠতে ইচ্ছে করছেনা । প্রেমিকা থাকলে এরকম সুরেলা বর্ষা দিনে আমি নিশ্চয়ই তাকে ফোন দিতাম , চোখ বন্ধ করে বলতাম ,” মেয়ে, তুমি শুনছো তো বৃষ্টি বন্দনা ? তোমার মনের নরম জমিনে আমি এভাবেই বৃষ্টি হয়ে ঝরতে চাই । ঝরতে দেবে তো আমায় ? ” কিন্তু ব্যাডলাকটা খারাপ হলে যা হয় আর কি , প্রেম আমার হয়নি । প্রেমিকা যেহেতু নেই ,তাই কাথামুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি একাই প্রকৃতির বৃষ্টি বন্দনা শুনতে লাগলাম । আরেকবার বেশ করে ঘুম দেওয়ার কথা চিন্তা করেই দেখলাম , আমার চোখে আর একফোঁটা ঘুম ও অবশিষ্ট নেই ।

পাশ ফিরলাম , কাঁথার নিচ থেকেই দেখলাম ,আমার বিছানার পাশে রাখা ছোট্ট টেবিলটার উপর ধোয়াওঠা এককাপ চা । ধোয়ার সাথে আসা মিষ্টি গন্ধটা আমাকে আর থাকতে দিল না । বুঝলাম , এবার উঠতেই হবে । প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেই চায়ের অভ্যাস আমাদের বাসায় কখনই কারো ছিল না । বিশেষ করে আমি তো সকাল সকাল কিছু মুখেই দিতে পারতাম না । আম্মুর হাতের থাবড়া, কানমলা আর মাথায় চাটি দিয়েই ব্রেকফাস্ট সারতে হত আমার । আম্মু আব্বুও ব্রেকফাস্ট টেবিলেই চা পর্ব সেরে নিতেন । কিন্তু কয়েক বছর হল পরীর মত একটি মেয়ে এসে আমাদের বাসার তিনজন মানুষের অভ্যাস একদম সেই লেভেলে বদলে দিয়েছে । এই মেয়েটি নিজেই ঘুম থেকে উঠে চা ছাড়া থাকতে পারেনা , তার চা- প্রীতির আতিশয্যে আমরাও এখন ঘুম থেকে উঠে চা না পেলে পাগল হয়ে যাই । একবার মেয়েটির এক সপ্তাহের অনুপস্থিতিতে যখন দেখা গেল মর্নিং টি ও গায়েব ,তখন দেখলাম এই মর্নিং টি এর অভাবে বিকেলে আম্মুর মাথা ধরে , সকালে বাথরুম পর্বে আব্বুর মেজাজ খারাপ হয় এবং আমি সারাদিন সবার সাথে খিটিমিটি করি । আমাদের এই দুরবস্থার কেবল এবং একমাত্র কারন এই মেয়েটি ।

মেয়েটি আমার ছোট ফুপির বড় মেয়ে , নাম মহারাণী আগুনবতী , না না দুঃখিত , তার নাম নিধি । চায়ের মিষ্টি এই ঘ্রানের মতই মিষ্টি সেই মেয়েটি । তার সবই ভাল , সবই ঠিকঠাক , শুধু রাগ আর জেদ একটু বেশি । সকালে বিকেলে নিয়মিত রাগ আর একগুয়েমির ট্যাবলেট খাওয়া এই মেয়েটিকে নিয়ে ছোটবেলা থেকেই আমি ভীষণ ঝামেলায় আছি । তার কারনে আমাকে প্রতিদিন নাক,কান এবং চোখ দিয়ে অনুভব করতে হয় , আমি আসলে পুরাই একটা ফালতু জিনিস । তার প্রতি তার মামা মামি , মানে আমার আব্বু আম্মুর এত আদর দেখে আমার প্রতিমুহূর্তে মনে হয় , এই বাসায় আমি ই আসলে মেহমান । সেই কারনে আমার ক্ষোভ, আমার যন্ত্রণা আমি আকার ইঙ্গিতে সময় পেলেই ঐ মেয়ের উপর ঝাড়ি । মেয়ে শুধু রাগ হয় । যখন সে রাগে কথা বলতে পারেনা , কাঁপতে থাকে ,তখনই আমি কেটে পড়ি । ঘুমঘুম চোখে চায়ের দিকে তাকিয়ে ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমি উঠে বসলাম । তাকিয়ে দেখলাম, চায়ের মিষ্টতা আবিষ্কার করতে পেরে একটা গোবদা লাল পিঁপড়া টেবিলের গ্লাস বেয়ে হেলতে দুলতে আসছে । আমি মনে মনে ফিচলা হাসি হাসতে হাসতে এক হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পিঁপড়ার দিকে আরেক হাত বাড়ালাম ।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম , নিধি কে এখন কোথায় পাওয়া যাবে । সকাল সকাল তাকে একটু যন্ত্রণা দেবার লোভ আমি সামলাতে পারছিলাম না । আমি জানি বাইরে যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে তাই নিধি এখন বারান্দায়ই থাকবে । বৃষ্টির ফোঁটা তার চায়ের কাঁপে ছিটে আসবে , সে ঐ বৃষ্টির ভেজা গন্ধ আর চা একসাথে উপভোগ করবে । লুকিয়ে লুকিয়ে তার ডায়েরি পড়ে তার এই অভ্যাসের কথা জেনেছি । আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঝড়ো কাকের মত করে উড়ে বারান্দায় গিয়ে দেখি , আমি যা ভেবেছি ঠিক তাই , নিধি বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি – চা খাচ্ছে । বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে বললাম , ” এই যে নিধি ” নিধি মাথা ঘুরিয়ে তাকাল ,” কি হইছে ?” ” চা তো তুমি বানিয়েছ তাইনা ?” সে ভ্রু কুঁচকে বলল ,” কেন কি সমস্যা ?” আমি চায়ের কাপটা উঁচু করে ধরলাম ,” চায়ে একটা পিঁপড়া সাতার কাটছে , একটা গোবদা লাল পিঁপড়া । ” ” হতেই পারে , চিনির বয়ামে পিঁপড়া তো থাকতেই পারে ।” আমি মুখ কপট শক্ত করে বললাম , ” তুমি জানোনা , চায়ে পিঁপড়া পড়লে সেই চা আমি খাই না ?” ” পিঁপড়া উঠিয়ে ফেললেই হয় । আর ইচ্ছা না হলে খাইওনা ।” আমি ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে বললাম , ” তোমার এই পিঁপড়া চা আমি এখন বেসিনে ঢালব , তারপর কল ছেড়ে দিব । এই চা পাইপ দিয়ে ড্রেনে চলে যাবে এবং ড্রেনের ব্যাঙ্গাচিরা ভেসে ভেসে তোমার পিঁপড়া-চা খাবে । ভাল হবেনা ?” নিধি ভীষণ রেগে গেল ,” দেখ আসিফ ভাই , তুমি কিন্তু বেশিবেশি করছ । আমি এখন থেকে তোমাকে চা ই বানিয়ে দিবোনা ,যাও ।” আমি চোখ ছোটছোট করে বললাম ,”তাই ? আমার তো এমনি এমনি চায়ের অভ্যাস হয়নাই , তুমি করছ ,এখন তুমি সকালে চা না দিলে সারাদিন আমি খিটিমিটি করব । সেইটা কি ভাল হবে নিধি ?” ” বেশি বাড়ছ , দাড়াও আমি মামিমনিকে বিচার দিচ্ছি ।” আমি ভাবলেশহীন ভাবে বললাম ,” তাইলে আমিও ছোটফুপিকে বিচার দিব, ফোন করে বলে দিব যে তুমি আমার সংসারে আগুন লাগাচ্ছ ।” নিধি রাগে কাঁপছে । হঠাত পেছন থেকে আম্মু মাথা বের করে বলল ,” ঐ আসিফ , কে কার সংসারে আগুন লাগাইছে ?” আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে নিধিকে মধুগলায় বললাম ,” আরেক কাপের জন্য ৭ মিনিট বরাদ্দ দেওয়া হইল ।” আমি হাসতে হাসতে বের হয়ে আসলাম । নিধিটা এমন ই গাধি , সে বুঝতেই পারেনি যে চায়ে আমি নিজেই পিঁপড়া ছেড়ে দিয়েছি । আর পিঁপড়া থাকলেও তা আমার চা-পানে কোনদিনই সমস্যা করেনা । বেসিনে গোবদা পিপড়টাকে ফেলে কল ছাড়তে ছাড়তে বললাম ,” পিঁপড়া খালু তোমাকে থাংকু, তোমার জন্য নিধিকে সকালসকাল চেতাতে পারলাম । আর ড্রেনে গিয়ে ব্যাঙ্গাচিদের আমার শুভেচ্ছা দিও কিন্তু ।”

পরবর্তী চা টা ও দারুন হয়েছিল । ভীষণ রাগলে নিধিকে যেমন মিষ্টি লাগে ঠিক তেমন । ২. আমি আমার বাচ্চাকাল থেকেই নিধিকে যন্ত্রণা দিয়ে আসছি । যে বয়সে কাঁধে গামছা লাগিয়ে সুপারম্যান সাজতাম সেই বয়স থেকেই ওকে আমি জ্বালাই । আমি যখন সুপারম্যান সাজতাম নিধিকে তখন বলতাম আমার ঘাড়ে আটকে থাকা গামছাটা পেছন থেকে উড়িয়ে দিতে । নিধি গামছা উড়িয়ে দিত আর আমি ভো করে দৌড়াতাম । আমি ওর বছর পাঁচেকের বড় হওয়ায় ওর উপর জোর যার মুল্লুক তার টাইপের ভাব দেখাতাম । ওর স্কুলের খাতার পিছনে বড় বড় করে লিখে রাখতাম , ”আমার নাম নিধি এবং আমি একটা গাধি ।” ও দেখত,কিন্তু কিছুই বলতোনা , কেবল গাল ফুলিয়ে বসে থাকত । একটা চকলেট পেলেই ওর রাগ গলে যেত । পিচ্চিকালে নিধি ভয়ানকভাবে চকলেট খেত ,তার গোলগোল হাতের মুঠোয় সবসময়ই কোন না কোন চকলেট থাকত । আমি এখনও চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই , চকলেট খাওয়া কাল কাল দাঁতে জিভ কেটে একটা পিচ্চি আমাকে ভেংচি দিচ্ছে । নিধিদের বাসা বগুড়াতে , ওর আব্বু,আম্মু আর ছোট ভাই সেখানেই থাকে ।ওর আব্বুটা বিশাল গোফ ওয়ালা ভয়াবহ শ্বাপদসংকুল এক ব্যক্তি । অবশ্য এরকমটা হতেই হবে কারন তিনি যে আমার আম্মাজানের বড় ভাই হন ! যে আম্মা ঝাড়ি দিয়ে দিয়ে আমার মত ধাড়ি ছেলেকে কেঁচো বানিয়ে রাখতে পারে , সেই আম্মার বড় ভাইয়ের ঝাড়িতে যে মানুষজন কেন্নো হয়ে যাবে সেটা তো খুবই সহজ কথা । একই সাথে বড়মামা এবং ছোট ফুপা হওয়াতে তিনি ব্যাপক অধিকার নিয়ে আমাকে ঝাড়ি দিতেন । খোদার ই কি বিচার , ঈদ হোক আর গরমের বা শীতের ছুটি হোক , ব্যাগ বোচকা নিয়ে আমার ফ্যামিলি সেই বগুড়াতেই ছুটত । নিধির আব্বার গর্জন শুনে সেই বাসাটিকে আমার রীতিমত সুন্দরবনের মতন লাগত । এইরকম হালুম টাইপ পাবলিকের কন্যা হয়ে নিধি যে আগুনবতী টাইপ মেয়ে হবে তাতে অবাক হবার কিছু নেই । কিন্তু রাগী হলেও মেয়েটা খুবই বেকুব যা ভীষণ চিন্তার বিষয় । এই যেমন নিধি একদিন কমলা রঙের একটা ড্রেস পরেছে , আমি ওকে বললাম ,” তোমাকে একদম মেথরানী কমলার মতন দেখাচ্ছে ।” ও রেগে ফায়ার হয়ে প্রথমে আমার এবং ” মেথরানী কমলার ” সম্পর্কের গুষ্টি উদ্ধার করল, তারপর রুমে ঢুকে কাচি দিয়ে ড্রেসটা কুচিকুচি করে কাটল । মেয়েটা কিভাবে এমন বেকুব হল সেটা আমি এখনও বুঝিনা । কি জানি , আমি হয়ত নিধির চাইতেও বড় ধরনের বেকুব ।

তিন বছর আগে নিধি যখন ঢাবিতে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয় তখন আমি হঠাত করে খেয়াল করলাম , চকলেট খাওয়া কাল কাল দাঁতের পিচ্চি মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে । তার কাল কাল দাতগুলি উধাও হয়ে ঝলমলে হাসিমাখা সুন্দর সুন্দর সাদা দাঁত গজিয়েছে । সে এখন আর মাথায় তালগাছের মত ঝুটি করেনা । সে এখন ভীষণ মোটা চশমা চোখে লাগিয়ে বিতিকিচ্ছি ইংরেজী বই পড়তে পারে । আরও খেয়াল করলাম , সে আর আগের মত গাধামি করেনা , চোখে মোটা চশমা লাগিয়ে ভীষণ ভাব ধরে থাকে । ঢাবিতে ভর্তির পর তার মামা মামির প্রবল অনুরোধ সত্ত্বেও সে যখন যাবতীয় বাক্স পেটরা নিয়ে রোকেয়া হলে গিয়ে হাজির হয়, আমি তখন মনে মনে ভীষণ হেসেছিলাম । এক সপ্তাহ ও থাকতে পারেনি , তার আগেই কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায় । শেষে আম্মা গিয়ে তার বেনী ধরে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে ( বেনী অনেক লম্বা তো ) ।

নিধি যে আসলে গাধি থেকে প্রমোশন নিয়ে বিশেষ শ্রেণীর গাধি হয়েছে সেটা আমি সেদিন বুঝতে পারলাম যেদিন জানলাম সে আমার মত একটা লাফাঙ্গাকে ভালবাসে । না সে নিজে জানায়নি , আমি তার ডায়েরি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে জানতে পেরেছি । আমাকে মেয়েরা কেন ভালবাসবে তার দশটা কারন আমি তো নিজেই লিখতে পারবোনা , অথচ এই মেয়ে তার ডায়েরিতে খুব সুন্দর করে লিখেছে যে আমার এই কাজটা ভাল , অমুক কথাটা সুন্দর । আমি যে এত ভাল সেটা আমি ওর ডায়েরি না পড়লে তো জানতামই না ! আমার অবশ্য তখন নিধিকে নিয়ে এত কিছু চিন্তার সময় ছিল না । ভাবলাম , ওর রঙের বয়স আর রঙের বয়েসে মনে একটু রঙ লাগা ভাল ।

মনে একটু রঙ লাগলে ক্ষতি নেই , কিন্তু এলোপাথারি রঙ লাগালে যে সার্কাসের জোকারদের মতন সং সাজতে হয় সেটা আমি নিজেকে দিয়ে বুঝতে পেরেছি । মহারাণী আগুনবতী যেসময়ে আমাকে নিয়ে ডায়েরিতে অনেক স্বপ্ন আঁকত , সেই সময়ে আমি ইকনোমিক্সের স্ট্যাট ক্লাসে বসে কলমের মুখা চিবাতে চিবাতে আমার ক্লাসমেট আফরীনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম । যেদিন আফরীন আমার দিকে চোখ তুলে হাসত আমি সেদিন রিকশাওয়ালাকে দুই টাকা বেশি দিয়ে দিতাম । এভাবে লুকোচুরি করতে করতে কখন যেন ওর সাথে আমার প্রেম হয়ে গেল । প্রেম করতে গিয়ে আমি মহাবিপদে পড়লাম । আফরীনের সবচাইতে পছন্দের জায়গা হল খাবারের দোকান । এরই বদোউলতে তাকে ফুচকা চটপটি খাওয়াতে খাওয়াতে অচিরেই আমি ফকির হয়ে গেলাম । চাইনিজের অর্ডার দিতে গিয়ে আফরীনের সামনে আমার পেট খারাপের বাহানা দিনেদিনে বাড়তে লাগল , সে খেত আর আমি ঝিমাতাম । আসলে আব্বু আমাকে যে টাকা দিত তাতে আমার চললেও দুজনের চলত না । আমি টিউশানি নিয়ে নিলাম , কিন্তু এতে আবার আফরীনকে নিয়ে খেতে যাবার টাইম দিতে প্রবলেম হয়ে গেল । তাও সবদিক ম্যানেজ করবার চেষ্টা করলাম । এভাবে পাঁচমাস কাটল । আমি অনার্স পাস করলাম , আম্মা আমার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে লাগল আমি কেন বিয়ে করিনা এই ব্যাপারে । কেবল পাস করেছি , জব হয়নি , এই টাইমে আফরীনের বাবার কাছে গিয়ে ” আপনার সুন্দর মাইয়ার লগে আমার বিয়া দ্যান ” টাইপ ঘ্যানরঘ্যানর করার সাহস আমি পেলাম না । কিন্তু আম্মা এসে বলল আমি যেন নিধিকে বিয়ে করি । আমি আম্মাকে ভয় পেলেও সেদিন সিনা টান করে বলেছিলাম ,” আম্মা আমার পছন্দ আছে ।” তারপর আম্মার চোখের দিকে না তাকিয়ে সোজা বাথরুমে । সিনা টান করার রেজাল্ট আমি অবশ্য কদিনপরই পেলাম । হঠাত একদিন বিনামেঘে বজ্রপাত হয়ে আফরীন আমাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসল ,তারপর নায়িকাদের মত চুল ঝামটা মেরে আমাকে বলল ,” আসিফ , তোমার সাথে আমার আর হচ্ছেনা । ” আমি বললাম ,” কি হচ্ছেনা ? ” সে চোখ ছোটছোট করে বলল ,” আই থিংক ইয়ু আন্ডারস্টুড, উই অয়ার জাস্ট ফ্রেইন্ডস , ওকে ?” আমি মাথা নাড়লাম , ইয়েস আই আন্ডারস্টুড , আমি নিচে পড়ে থাকলাম , সে চলে গেল । আফরীনকে হারাবার পর দীর্ঘ এক দিন শুধু চা খেয়ে থেকেছি । এরপর ভাবলাম দেবদাস হয়ে যাবো , কিন্তু দ্বিতীয় দিন নিধি রাতজাগা লাল চোখে বড় বড় করে তাকিয়ে বলেছিল , ” তুমি না খায়া থাকবা , গাঞ্জা বিড়ি টানবা, এতে আফরীনের কোন লাভ ক্ষতি আছে ? নেই , তুমি না খেলে আমি শুকাবো, সরি তুমি শুকাবা , আফরীন তো শুকাবেনা ।” আমি ওর দিকে তাকাতেই ও চোখ নামিয়ে বলেছিল ,” মানে বলতে চাইছি আমি এত চা টানতে পারবোনা !” নিধির কথায় অনেক খানি মায়া খুঁজে পেয়েছিলাম , তাই সিধা হয়ে গেলাম , আবার খাওয়াদাওয়া বহাল তবিয়তেই চালু করলাম । এরপর অবশ্য আফরীন কে একদিন দেখেছিলাম , ডাক্তারদের ইউনিফরম পরা একটা ঝাকানাকা ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াতে । কিউরিয়াস মাইন্ডের চেচামেচি সহ্য করতে না পেরে ওদের সাথে কথা বলতে গেলাম । আর যাই হোক , ”উই অয়ার জাস্ট ফ্রেইন্ডস” তো অ্যাট লিস্ট ! শুনলাম সেই ছেলে নাকি কোন এক বেসরকারি মেডিকেলে ইন্টার্নি করছে । আমি ছেলের দিকে তাকিয়ে পুরাই ভচকিয়ে গেলাম , এই ছেলে স্টাইলের জন্যে কি না করেছে ! মাথায় জেল দিয়ে নূডলসের মত চুলগুলিকে সজারুর কাটা বানিয়ে ফেলেছে , থুতনিতে ডিস্কো দাড়ি রেখেছে, এক কানে দুল পরেছে এমনকি চোখের ভ্রু ফুটা করে আংটা পর্যন্ত লাগিয়েছে । আমি ব্যাথাতুর চোখে ছেলেটার দিকে তাকালাম , আহারে বেচারা কত কষ্ট করেই না সে ভ্রু টা ফুটা করেছে । এত কষ্টের পারিশ্রমিক হিসেবে আফরীন কে সে পেতেই পারে । বেঁচে থাক বাবা !

অতঃপর আমার প্রেমের চ্যাপ্টার ক্লোজড । আমার অনার্সের রেজাল্ট দেখতে খুবই কিউট হওয়ায় অতি শীঘ্রই একটা মাল্টি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে উঁচু পোস্টে জয়েন করে ফেললাম । সারাদিন অফিসে বসে হাওয়া খাওয়া ছাড়া আমার কোন জরুরি কাজ নেই । এদিকে নিধিকে আমার আর কেন জানি আগুনবতী বলে মনে হয়না , মায়াবতী মায়াবতী লাগে । দুঃখের কথা হল ,আমি রিফিউজ দেওয়ার পর থেকে তার ডায়েরিতে আমাকে নিয়ে সে মে বি কিছু লিখে না । আমি লুকিয়ে ডায়েরি পড়ে দেখেছি , নতুন কিছু নেই । ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল ,কিন্তু নিধির তো দোষ নেই । ও এতদিন ধরে একাই আমাকে ভালবেসে এসেছে , আমি তখন পাথর কুড়াতে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমার অবহেলায় চোখের সামনে থাকা হীরের টুকরাটির আলো যে ফিকে হয়ে আসছে তা আমি দেখতেই পাইনি । আচ্ছা ও কি আমাকে এখন আর ভালবাসে না ? ও তো আরেকটা ডায়েরিও কিনতে পারে । হুম সিদ্ধান্ত নিলাম, নিধি ভার্সিটি গেলে আজকে ওর রুমে জোর তল্লাশি চালাতে হবে ।

৩. চারিদিকে ঠাণ্ডা ঠান্ডা ভাব , এসি থাকলে যা হয় আর কি । অফিসে আমি আপাতত আমার জন্যে কোন কাজ দেখছিনা , তাই টেবিলের উপর দুই পা তুলে চেয়ারে আয়েশ করে বসে আছি । হাতে নিধির ডায়েরি ,ওর নতুন ডায়েরি । আমার ধারনা ঠিকই ছিল , ওর রুমে জোর তল্লাশি চালিয়ে এটা আবিষ্কার করেছি , অফিসে আসার টাইমে সাথে করে নিয়ে এসেছি । খুশি খুশি মনে ডায়েরি খুললাম , সেখানে নিধির ছোট ছোট সুন্দর হাতের লেখা , পড়া শুরু করলাম । কিন্তু ডায়েরির প্রথম পাতা পড়ে আমার পুরাই টাশকিত অবস্থা । সেখানে লেখা , ” আমার জামাই হবার কিছু এবং সামান্য কিছু যোগ্যতা ” – লুঙ্গি থেকে বিরত থাকতে হবে । এইরকম অশ্লীল পোশাক দুনিয়াতে দুইটা তৈরি হয়নি । স্কারট আর লুঙ্গির মাঝে কোমড়ে একটা ইলাস্টিক ছাড়া আর কোন ব্যবধান দেখিনা । সো লুঙ্গি পরা চলবেনা । – আমি পিয়ানো পছন্দ করি । তাকে এটা বাজানো শিখতে হবে । পিয়ানো না হলে গিটার হলে ও বিবেচনা করা হবে । – বাথরুমে ঢুকে জঘন্য সুরে গান গাওয়া যাবেনা । এতটুকুর পর জায়গা খালি , জামাই নামক মানুষটাকে আরও কিভাবে বাঁশ দেওয়া যাবে তার পরিকল্পনা মনে হয় এখনো চলছে । হায় নিধিরে , তার মত মহারাণী আগুনবতীকে বিয়ে করাটাই তো মহা শর্ত , তার উপর এতগুলি শর্ত নিতান্তই নৃশংস । কিন্তু কথা হল নিধিকে তার জামাই হবার শর্ত বের করতে হবে কেন ? সে তো আমাকে ভালবাসে , আগের ডায়েরিতে স্পষ্ট দেখেছি আমি । বিভ্রান্ত মুখে আরও কয়েক পাতা ঊল্টাতে লাগলাম , মনে হচ্ছে নিধি মহা চাল্লু হয়ে গেছে । হঠাত একটা পাতায় নিজের নাম দেখে আটকে গেলাম । সেখানে লেখা ,” আসিফ কে ভালবেসে লাভ নাই । ইদানিং আমার ব্যাগে ডেইলি একটা কিটক্যাট পাচ্ছি , যে ছেলে এটা রেখে যায় তাকেই বিয়ে করব । ” আম্মু আমার কি হবে ?

সেদিন রাতে বাসায় গিয়ে লাউডস্পিকারে ছ্যাকা খাওয়া কিছু গান ছেড়ে রাখলাম আর মাঝে মাঝেই করুন চোখে নিধির দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু নিধি আমার দিকে যেভাবে সন্দেহজনক লুক দিল তাতে আমার মনে হল আমার করুন দৃষ্টি তার কাছে ছ্যাচড়া দৃষ্টির মত লেগেছে । মন টা কেমন খারাপ খারাপ লাগছে । আমি নিধির রুম থেকে তার প্রথম ডায়েরিটা চুরি করে আনলাম । ডায়েরির একশ বিশ পাতা পড়ে আমি ঠিক একশ বিশ বারই নিধির প্রেমে পড়ে গেলাম । ভেবে দেখলাম নাহ, আর বেশি সময় নেওয়া ঠিক না , মেয়েটাকে জলদি বিয়ে করে ফেলবো ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দশটা বাজে । ভাগ্যিস শুক্রবার , নাইলে আমার চাকরী বস আজকে মাখন রুটি বানিয়ে খেয়ে ফেলত । একটু পর আবিষ্কার করলাম টেবিলে চা নেই । টলতে টলতে কোন রকমে উঠে দাঁড়িয়ে নিধির ঘরে গেলাম , ঝারি দিতে হবে মেয়েটাকে । এত অবহেলা আসিফ সহ্য করবে না , কিন্তু কোথায় সে ? ঘর তো খালি ।

” আম্মু , নিধি কই ? ” রান্নাঘরে উঁকি দিলাম । আম্মু গজগজ করে বলল ,” এহ আসছে এখন খবর নিতে । নিধি বাড়ি গেছে আজ জানিস না ?” আমি হতবাক হয়ে গেলাম , ও বাড়ি যাবে , কই আমাকে তো কিছু বলল না রাতে । আমি মুখ ভার করে বললাম ,” সত্যি জানতাম না , কবে আসবে ও ?” ” আর আসবে না । ভাইজান ওর বিয়ে ঠিক করেছে ।” এতটুক বলে আম্মু রান্নার ছলে ডেকচিতে ঘটাং করে বাঢ়ি লাগাল । বাঢ়িটা আমার মাথাতেই আমি অনুভব করলাম ।

নাস্তার টেবিলে চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছিলাম । আব্বু আমাকে বলল ,” কি রে তোর মুখ এমন পেচার মত হয়ে আছে কেন ?” ” আমি পেচা যে তাই ।” আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল ,” কি হইছে ওর ? ওর ও কি চা না খেলে টয়লেটে প্রবলেম হয় ইদানিং ?” আমি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম ,” আব্বু , টয়লেট ছাড়া দুনিয়াতে জরুরি আরো অনেক কিছু আছে । তুমি প্লিজ বকবক থামাও আর ফুপাকে বল নিধিকে বিয়ে না দিতে ।” আব্বু বিশাল শব্দ করে চায়ে চুমুক দিলেন , তারপর আমার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভঙ্গীতে বললেন ,” আর ইয়ু ইন লাভ, সান ?” আমি ফোশ করে নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালাম ,” আমি বগুড়াতে যাচ্ছি । আর তুমি চিন্তা করতে থাকো তোমার সান ‘ ইন লাভ ‘ নাকি ‘ ইনভেলাপ ‘ , ঠিকাছে আব্বু ?”

আব্বু আর আম্মু হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আমি চলে আসলাম । ব্যাগ গুছাতে হবে , আমার কোন কোন শার্ট জানি নিধি পছন্দ করে ?

৫ . প্রথম জীবনে নিধি ছিল গাধি , তারপর হল বিশেষ শ্রেণীর গাধি , কিন্তু এখন যে নিধিকে আমি দেখছি সে হল মহা টাউট এবং মহাবেয়াদব । আমি যে ওর রুমে পাঁচ মিনিট হল দাঁড়িয়ে আছি ও সেটা লক্ষই করছে না , কানে পাইপ লাগিয়ে তার এখন গান শোনা হচ্ছে । ফুপি ইতোমধ্যে আমার জন্যে মোরগ পোলাও রান্নাও শুরু করে দিয়েছে আর তার মেয়ে কিনা আমাকে বেল ই দিচ্ছেনা ! আমি পেছন থেকে নিধির কানের ইয়ার ফোন খুলে ছুড়ে মারলাম । ও ঘুরে আমার দিকে তাকাল , বলল ,” কি হইছে ?” ” খুব গান শিখছ তাইনা ?” ” মানে কি ?” ” বিয়ের রঙ্গে আছো , না ?” ” থাকলে তোমার কি সমস্যা ?” আমি কিছু বললাম না । নিধি বলল ,” তোমার আফরীন কে নিয়ে আমি কখনো কিছু বলেছি ?” ” না বলনাই , বাট আফরীন ছ্যাকা দেবার পর আমাকে তুমি রিকভার করেছ , করোনাই ?” ” তো ?” আমি নিঃশ্বাস ফেলে বললাম ,” তাহলে এখন তোমার এই অবস্থা ? ছেলে কি করে ?” ”ইঞ্জিনিয়ার ।” ” তাকাবেনা , তোমার দিকে তাকাবেনা ।” নিধি মুখ বাকিয়ে বলল ,” আমার দিকে কেউই কখনও তাকায়নাই । সেইটা নিয়ে তুমি এত চিল্লাচ্ছ কেন আসিফ ভাই ?” ” একশবার চিল্লাবো। তুমি আমাকে ভালবাস , জাস্ট অ্যাডমিট ইট। ” ” এইটা আমার লাইফের শ্রেষ্ঠ ভুল , আমি অ্যাডমিট করবোনা ।” ” নিধি তুমি হয়ত জানোনা , আমার কাছে তোমার একটা ডায়েরি আছে , যেখানে একশ বিশ পাতা তুমি শুধুই আমাকে নিয়ে লিখেছ । আমি আমার লাইফের একটা ভাল স্মৃতিও মনে করতে পারবোনা যেখানে তুমি ছিলে না । আমার বাকি লাইফের আর একটা দিন ও তোমাকে ছাড়া যাবেনা ! ” নিধিকে চুপ করে থাকতে দেখে আমি আবার বললাম ,” তুমি শুধু আমাকে বাচাতে পার , মেরে ফেলতে পারনা নিধি ।” নিধি এখনো চুপ । আমি ডায়েরি টা নিধির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসলাম । আমার খুব ইচ্ছে হল ,পিছন ফিরে একবার তাকাই । আমি জানি , নিধি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে তার ছলছল মায়াবী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।

পরবর্তী একঘন্টাকে আমি ” পলাশির যুদ্ধ” অথবা ” বক্সারের যুদ্ধ ” যা ইচ্ছা বলতে পারি । যুদ্ধের ময়দান নিধিদের বাসার ড্রয়িং রুম । ফুপাকে আমি এক নিঃশ্বাসে বলেছিলাম নিধির বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে কারন আমি ছাড়া আর কারো সাথে আমি ওর বিয়ে হতে দিবোনা । ফুপা হালুম হালুম করতে করতে বলল ,” তুমি বিয়ে হতে দিবা না ? দেখি কেমনে না দেও ।” ” ঠিক আছে, আমাকে নিয়ে নিধি একশ বিশ পেইজের ডায়েরি লিখেছে , আমি সেইটা তোমার হবু বেয়াই বাড়ি পাঠাইয়া দিবো , দাঁড়াও ।” ” হতচ্ছাড়া পোলা , তুই আমারে ঝাড়ি দেস ? ” আমি মাখনের মত গলায় বললাম ,” ফুপা তুমি তো আমার মামা লাগো , তোমার কাছে একটা জিনিস চাইতেছি , তুমি দিবানা ? তাছাড়া একইসাথে যখন মামা আর ফুপা হতে পারছো তখন শ্বশুর হতে তোমার কি এত সমস্যা ?” ফুপি হা করে দাঁড়িয়ে আছে , মুখে আমার জন্যে প্রশ্রয়ের ছাপ । এদিক ফুপার অবস্থা বুঝতে পারছিনা । তিনি তার রুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে গর্জন করতে লাগলেন , ফুপিও তার সাথে যেতে লাগলেন ,তবে যাবার আগে আমার দিকে চোখের ইশারায় বুঝালেন , তিনি ফুপাকে রাজি করাবেন । ইয়াহু , আমার আর কি লাগে , আমি তখন খুশিতে নাচছি । আর এদিকে ফুপার রুম থেকে আওয়াজ আসছে ,” ঐ দুইটাকে খুন করে আমি জেলে গিয়ে দুপুরের ভাত খাবো !”

পরিশিষ্ট : ” মন খারাপ কেন ? আমার চাইতে কি ঐ ইঞ্জিনিয়ার দেখতে বেশি ভাল ?” নিধি ভেংচি কেটে বলল ,” অনেক ভাল ছিল । তোমার মত রংবাজ না । ” আমি করুন গলায় বললাম ,” যার জন্যে যুদ্ধ করলাম , সেই বলে রংবাজ । ” ” তাই, না ? প্রেম উথলাইয়া উঠছে । এতদিন প্রেম কই ছিল ? তখন তো আমার দিকে তাকাও ই নাই ।” আমি বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে বললাম ,” তখন বেতমিজ ছিলাম , এখন আমার তমিজ হয়েছে ।” ” কচু হইছে ।” আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিধির হাত ধরলাম । ঠিক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম , ” আমি তোমাকে দেখেছিলাম সূর্যের অজস্র আলোর মাঝে লুকিয়ে থাকা একটি রশ্মিতে , যে আমার জানালার নীলচে পর্দা ছুঁয়ে আলোকিত করেছিল আমার পুরো পৃথিবী । আমি তোমাকে দেখেছিলাম সদ্য ঘুমভাঙ্গা চোখে আমার বিছানার পাশে ছোট্ট টেবিলে রাখা ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে ,যাকে ছুঁয়ে আমি ভুলে যাই শত শীতলতা । আমি তোমাকে দেখেছিলাম বর্ষার মেঘকালো আকাশ থেকে নেমে আসা প্রথম বৃষ্টিকনায় , যে একমুহূর্তে স্পর্শ করেছিল আমার সমস্ত অনুভূতি । আমি তোমাকে দুচোখ মেলে দেখিনি , হৃদয় দিয়ে দেখেছি । হয়ত ঘুরে এসেছি অনেকখনি ভুল পথ , তবুও তোমাকে নিজের করে চেয়েছি । ”

নিধি কান্না চেপে রাখার প্রানপন চেষ্টা করছে ,এদিকে এতবড় কাব্যিক লাইন বলে আমার কেমন ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে । আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম ,” কেঁদে ফেল , কেঁদে ফেল । বিয়ের পর কাঁদলে খবর আছে ,চোখ উপড়াইয়া ফেলবো । যা কাঁদার বিয়ের আগেই কাঁদো ।” নিধি তার বাবার মত হালুম হালুম করে বলতে লাগল ,” হুহ , শয়তান ফাজিল কোথাকার ! ” গালি শুনতে যে এত ভাল লাগে , হঠাত করেই আমি সেটা আবিষ্কার করলাম ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত